somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৮ তে একদিনঃ সাহিত্য ও আমার কিছু ভাবনা

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজ ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৮ তে গিয়েছিলাম । আচ্ছা লিট ফেস্ট ছোট করে বলা হয়েছে । আসলে লিটারেচার কে ছোট করে লিট করে দিয়েছে । আসলে আমার সংক্ষিপ্ত জাতি কিনা তাই । ট্রেন্ডার সাথে চলতে হবে । এই লেখায় কেউ দুঃখ পেলে এই অধমের কিছু করার নেই । তাই আগে থেকেই ক্ষমা প্রার্থী । আর মাঝে মাঝে ছবি পাবেন তো একটু ধৈর্য্য নিয়ে পড়বেন ।

চলুন শুরু করা যাক । লিটারেচর বা লিট যেটাই বলেন সাহিত্য কিন্তু বদলাবে না । সাহিত্য সাহিত্যই থাকবে । তবে কথা হচ্ছে কতটা আছে সেটাই দেখার বিষয় । আমি দেশ, দেশের মানুষ আর ভাষা এই তিনটা জিনিশ প্রচন্ড রকমের ভালবাসি । তাই যত কষ্ট হোক তবুও কেন জানি দেশকে ছাড়তে পারি না ।



উপরের ছবিটা বাংলা একাডেমির । ইন্টারনেট থেকে নিয়েছি । এটা লিট ফেস্টের সকালে তোলা ছবি । সে যাইহোক প্রসংগে ফিরে আসি । অনেক আশা নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে লিট ফেস্টের দিকে যাত্রা শুরু করলাম । অফিস থেকে হেটে যেতে বেশি সময় লাগে না । তবুও রিকশা নিলাম এলিফেন্ট রোড থেকে । বেতন পেয়েছি বুঝতে হবে । নীলক্ষেত হয়ে গেলাম কারন ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেবে না । ব্যাগটা এক ভাইয়ের দোকানে রেখে আবার ছুট ।



এই ছবিটা প্রথম তুলেছি ঢোকার পর। ভাবলাম কোথা থেকে দেখা শুরু করি । কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না । সামনেই পাঠক সমাবেশ । মন ঢেকে উঠল । ঢুকে পড়লাম । কিন্তু মনে হলো আমি আসলে ইংল্যান্ড বা আমেরিকার কোন বুক স্টোরে ঢুকেছি । সব ইংলিশ বই দিয়ে ঠাসা । বাংলার হদিস কই । একটু ইতিউতি মারলাম । নাহ নেই ।



বাংলা প্রকাশনী কি জায়গা পায়নি । ভাবতে লাগলাম । আরে এত বড় একটা উতসব বাংলা প্রকাশকরা আসবে না । এটা কেমন করে হয় । মনের দুঃখে ভরাক্রান্ত মনে নিয়ে পাশে দেখলাম পাঞ্জেরী অন্য প্রকাশ আর সময় প্রকাশের স্টল তাও আহামরি না । হুমায়ূন আহমেদ আর মুক্তিযুদ্ধের বই ঠাসা । এক স্টলে দেখালাম মার্ভেলস এর কমিস বিক্রি করছে ।



আশা হারালাম না । এই স্টল গুলো বুকে আর মনে সাহস সঞ্চার করল । পরাজয়ে ডরে না বীর । এগিয়ে গেলাম । টম এন্ড জেরি কার্টুনের ট্ম এর মত অবস্থা হলে গেল । ইহা আমি কই আসিয়া পড়িলাম । ইহা কি বাংলাদেশে আছি । নাকি বাংলাদেশ অন্য কোথাও চলিয়া গিয়াছে ।



কহেন কবি কালীদাস, নিজেরে তুমি কই লইয়া আইছো বাছা । ভাবলাম বের হয়ে যাই । পালিয়ে যাই । দম বন্ধ মত অবস্থা । কোথায় বই মেলা আর কোথায় লিট ফেস্ট । এটাই যদি লিট ফেস্ট হয় তবে সাহিত্যের দিন শেষ । এরপর সবই হবে লিট ।



