somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেটাল ডিকেক্টিং আর্চওয়ে, সরকারী হালুয়া তবারুক, তথাকথিত গণজাগরন বা গৃহপালিত হিজড়া বিপ্লব: আধুনিক তারুন্যের সর্বশেষ লজ্জা! ছি!! ছি!!!

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিপ্লব শব্দটি সর্বপ্রথম কোথায় দেখেছি তা মনে পড়ে না। তবে নিশ্চিত হয় এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে কিংবা বামধারার/শিবিরের মিছিলে। বামদের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর শিবিরের ইসলামী বিপ্লব। ছাত্রদল ও লীগ বিপ্লবটিপ্লব নিয়ে মাথা ঘামায়- এমন দৃশ্য দেখিনি! তাদের বৃহদাংশ বরং নগদ নারায়ণ ও ডালতন্ত্রেই বিশ্বাসী! আমাদের শৌর্যবান পূর্বপুরুষরা (এমনকি মাতারাও!) বালাকোটের বিপ্লব, সিপাহী বিপ্লব, ফরায়েজী আন্দোলন, বাঁশের কেল্লা, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম, ভাষা বিপ্লব, স্বাধীনতার জন্য বিপ্লব সর্বশেষ চুনোপুটি এরশাদকে খেদানোর জন্য স্বৈরাচার বিরোধী বিপ্লব করেছেন। এগুলোর আদ্যপান্ত সকলেই জানি। সীমানার বাইরে বেলুচিস্তানের মানুষের সংগ্রাম, সিংহলী যাঁতাকল থেকে মুক্তির জন্য তামিলরা, কাশ্মীরবাসী, আসাম-অরুনাচল-নাগাল্যান্ডের গণমানুষ, শাহের বিরুদ্ধে ইরানের গণমানুষ, জারের বিরুদ্ধে বলশেভিকরা ইত্যাদি ইতিহাস আমাদের জানা। তরতাজা বলতে গেলে তিউনিশিয়ার মানুষদের বেনআলী বিরোধী বিপ্লব, মিশরীয়দের মোবারক বিরোধী বা এখনো প্রতিদিন রক্ত ঝরছে সিরিয়ার কসাই আসাদের বিরুদ্ধে সেদেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের সংগ্রামের কথা বলা যায়। এসব গণজাগরন কোনোটা সফল, কোনোটা বিফল; কোনোটা মুসলিমদের, কোনোটা বৌদ্ধদের, কোনোটা হিন্দুদের; কোনোটা আরবদের, কোনোটা অনারবদের; কোনোটা শিয়াদের কোনোটা সুন্নীদের। কিন্তু এতসব অমিলকে ছাড়িয়ে একটা মিল আকাশে জ্বলজ্বল করা মধ্যহ্নের সূর্যের ন্যায় জ্বলে উঠে- "এ সকল বিপ্লবই জালিমের বিরুদ্ধে, মজলুমের।" দীর্ঘদিন ধরে গণমানুষের টুঁটি চেপে ধরে রাখা ক্ষমতাসীন দৈত্যের বিরুদ্ধে কোনো এক শুভসময়ে একদল মানুষের গগণবিদারী চিৎকার- মানিনা, মানব না!
মানুষের স্বতর্স্ফুত বিদ্রোহের প্রত্যুত্তরে কোনো একটি বিপ্লব/গণজাগরন/ গণমঞ্চেই গদীনশীন মহল ফুলের মালা পাঠায়নি এমনকি নীরবও থাকেনি বরং অস্ত্র, অর্থ, অপপ্রচার, অপবাদ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে! বিপ্লবীর জীবনে খাদ্য, বিছানা, বিশ্রাম কল্পনার রূপকথা মাত্র! বিপ্লবী মাত্রই ফেরারী। পুলিশের, আর্মির, গুপ্তঘাতকের নিশানা তাকে তাক করে সারাক্ষন তাড়া করে। মিছিলে, সমাবেশে ট্যাংক উঠিয়ে প্রকৃত গণজাগরনকে বরন করেছে মানব সভ্যতার আনুমানিক ৭০হাজার বছরের সকল সরকার! হয়তো কোন কোন গণজাগরণ তাৎক্ষনিক সফলতা পায়নি তবে মানবেতিহাসে সেসব বীরদের বীরত্বগাঁথা স্বর্নাক্ষরে রচিত আছে।
২০১৩ সালের ঊষালগ্নে এসে বাংলাদেশ নামক দক্ষিন এশিয়ার বিপ্লব ইতিহাসের অগ্রগ্রামী দেশটি একটি হাস্যকর ও আরামদায়ক গণজাগরন দেখতে পেল। সমাজ/রাস্ট্রবিজ্ঞানের খতিয়ানে যাকে বড়জোর 'গৃহপালিত বিপ্লব' বলা যেতে পারে। ভবিষ্যতের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্ররা সুন্দর একটি টপিকস পেল পি এইচ ডি করার জন্য! ggশাহবাগ কেন্দ্রীক ২০১৩ সালের গৃহপালিত গণজাগরন। তবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও পাশাপাশি একটি টপিকস বানাতে পারে- খাঁচায় বিপ্লব উৎপাদন, প্রজনন, চাষ ও বিপনন: লেসন ফ্রম শাহবাগ ইন ২০১৩!

