somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাপগল্প: মানিপ্লান্ট ডগায় দীর্ঘশ্বাসেরা....

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





০.

একমোচড়ে কলতলার ট্যাপ খুলে দিলে শানবাঁধানো মেঝেতে জলের ধারা ভরবেগের সংরক্ষন করে আছড়ে পড়ে তার সাদা সালোয়ারে।ওড়নাটা বুকের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত করে চর্চিত কায়দায় কোমরে পেঁচিয়ে দেয়।ন্যাকড়ার ঘষায় চায়ের কেটলি আর কাপ-গেলাস ঝকঝকে আয়না হয়ে গেলে একপাশে সরিয়ে একটানে ওড়না আর কামিজের বন্ধনমুক্ত হয়ে ঝর্না ছাড়ে।অভ্যস্থ হাতের ঝাপটায় কলতলার খিড়কি আগেই আটকে গেছে নির্ধারিত আংটায়।সাবানের ফেনা ঘষে ঘষে কাল রাতের ঘুম নিশ্চিহ্ন করে চায়ের কেটলির মত নিজেকেও পরিচ্ছন্ন করে মাথায় প্যাঁচানো তোয়ালে কলতলা হতে হাসিমুখ বেরিয়ে আসে।

০০.

চকচকে কেটলি আলতো করে চুলোয় বসিয়ে দেশলাইয়ের মাত্র এক কাঠির ছোট্ট ঘর্ষণে আগুন ধরে উঠে গ্যাসের শরীরে।স্মিত হেসে সে এবার নিজের শরীরে নজর ফেরায়।তোয়ালে চেপে চুলের ফাঁকে আটকে থাকা শেষ জল ফোঁটা ও নিয়ে কৌটোর অনেকখানি তেল মাখে।চিরুনী টেনে চুলগুলো খোঁপা সাজায়।বাগানের টকটকে লাল গোলাপটার অভাব নিত্যকার মত আজো প্রকট হয়ে উঠে!!
সবার দৃষ্টি এড়িয়ে গতরাতে ইস্ত্রি করে রাখা সালোয়ার কামিজের উপর ওড়না জড়াতে গিয়ে বামহাতের স্পর্শে কেঁপে উঠে তার অর্ধগোলকীয় দেহাংশ।লাজে নুইয়ে পড়ে পাপড়ি।যদি ও কখনো....ভাবতে পারে না সে।কেটলির জলের সাথে টগবগ ফুটে উঠে তার গহীনের কোথাও একটুকরো মেঘ!!

০০০.

ঝটপট চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপিষ্টিক মাখা হয়ে গেলেই সে চায়ের কাপে ব্যস্ত হয়ে উঠে।মুখস্ত দু'চামচ চিনি আর দুধে ঘন লিকার নাড়িয়ে যৌবনবতী হয়ে উঠে চায়ের পেয়ালা।ওড়নার প্রস্থ বুকে ঝুলিয়ে ধীর পায়ে সিঁড়ি ভাঙে।রোজকার মত দরোজা খোলাই আছে।ভেতরে শূন্যবিছানায় এলোমেলো চাদর আর লাগোয়া গোসলখানায় জলপতনের শব্দ ঝুলে থাকে স্থির বাতাসে।পেয়ালা নামিয়ে বিছানায় ব্যস্ত হয়ে উঠে তার হাতজোড়া।চুড়ির রিনঝিন আর জলপতনের শব্দে মাদকতা তার মস্তিষ্কের ভেতর ঘনীভূত হতে থাকে।

০০০০.

গোসলখানার দরোজা খুলে গেলে মদির চোখে তাকায় সে।কোমরে তোয়ালে জড়ানো দেহের উর্ধাংশে উদোম বুকের ঘনমেঘ লোমের ডগায় ডগায় জমা জলবিন্দু ছাড়িয়ে তার দৃষ্টি থামে দেহমালিকের পুরু ঠোঁটজোড়ার মাঝে।ওখানে একচিলতে হাসি ঝুলছে।তোয়ালের নিচের লোমঢাকা পা দুটো তার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।চোখে চোখ পড়তেই তার অবচেতনা ফাঁক করে তোলে নিজ অধর-বন্ধন।দেহমালিক সেখানে চারঠোঁটের মিলন ঘটাবে মাত্র....এমন সময়ে ঝপ করে মোহসৃষ্টিকারক জলপতন শব্দ থেমে গেলে সে চমকে বাস্তবে ফিরে আসে।
অনিয়ন্ত্রিত ভাবনা হেতু নিজের প্রতি বিরক্ত হবার সাথে সাথে গাল জোড়া রক্তিম করে তোলে লাজে!!

০০০০০.

বিছানার অনুষঙ্গ গুলো যথাস্থানে ফিরিয়ে দিয়ে কোমরের ভাঁজ গুলো সোজা করবার আগেই তার কানে আছড়ে পড়ে মাঝারি একটা ধমকের স্রোত! ধমককর্তার আদেশ অনুসারেই গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে যায় সে মেঝের দৈর্ঘ্য মেপে মেপে।নতচোখের কোণে জমা বাষ্প আয়নায় চুল বিন্যস্তকরণে ব্যস্ত কর্তার গোচরীভূত হয় না।

০০০০০০.

দোতলার বারান্দায় যেখানে টবের বন্দীত্বে হাঁসফাঁস করছে কতগুলো মানিপ্লান্ট,তাদের সাথে সেও শামিল হয়।আড়চোখে কর্তার অপসৃয়মান গাড়ির নিতম্ববাতির লালে সে নিজের ছায়া খুঁজে বের করার চেষ্টা চালায়।দৃষ্টির পথ মাড়িয়ে যন্ত্রদানব আর মানবের শরীর অদৃশ্য হয়ে গেলে সমগ্র পথটাই ঝাপসা হয়ে উঠে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে তাকায় আধমরা মানিপ্লান্টের ডগায়।রোজ কয়েকবার পথের দিকে তাকিয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে আর কিছু না হোক, মানিপ্লান্টগুলোর সাথে তার একটা সখ্যতা হয়ে উঠেছে।

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
উৎসর্গ: হাসান মাহবুব ...যিনি গল্প লিখেন না।গল্প বলেন।যার হাতে গল্প আপনাতেই সৃষ্টি হয়।


ছবি: খোমাখাতা বন্ধু বাঁধনের খোমাছবি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৩৩
৪৮টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×