এইসব শব্দের ভেতর নামি। আমার সাথে নেমে আসে তোমাদের শহরের আলোর সবগুলো সমাধানহীন রাশি। পাগলাটে বৈজ্ঞানিক সমীকরণের পিঠে সমীকরণ আঁকে, সূত্রের ভেতর চলকের দীর্ঘ সঙ্গম দেখে ক্লান্তিহীন। অথচ আমি জানি, এইসব সঙ্গম দর্শনে ক্লান্তি আসে না, সমাধানও আসে না।
তাই আমি নেমে পড়ি নিজস্ব অন্ধকারে। যারা বোঝে, তারা প্রধানত ভুল বোঝে। নিজস্বতার ভেতর ডুব মানে নিজের কাছে যাওয়া, অন্য কোথাও নয়।
*
তোমার কী স্কুলবেলার লজ্জাবতী পাতার ঝাড়ের গল্প মনে আছে। ছুঁয়ে দিলেই ঘোমটা টেনে টেনে ঘরে ফিরে যেত ওরা। আর আমরা নিশ্চুপ অপেক্ষার বাতিঘর জ্বেলে বসে থাকতাম তাদের ঘোমটা খোলার আশায়।
একদিন আর তারা ঘোমটা খোলেনি। পরেরদিনও না। তারপরে আর কোনোদিনও না। আমি আর যাইনি। তুমি কি গিয়েছিলে!
যা কিছু ফেলে আসো, তার কাছে ফেরার ইতিহাস তোমার নেই।
একদিন লজ্জাবতীর ঝাড় দেখতে যাবো। তোমাকে নয়, তোমার কবিকে নিয়ে। তার চোখে লজ্জাবতীর ঘোমটার কৌণিক অবস্থান মেপে বুঝে নেব তোমার স্পর্শের সাম্প্রতিক লেখচিত্র।
তোমার কবিকে আবার লিখতে বোলো। আমার হয়ে জানিয়ে দিও মৃতসঞ্জীবন সুধাপানোৎসবের নিমন্ত্রণ!
*
মধ্যরাতের ট্রেনে একলা যেতে হয়, অনিন্দিতা। তাই আমি তোমার সাথে যাইনি। এই শহর থেকে চুপচাপ চলে যাও। আবার ফিরে এসো চুপচাপ। আমি জানবো, তুমি কখনোই শহরের বাইরে ছিলে না।
তুমি বরঙ চোখ ভরে নিয়ে এসো রাশি রাশি সবুজ ফটোগ্রাফ। মাটির চুলো যদি থাকে তবে তার বুকের ভেতর গনগনে আগুনের তেলচিত্র নিয়ে এসো। নিয়ে এসো ভাপা পিঠার সুবাস আর মায়ের ঘ্রাণ। পৃথিবীর সব মা সবার মা।
তোমার চোখে দেখে নেবো মাতৃস্নেহের মায়াবলি। দেখে নেবো, দীর্ঘ প্রতিক্ষারত আমার মায়ের পিঠাবিন্যাস।
কতদিন খাই না, অনিন্দিতা, গরম গরম তুলে দেয়া মায়ের হাতের ভাপা পিঠার নারকেলে অংশটুকুন, কতদিন রসচিতইয়ের রস মুছিনা মায়ের শাড়ির আঁচলে।
*
এইবার তবে ফেরাও তোমার চোখ, কবি, জেনে শুনেই কবিগুরু বিষপান করেছিলেন। তুমিও পান করো। সাঁই সাঁই উড়ে আসা কোনো এক আবাবিল পাখির চোখ ঝুলিয়ে রেখেছি আমার আঙিনায়। সেইসব চোখের ভেতর আমি বেখেয়ালি ক্যামেরায় ক্লিক!
তুমি বরং যত্ম করে দেখো। সেখানে খেলা করে অন্ধকারের সমুদ্র। এবঙ সমুদ্রের অন্ধকার।
*
কোনো এক শীতে প্রিয়ামনি মা হয়েছিলো আর আমাকে বলেছিলো ওর শিশুর নাম দিতে। আমি নাম দিতে পারিনি। প্রিয়ামনি আর মা হয়নি।
কোনো এক রাতে অনিন্দিতার চোখের ভেতর দেয়াল বেয়ে হামাগুড়ি দিয়েছিলো অসংখ্য কচি কচি হাত, কচি কচি পা। সেসব হাতের ইশতেহার আমার জানা হয়নি। অনিন্দিতার শাদা চাদরের ঘুম গাঢ় হয়ে একাকার। তোমার চোখের ভেতর আর কোনো রাত নামেনি।
এইসব তুমি জানো। জানো না কেবল লজ্জাবতী পাতার ঘোমটা রহস্য। তোমার কবিকে নিয়ে একদিন যাও স্কুলপাশে। রহস্য জেনে আমাকে জানিয়ে যেও।
আমি এক ছোট্ট বালিকাকে কথা দিয়েছি, তার ত্রয়োদশ জন্মদিনে লজ্জাবতী পাতার লজ্জার রহস্য জানাবো।