আজ ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৮ তে গিয়েছিলাম । আচ্ছা লিট ফেস্ট ছোট করে বলা হয়েছে । আসলে লিটারেচার কে ছোট করে লিট করে দিয়েছে । আসলে আমার সংক্ষিপ্ত জাতি কিনা তাই । ট্রেন্ডার সাথে চলতে হবে । এই লেখায় কেউ দুঃখ পেলে এই অধমের কিছু করার নেই । তাই আগে থেকেই ক্ষমা প্রার্থী । আর মাঝে মাঝে ছবি পাবেন তো একটু ধৈর্য্য নিয়ে পড়বেন ।
চলুন শুরু করা যাক । লিটারেচর বা লিট যেটাই বলেন সাহিত্য কিন্তু বদলাবে না । সাহিত্য সাহিত্যই থাকবে । তবে কথা হচ্ছে কতটা আছে সেটাই দেখার বিষয় । আমি দেশ, দেশের মানুষ আর ভাষা এই তিনটা জিনিশ প্রচন্ড রকমের ভালবাসি । তাই যত কষ্ট হোক তবুও কেন জানি দেশকে ছাড়তে পারি না ।
উপরের ছবিটা বাংলা একাডেমির । ইন্টারনেট থেকে নিয়েছি । এটা লিট ফেস্টের সকালে তোলা ছবি । সে যাইহোক প্রসংগে ফিরে আসি । অনেক আশা নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে লিট ফেস্টের দিকে যাত্রা শুরু করলাম । অফিস থেকে হেটে যেতে বেশি সময় লাগে না । তবুও রিকশা নিলাম এলিফেন্ট রোড থেকে । বেতন পেয়েছি বুঝতে হবে । নীলক্ষেত হয়ে গেলাম কারন ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেবে না । ব্যাগটা এক ভাইয়ের দোকানে রেখে আবার ছুট ।
এই ছবিটা প্রথম তুলেছি ঢোকার পর। ভাবলাম কোথা থেকে দেখা শুরু করি । কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না । সামনেই পাঠক সমাবেশ । মন ঢেকে উঠল । ঢুকে পড়লাম । কিন্তু মনে হলো আমি আসলে ইংল্যান্ড বা আমেরিকার কোন বুক স্টোরে ঢুকেছি । সব ইংলিশ বই দিয়ে ঠাসা । বাংলার হদিস কই । একটু ইতিউতি মারলাম । নাহ নেই ।
বাংলা প্রকাশনী কি জায়গা পায়নি । ভাবতে লাগলাম । আরে এত বড় একটা উতসব বাংলা প্রকাশকরা আসবে না । এটা কেমন করে হয় । মনের দুঃখে ভরাক্রান্ত মনে নিয়ে পাশে দেখলাম পাঞ্জেরী অন্য প্রকাশ আর সময় প্রকাশের স্টল তাও আহামরি না । হুমায়ূন আহমেদ আর মুক্তিযুদ্ধের বই ঠাসা । এক স্টলে দেখালাম মার্ভেলস এর কমিস বিক্রি করছে ।
আশা হারালাম না । এই স্টল গুলো বুকে আর মনে সাহস সঞ্চার করল । পরাজয়ে ডরে না বীর । এগিয়ে গেলাম । টম এন্ড জেরি কার্টুনের ট্ম এর মত অবস্থা হলে গেল । ইহা আমি কই আসিয়া পড়িলাম । ইহা কি বাংলাদেশে আছি । নাকি বাংলাদেশ অন্য কোথাও চলিয়া গিয়াছে ।
কহেন কবি কালীদাস, নিজেরে তুমি কই লইয়া আইছো বাছা । ভাবলাম বের হয়ে যাই । পালিয়ে যাই । দম বন্ধ মত অবস্থা । কোথায় বই মেলা আর কোথায় লিট ফেস্ট । এটাই যদি লিট ফেস্ট হয় তবে সাহিত্যের দিন শেষ । এরপর সবই হবে লিট ।
