somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হালুয়া রুটির শবে-বরাত, শিকেয় তোলা আল-কুরআন ও Customize ইসলাম চর্চা

০৫ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শপথের কান্ডারী, সুশীলতার কাবাগৃহ প্রথমালো পত্রিকার গত মঙ্গলবারের নকশা পাতা পুরোটাই ভর্তি করা হয় শবে-বরাতের হালুয়া ও নানাবিধ রেসিপি দিয়ে! বোধ করি অন্যান্য পত্র-পত্রিকার কথিত ধাঁচের পাতাও খালি থাকবেনা। আর রেসিপি দেয়ার মহান দায়িত্ব দিয়ে তো কাগজওয়ালারা খালাস! মাল মসলা দেবে কে? কেন- অগোরা, নন্দন, পিকিউএস, সপ্ন সবাই তো এরই মধ্য ঢাকঢোল পিটিয়ে তেল, আটা, ময়দা, গোস্ত, সুজিতে শবে বরাতের মহান পবিত্রতায় (!) গদগদ হয়ে বিরাট মূল্যহ্রাস! খাও বাংগালী খাও। হালুয়া রুটি গোস্ত ভূনা খেয়ে কোকাকোলার ঢেকুর তুলে জপতে থাক- শবে বরাত, ইল্লাল্লাহ্‌! ইহকাল পরকালে ঠেকায় কে?
শিশুবেলা থেকেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক নীতি সমূহের চেয়ে আধা, সিকি বা পুরা ভুয়া নানান 'ভাল' কাজের উৎপাতে প্রাণ ওস্ঠাগত। হিজরী শাবা'ন মাসের এদিনে মা, চাচী, দাদীকে দেখেছি বেশ কিছু রসম নিয়ে দৌড় ঝাপঁ। মুরগী জবাই, রুটি বানানো এর মধ্য অন্যতম। জিজ্ঞাসু মন এটা কেন? ওটা কেন? বলে জননী কে ঘ্যানর ঘ্যানর করলে জবাব এদিনে আল্লাহ রিজিক বরাদ্ধ করেন। তাই ভাল ভাল খাবার। তা না হলে সারা বছর ছাইপাশ খেতে হতে পারে!
মাগরিবের পরপরই স্থানীয় মসজিদে ওয়াজের জোয়ার। অন্তত: রাত ১২ টা অবধি এলাকাবাসীর উপর শব্দ জুলুম। তারপর ব্যাপক কোরাস সমেত মিলাদ। ইয়া নবী সালামালাইকা..। অত:পর জিলাপী বিতরন। জনতার মূলস্রোত এতেই হাঁফিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষন অযু চেপে রাখা থেকে নিস্কৃতি পেয়ে মনের আনন্দে পেটের বায়ুমন্ডল হালকা করতে করতে বাটিতে গমন। বোধগম্য অবোধগম্য নানাবিধ ধর্মীয় উপাখ্যান, আরবী ফারসি শে'রের নর্তন কুর্দন শেষে কাঠমোল্লার মাইক থেমে আসলে নিদ্রাহত জীবমন্ডলের স্বস্তি প্রকাশ।
শেষরাতে নিকটবর্তী আসমানে স্রস্টার গণ-ক্ষমা ডাকে সাড়া দেয়ার মত জাগ্রত মুসলিমের সংখ্যা খুবই সীমিত। যারা থাকতেন তাদের মধ্যেও পরবর্তী ২/৪/১০/২০ বছরেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় 'খাছলত' বদলের কোন নমুনা দেখিনি!
তবে ম্যালা বদলেছে বরাতের রাতের বরাত। বেনিয়া দিবস সংস্কৃতির কবলে পড়েছে বেচারা রাতটি। পাঁড় ধর্মবিচ্যুত পত্রিক বা টিভি চ্যানেলও ২/৪ টা প্রবন্ধ, ৩ খানা টক-শো এমনকি ক্যালিওগ্রাফি যুক্ত লোগো প্রদর্শন করছেন ব্যাপক পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য সহকারে। চট্টগ্রাম ও সিলেটিরা রাতভর দৌড়াচ্ছেন বদনা শাহ, চৌকি শাহ, হুক্কা শাহ সহ নাম জানা বা অজানা শাহ বাবাদের দরবারে! পিছিয়ে নেই বিএনপি, আলীগ সহ প্রকৃত হালুয়া রুটি কেন্দ্রীক দলগুলো। কাঙালী ভোজ, মিলাদ শরীফ...। তবে গোফেঁ তা দিচ্ছে সুপারস্টোর গুলো। হৈ হৈ রৈ রৈ করে এ বাবদ বেচা বাট্টাটা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। অধ:পতিত আরেকদল আতশবাজি পোড়াচ্ছে। সাকুল্যে এ..ই... আমাদের শবেবরাত!