আমি সাহিত্যের স ও বুঝিনা । তবে বাংলা বুঝি । বাংলাকে ভালবাসি । বাংলায় গান গাই । বাংলায় বাশি বাজাই । বাংলায় কাহন বাজাই । বাংলা একাডেমিতে তো কিছুই বাজাইতে পারলাম না । শুধু চেয়ে চেয়ে চোক্ষু দর্শন করলাম ।



নিজেকে তখন মনে হচ্ছিল গিনিপিগ । যারে বিজ্ঞানীরা ফেলে দিয়েছে এমন এক অবস্থায় যাতে তাহারা জানতে পারে মানুষের মস্তিক এই অবস্থায় কিভাবে আর তারা কি করে । নিজেকে এই অবস্থায় পেয়ে ভাবিলাম এই জায়গা আমার জন্য না ।



লিট ফেস্টে হালকা মুভির ব্যবস্থা আছে । আপনি চাইলে নিজের মুভি দেখার তৃষ্ণা মিটিয়ে নিতে পারেন । কোন এক ছোট বাচ্চা আর জাহাজের কাহিনী । আমি দেখি নাই । কি দরকার ভাই । ছোট মানুষ ছোট জায়গাতেই থাকি ।



লিট ফেস্ট ঘুরে ঘুরে আমি অনেক ক্লান্ত । খেয়ে দেয়ে একটু মোটা তাজা কর্মসূচী পালন করতে গেলাম । পকেট হাতিয়ে পেলাম ১৫০ টাকা । হায় হায় টাকা তো সব ব্যাগে । না খেয়ে বের হয়ে যাব । পেট বাবা বলছে অপু তুই অপরাধীরে । ভাবলাম দেখি কি পাওয়া যায় । বাহ বাহ । অনেক কিছুই আছে খালি দাম টা একটু বেশি । এই যা । আমার জন্য সমস্যা হলেও অন্য কারো জন্য সেটা একদম সমস্যার না ।



প্রকাশনী গুলোতে মানুষের ভীড় কম । এত বড় লিট ফেস্ট মানুষ কই । ভাবলাম বই মেলায় ঢুকতে যেই কষ্ট হয় । লাইন দেয়া লাগে । তারপর ও ধাক্কা ধাক্কি । যাক বাবা এখানে এই সমস্যা নাই । ফুরফুরা ভাবে ঘুরা যায় । তবে আশে পাশে খালি ইংলিশ শুনি ।



মনে মনে বললাম সাহিত্যের রস মনে হয় কমে গিয়েছে নয় শীত পুরো শুরু হয়নি বলে রসের দেখা নাই । না হলে এটা সম্ভবত কোন একটা শ্রেনীকে টার্গেট করে আয়োজন করা হয়েছে । কেতাদুরুস্ত টাইপের লোকজনে ভর্তি । আমি অসহায় । তখন সেফুদা কে মনে পরল, তুই গরিব ।



লোকজনের ভীড় বাড়ছে । আমার অবস্থা কোনঠাসা । আমি কই যাবো । বই তো দেখার মধ্যে তেমন কিছুই নাই । নাকি ফ্যাশন দেখবো । অনেকেই তো আছে । হাটব নাকি বসবো ।



মঞ্চে কবিতা পাঠ চলছে । অনেকেই শুনছে । কেউ প্যান্ডেল এর বাইরে দাঁড়িয়ে শুনছে । মানুষ কবিতা শুনতে অনেক আগ্রহী । তখন ই বেরসিক মন একটা কৌতুক মনে আসল, এক নেতা ভাষণ দিচ্ছে সামনে তেমন কেউ নাই দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে তখন নেতা বলছে
> আমাদের সাথে জনগন আছে ।
তখন একজন বলে উঠল
> স্যার আসলে আমরা প্যান্ডেল এর লোক আপনার ভাষন শেষ হইলে প্যান্ডেল খুলমু ।



