somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবি মার্ক শেফার-এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী

০৫ ই মে, ২০১১ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রিটেনে গত দশ বছরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে নারীরা। তারা মূলত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। ‘ফেথ ম্যাটার্স’ একটি ব্রিটিশ সংস্থা। এই সংস্থাটি সম্প্রতি একটি জরিপে চালিয়ে এ তথ্য জানায়। ব্রিটেনে শ্বেতাঙ্গরা, বিশেষ করে মেয়েরা খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। ফলে রক্ষণশীল ব্রিটিশরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কাজ করছে ‘ফেথ ম্যাটার্স’ নামক সংস্থা। সেই সংস্থা একটি জরিপে জানিয়েছে, গত ১০ বছরে ব্রিটেনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং এদের প্রায় সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। জরিপে জানানো হয়, যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের কারো বয়সই ২৭-এর বেশি নয়। এদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা প্রায় ৬২ শতাংশ।’
বিশ্বের তাবৎ মিডিয়া যখন ইসলামের ওপর হামলে পড়েছে; ইসলামের সুন্দর রূপটিকে কদর্য হিসেবে উপস্থাপনে আদাপানি খেয়ে মাঠে নেমেছে, তদুপরি ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যার এমন উচ্চবৃদ্ধি কেবল ইসলামের হক্কানিয়াত তথা সত্যতাই প্রমাণ করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণতাদানকারী। যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করেঅ। (সূরা আন-নূর : ০৮) এ আয়াতেরই উজ্জ্বল প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি উপরোক্ত প্রতিবেদনটিকে।
প্রতিদিনই বিশ্বের নানা দেশে অশান্তিভরা জীবন ত্যাগ করে শান্তি ও মুক্তির অব্যর্থ ঠিকানা ইসলামের পরিবারে শামিল হচ্ছেন অনেক সাধারণ নর-নারী থেকে নিয়ে জ্ঞানী-পণ্ডিতরা। এদের দীন বদলের গল্প হতে পারে আমাদের হেদায়াতের পাথেয়। হতে পারে অনেকেরই ইসলামের প্রতি পথ নির্দশক। তাই প্রতি মাসে একটি করে এমন ব্যক্তিদেরই রূপান্তরের গল্প নিয়মিত তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ। এই ধারাবাহিকটির নাম দেয়া হলো ‘ইসলাম গ্রহণের গল্প’। এ পর্বে উপস্থাপিত হলো : ইসলাম গ্রহণের গল্প (১)}


ইসলাম গ্রহণের গল্প (১)
গত ২৪ অক্টোবর ২০০৯ শনিবার প্রখ্যাত মার্কিন এ্যাডভোকেট ও মিলিয়নিয়ার মার্ক শেফার তার দশদিনের সৌদি ভ্রমণ শেষে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। জনাব শেফার আমেরিকার লসএঞ্জেলস-এর একজন ডাকসাইটে আইনবিদ ও কোটিপতি। তিনি একজন খ্যাতনামা অর্পিতসম্পত্তি আইন বিশেষজ্ঞ। সর্বশেষ তিনি মৃত্যুর এক মাস আগে মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির বিরুদ্ধে লড়েছেন।
জনাব মার্কের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ব্যক্ত করতে গিয়ে সৌদি ট্রাভেল গাইড জাবি বিন নাসির শরীফ বলেন, মার্ক শেফার সৌদি আরব পৌঁছার পর থেকেই ইসলাম সম্পর্কে, ইসলামের অন্যতম রুকন সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুরু করেন। রিয়াদে আমরা দুদিন অবস্থান করি। সেখানেও তিনি ইসলামের খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস অব্যাহত রাখেন। তারপর আমরা গেলাম নাজরান। সেখান থেকে আবহা আবার সেখান থেকে উলায় গেলাম। উলায় পৌঁছার পর ইসলামের ব্যাপারে তার কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। এখানে একবার আমরা ঘুরতে বেরুনোর পর উলায় আমাদের সঙ্গে আসা তিনজন সৌদি যুবকের প্রশান্তচিত্তে মরুবালুকার ওপর নামায পড়ার দৃশ্য তার হৃদয়কে প্রবলভাবে আন্দোলিত করে।
দু'দিন উলায় কাটিয়ে আমরা যাই জাউফ নামক স্থানে। জাউফে গিয়ে মার্ক শেফার আমার কাছে ইসলাম সম্পর্কিত যে কোনো গ্রন্থ চাইলেন। আমি তাকে ইসলাম ধর্মের ওপর লিখিত কয়েকটি পুস্তিকা সরবরাহ করি। তিনি মনোযোগসহ সেসব পড়া শুরু করলেন। ভোরবেলা তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, নামায কীভাবে আদায় করতে হয়? আমি তাকে নামায কিভাবে পড়তে হয়, অযু করতে হয় কিভাবে— তা ব্যাখ্যা করলাম। তৎক্ষণাৎ তিনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমার সঙ্গে নামায আদায় করলেন। নামায পর আমাকে জানালেন, তিনি নামায পড়ে খুব প্রশান্তি লাভ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমরা জেদ্দায় ফিরে এলাম। তিনি কিন্তু পুস্তিকাগুলোর ওপর চোখ বুলানো অব্যাহত রেখেছেন। শুক্রবার সকালে আমরা পুরান জেদ্দায় গেলাম। জুমার নামাজের সময় ঘনিয়ে এলে আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। সবাইকে জানালাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি জুমার নামায পড়তে যাব। মার্ক বললেন, 'আমি তোমার সঙ্গে যেতে চাই। আমি তোমাদের নামায পড়া দেখব।' আমি তাকে স্বাগত জানালাম। মসজিদে গেলাম এবং সমবেত অনেক মুসল্লির সঙ্গে মসজিদের বহির্প্রাঙ্গণে জুমার নামায আদায় করলাম। অনতিদূর থেকে সবই লক্ষ্য করছিলেন মার্ক শেফার। নামায পর সব মুসল্লি একে অন্যকে সালাম-সম্ভাষণ জানাচ্ছেন। সবার মুখে এক অপার্থিব খুশির দীপ্তি। এসব দৃশ্য তাকে খুবই মুগ্ধ করলো।
আমরা যখন হোটেলে ফিরে এলাম, তিনি বললেন, 'আমি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে চাই।' আমি তাকে গোসল করতে বললাম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি গোসল করলেন। আমি তাকে কালেমায়ে শাহাদাতের তালকিন দিলাম। তিনি পড়লেন, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ'। তারপর তিনি দু'রাকাত নামায পড়লেন। নামায বাদ তিনি আমাকে বললেন, আমি সৌদি ত্যাগ করার আগে পবিত্র মক্কার হারাম শরীফে যাবার বাসনা রাখি। শনিবার সন্ধ্যায় হারাম শরিফে গিয়ে তিনি সালাত আদায় করলেন। তারপর আমরা হামরায় অবস্থিত “দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ” অফিসে গেলাম। সেখানে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন। তাকে ইসলাম গ্রহণের সাময়িক সনদ দেয়া হল। শনিবার সন্ধ্যায় তার আমেরিকান সঙ্গীরা যেহেতু চলে যাবেন তাই প্রফেসর তুরকিস্তানি মার্ক শেফারকে হারাম শরিফে পৌঁছানোর দায়িত্ব নিলেন।
স্যার মার্ক শেফারের হারাম শরীফ গমন সম্পর্কে প্রফেসর মুহাম্মদ আমিন তুরকিস্তানি বলেন, সাময়িক সনদ গ্রহণের পর মার্ক শেফার এবং আমি মক্কার হারাম শরিফে গেলাম। হারাম শরীফ দর্শন মাত্র তার চেহারায় ফুটে উঠল এক অনাবিল লাবণ্য। তার কপাল ও কপোল উদ্ভাসিত হল সৌভাগ্যের এক বিরল বৈভবে। আমরা যখন হারামে প্রবেশ করলাম। সরাসরি পবিত্র কাবা দেখতে পেলাম। তখন তার আপাদমস্তকে আনন্দের ঢেউ খেলে গেল। প্রাপ্তি ও তৃপ্তিতে ভরে উঠলো যেন তার মন। আল্লাহর শপথ! আমি সে দৃশ্যের বর্ণনা দিতে অক্ষম। মার্ক শেফার কাবা তাওয়াফ করলেন। আমরা নামায পড়লাম। যখন ফিরছিলাম তখন মনে হচ্ছিল, এ ঘর তার কত আপন! কত চেনা! কাবাকে ছেড়ে তার মন যেন কিছুতেই ফিরে আসতে চাইছিল না।
'আমি যেন নব জীবন লাভ করেছি।'
ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেবার পর রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্ক শেফার তার ইসলাম কবুলের সৌভাগ্যের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, 'আমার পক্ষে এ মুহূর্তের অনুভূতি ব্যক্ত করা আসলেই সম্ভব নয়। শুধু এতোটুকু বলতে পারি যে, আমি এক নব জীবন লাভ করেছি। আজ আমার নতুন জীবনের সূচনা ঘটলো।'
তিনি আরও বলেন, আমি তো সৌভাগ্যের চূড়ায় উপনীত হয়েছি। যখন হারাম শরীফে প্রবেশ করলাম, পবিত্র খানায়ে কাবা দেখলাম— সে যে কী প্রাপ্তি ও তৃপ্তির পূর্ণতার মুহূর্ত ছিল, তা আমি আপনাদের সামনে ব্যক্ত করতে সক্ষম নই।
পরবর্তীতে তিনি কী করবেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে মার্ক শেফার বলেন, 'আমি ইসলাম সম্পর্কে আরও বেশি বেশি জানার চেষ্টা করব। আল্লাহর দীন সম্পর্কে গভীরতায় পৌঁছার প্রয়াস চালাব এবং পবিত্র হজ সম্পাদনের জন্য অচিরেই আবার সৌদি আরবে ফিরে আসব।'
ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হলেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'ইসলাম সম্পর্কে খুব অল্পই জানা-শুনা ছিল। আমি যখন সৌদি আরব ভ্রমণ করলাম, সেখানকার মুসলিমদের জীবন যাপন প্রণালী দেখলাম, বিশেষত তাদেরকে প্রশান্তচিত্তে সালাত আদায় করতে দেখলাম, তখন ইসলাম সম্পর্কে জানতে প্রবলভাবে আগ্রহ বোধ করলাম। ইসলাম সম্পর্কে জানতে শুরু করা মাত্রই আমার প্রবল বিশ্বাস জন্মাল যে, এটি সত্য ধর্ম।
রোববার প্রভাতে স্যার মার্ক আমেরিকার উদ্দেশে জেদ্দাস্থ কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পর্ব অতিক্রম করার সময় ধর্ম ঘরে লিখেন ইসলাম। পাঠক, ছবিসহ মার্ক শেফারকে দেখতে চাইলে ভিজিট করতে পারেন—
Click This Link
১৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×