আমি সাহিত্যের স ও বুঝিনা । তবে বাংলা বুঝি । বাংলাকে ভালবাসি । বাংলায় গান গাই । বাংলায় বাশি বাজাই । বাংলায় কাহন বাজাই । বাংলা একাডেমিতে তো কিছুই বাজাইতে পারলাম না । শুধু চেয়ে চেয়ে চোক্ষু দর্শন করলাম ।
নিজেকে তখন মনে হচ্ছিল গিনিপিগ । যারে বিজ্ঞানীরা ফেলে দিয়েছে এমন এক অবস্থায় যাতে তাহারা জানতে পারে মানুষের মস্তিক এই অবস্থায় কিভাবে আর তারা কি করে । নিজেকে এই অবস্থায় পেয়ে ভাবিলাম এই জায়গা আমার জন্য না ।
লিট ফেস্টে হালকা মুভির ব্যবস্থা আছে । আপনি চাইলে নিজের মুভি দেখার তৃষ্ণা মিটিয়ে নিতে পারেন । কোন এক ছোট বাচ্চা আর জাহাজের কাহিনী । আমি দেখি নাই । কি দরকার ভাই । ছোট মানুষ ছোট জায়গাতেই থাকি ।
লিট ফেস্ট ঘুরে ঘুরে আমি অনেক ক্লান্ত । খেয়ে দেয়ে একটু মোটা তাজা কর্মসূচী পালন করতে গেলাম । পকেট হাতিয়ে পেলাম ১৫০ টাকা । হায় হায় টাকা তো সব ব্যাগে । না খেয়ে বের হয়ে যাব । পেট বাবা বলছে অপু তুই অপরাধীরে । ভাবলাম দেখি কি পাওয়া যায় । বাহ বাহ । অনেক কিছুই আছে খালি দাম টা একটু বেশি । এই যা । আমার জন্য সমস্যা হলেও অন্য কারো জন্য সেটা একদম সমস্যার না ।
প্রকাশনী গুলোতে মানুষের ভীড় কম । এত বড় লিট ফেস্ট মানুষ কই । ভাবলাম বই মেলায় ঢুকতে যেই কষ্ট হয় । লাইন দেয়া লাগে । তারপর ও ধাক্কা ধাক্কি । যাক বাবা এখানে এই সমস্যা নাই । ফুরফুরা ভাবে ঘুরা যায় । তবে আশে পাশে খালি ইংলিশ শুনি ।
মনে মনে বললাম সাহিত্যের রস মনে হয় কমে গিয়েছে নয় শীত পুরো শুরু হয়নি বলে রসের দেখা নাই । না হলে এটা সম্ভবত কোন একটা শ্রেনীকে টার্গেট করে আয়োজন করা হয়েছে । কেতাদুরুস্ত টাইপের লোকজনে ভর্তি । আমি অসহায় । তখন সেফুদা কে মনে পরল, তুই গরিব ।
লোকজনের ভীড় বাড়ছে । আমার অবস্থা কোনঠাসা । আমি কই যাবো । বই তো দেখার মধ্যে তেমন কিছুই নাই । নাকি ফ্যাশন দেখবো । অনেকেই তো আছে । হাটব নাকি বসবো ।
মঞ্চে কবিতা পাঠ চলছে । অনেকেই শুনছে । কেউ প্যান্ডেল এর বাইরে দাঁড়িয়ে শুনছে । মানুষ কবিতা শুনতে অনেক আগ্রহী । তখন ই বেরসিক মন একটা কৌতুক মনে আসল, এক নেতা ভাষণ দিচ্ছে সামনে তেমন কেউ নাই দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে তখন নেতা বলছে
> আমাদের সাথে জনগন আছে ।
তখন একজন বলে উঠল
> স্যার আসলে আমরা প্যান্ডেল এর লোক আপনার ভাষন শেষ হইলে প্যান্ডেল খুলমু ।
আর বেশি থাকতে পারব না । অনেক হয়েছে পিন্ডি চটকানো । এবার ছেড়ে দে বাপ । চলে যাই । তবে যাবার আগে নজরুল মঞ্চ ঘুরব না । এটা কি হয় নাকি ।
