somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাচেলর্স সমিতিঃ এক ভাঙ্গা সমিতির গল্প (মহাপুরুষ সিরিজ)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






অনেক দিন পর বাসায় যাচ্ছি । বন্ধুর বিয়েটাও আর এক ব্যাচেলর বন্ধুর বাসায় বসে খেতে হয়েছে । আল্লাহ ই জানে কপালে কি আছে ।

উকিল সাহেব আছে কিনা বাসায় সেটাও একটা ব্যাপার । ইনি সম্রাট আকবর এর মতন যে তার পুত্র কে আনারকলির সাথে বিয়ে দিতে চায় না । কিন্তু ইনি ব্যতিক্রম । সেলিমের গলায় আনারকলিকে ঝুলিয়ে দেয়াই যেন তার একমাত্র ব্রত । আরে আমিও সম্রাট পুত্র ভয় পাই না । যা হয় দেখা যাবে । পানি পথের যুদ্ধে এত বার জিতেছি । এবার ও জিতব ।

ভয়ে ভয়ে দুর্গে পা রাখলাম । বাসায় একদম ভুতুরে নিরবতা । ঘটনা কি !!!! অপু সাবধান । দরজা দিয়ে ঢুকতেই কাউকে দেখলাম না । যাক সোজা রুমে চলে যাই । ঠিক তখন ই শুনলাম
- দাড়াও !!!

এই রে গায়েবি আওয়াজ । আমি কি তবে সাধনার শীর্ষে পৌছে গিয়েছি । বাহ এত তাড়াতাড়ি । পৃথিবীর মানুষ এখন আমাকে এক নামে চিনবে । আহা !!! দিবা স্বপ্নে বিভোর আমি ।

- এই যে মহাপুরুষ, দিবা স্বপ্ন না দেখে এই দিকে আসেন ।

ও এতো দেখি গায়েবি আওয়াজ না । এযে সম্রাট আকবর ।

- তা বাবা মহাপুরুষ এত দিন কই ছিলেন?

- বাবা আমি একটু ভ্রমনে বের হয়েছিলাম ।

- তা কোথায় কোথায় গেলেন?

- এই তো বাংলাদেশের মধ্যেই ছিলাম ।

- কার সাথে গিয়েছেন?

- একা ।

- আর কেউ ছিল না?

ঘটনা কি !!!! ঘাপলা কোথায়? এত ভাল ব্যবহার তো আশা করা যায় না । ঘাপলা আছে । অনেক বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে । আর আমার সাথে আর কে ছিল এটা কেন জিজ্ঞেস করল ।

- বাবা অপু এত কি ভাবছেন, এবার বাসা থেকে পালালে এই বাসায় কিন্তু আপনার আর জায়গা হবে না , উকিল সাহেব এর কড়া কথা ।

- ঠিক আছে আমি এই বাসায় থাকব না, এই ছাদে থাকব । উনি বাউন্সার দেয়ার চেষ্টা করেছেন আমি হুক করে দিয়েছি ।

- না তুমি এই বাসায় থাকতে হলে বউ নিয়া থাকবা । নয়ত এই বাসায় থাকবা না ।

- বাবা মানুষের বউ নিয়ে আসলে তো আমাকে জেলে যেতে হবে । এটা কি ঠিক হবে ।

- এই আমার সাথে উলটা পালটা বলবা না । তোমাকে বিয়ে করতে হবে । আমি তোমার জন্য মেয়ে দেখেছি । আজ ই বিয়ে হবে । তুমি ঘরে যাও ।

- আমার গার্ডিয়ান এঞ্জেল কই । চারপাশে খালি অন্ধকার । কে আমাকে এই যমদূতের কাছ থেকে বাচাবে ।

- শোন এদিক সেদিক তাকিয়ে লাভ নেই । তোমার মা বা বোন কেউ নেই বাসায় । যাও রুমে যাও ।

কি আর করা । পরেছ মোঘলের হাতে খানা খেতে হবে এক সাথে । দেখা যাবে পরে । আপাতত বিশ্রাম নেয়া যাক । বিকেল বেলা শুভ্র ভাইয়ের সাথে দেখা করতে হবে । উনাকে নাকি বিয়ে দিচ্ছে । এটা ঠেকাতেই হবে । আমাদের ব্যাচেলর্স সমিতির সভাপতি উনি । আর উনি বিয়ে করলে কিভাবে হবে । খেয়েদেয়ে একটা ঘুম দিলাম ।

