somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিমধ্যে দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের এখনও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব

৩০ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজ আলোচনা করব দন্ডিত যুদ্ধপরাধীদের নিয়ে।

১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে এক বৈঠকে গনহত্যা তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময়ে ৩৭০০০ যুদ্ধাপরাধীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়।

২৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ দালাল আইন ১৯৭২’ নামে (রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ৮) একটি অধ্যাদেশ জারি হয়। শেখ মুজিবর রহমান সাক্ষরিত সেই অধ্যাদেশে যুদ্ধপরাধী এবং দালালের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে - "কোনো ব্যক্তি যদি একক বা দলগতভাবে বা কোনো সংস্থার হয়ে প্রত্যক্ষ্ বা পরোভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষনে সহযোগিতা করে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকান্ডে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে যুদ্ধে জড়িত থাকে।" কমপক্ষে ২ মাস থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছিল এই আইনে। অনেক ফাঁকফোকড় ছিল এ আইনে, যার ৭ম ধারায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সর্বময় কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওসি যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনেন তাহলে সেটা গ্রহন করা হবে না, অন্য কোনো আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না- এমন অনেক গলদে ভর্তি ছিল আইনটি। - -অমি রহমান পিয়াল

১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধপরাধীদের সাজা দেওয়ার জন্য নতুন একটি আইন পাস হয়। ‘অ্যাক্ট নং-১৯, ১৯৭৩’ (লিংক-৩) নামের এই আইনে গনহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধে অপরাধীদের গ্রেপ্তার, বিচার এবং সাজা দেওয়ার অধিকার রাখা হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানী ১৯৫ জন উচু পদমর্যাদার সেনা অফিসারের বিচার বাংলাদেশেই যাতে করা যায় এমন। কিন্তু আন্তুর্জাতিক চাপে ও পাকিস্তানের স্বীকৃতির আশায় ১৯৭৪ সালে ত্রিদেশীয় একটি চু্ক্তির আওতায় ওই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছাড়া পাকিস্তানে ফেরত নেয়া হয়।

বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান (দেশে অবস্থিত) যুদ্ধাপরাধী দালাল ও রাজাকারদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। কথাটা পুরো সত্যি নয়। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে কার্যকর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় প্রান্তিক পর্যায়ের দালাল ও রাজাকারদের ক্ষমা করা হয়েছে। হত্যা, লুটপাট, ধর্ষন এবং স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত এবং নেতৃস্থানীয় কোনো দালাল ও ঘাতককে এই ক্ষমা ঘোষণার আওতায় নেওয়া হয়নি। অধ্যাপক গোলাম আযম থেকে শুরু করে নুরুল আমিন, হামিদুল হক চৌধুরী, খান এ সবুর, মাহমুদ আলী, খাজা খয়েরুদ্দিন, রাজা ত্রিদিব রায়ের মতো নেতৃস্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে তাদের ফেরার ঘোষণা করা হয় (১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২, দৈনিক বাংলা)। ক্ষমার আওতায় পড়েননি রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর কোনো নেতা। তালিকা দেখলে দেখা যাবে ঠিক কারা এসব নেতৃত্বে ছিলেন। -অমি রহমান পিয়াল

১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বরের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় মুক্তি পায় প্রায় ২৬০০০ অভিযুক্ত। কিন্তু ৭৫২ অভিযুক্ত ও বিচারাধীন ১১০০০ অভিযুক্ত তখনও জেলে ছিল। ৩১শে ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত সায়েম এবং চিফ মার্শাল ল এডমিনিষ্ট্রেটর জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ দালাল আইন ১৯৭২’ (রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ৮) বাতিল করেন। এর ফলে ৭৫২ জন অভিযুক্ত ও বিচারাধীন সকলে ছাড়া পেয়ে যায়।

আজ প্রথম আলোতে মিজানুর রহমান খান বলেছেন :

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রশ্নে যখন ট্রাইব্যুনাল গঠিত হতে যাচ্ছে, তখন একটি মিথ বা কল্পকথা ভেঙে দেওয়া দরকার। মিথটি হলো, বিচারপতি সায়েম ও জেনারেল জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করার মাধ্যমে কারাগারে আটক ও দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু কথাটি এভাবে সত্য নয়। এর আড়ালে মস্ত একটি সত্য চাপা পড়ে আছে।

সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ও ১৯৭২ সালের দালাল আইন রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর চেয়ে বেশি কিছু।

দালাল আইন বাতিল অধ্যাদেশ পরবর্তীকালে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বৈধতা’ পেলেও তা ছিল একটি এখতিয়ারবহির্ভুত পদক্ষেপ। আইনের সরল পাঠে এটা বলা যায় যে ৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ উপদফায় ‘কখনো বাতিল বা বেআইনি হয়েছে বলে গণ্য হবে না’ কথাটির অর্থ এই যে, ওই আইনটি আজও বহাল রয়েছে। বিচারপতি সায়েমের অধ্যাদেশটি ভয়েড অ্যাবিনিশিও বা গোড়া থেকে বাতিল। এখন হয়তো কেবল একটি রিট দায়ের করলেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংবিধানের অভিভাবকের দায়িত্ব পালনকারী উচ্চ আদালতের কাছ থেকে এ মর্মে একটি ঘোষণা আসা স্বাভাবিক প্রত্যাশা হতে পারে যে দালাল আইন বাতিল আইনের কখনো অস্তিত্ব ছিল না।

পঁচাত্তরের পরে কার্যত দুটি ইনডেমনিটি আইন পাস করা হয়েছিল। এর একটি দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং দ্বিতীয়টি দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যারা খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল; তাদের ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়। প্রথম ইনডেমনিটির বিরোধিতায় যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, সেভাবে তাঁরা দ্বিতীয় ইনডেমনিটির বিরুদ্ধাচরণ করেননি। এমনকি আজ যখন চারদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি উঠেছে, সংসদে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে, আমরা ভাবছি এই বুঝি ১৯৭৩ সালের আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হতে যাচ্ছে; তখনও যাদের বিচার করা হয়েছিল তাদের কী হলো সেদিকে খেয়াল দেওয়া হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালকে তো বিচার করতে হবে। একটি বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কোনো অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁরা দন্ড বা খালাস দেবেন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের দন্ড ইতিমধ্যে হয়ে গেছে তাদের কী হবে? এই দন্ডিত ব্যক্তিরা কোন জাদুমন্ত্রবলে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছিল তা আমাদের জানতে হবে।


বিস্তারিত পড়ুন প্রথম আলোয়
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: সম্পত্তি

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৪



গল্প:
সম্পত্তি

সাইয়িদ রফিকুল হক

আব্দুল জব্বার সাহেব মারা যাচ্ছেন। মানে, তিনি আজ-কাল-পরশু-তরশু’র মধ্যে মারা যাবেন। যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এজন্য অবশ্য চূড়ান্তভাবে কোনো দিন-তারিখ ঠিক করা নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

“রোজা” নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫০




‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×