somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাসপোর্ট নিয়ে কথকতা

০১ লা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদেশ ভ্রমণ করার জন্য পাসপোর্ট অপরিহার্য । আর এই পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদন করতে গিয়ে এবং অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে পাসপোর্ট নামক যে বস্তুটি শেষ পর্যন্ত হাতে পাওয়া যায় তা নিয়ে-কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কি আম জনতা বিদেশের বন্দরে বন্দরে সমস্যায় পড়েননি এমন সৌভাগ্যবান বাংলাদেশী নাগরিক হয়তো খুব কমই আছেন। লাল পাসপোর্টধারী ভিআইপি পলিটিশিয়ান ও সিআইপিদের ব্যাপারটা আলাদা, ওনারা সকল আইনের ও ঝক্কির উর্দ্ধে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত অনেকের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা আমি শুনেছি। এবার আমার নিজের জন্য পাসপোর্ট করতে গিয়ে নিজেই এক চমৎকার অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।

মঈন উ পূর্ববর্তী সময়ে পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদন করার একমাত্র অফিস ছিল ঢাকার আগার গাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিস। এটা ছিল দালালদের একটা স্বর্গরাজ্য। এই দালালদের মধ্যে একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং এখনো আছে পাসপোর্ট অফিসেরই উচু স্তরের অফিসার এবং নিচু স্তরের কর্মচারী। পাসপোর্ট তৈরির একমাত্র মাধ্যম বলতে ওই দালালদেরকেই বুঝাতো এবং কোন দালালের হাত ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারতো না। এটা হয়েছিল এভাবে যে সারাদেশে পাসপোর্টের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও সারাদেশের জন্য একমাত্র পাসপোর্ট অফিস ছিল এটি এবং চাহিদার তুলনায় এর যোগান দেওয়ার ক্ষমতা কম থাকায় পাসপোর্ট প্রার্থীদের লম্বা লাইন পড়েই থাকতো। একটা পাসপোর্টের আবেদন মাসের পর মাস ধরে ঝুলে থাকতো এবং দালাল ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া ছিল একটা অসম্ভব ব্যাপার।

এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় এই পাসপোর্টের ব্যাপক চাহিদার মূল অংশটি হচ্ছে বিদেশগামী বাংলাদেশী নাগরিক যারা মূলত অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যায় এবং মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠায় এবং এই রেমিটেন্সের পরিমান হচ্ছে দেশের জাতীয় বাজেটের এক তৃতীয়াংশ। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে তাদেরকে হয়রানির প্রক্রিয়াটা শুরু হয় এই পাসপোর্ট তৈরির একটা জালিয়াত চক্রের হাত ধরে এবং তারপর আদম বেপারীর শোষণ এবং এটা চলতেই থাকে। এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। এই প্রসঙ্গে পরে একসময় লিখবো।

মঈন উ এই পাসপোর্ট দালাল চক্রকে ভাঙ্গার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি সারাদেশে যতদূর মনেপড়ে ১৭ টি আঞ্চলিক অফিস স্থাপন করার পদক্ষেপ নেন। আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট অফিস গুলো স্থাপিত হওয়ায় মঈন উ পরবর্তী সময়ে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে যারা পাসপোর্টের আবেদন করতে আসতেন তাদের দু্র্ভোগ অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম কমেছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা একজন পাসপোর্ট প্রার্থীকে একটা পাসপোর্ট পেতে যে কতোটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো তা কেবল ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। মইন উ‘র অনেক কু-কীর্তির ভীরে এটা একটা সু-কীর্তি সে রেখে গেছে।