একদম সেই লেভেল এর ঘুম । ঘুম থেকে উঠলাম এক সুন্দর কন্ঠ শুনে ।

- এই যে উঠুন ।

আহা এত সুন্দর ডাক । মনে হচ্ছে যেন রেজোওয়ান চৌধুরীর রবীন্দ্র সঙ্গীত । এমন ভাবে কেউ সারা জীবন ধরে ডাকত । ধুর এইসব কি ভাবি । মহাপুরুষেরা নারী সঙ্গ থেকে ধুরে থাকে ।

চোখ মেলে দেখল চায়ের কাপ হাতে দাঁড়ানো এক মেয়ে । সুন্দরী বলা চলে । কিন্তু আমার ঘরে ঢুকল কিভাবে । ও দরজা খোলা রেখেই ঘুমালাম ।

- আপনি কে ?

- সেটা পরে জানলেও চলবে । আগে চা নিন ।

- আমি মুখ না ধুয়ে কিছু খাই না ।

- সরি ভুলে গিয়েছিলাম ।

- আপনি ভুললেও কোন সমস্যা নেই । কারন আপনি তো আমার বউ বা প্রেমিকা না ।

- হতে কতখন ।

বাপ রে কি ডেঞ্জারাস কথা । মানে কি । চায়ের কাপ রেখেই সে চলে গেল । শুধু রেখে গেল এক মিষ্টি সুবাতাস । ধুর । না না । আমাকে নীতি থেকে কেউ সরাতে পারবে না ।

বাসা থেকে বের হলাম । উদ্দেশ্য শুভ্র ভাই । তিনি নাকি অনেক চিন্তিত । আসলে ই ব্যাপারটা চিন্তার । ভাই বিয়ে করছে । আর বিয়ে মানেই কারাগার ।

= এই যে শুভ্র ভাই কি খবর । কেমন আছেন । কই থাকেন কোন খবর ই নাই ।

= হইছে থাক । তোর ই তো খবর নাই । আবার আমার খবর নিতে আসছোস ।

= আরে কি যে বলেন ভাই । আপনারা আছেন বলেই তো বেচে আছি । তা আপনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন ।

= হ্যা । ঠিক শুনছোস ।

= ভাই, আপনি আমাদের ব্যাচেলার্স সমিতির সভাপতি । আপনি এই কাজ করলে মেম্বারা কি করব ।

= কয় দিনে আগে তো বগা মানে সাংগঠনিক সম্পাদক বিয়ে করছে । কই আটকাইতে পারছ নাই ।

= ভাই আমি এলাকায় ছিলাম না । নাইলে ছিড়া ফাইলাইতাম ।

= হ, তুমি খালি চুল ই ছিড়তে পারবা ।

= ভাই তাইলে বিয়া কি ফাইনাল ।

= হ্যা ।

ভাই আর দাড়ালেন না । সোজা হাটা । তার গমন পথের দিকে চেয়ে রবি দা কে মনে পরে গেল, “যেতে নাহি দিব হায়, যেতে দিতে হয় , তবু চলে যায়” । তবে এখানে কিছুটা বদলে যাবে, “ বিয়ে নাহি দেব হায়, বিয়ে হয়ে যায়, তবু বিয়ে করতে হয়” । একে একে সবাই শিকলে পরে যাচ্ছে । কি হবে ।

মনে মনে ভাবছিলাম । কে আমাকে আশা দেবে, কে আমাকে ভরসা দেবে । আজ বুঝতে পেরেছি কেন সেদিন বাংলার শেষ নবাব হেরে ছিলেন । মীর জাফরা মরে নাই । শেষ পর্যন্ত শুভ্র ভাই ।

= এই যে মিস্টার একা একা কি ভাবছেন?

