somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামীলীগ: দিনবদলের লালসালু চৈতালি সন্ত্রাসী হাওয়ায় উড়ল বলে!

০৭ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনপ্রিয় উপন্যাস লালসালুর এবার মজিদ চরিত্রটি সুনিপুন ভাবে চরিত্রায়ন করলেন একজন নারী। বাংলার মানুষের সামনে দারিদ্র্য বিমোচন, গণতন্ত্রায়ন, সন্ত্রাস নির্মুল, দর্নীতিদূরীকরন, কর্মসংস্থানের দৃস্টিনন্দন ডিজিটাল জ্বলজ্বলে চুমকি বসিয়ে বিরাট এক দিনবদলের লালসালু দিয়ে মাজার জমিয়ে ফেললেন তিনি। বোকাসোকা, মুর্খ, মহব্বতনগরবাসীকে কে আর থামায়! কেহবা ডাব, কেহবা কদু, কেহবা মুরগীর বাচ্চা নিয়ে হাজির লালসালুর চারপাশে। দারিদ্র্যর কষাঘাতে জর্জরিত কৃষক আইজুদ্দিন ভাবল এবার ধান বেচে ঘরে টিনের চাল দিবে, আর ক্যাম্পাসে গন্ডগোল হবেনা এমন আগাম চিঠি লিখে মায়ের কাছে এসএমএস করেছিল হবু ডাক্তার রফিকুল হক, বেকারত্বের এটাই শেষ বছর- এমন কথা শুনিয়েছিল প্রেমিকাকে বন্ধু নাজমুল, আরো কত শত মানত, কত শত কথা, রূপকথা। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন সুনিপুন লালসালু আওয়ামীলিগ বিছাতে পেরেছিল যে ঘোরতর মাজার বিরোধির মনেও খটকা লেগে যায়! সত্যি, বড় হুজুর/মামা ওখানে ঘুমাচ্ছেনা তো। চেনাজানা চেহারার বাইরে নবীন কিছু লোককে মন্ত্রিত্ব দিয়ে বিশ্বাসটা আরো একটু প্রগাড় হয়। লালসালু বিরোধিরা দ্বিধান্বিত হয় আরো। না! এবার বোধ হয় মহব্বতনগরে কামেল বান্দার পদধুলি পড়েছে। চুপ চাপ থাকি। বলা যায়না কার ভিতর কি আছে!
বেশীদিন লাগছেনা। ফাল্গুন শেষের চৈতালি দখিনা হাওয়া শুরু হতে না হতেই লালসালুর ঈষান কোণটা ঈষৎ উলংগ হয়ে পড়ল বলে। মহব্বতনগরবাসী মুখে আর কিছু বলেনা। কপাল কুঞ্চিত হয়। কেবলই ফিসফিসায়। তবে চলুন শুনি তার কিছুটা।
নবম শ্রেনীতে পড়ি। কোন এক দিন ক্লাশ শেষে হুড়মুড় করে একদল সিনিয়র ভাই (কলেজে পড়েন) শ্রেনীকক্ষে ঢুকে পড়লেন। ক'জন কে চিনি, ক'জনকে না। মোটামুটি নেতা ঘোছের একজন ছাত্রলীগ, আওয়ামীলিগ, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে কি কি জানি বললেন। শেষে কোন প্রশ্ন আছে কিনা চান্স দিলে- কাচুঁমাচু ভাবে আমি বললাম 'ভাইয়া মুক্তিযু্দ্ধের চেতনা এই জিনিসটা কি? আর একটু সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলবেন কি?' উনি আবারো অনেক কথা বললেন। আমি কিছুই বুঝলাম না। দুর্বোধ্য ঠেকল।
এই একটা এবং কেবলমাত্র একটা বিষয় কে সম্বল করে চলছে আওয়ামীলিগ গত ৩৮ বছর ধরে। বিদ্যুৎ, মশা, ছারপোকা, গ্যাস, পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, ধান, পাট, গার্মেন্টস, ব্যাংক, রিজার্ভ যেকোন প্রশ্ন করুন, তারা ইনিয়ে বিনিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প টেনে তাবৎ নন-আওয়ামীলিগ দেশবাসীকে রাজাকার বা স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হিসেবে রন্জিত করে প্রশ্নকর্তার জাত-পাত নিয়ে প্রশ্ন করবে। পরিস্থিতি বুঝে প্রশ্নকারীও মানে মানে 'কেটে পড়া বেহ্‌তর' ছড়া গান রচনায় নিবৃত্ত হতে বাধ্য হন।