কিন্তু ভূত রয়েই গেছে। পূর্বে দালালদের মাসোহারা দিয়ে পাসপোর্ট পেতে হতো,এখন পুলিশকে ‍দিতে হয়। পার্থক্য এইটুকু তখন দালালের হাত হয়ে পুলিশের ভাগটা পুলিশের কাছে চলে যেত, থানায় বসেই তদন্ত হয়ে যেত। এখন পুলিশকে পাসপোর্ট প্রার্থীর বাড়িতে এসে হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের মাসোহারাটা আদায় করতে হয় (বেচারাদের কষ্ট বেড়েছে!)। যদি কোন আবেদনকারী তদন্তকারী পুলিশ কর্মকতাকে খুশি করতে ব্যর্থ হন, তার কপালে খারাপি আছে! পাসপোর্ট ফর্মের দ্বিতীয় পাতায় আবেদনপত্র পূরণ ও পাসপোর্ট প্রদান সংক্রান্ত সাধারণ তথ্যাবলীর ১৪ ধারায় স্পষ্ট করে লেখা আছে পুলিশ প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে (১১/২১/৩০ দিন পরে) পাসপোর্ট প্রদান করা হবে। বিরূপ প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার বুঝুন ঠ্যালা!

এবার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমার ঠিকানা ঢাকার কেরানিগঞ্জ। নতুন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস অনুযায়ী আমার ‍পাসপোর্ট আবেদনের বর্তমান স্থান ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিস। নিয়ম হলো পাসপোর্ট আবেদনের ফিস জমা দিতে হবে সোনালী ব্যাংকের শাখায়। এই পাসপোর্ট অফিসের আওতাধীন সোনালি ব্যংকের শাখা সদর ঘাট। জেলা প্রসাশকের অফিস হতে সদর ঘাট সোনালী ব্যাংক শাখা পর্যন্ত পায়ে হেটে কম করে হলেও ১৫ মিনিটের পথ। অর্থাৎ একজন একজন আবেনকারীকে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার জন্য আগে সদর ঘাট গিয়ে ব্যাংকে ফিস জমা দিতে হবে তারপর আবেদন পত্র জমা দেওয়ার জন্য তাকে পূনরায় জেলা প্রশাসকের অফিসে আসতে হবে। আম‍াদের দেশে নীতি নির্ধারকদের মাথা বরাবরই উর্বর। তারা সবসময় চেষ্টা করেন কিভাবে জনগনের দুর্ভোগ বাড়ানো যায়। শুধুমাত্র পাসপোর্ট ফিস জমা নেওয়ার জন্য সোনালী ব্যাংকের একটি করে বিশেষ শাখা যদি প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসের ভেতরেই খোলা হয় তাহলে রাষ্ট্রের কী এমন ক্ষতি হয়ে যাবে? এটা করা হবে না, কারণ এতে জনদুর্ভোগ কমে যাবে।

পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দিয়ে এলাম। যথা সময়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে দয়াপরবশ হয়ে ফোন করলেন (০১৭১৮ ৭৫৪১৪৮, নম্বরটা ‍দিয়ে দিলাম, ইচ্ছা হলে এই মহান ব্যাক্তির সাথে কথা বলে দেখতে পারেন)। বল্লেন আমাকে তার সাথে দেখা করতে। আমি তখন ঢাকার মিরপুরে আমার কলেজের ক্লাশে। অপারগতা প্রকাশ করে তাকেই আমাদের বাড়িতে আসতে অনুরোধ করলাম। এতে তিনি আমার ওপর নাখোস হলেন এবং ‍অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদের বাড়িতে আসলেন তদন্ত করতে। বাড়িতে ছিলেন আমার মা ও আমার এক কলেজ পড়ুয়া ভাগিনা। এসেই তিনি হম্বি তম্বি শুরু করেন। বিদ্যুৎ বিলের কাগজ চাইলেন, দেয়া হলো। কাগজ দেখে বল্লেন বিদ্যুৎ বিলের কাগজে গ্রামের নাম লেখা আছে বালুরচর, পাসপোর্টের ফর্মে দক্ষিণ বালুরচর লিখেছে কেন? আমার ভাগিনা তার কাছ থেকে বিলের কাগজটি নিয়ে তাকে দেখিয়ে দেয় বিলের কাগজেও দক্ষিণ বালুরচর লেখা আছে।

এবার তিনি ফ্যাক্রা ধরলেন ‍আরেক জায়গায়। আমার বাবা গত হয়েছেন মার্চ ২০০৯-এ,আমি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি অক্টোবরে। সুতরাং তার ভাষায় আমার বাবার নামের আগে মৃত লেখা ফরজ। তার সাথে বিতর্কের এক পর্যায়ে আমার ভাগিনা আমাকে ফোন করে তাকে আমার সাথে কথা বলতে বলে। তিনি এবার আমাকে প্রশ্ন করলেন, আপনার বাবাতো সাত মাস আগে মারা গেছে,আপনার বাবার নামের আগে মৃত লিখেননি কেন? আমি তাকে বলি, দেখুন আমার সকল সার্টিফিকেটে আমার বাবার নাম যেভাবে লেখা আছে, আমি সেভাবেই লিখেছি, আমি চাইনা নামটা আরো বড় হোক। আমার কন্ঠের নমনীয় সুর শুনে তিনি ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো ‍আচরন শুরু করলেন। বল্লেন, লিখছেন, ঠিক আছে, এখন আপনার বাবাকে করব থেকে ওঠিয়ে আনেন। আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম, পাসপোর্ট ফর্মের আবেদনপত্র পূরণ ও পাসপোর্ট প্রদান সংক্রান্ত সাধারণ তথ্যাবলীর ১৭ টি ধারার কোথাও লেখা আছে যে কোন মৃত ব্যক্তির নামের আগে মৃত না লিখলে পাসপোর্ট দেওয়া হবে না? তিনি হুমকি দিয়ে বল্লেন, ঠিক ‍আছে, আমি এভাবেই রিপোর্ট করবো, এই ফর্মে আপনার পাসপোর্ট হবে না। একমাস পরে ‍গিয়ে আবার ফর্ম জমা দেন, তারপর দেখেন কতদিন পরে আর কত টাকা খরচ করে পাসপোর্ট পান।

হুমকিতে তার কাজ হলো। তিনি ৫০০ টাকা মাসোহারা চাইলেন, অন্যথায় সময় মতো তো পাসপোর্ট পাবইনা, তার পর আরো ঝক্কিতে পড়তে হবে। আমাকে বাধ্য হয়েই তাকে টাকাটা দিতে হলো। এটা শুধু আমার বেলায় না। আমার এলাকায় যতগুলো পাসপোর্টের তদন্ত হয়েছে, সবাইকেই কিছু মাসোহারা দিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশকে খুশি করতে হয়েছে। ওরা এসেই কিছুনা কিছু দোষ খুজে বের করবেই এবং কিছু মাসোহারা দিতেই হবে। শুধু আমার এলাকা না, সারাদেশে একই অবস্থা। পুলিশ নামক প্রাণীটি বাংলাদেশের সর্বত্রই একরকম। এখানে আমার প্রশ্ন একজন সরকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়ন করার পর এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের অন‍ুলিপি নেওয়ার পর ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে আর কি তদন্ত করার আছে? যদি এমন তদন্ত করেই সব কাজ করা লাগে তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজনটা কি? এটা কি শুধুই দুর্ভোগ বাড়ানো নয়? যদি তদন্তই করতে হয় তাহলে আবার সত্যায়ন করার কি কোন প্রয়োজন আছে?

পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে এত সতর্কতা অবলম্বন করার পরও ভিনদেশী জঙ্গি ও মিয়ানমার থেকে আসা উদ্ধাস্তুরা বাংলাদেশী পরিচয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে এবং শ্রমিক হিসেবে বিদেশে ‍গিয়ে বিভিন্ন কুকর্ম করে বাংলাদেশর শ্রমিদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। এথেকে প্রমাণিত হয় পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রচলিত যেসব কড়াকড়ি আছে তা সবই কাগুজে এবং বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ নেই।

নির্ধারিত তারিখের অনেক পরে পাসপোর্ট আনতে গেলাম। পাসপোর্টও পেলাম। কিন্তু পাসপোর্টে আমার ঠিকানা দেখে তো আমি হতবাক! আমি ফর্মে লিখলাম কি আর এখানে লেখা হলো কি? ছবি দেখুন




প্রথমটি পাসপোর্টে লেখকের হাতে লেখা আমার ঠিকানা। দ্বিতীয়টি আমার পূরণ করা ফর্মের ফটোকপির অংশ। পাসপোর্টে বাড়ি নম্বর লেখা হয়েছে H≠3. অর্থাৎ হ্যাশ চিহ্নকে(#) লেখা হয়েছে অসমান চিহ্ন(≠)। কোন স্পেস বা কমা না দিয়েই রোড নম্বর লেখা হয়েছে R=1. অর্থাৎ এখানে হ্যাশ চিহ্নকে লেখা হয়েছে সমান(=) চিহ্ন! বাড়ি ও রোড নম্বর পাশাপাশি এমন ভাবে লেখা হয়েছে দেখে মনে হবে আমার বাড়ি নম্বর 3R.

আমি সাথে সাথে অভিযোগ করলাম আমার ঠিকানা ভুলভাবে লেখা হয়েছে। আমাকে পাঠানো হলো লেখকের রুমে। অনেক্ষণ অপেক্ষার পর লেখকের রুমে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া গেল। তাকে ভুলটা দেখিয়ে বলি এটাতো হ্যাশ চিহ্ন হবে। তিনি আমার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন- হ্যাশ চিহ্ন আবার কি? একজন পাসপোর্ট রাইটার জানেন না হ্যাশ চিহ্ন কি জিনিশ। বাড়ি বা রোড নম্বর লেখার সময়ে নম্বরের আগে হ্যাশ চিহ্ন দিয়ে লেখা হয় এটা তিনি জানেন না। তবুও তিনি পাসপোর্ট রাইটার। যে ব্যাক্তি সামান্য একটা হ্যাশ চিহ্ন লিখতে জানেনা কোন যোগ্যতায় সে একজন পাসপোর্ট রাইটার হয়? ‍তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কত? কিসের জোরে সে এই চাকরি পেয়েছে?

তাকে আমার মোবাইল ফোনের হ্যাশ বোতামটি দেখিয়ে বল্লাম এটি এভাবে লিখতে হয়, সংশোধন করে দিন। তিনি এবার রোড নম্বরের আগের সমান চিহ্নটিকে মাঝ বরাবর কেটে অসমান চিহ্ন(≠)করে দিলেন। আমি বল্লাম এটাতো হ্যাশ চিহ্ন হলো না। তিনি বল্লেন এখানে আর হাত দেওয়া যাবেনা। সংশোধন করার পর আমি যে পাসপোর্ট হাতে পেলাম তার চেহারা হলো এরকম।

এখানেই শেষ নয়। পাসপোর্টে ফর্মের যে অংশটুকু আমার স্বাক্ষরের জন্য নেয়া হয়েছে তা কাটা হয়েছে আকাবাকা করে, যা পাসপোর্টে বাজে দেখাচ্ছে।


অন্যান্য দেশে পেশা উল্লেখ করার কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বাংলাদেশী নাগরিককে পাসপোর্টে পেশা উল্লেখ করতে হয়। এই পেশা নিয়ে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের কম ঝক্কি পোহাতে হয় না। একজন শ্রমিক হয়তো গিয়েছেন একটা পেশা নিয়ে, সেখানে গিয়ে তিনি কাজ পেলেন ‍অন্য কোন একটা। ব্যস, পুলিশ তাকে হাজারটা প্রশ্ন করবে। তোমার পেশা ওমুক, তুমি এই কাজ করছো কেন? আগেই বলেছি আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের মস্তিস্ক সবসময়ই একটু বেশী উর্বর।

আমার কলেজের আমার শ্রদ্ধেয় এক ম্যাডাম (যিনি একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর) তাঁর ছেলেসহ একবার আমেরিকা ভ্রমনে যান। তাঁর ছেলের বয়স তখন ১৫-এর কম ছিল এবং নিয়ম অনুসারে ম্যাডাম ও তাঁর ছেলের পাসপোর্ট একসাথে করা হয়। যদিও ম্যাডাম ফরমে তাঁর ছেলের বয়স ১০ বছর উল্লেখ করেন,পাসপোর্টে তাঁর ছেলের বয়স লেখা হয় তাঁর বয়সের সমান! ‍আর পাসপোর্টে ম্যাডামের ছেলের স্বাক্ষর লাগানো হয় উল্টা করে! এটা ধরা পড়লো ইংল্যান্ডের হিথরো বিমান বন্দরে। ব্যস ওরা অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে এরকম নানা জনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা আছে। আছে সুক্ষ অপমানের যন্ত্রনা।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করতে ভুলে গেছি। বিষয়টা হলো হাতের লেখা। এমন বিশ্রী আর নোংরা হাতের লেখা দিয়ে পাসপোর্ট লেখা হয় যে দেখলে বমি চলে আসে। কখনো কখনো লেখা বুঝাই যায়না। পূর্বে পাসপোর্ট লেখার ক্ষেত্রে হাতের লেখার মান নিয়ন্ত্রণ করা হতো। হাতের লেখা দেখে রাইটার নেওয়া হতো। এখন আর তার বালাই নাই। এত বাজে হাতের লেখা ধারী ব্যক্তিরা এখানে কাজ করার জন্য বিবেচিত হয় কোন বিবেচনায়? লেখা দেখলে মনে হয় এরা কখনো প্রাইমারী স্কুলের গন্ডিই পেরোয়নি। এখানেও নিশ্চয়ই মামা-খালু বা মাসোহারার ব্যাপারটি সচল?

এমনই অযত্ন অবহেলায় তৈরি হয় আমাদের দেশের পাসপোর্ট। এরকম হাজারো ভুলে ভরা পাসপোর্ট ‍নিয়েই বাংলাদেশিরা বিদেশ ভ্রমণ করে আর বিদেশের ইমিগ্রেশনে হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। বিদেশিরা এই পাসপোর্ট দেখে আর উপহাস করে। লজ্জিত হতে হয় পাসপোর্টের বাহককে। এই লজ্জা কি শুধুই বাহকের? এটিতো বিদেশে আমাদের জাতীয় পরিচয়ও বহন করে। ভুলে ভরা এসব পাসপোর্ট ভূলুন্ঠিত করছে বাংলাদেশের সম্মান।

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে অনেক আগেই হাতে লেখা কাগজের তৈরি পাসপোর্টের প্রচলন ওঠে গেছে। আমরা এখনো চলছি সেই মান্ধাতার আমলের ব্যবস্থাতে। গত বিএনপি সরকারের সময় মেসিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির একটা উদ্যেগ নেয়া হয়েছিল। এই কাজের ১০% কমিশন কে পাবে তা রফা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কাজটিই আর এগুয়নি। ২০১১ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে কাগজের তৈরি এবং ২০১৪ সাল নাগাদ মেসিন রিডেবল পাসপোর্টের ব্যবহার ওঠে যাবে। পরিবর্তে আসবে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট। দেশের বাইরে যতো বাংলাদেশী আছে সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করতে হবে। না হলে হয়তো আমরা দেখব মঈন উ কালীন বিমান সংকটে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিদেশে চাকুরি হারানোর মতো পাসপোর্ট সংকটে বাংলাদেশীরা চাকুরী হারাবে। আমাদের দেশের সরকার কতোটা প্রস্তুত?

হ্যা প্রস্তুতি কিছুতো আছে বটেই। পত্রিকার খবরে প্রকাশ বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশে পাসপোর্টের রঙ ও নকশা । পাসপোর্টের প্রচলিত সবুজ রং এর বদলে আসছে নীল রং। উদ্যেগ খারাপ না, মাথায় ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা আরকি। যেমন বিডিআর থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। পাসপোর্ট প্রদানের সামগ্রিক ব্যবস্থার উন্নতি না করে রঙ বদলিয়ে কলঙ্ক ঢাকার চেষ্টা। তবে চলতি বছরের ১ মে থেকে বিশ্বের প্রায় একশটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ই-পাসপোর্ট চালু করতে যাচ্ছে বলে যে খবর মিডিয়ায় এসেছে তা নিঃসন্দেহে ভাল খবর। দেখা যাক কতদূর কি হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২৪
২৯টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×