আগ্রাসনে কে বেশি শক্তিশালী
যাদের ডিস লাইন নাই তাদের টিভি সেট থাকলে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখার কোনো বিকল্প নাই। বিটিভি কি দেখায় আর তার অনুষ্ঠানের মান কেমন সেটা সবারই কম বেশি জানা। যাদের ডিসের লাইন আছে তারা বিটিভি ভুলেও দেখে কিনা সেটা সন্দেহের ব্যাপার। আর একশ্রেণীর দর্শক আছে যারা দেশী চ্যানেলের চেয়ে বিদেশী চ্যানেলে আকৃষ্ট বেশি পরিমাণে। একটি উল্লেখযোগ্য দর্শক শ্রেণী ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে স্বচ্ছন্দবোধ করে। তবে কমবেশি সবাই এটা জানে যে কোন চ্যানেলে কি দেখায়, তাদের অনুষ্ঠানের ধরন কিরকম, উদ্দেশ্য কি, মান কিরকম ইত্যাদি।
আমরাও আজকে অনেক স্বচ্ছন্দে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন চ্যানেলের খবর, নাচ, গান, নাটক, সিনেমা পারিবারিকভাবে একত্রে বসে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কি শ্লীল কি অশ্লীল সবই দেখছি। অশ্লীলকে অনেকে আজ অশ্লীল বলে কমই চিন্তা করে। এই শ্রেণীর বোধশক্তি দিন দিন আরো ভোতা হয়ে যাচ্ছে। তবে তারা নিজেদের প্রগতিশীল আধুনিক ভেবে থাকে। এদের জ্ঞান গরিমার দৌড় হাল ফ্যাশনের দিকে বেশি করে ঝুকিয়ে দিচ্ছে। এদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবেও বাড়ছে। তাহলে কেন আমাদের সমাজে ইয়াবাহার ছোবল হানা দেবে না। কেন ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটবে না। আমরা ইয়াবার নেশার দিক যেভাবে বেশি করে তুলে ধরি সেভাবে যারা এর প্রতি আসক্ত হচ্ছে তাদের দিকে ভালো মন্দ নিয়ে নজর দেই না। তাদের এর থেকে ফিরে আসার কৌশল সম্পর্কে, উপায় সম্পর্কে এর ভালো মন্দ দিক সম্পর্কে সচেতন করি না। আমরা ইয়বাহার কথা মাঝে মধ্যে বলব আবার একই সাথে শ্লীলতা, শালীনতা, মানবিকতা, মূল্যবোধ, নীতিনৈতিকতা প্রভৃতি মনুষ্যবোধের উপাদানকে সচেতনভাবে সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবো তা তো হতে পারে না। অনেকে তো এসবে যে কোনো মানদণ্ড তাই নিজেদের বিবেচনায় রাখতে চান না। সমাজে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরাও এর অংশ হিসেবেই নিজেদের পরিচিত করেন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে।
ইভটিজিং কেন হচ্ছে, ইয়াবা কেন খাচ্ছে, নেশা কেন করছে, ফ্রিমিক্সং সমাজে কেন হচ্ছে এবং এসবের সংখ্যা কেন বাড়ছে তার মূলে হাত না দিয়ে যা বলি তাতে কখনোই এগুলো কমার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমরা এর মূল বিষয়গুলোতে যদি হাত দিতে পারতাম, সেখানে কাজ করতে পারতাম তাহলে এসব অপকর্মের সংখ্যা অনেকটা সমাজ থেকে কমাতে পারতাম। চারিদিকে, যেমন, চ্যানেলগুলোতে যেভাবে প্রেমের নাটক সিনেমা, সংসার ভাঙার খবর, পরকিয়া কাহিনী দেখানো হয়, নাচ, গান, ফ্যাশন শোর নামে নারীর দেহ প্রদর্শন করা হয়, একই ভাবে পত্রপত্রিকাগুলোতে বিনোদনের নামে যা লিখা হচ্ছে ও যেসব ছাপা হচ্ছে, সেখানে আরেক দিকে ইভটিজিং কমানোর জন্য নামমাত্র কেবল বক্তৃতা আর আলোচনা, সেমিনার হবে তা তো হয় না। ভেবে দেখুন এই দুই বিপরীত চিত্রের মধ্যে কোনটা বেশি শক্তিশালী। যে শক্তিশালী সেই জয়ী হবে এটাই সাধারণ সূত্র।
টিভির বাক্সে আর পত্রিকার পাতায় নারীকে বিভিন্নভাবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে ডালভাতের মতো। কোনো কোনো অনুষ্ঠান রুচিবোধেরও ধার ধারে না। নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধকে ব্যাকডেটেড হিসেবেই তারা দূরে সরিয়ে রাখা সযত্নে। হাস্যকর হলো, এদের ভিতরই যারা এসব করছে তাদেরই কেউ কেউ ইয়াবা, ইভটিজিং বন্ধের কথা বলছে। তাদের নিজেদের পরিবার, ছেলেমেয় এসব ব্যাপারে হালের অপসংস্কৃতিকেই তো নিজেদের বলে ভাবছে। তাহলে কি করে এসবের প্রতিকার সম্ভাব? ভেবে দেখুন নতুন করে। ইয়াবা, ইভটিজিং এদের ছোবল দিলেও এদের অনেকে সচেতন হবে কিনা বলা মুশকিল। এরা যে ব্যাকডেটেড নন?
আসুন মূলে গিয়ে সকলে মিলে সচেতনভাবে এসব সামাজিক আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করি। তাতে নিজেরাও রক্ষা পাবো আশা করা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১২:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