নজরুল মঞ্চে যাওয়ার আগেই এটা চোখে পরল । লোকজন খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত । বাসা থেকে নাস্তা করে বের হয়েছে বলে এখানে এসে খাচ্ছে । তবে লিট ফেস্ট বইয়ের চেয়ে খাবারের দোকান বেশি । ব্যাপারটা বুঝলাম না ।
নজরুল মঞ্চে তখন গান হচ্ছে , তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে । আহা গান শুনে সত্যি আমি মুগ্ধ । এইবার মনে হচ্ছে লিট ফেস্টের ভাল একটা দিক পেলাম । গানটা ভাল ছিল । সুর আর কন্ঠ দুটোই সুন্দর ।
অনেক কষ্টে নিজেকে পুরো গান না শুনিয়ে বের করলাম । কষ্টে সৃষ্টে টিএসসি এলাম । একটা রিকশা নেব ভাবছি । মনের মধ্য থেকে বলল বেটা গরিব তুই রিকশা নিবি । কি এত বড় কথা নিলাম রিকাশা । নীলক্ষেতে ভাইয়ের দোকান থেকে ব্যাগ নিয়ে গেলাম অন্য আর এক ভাইয়ের দোকানে । ভাব কিছু বই দেখে যাব । কিনব না । তারপর উপরের বই গুলো নিজেই আমার সাথে চলে এল । আমার কোন দোষ নাই ।
এবার কিছু সিরিয়াস কথা বলি,
আমি আগেই বলেছি সাহিত্য কি আমি জানি না । তবে আমার কাছে সাহিত্যের মেলা বা বই মেলা বললেই প্রানের সঞ্চার হয়েছে । সেখানে অনেক লোকের সমাগম আর বইয়ের ছাড়াছড়ি । বাংলার প্রসার আর বাংলাদেশকে ধারন করা । কিন্তু এই ফেস্ট তো শুধু এলিটদের জন্য বরাদ্দ । তারাই আসতে পারবেন ।
কেন জানি বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে এখানে তাকে খুজে পাওয়া মুশকিল । ঠিক যেন এমন ই । অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সেটা প্রিন্ট বা কপি মোবাইলে নিয়ে যেতে হবে । তারপর অনেক কিছুই নেয়া যাবে না । এত বাধা । ভাই সাহিত্যে এত বাধা হবে কেন । হ্যা একটা সিকিউরিট তো অবশ্যই লাগবে । কিন্তু এমন একটা ফেস্ট এ বাংলাকে কেন দূরে সরিয়ে রাখা হলো । আমি বলছি না যে একে বারের বাংলা নেই । আছে গবেষনা পত্র, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি এসব । নজরুল, রবিন্দ্রনাথ, শরৎ, বঙ্কিমন্দ্র এরা কোথায় । যারা সাহিত্য কে আলোকিত করে গেছেন তারা কোথায় । আর নতুন প্রজন্মের অনেক লেখক রয়েছেন তারাই বা কোথায় ।
অনেকেই বলেন আজ প্রথম দিন । হ্যা আজ প্রথম দিন । তাতে কি । লিট ফেস্ট নিয়ে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম । এটা কি এলিট শ্রেনীদের জন্য কি না । আমার আজ তাই মনে হয়েছে । সত্যি বলতে এখনে সব কেতাদুরস্থ টাইপের লোকজন এসেছে ।
সবশেষে এটাই বলব লিট ফেস্ট বা লিটারেচার ফেস্ট যেটাই বলেন না কেন । বাংলা ছাড়া কোন কিছুই পূর্ন না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪২