somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্প : শুচিবায়ু (হয়তো রম্য)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আর পারছি না কুমুদিনী। তোমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা যেনো ফুরাতেই চাচ্ছে না। সত্যি করে বলতো দেখি, আর কতো দূর ? আর কতো দূর তোমার বাপের বাড়ি ? আমি যে আর পারছি না কুমু ! পেটের ভেতরে আমার গুড়গুড় করিয়া মেঘের গর্জন শুরু হইয়াছে।

কুমুদিনী পেছন ফিরিয়া তাকাইয়া দেখে তার সদ্যবিবাহিত লাজুক স্বামী প্রকৃতির ডাকে নিজেকে বিসর্জন দিয়া ছাতার আড়ালে মাথা নিচু করিয়া ক্ষেতের আলে প্রাকৃতিক কর্ম সারিয়া ফেলিতেছে।

হরেষলাল বিয়ের পর এই প্রথম কুমুদিনীকে নিয়ে শশুরালয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বর দ্বিরাগমন যাকে বলে। লঞ্চ থেকে নামিয়া প্রায় সোয়া ক্রোশ দুরত্বে কুমুদিনীর বাবার বাড়ি। ঐ পথটুকু পার হইতে দু'পা-ই ভরসা। তাই বিকল্প কিছু ভাবার অবকাশ নেই।

বাড়িতে ওঠার ঠিক আগ মুহূর্তে হরেষলালের এমন কুকীর্তি কুমুদিনীর শীতল শরীরে যেনো পেট্রোলের আগুন ধরাইয়া দিল। রাগে-লজ্জায় তার বদনটি যেনো রক্তিম বর্ণ ধারণ করিল। হায় ভগবান ! বাড়ির সম্মুখে আনিয়া এমন লজ্জ্বায় কেনো ফেলিলে মোরে। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে বাড়ির কেউ এমন কুকীর্তি স্বচক্ষে অবলোকন করে নাই।

কুমুদিনী হৃদয়ে অঙ্গার পোড়া জ্বালা আর মুখে সুকৃত্রিম হাসি লইয়া বাড়িতে প্রবেশ করিলে বাড়ির বউ-ঝি'রা নতুন জামাইকে উলুলধ্বনি সহকারে বরণ করিল। কুমুদিনী মা-মাসীর সাথে গল্পে মত্ত হইয়া ক্ষেতের আলের দুঃস্মৃতি ভুলিয়া গেল। ইতিমধ্যে নতুন জামাই আগমন উপলক্ষে বাড়িতে মিষ্টি খাওয়ারও ধুম পড়িয়া গেল।

হঠাৎ বাড়ি জুড়ে সবার মুখে মুখে গন্ধ গন্ধ রব শুনিয়া বায়ুবেগে কুমুদিনী হরেষলালের কাছে উপনীত হইয়া তার কানেকানে অথচ ক্ষীপ্রতা নিয়া বলিল - কী হয়েছে সত্যি করে বলো তুমি। হরেষলাল কাঁপা কাঁপা স্বরে কিছু একটা বলিতে চাহিলে কুমুদিনী তার আদ্যপান্ত না শুনিয়া নাকের রন্দ্রদ্বয় চাপা মারিয়া চরম ক্ষীপ্রতা নিয়া আদেশের স্বরে বলিল- তুমি এখুনি গিয়ে পুকুরের জলে ঝাঁপ মারিবে।

হরেষলাল মাঘের তীব্র শীতে সন্ধ্যার আঁধারে চুপিচুপি পুকুরের হিমশীতল জলে শ্বেত বর্ণের ধুঁতি আর নিজের নিম্নাঙ্গ ধুইতে লাগিল। কুমুদিনী অন্ধকার পুকুরঘাটে দাঁড়াইয়া স্বামীকে অবলোকনকালে কুমুদিনীর মা খুপি জ্বালাইয়া মাছ ধুয়ার তরে পুকুরে আসিলে জামাইর এমন কীর্তি দেখিয়া বলিলেন- বাবা, কী হইয়াছে তোমার ?

কুমুদিনী বড়শির ছিপের মতো হ্যাচকাটানে মায়ের কথা কাড়িয়া নিয়া বলিল- মাগো, তোমার জামাইর সুচিবায়ুতার দোষ বিদ্যমান । শরীরে এক দানা ধুলা পড়িলেই তা গরমকালেই হোক বা শীতকালেই হোক তার স্নান করিবার বাতিক রইয়াছে।

বাড়ির কাজের ছেলে সুনীল কোথা থেকে অকস্মাৎ পুকুর পাড়ে এসে উপস্থিত হইলো। সে চিৎকার করিয়া বলিতে লাগিল- কাকিমা, কাকিমা, তোমার জামাই আজ একখানা আকাম করিয়াছেন। উনি কাপড়চোপড়ে প্রাকৃতিক কর্ম সারিয়ে ফেলেছেন। তিনি হাগু দিয়াছেন, তাই বাড়িময় এমন ধু ধু গন্ধ। এমনকি তিনি ক্ষেতের আলেও এই কর্ম করিয়া আসিয়াছেন !

এরই মধ্যে হট্টগোল শুনিয়া পুকুর পাড় লোকে লোকারণ্য হইয়া উঠিল। হাটে হাড়ি ভাঙায় কুমুদিনী এক লম্প দিয়া সুনীলকে ধরিয়া বেদম উত্তম-মধ্যম শুরু করিল। শাশুড়ি কাটামাছ জলে ফেলিয়া দুপায়ের আঘাতে মাটি কাঁপাইয়া বাড়িমুখো ছুটিতে লাগিলেন। হরেষলাল ছলছল চোখে আকাশ পানে তাকাইয়া বিড়বিড় করিয়া বলিলো- আহ.. এ বিপদে মোরে কেনো ফেলেছো দীননাথ ? রক্ষা করো তুমি, এবারের মতো রক্ষা করো মোরে !

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×