আত্মহত্যা কি? শখ, নেশা নাকি প্রয়োজন?
অনেকের কাছেই এটা খুবই আঁতেল মার্কা একটা লেখা হবে, জানি। তাই স্মার্ট লোকজনেরা প্লিজ, নিজ দায়িত্বে দূরে থাকুন।
আসলে লিখাটিতে কোন পরিসংখ্যান দিতে বসিনি, বেঁচে থাকার গুরুত্বও বোঝাতে চায়নি কাউকে। বেঁচে থাকতে হয় কেন!! এটা যেমন যেকোন স্বাভাবিক মানুষ বোঝে, একজন পাগলেও কম বুঝে না। যে বোঝেনা সে হয় ইডিয়ট নইলে একজন স্টুপিড । ছোটবেলায় ভাবসম্প্রসারনে পড়তাম, “প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত, বাঁচিবার অধিকার তারই” আর এখন আমি জানি সামান্য বা বিনা কারণে যে মরতে চায়, পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই । আরে বাবা, জীবনে সমস্যা তো থাকবেই। তুমি জন্মাইছ এই পৃথিবীতে, মঙ্গলগ্রহে তো না। তাই এখানে সমস্যা আছে, সমাধান আছে, সুখ আছে, দুঃখ আছে, গলা জড়াজড়ি করা কান্না আছে, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে মাটিতে লুটিয়ে যাওয়ার অভ্যাসও আছে। তাই বলে কি আত্মহত্যা করতে হবে নাকি?
মানুষের লাইফে টিনএইজ আর ইয়ুৎ, খুব ভয়াবহ দুইটা সময়। টিনএজদের সামনে হঠাত করেই নতুন একটা সময় চলে আসে। তখন সে বাচ্চাদের মত আহ্লাদও করতে পারেনা, বড়দের স্বাধীনতা তার নাগালেন বাইরে। বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব কারও সাথেই কথা শেয়ার করা তার জন্য কঠিন। সে তখন ডিপ্রেস হয়ে পড়ে। আর ফলস্বরূপ. . .
ইয়ুৎ এর সময়টুকু আরও ভয়াবহ। চোখে নতুন সানগ্লাস ওঠে, পিঠে পাখা গজায়, হাতে আসে স্বাধীনতার সার্টিফিকেট। সবসময়ই মনে হয় পৃথিবী আমার ইচ্ছামত চলবে। সেই এক্সপেক্টেশন থেকে পান থেকে চূন খসলেই মনে হয় ”কি লাভ বেচে থেকে … ” আম্মু বকসে, সুইসাইড কর.. জিএফ এর সাথে ঝগড়া হইসে? এটেম্প টু সুইসাইড । বিএফ ফোন ধরেনি? ছাদ খেতে লাফ দাও। বন্ধুর সাথে আড়ি? বিষ খাও। অথবা নিজের স্বাদের কোন কাজে ব্যর্থতা, ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমাও। আরে আজব তো, দেশে কি আর কোন সমাধান নাই?
জানা মতে দেশে মধ্যবিত্ত, আর উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের মধ্যেই সুইসাইডের প্রবণতা বেশি। কেন বেশি? কখনো শুনেছেন কোন রিকশাওয়ালা আত্মহত্যা করসে? অথবা ভাত জোটাতে না পেরে গৃহস্থের কর্তা বা কত্রী? না, শোনেনি। কারণ, তারা আমার আপনাদের মত লুতুপুতু না, তাদের কাছে জীবন টা যুদ্ধ, কেউ জেতে কেউ হারে। কিন্তু কখনো সাদা পতাকা তুলে বলেনা ”পারবনা আর …”। তাহলে আপনার কিসের দু:খ? হ্যাঁ, আপনি হয়ত বলবেন যে সময়ে এমন পরিস্থিতি আসে যখন আর কোন পথ থাকে না।. যখন মনে হয় জীবন থেকে আপনার পাওয়ার কিছু আর নেই। হ্যাঁ, জানি, অনেককেই এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়। মনে হয় পৃথিবীতে নিজের প্রয়োজনটা বোধহয় এই শেষ!!!
কিন্তু তাই বলে আত্মহত্যা তো আর বিকল্প প্রয়োজন হতে পারেনা। তাহলে সত্যিই কি কোন পথ খোলা নেই???
আছে, আপনার সামনেই আছে। চোখ খুলে চলুন, রঙীন পৃথিবী কে সাদাকালো ক্যানভাসে আঁকার চেষ্টা করার কি দরকার? যখন কেউ নাই, মনে রাখবেন আপনিই তো এখনও আছেন নিজের জন্য। হয়ত জানেনও না, আপনার জন্য এখনও কেউ হাসে, কেউ এখনও আপনার জন্য অপেক্ষা করে। শুধু খুঁজে নিতে হবে সেই মানুষটিকে। আশে ছেড়ে দিলেন তো হেরে গেলেন।
আত্মহত্যা কি কোন শখের বিষয়? কেন করবেন? কারও সিম্প্যাথি পাওয়ার জন্য? ভালবাসার জন্য? নাকি প্রতিশোধের এর জন্য? নাকি কোন কাজ কাম নাই, তাই কবর সাজাবো নিজের জন্য, এই অমূলক হিসাব? নিজেকেই যতই অপ্রয়োজনীয়ই ভাবুন, পৃথিবীটা তার নিয়মেই চলবে, আপনি আজ মারা যাবেন, সামনের ৩-৪ দিন বিস্তর কান্নাকাটি হবে, আপনাকে ভালবাসে যে মানুষগুলো, চোখের পানি ফেলবে। তারপর সবাই সবকিছু ভূলে স্বাভাবিক হয়ে যাবে আবার। আপনার মৃত্যুবার্ষিকী তে মিলাদ হবে সর্বোচ্চ কিন্তু এতে আপনার কি লাভ?? নিজের অস্তিত্বটা এতই ফেলনা করে দিলেন!! আত্মহত্যার শখ করে আপনি লস ছাড়া কি ই বা পেলেন তবে? জাস্ট এটেম্পট নেওয়ার আগে একবার মন দিয়ে ভাবুন আর নিজেকে প্রশ্ন করুন নিজেই। উত্তরটা না হয় নিজের কাছেই রাখুন.....
যাই হোক, কখনো এত সিরিয়াস পোস্ট লিখার চেষ্টা করিনি। তবুও কথাগুলো যদি দুই একজন সুইসাইডে এটেম্প নেওয়া মানুষ কে একটু হলেও ভাবিয়ে তুলে, সেটাই হয়তো স্বার্থকতা।।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:১৭