somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প হলেও বাস্তব ...

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটা রোজ সকালবেলা রাস্তার মোড়ে এসে দাড়ায় । হাতে বই-খাতা, ক্যাজুয়াল সাজগোজ...রিকশার অপেক্ষায় কিছুক্ষণ সেখানে দাড়াতেই হয় ।

...এবং রোজই সে ছেলেটিকে দেখতে পায়, নিয়ম করে এ সময়টাতেই সে চা দোকানটায় বসে থাকে । হুট করে চোখে চোখ পড়লেই সে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিজ্ঞের মত আকাশ-বাতাস দেখতে থাকে । মেয়েটির হাসি পায়, অবজ্ঞার হাসি নয়-ক্ষাণিকটা অন্যরকম !!


ছেলেটির বাসায় নিয়ম করে দু'বেলা চা রান্না হয়, কেউ যেচে না দিলে ইচ্ছে করে খাওয়া হয়না । কিন্তু এই সময়টাতে সে এই দোকানে বসে কয়েক কাপ চা সাবাড় করে । অপেক্ষার প্রহরগুলো বড্ড তেতো, তাতে কিছুটা মিষ্টি তো যোগ করতেই হয় ।

মেয়েটি আসে, ক্ষাণিকক্ষণ দাড়ায় । তারপর রিকশা এলে চলে যায় । মাঝে মাঝে সাইকেলে করে সে রিকশার পিছু নেয় । অতঃপর..... এক সমুদ্র শূন্যতা !!


গত এক মাস ধরে সে মেয়েটিকে দেখছে । এই এক মাসে তার ভেতর উথাল-পাথাল পরিবর্তন হয়ে গেছে । দৈনিক রুটিন, কলেজ-টিউশন, খেলা, বন্ধুদের সাথে বিকেলের আড্ডা ..... প্রিয় সে মুহূর্তগুলোও এখন পানসে লাগে । কি এক অদ্ভূত,ব্যাখ্যাতীত আকর্ষণে সে সম্মোহিতের মত মেয়েটির জন্য ছুটে আসে !!


বিকেল বেলা সাইকেলে চেপে সে এ পাড়ার গলিতে উদ্দেশ্য নিয়েই ঘোরে । ছাদের দিকে অপলক দৃষ্টি, কখনো রাজকন্যা দেখা দেন । খোলাচুলের উদাসী রাজকণ্যাকে এ সময়টায় বড্ড একা লাগে । চোখ ফিরিয়ে নেয়া যায়না, যেন ফিরিয়ে নিলেই হারিয়ে যাবে । বুকে কষ্টের ঘূনপোকারা দাপিয়ে বেড়ায় । এক ছুটে সে মায়াবতীর সামনে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, "ভা-লো-বা-সি".....

....বুকপকেটের গোলাপগুলো স্পর্শের অভাবে শুকিয়ে যায় । বইয়ের ভাঁজের কফিনে মোড়ানো থাকে । প্রতিদিন একটি করে 'চিরকুট' জন্ম নেয়, প্রাপকের হাতে পৌঁছায় না ।

ক্যালকুলাসের খাতায়, ইংরেজী নোটস-এ, 'হৈমন্তী' গল্পের পৃষ্ঠার নিচে আনমনে তার 'নাম' লিখে ফেলা । দু'চার লাইনের কাঁচা কবিতা রাফখাতার কালো-মোটা অক্ষরেই পড়ে থাকে ।


.....এভাবে সময় কাটে । একদিন বন্ধুরা জেনে যায় । উপহাস করে,হাসে, ট্রিট চায় কিন্তু ঠিকই সাহায্য করতে এগিয়ে আসে । কতরকম উপদেশ, যেন সবাই এক একজন তুখোড় প্রেমিক ।
পরিকল্পনা চলে, তাতে আবার কাটাকুটি । অতঃপর একটা উপায় ঠিকই বেরিয়ে আসে.........


রোজকার মতই মেয়েটি মোড়ে এসে দাড়ায় । আড়চোখে তাকিয়েও সে ছেলেটিকে দেখতে পায়না । বুকে আশঙ্কা জাগে । মাথা নিচু করে তাকিয়ে থাকা রাস্তার নোংরাগুলো ঝাপসা হয়ে আসে ।

ছেলেটি সাইকেল থেকে নেমে মেয়েটির পাশে দাড়ায় । বুকপকেট থেকে গোলাপটা বের করে হাতে নেয় । মেয়েটি বিষ্ফোরিত চোখে হাঁ করে তাকায় । পকেটের চিরকুটটা বের করে ....


"প্রিয় রাজকণ্যা,
আমি জানি, আমি খুব বোকা । তোমার পাশে বড্ড বেমানানও । পৃথিবীর সমস্ত সুদর্শন রাজপুত্রদের ভীড়ে আমি এক সামান্য কোটালপুত্র । সব জেনেও বলছি, আমি তোমার ছায়া হতে চাই । বিকেলবেলা তোমার সাথে ছাদে বসে আকাশের সাদা ক্যানভাসে আঁকিবুঁকি করতে চাই । তোমার একলা পথের বিশ্বস্ত হাত হতে চাই । তোমার হাসির 'কারন' হতে চাই ।

আমার না একা একা চা খেতে ইচ্ছে করেনা । প্রিয় কোন গান শুনলে আমার খুব একা লাগে । কবিতার দু'লাইন লেখার পর আরও দু'লাইন লিখে দেবার জন্য আমার তোমাকে দরকার । তোমাকে পূর্ণতা দেবো বলে তোমাকে "ভালোবাসী' ।
একটি বোকা ছেলে "


.......... মেয়েটির দু'চোখ উপচে জল নামে ।


.
.

পুনশ্চ-১ : এটা কোন রুপকথার গল্প নয় । অনেকের জীবনেই বাস্তব হয়ে ধরা দেয়া এক অদ্ভূত শিহরনের গল্প ।

এবার এটা লেখার কারণটা বলি, আজকাল ''ফেসবুক প্রেম/ভার্চুয়াল লাভ'' নামে এক ভাইরাসে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে । জানাজানি নেই, চেনা নেই- কাউকে পছন্দ হলেই জানিয়ে দিচ্ছি 'ভালোবাসী' । অনেকের হয়তো সাময়িক একটা সম্পর্ক হচ্ছে-খুব দ্রুতই আবার তা ভেঙ্গেও যাচ্ছে । ফেসবুকের বাইরে যোগাযোগ থাকলেও সম্পর্কটা অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক পথ ধরে নিয়ম মেনে হচ্ছেনা । ফলে এক্ষেত্রেও অকালেই তা পরিণতির দিকে গড়াচ্ছে ।
ভালোবাসা কিছুটা ত্যাগ চায়-কিছু কান্না চায় । এক চিমটে প্রত্যাশা-এক মুঠো স্বপ্ন আর এক গ্লাস কষ্টের বিনিময়ে যে ভালোবাসা তা এতো ঠুনকো নয় ।

পুনশ্চ-২ : আমাদের জেনারেশনের অনেকেরই এভাবে প্রেম হয়েছে । এক একটা গল্প উপন্যাসের চেয়েও রোমাঞ্চকর ।

.....এবং এই গল্পটির সাথে আমার গল্পটির খুবই সামান্য মিল রয়েছে । :D B-)
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×