চাওয়ালী এখানে কি করে । ধুর দিন টাই খারাপ ।

= আমি নিউটন আইনেস্টাইন গ্যালিলিও আর্কেমিডিস এর সবার তত্ত্ব এক জায়গায় করে সমীকরন মিলানোর চেষ্টা করছি ।

= ভাল তা সমীকরন মিলেছে । সুন্দরী বলল ।

শুনেছি সুন্দরীদের সাথে বেশি কথা বলতে নেই । এরা ভারী ভারী কথা ধরতে পারে না । এখন প্রমান গেলাম ।

= না মিলে নাই । আর মিললেও আপনাকে কেন বলব । রাগে আমার গা জ্বলছে । চিন্তায় গলা শুকিয়ে আছে । তার মধ্যে উনি এসেছেন ।

= তা এত চিন্তা কিসের? আপনি তো বিয়ে করেনি । তাহলে নাহয় চিন্তা করতেন ।

= দেখেন আমার মাথা এমনিতেই গরম । আর আলিফ লায়ালার ডাইনীদের সাথে আমি কথা বলতে চাই না ।

= আমাকে দেখে আপনার ডাইনীদের কথা মনে হল ।

= আয়ানাতে ওই মুখ দেখবে যখন । মুখের উপর লম্বা নাক পরবে চোখে । আপনাকে দেখলে ঝাড়ুতে উড়ে বেড়ানো ডাইনীদের কথা মনে হয় ।

= এই জন্য ই আপনার বিয়ে প্রেম ভালবাসা কিছু ই হয় না । আর হবেও না ।

= আমি তো এইটাই চাই । আর শুনেন । আমি আপনার জন্য একটা বড় দেখে ঝাড়ু কিনে আনব । ওইটায় চড়ে রাতের আকাশে উড়ে টুড়ে বেরাবেন । তবে সাবধান মানুষ এখন রাত জেগে ফেসবুক চালায় ।

= আপনি কিন্তু এবার বেশি বেশি বলছেন । আপনি জানেন আমি কে । কি আমার পরিচয় ।

এই বার লাইনে আসছে । মজা পাচ্ছি । মাথার ভেতরে থাকা টেনশন ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে । এখন থামলে হবে না । চালিয়ে নিতে হবে ।

= আপনি কে তা জেনে আমি কি করব । আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে হন বা পুতিনের ভাতিজি । আমার তাতে কিছু আসে যায় না । তবে হ্যা বিল গেটস হলে ভেবে দেখতাম । ডাইনী হলেই চেহারা মোটামুটি ভাল ।

= মিস্টার আমার ধৈয্যের পরীক্ষা নিয়েন না । আমি যদি রেগে যাই তখন কিন্তু খুব খারাপ হইয় ।

= আরে আমি তো আপনার সাথে কথা বলছি এইটাই বেশি । এখন ও আমার সামনে থেকে যান না কেন ।

হঠাত আমাদের বাসার ডাইনী সোফান ইজবা হাজির । নীলিমা আপু তুমি এখানে । কি করো । ভাইয়া নিয়ে এসছে ।

= আরে রাখো তোমার ভাইয়া । সে আমাকে ডাইনী বলেছে । ঝাড়ুতে উড়ে বেড়ানো ডাইনী ।

= আমি বললাম, তবে হ্যা আপনার কিন্তু সারারা গুলের সাথেও হালকা মিল আছে ।

নাবিলা বলল, আপু তুমি ওর কথা কিছু মনে করো না । ও এমন ই । বাসায় চলো । তোমার সাথে কথা আছে ।

আমি দেখলাম আমার যেন কোন দাম নেই । আমি বললাম, এই ডাইনী উনি আমাদের বাসায় যাবে মানে কি ।

নাবিলা বলল, তোকে আটকানোর ব্যবস্থা হচ্ছে । এবার দেখি কিভাবে পালাস ।

এইটা শুনে আমার আত্মা উড়ে গেল । নীলিমা নামের মেয়ে টা দেখি লজ্জা পাচ্ছে । আল্লাহ আমার চারপাশ ঘুরতেছে । আমার ব্যাচেলর্স সমিতির কি হবে । কে একে দেখে রাখবে ।

আল্লাহ, আমার ব্যাচেলর্স সমিতি কে তুমি বাচাও ।

গল্পঃ ব্যাচেলর্স সমিতি
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×