আর বেশি থাকতে পারব না । অনেক হয়েছে পিন্ডি চটকানো । এবার ছেড়ে দে বাপ । চলে যাই । তবে যাবার আগে নজরুল মঞ্চ ঘুরব না । এটা কি হয় নাকি ।



নজরুল মঞ্চে যাওয়ার আগেই এটা চোখে পরল । লোকজন খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত । বাসা থেকে নাস্তা করে বের হয়েছে বলে এখানে এসে খাচ্ছে । তবে লিট ফেস্ট বইয়ের চেয়ে খাবারের দোকান বেশি । ব্যাপারটা বুঝলাম না ।



নজরুল মঞ্চে তখন গান হচ্ছে , তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে । আহা গান শুনে সত্যি আমি মুগ্ধ । এইবার মনে হচ্ছে লিট ফেস্টের ভাল একটা দিক পেলাম । গানটা ভাল ছিল । সুর আর কন্ঠ দুটোই সুন্দর ।



অনেক কষ্টে নিজেকে পুরো গান না শুনিয়ে বের করলাম । কষ্টে সৃষ্টে টিএসসি এলাম । একটা রিকশা নেব ভাবছি । মনের মধ্য থেকে বলল বেটা গরিব তুই রিকশা নিবি । কি এত বড় কথা নিলাম রিকাশা । নীলক্ষেতে ভাইয়ের দোকান থেকে ব্যাগ নিয়ে গেলাম অন্য আর এক ভাইয়ের দোকানে । ভাব কিছু বই দেখে যাব । কিনব না । তারপর উপরের বই গুলো নিজেই আমার সাথে চলে এল । আমার কোন দোষ নাই ।

এবার কিছু সিরিয়াস কথা বলি,
আমি আগেই বলেছি সাহিত্য কি আমি জানি না । তবে আমার কাছে সাহিত্যের মেলা বা বই মেলা বললেই প্রানের সঞ্চার হয়েছে । সেখানে অনেক লোকের সমাগম আর বইয়ের ছাড়াছড়ি । বাংলার প্রসার আর বাংলাদেশকে ধারন করা । কিন্তু এই ফেস্ট তো শুধু এলিটদের জন্য বরাদ্দ । তারাই আসতে পারবেন ।

কেন জানি বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে এখানে তাকে খুজে পাওয়া মুশকিল । ঠিক যেন এমন ই । অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সেটা প্রিন্ট বা কপি মোবাইলে নিয়ে যেতে হবে । তারপর অনেক কিছুই নেয়া যাবে না । এত বাধা । ভাই সাহিত্যে এত বাধা হবে কেন । হ্যা একটা সিকিউরিট তো অবশ্যই লাগবে । কিন্তু এমন একটা ফেস্ট এ বাংলাকে কেন দূরে সরিয়ে রাখা হলো । আমি বলছি না যে একে বারের বাংলা নেই । আছে গবেষনা পত্র, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি এসব । নজরুল, রবিন্দ্রনাথ, শরৎ, বঙ্কিমন্দ্র এরা কোথায় । যারা সাহিত্য কে আলোকিত করে গেছেন তারা কোথায় । আর নতুন প্রজন্মের অনেক লেখক রয়েছেন তারাই বা কোথায় ।

অনেকেই বলেন আজ প্রথম দিন । হ্যা আজ প্রথম দিন । তাতে কি । লিট ফেস্ট নিয়ে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম । এটা কি এলিট শ্রেনীদের জন্য কি না । আমার আজ তাই মনে হয়েছে । সত্যি বলতে এখনে সব কেতাদুরস্থ টাইপের লোকজন এসেছে ।

সবশেষে এটাই বলব লিট ফেস্ট বা লিটারেচার ফেস্ট যেটাই বলেন না কেন । বাংলা ছাড়া কোন কিছুই পূর্ন না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×