বড্ড বেকায়দায় মহানজীবন ব্যবস্থা ইসলাম। কাজের বুয়া বা ড্রাইভারদের সমান নিয়ন্ত্রনে নিমজ্জিত। পরিমানমত ও প্রয়োজনমত এবং সুবিধামত একটুখানি ইসলাম চর্চা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে সিংহভাগ মুসলিম। পবিত্রগ্রন্থ কুরআন শিকেয় তোলা আছে ১ বা ২ পিস। বিশেষ ক্ষনে, লগনে তা নামানো হয়। বিশেষ করে কেউ বিয়োগ হলে। ব্যান্ড, নর্তকী, বিবাহসজ্জার দলের মত ভাড়ায় মোল্লার দল পাওয়া যাচ্ছে। ইংগিত করলেই সদলবলে এসে কোরান খতম কাম মৌলুদ শরীফের প্যাকেজ সার্ভিস হোম ডেলিভারী। রেটও বেশী না গ্রামে ১০ জনের দল হলে মাথাপিছু ৫০ টাকা, শহরে ১০০ বা আরও! গৃহকর্তার ও বিগত মহাজনের সকল মুসকিল আসান! ন্যাপথালিন, আগরবাতি, আতরের গন্ধ শুকোতে না শুকোতেই চোরাকারবার, ঘুষ, দখল, লুট, প্রতারণা...।
পিছিয়ে নেই পাঁড় ধার্মিক দাবিদাররাও। তথাকথিত ইসলামি চিন্তাবিদরা। বাছাইকৃত আয়াতের চটি বেরিয়েছে। এমনকি খন্ডিত আয়াত। নিজেদের বক্তৃতার মাঝখানে একটুখানি বসিয়ে দিলেই পগারপার। বা! বা! বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুনের মাঝে আল কোরানের এমন আলো! ঘরে ঘরে উহা জ্বালাতে হবে! জন্ম হচ্ছে ক্ষীনদৃস্টি সম্পন্ন আরেকদল দলান্ধ।
তবে প্রায়ান্ধ সদ্যজাত তথাকথিত জেহাদী জজবা থেকে এটা ঢের ভাল। নির্বিচারে নিরীহ প্রানে অকারনে বোমাহামলা করে, ফতোয়ার ফ না বুঝেই ঢিলা কুলুখ মেরে, বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন হৈ হট্টগোল কারী ভোদাই গুলোও রেফারেন্স দিয়ে বসছে শক্রকে কতল কর। মহাবিপদ!
এসবের ফাঁদেই পড়েছে লাইলাতুল বারাআ'ত। আসলে মহান স্রস্টার সান্নিধ্য আসার যেমন রয়েছে কতগুলো মৌলিক শর্ত, আর তেমন রয়েছে কিছু স্পেশাল মোমেন্ট। হালাল জীবিকা তেমন ১টি কঠিন শর্ত। আর প্রত্যেকটি রাতেরই শেষ ভাগ তেমন ১টি মূহুর্ত। প্রশান্ত প্রকৃতি, নিস্তব্ধ ভূমন্ডল, আবছা আলোকের মাঝে নি:সঙ্গ একেকজন মানুষের সাথে তাদের স্রস্টা, রিজিকদাতার একান্ত আলাপের সময়। ৩৫৪ রাতের মধ্য এ রাত যদি আরো মহিমামন্বিত হয়, হোক। আরো ভাল।
পাপিস্ঠ মানবমন্ডলীর বর্ধিত সুযোগ। এটার সাথে হালুয়া, বিজ্ঞাপন, ম্যারাথন ওয়াজের কি সম্পর্ক?
এ এক নিভৃত সময়। মহা-গুরুত্বপুর্ন! হৈ চৈ এর নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:২৭
২৮টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×