চট্টগ্রামের জামালখানের ব্যস্ততম রাস্তার দু'প্রান্ত- চেরাগীপাহাড় মোড় ও খাস্তগীর স্কুলের মোড়ে পুলিশ বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছে, বসিয়েছে মেটাল ডিটেক্টর আর্চওয়ে। আর্চওয়ে পেরিয়ে আরো খানিকটা এগুলে প্রেসক্লাবের সামনে ২ বা ৩ টি গ্রুপের (প্রতিগ্রুপে ১০ থেকে ১৫ জন) মাইকে কোরাস গান ও কাদের মোল্লা গংদের ফাঁসি চাই শ্লোগান। বুট-বাদামওয়ালা, উৎসুক দর্শনার্থী, ডাক্তারদের চেম্বারে আগত রোগী/ সহযোগীদের সাময়িক ভীড়ভাট্টা- এ হল মোটাদাগে "গণজাগরন।" তবে কেউ যদি সরেজমিন তদন্ত না করে "গৃহপালিত" টেলিভিশন, বিশেষ করে একাত্তর, এটিএন, দেশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইত্যাদি টিভি দেখেন তাহলে বিপ্লবের জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে ঘরের খাট, চেয়ার, সোফা বা আস্ত ফ্ল্যাটবাড়ীটাই ভেঙ্গে ফেলতে পারেন!

আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের তরুন বয়সে পাকিস্তানী কূপমন্ডুকদের বন্দুকের নলের মুখে বাংলাকে এস্টাবলিশ করেছে, দালালি করেনি; সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম করে জীবনকে তুচ্ছ করে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ কায়েম করেছে, রাজাকার হয়নি; স্বৈরাচার এরশাদকে টেনে হিচড়ে নামিয়েছে, ছাত্রসমাজের বরকন্দাজ হয়নি। এতে তাদের ক্যারিয়ার, সুখ, যৌবন এমনকি জীবনও ছারখার হয়ে গেছে, তবু তারা মাথা নত করেনি। আমাদের তারুণ্যে কোন 'অধীনের বিনীত সাংবাদিকতা' করেনি। এমনই নিখাদ খাটি বাংলা শব্দ 'বিপ্লব,' 'গণজাগরন।'

তীব্র দু:খের সাথে বলতে হয়, এহেন 'হিজড়া' তারুন্যের পুলিশি নিরাপত্তা বেস্টিত 'সরকারী হালুয়া রুটির অঢেল সরবরাহ সমৃদ্ধ গৃহপালিত বিপ্লব' জাতি আর দেখেনি। দু:খ সেসব সৎ তরুনদের জন্য, যেখানে তারুণ্যের মজ্জাগত স্পিরিটকে 'ব্ল্যাকমেইল' করা হয়েছে। মীরজাফর কোন খারাপ শব্দ নয়, তবে এক 'মীরজাফরের' দুস্কর্মে তা আজ বেঈমানি; রাজাকার ও খারাপ শব্দনা, একাত্তরের দালাল গোস্টি তাকে ঘৃণার প্রতিশব্দ বানিয়েছে। আশংকা হয়- গণজাগরন, বিপ্লব ইত্যাদি শব্দ ও না বাংলায় কলুষিত হয়ে যায়! সেদিন না লোকেরা শ্লোগান তোলে- "শ" তে শাহবাগি, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার!!

তরুণদের বলি মৃত, পরাজিত, আদালতে অপরাধী সাব্যস্ত, পলাতক, সরকারী পুলিশের দাবড়ানিতে দৌড়ের উপর থাকা একটি সংখ্যালঘু জনগোস্ঠির বিরুদ্ধে বিপ্লব হয়না! গণ জাগরণতো নয়ই!! ধৃত চোরকে বাড়তি ঘুষি দেয়ায় কোন পৌরুষত্ব নেই; মৃতের লাশের উপর লাফাতে নেই। বিপ্লব হয় শক্তিমানের বিরুদ্ধে!
গণজাগরন হয় বিপুলসংখ্যক, সংখ্যাগরিস্ট মানুষের আত্নঅধিকার, আত্নসম্মান, ন্যায়বিচার, কর্মসংস্থান, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া জালেমের বিরুদ্ধে। মুরুদ থাকেতো সংখ্যাগরিস্ট ভোটের লাইসেন্সে আকন্ঠ দুর্নীতি, ব্যর্থতায় নিমজ্জিত ২০১৩ সালের কায়েমী স্বার্থবাজ আধুনিক হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান! যে যেখানে যেভাবে পারেন!! এটাই এ মুহুর্তের প্রকৃত গণজাগরন! আসল বিপ্লব!!
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×