অখন্ড পাকিস্তানের পশ্চিমাংশে অনুপস্থিত কিন্তু পূর্বাংশের অবিচ্ছেদ্দ্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও তৎকালীন বাংলাদেশ ছিল সমার্থক। পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়ক শোষকগুস্টির বিরূদ্ধ এ একতা ছিল বাস্তবতা। কিন্তু স্বাধীন বাংলায় এ প্রেক্ষিত অবলুপ্ত হলে, ধীরে ধীরে জন্ম নেয় ভিন্ন বাস্তবতা। মানুষের নানাবিধ মত, পথ, চাহিদা, প্রতিবাদকে ঘিরে জন্ম নেয় ভিন্ন ভিন্ন ভীড় ভাট্টা। ২০০৯ এর বাংলাদেশে অ-আওয়ামী নাগরিকের সংখ্যা অবশ্যই ১৯৭০ এর তুলনায় ভিন্ন। আর এ ভিন্নতা, বাংলার মানুষের এ স্পর্ধা (!), এহেন গণতন্ত্র আজো মনে নিতে পারেনি আওয়ামীলিগ, মেনে নিয়েছে মাত্র। ব্যক্তিগতভাবে সততা, ভদ্রতা, বিনয়, দেশপ্রেম অনেক আওয়ামী রাজনৈতিকের মধ্যে থাকলেও 'উপরোক্ত কালেক্টিভ ফ্যাসিবাদে গভীরভাবে নিমজ্জিত আওয়ামী মনস্তত:।' রাস্তাঘাট, সভা সমিতি, সামাজিক যেকোন প্রোগ্রামে কথা বললেই এ মনস্তত্বের সন্ধান পাঠকরা পাবেন।
এখান থেকেই সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা স্নিগ্ধ বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে সাংগঠনিক সন্ত্রাসবাদ। জন্মদাতা আওয়ামীলীগ। সামাজিক চুরি, ডাকাতি, খুন খারাবির বাইরে এ এক নতুন দানব। জাসদ এর প্রথম শিকার। নিতান্ত সাধারন মানুষও ক্ষনে ক্ষনে আক্রান্ত হয় এতে। জয়নাল হাজারীর ফেনী, তাহেরের লক্ষীপুর, আলতাফ গোলন্দাজের ময়মনসিংহ, শামীম ওসমানের নারায়নগন্জ, ইকবালের মালিবাগ, হাসনাতের বরিশাল এবং শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। সরকারের দায়িত্বশীল আসনে বসে নাগরিকের নিরাপত্তা দান যখন মৌলিক দায়িত্ব, খোদ সরকারই পুলিশের বৈধ অস্ত্র ও দলীয় কর্মীর অবৈধ অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে অবলা অসহায় গ্রামবাসীর উপর। ফেনীর দাগনভুঁইয়া ছোট একটি উদাহরন। আফসোস! তাইতো দেখি নিতান্ত সাধারন বয়স্ক মানুষ 'অদ্ভুৎ এক আওয়ামী ভয়ে ভীত।' যার মর্মাথ 'ডিজিটাল লালসালুতে মুগ্ধ' হওয়া তরুন আমরা বুঝি একটু পরে।
অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি দল, মাঠ পর্যায়ে বিস্তৃত সংগঠন, আমলাতন্ত্রে বিরাট সমর্থক, মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক জগতে নিরংকুশ গরিস্ঠতা, প্রতিবেশীর প্রেয়সী দৃস্টিভংগির অধিকারী আওয়ামীলিগই পারত দুর্ভাগা দেশটাকে চেন্জ করতে। এখনো পারে। ইচ্ছার ব্যাপার।
কিন্তু আজকের সংসদ অধিবেশনে 'নৌবিহাররত' আওয়ামীলীগকে দেখে মনে পড়েছে ছাত্রলীগের কথা। কি সে কথা?
পচনটা চরম আকার ধারন করেছে মধ্য থেকে নবীন তথা ছাত্রলীগ(অছাত্র সহ), যুবলীগ, শ্রমিকলীগ পর্যায়ে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির শ্লোগান তারা দেয়। (বন্ধু। অন্তত: মারবেনা এই অভয়ে) ক্যাম্পাসে জনৈক বড়সড় নেতাকে বলেছিলাম 'বুঝাত'। বন্ধু শুধু মুচকি হাসি দিল। সোজাসাপটা বলা যায়- একদল পেশাদার খুনি, সন্ত্রাসী, চাদাঁবাজ, ছিনতাইকারী, ডাইলখোর, অতি নিকৃস্ট চরিত্রের ছাত্র/ ভুয়া ছাত্রের সংঘটিত রূপ ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলিগের জুনিয়র অংশ। টেলিভিশনে তাদের চেহারা দেখে ভাবতে অবাক লাগে 'এরা ছাত্র?' কলম তুলে দেয়া, ভালো ছাত্র বাহাদুর, পরীক্ষার ৩মাস আগে রিটায়ার্ড- ইত্যাকার মলম লাগিয়ে সর্বাংগে পচন ধরা ছাত্রলীগ নামক দুর্গন্ধ ছড়ানো কীটটাকে আর বাচিয়ে রাখার অর্থ হয়না। তাই এর বিলুপ্তির প্রস্তাব করেছে আওয়ামীলিগের কেন্দ্রীয় ফোরাম।
সেটা ঘরের কথা। বাইরের কথা হল- লালসালু আলগা হয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাস, হালুয়ারুটি, দলীয়করন, চিরাচরিত ফ্যাসিবাদের ঝড়ো হাওয়ায়। মুর্ছিত জমিলারাও পবিত্র মাজারে লাথি মেরে বুঝিয়ে দিবে-ভন্ড মজিদ, ভুয়া ত্বর মাজার। যতই অবলা হোক না কেন তারা!
এটাই আওয়ামীলীগ। তবু সবাই ভালো থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৯
২৯টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×