somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ হাইফেন ( পর্ব- এক)

০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
শেষ পর্যন্ত দু’জনই আসছেন!
কথাটা ভেবে বেশ তৃপ্তি পায় ধীমান। অথচ প্রথমে সে ভেবেছিলো ওর মা-ই বুঝি কেবল আসবেন, বাবা নয়। এমন না যে বাবা আসতে চাইবেন না। চাইবেন, অবশ্যই চাইবেন। কিন্তু সমস্যা হল, এখানে এসে ওঁদের দু’জনের প্রতিদিন দেখা হওয়া, কথা হওয়া, এক সাথে ঘুরতে যাওয়া- ইত্যাদিতে ফিরোজের ঘোর আপত্তি। দীপ্তিরও যে খুব ইচ্ছে-ঠিক তেমনটি নয়। তবে তা প্রকাশ পায় কম। এমন না যে ফিরোজ-দীপ্তির ব্যাপারটা আর কেউ জানে না। জানে, মোটামুটি সবাই জানে। অথচ সবার সামনে এই লুকোচুরি করতে হয় ঠিকই। আমাদের সমাজ তাহলে সুদূর অ্যামেরিকাতেও প্রসারিত! পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাও না কেন, বাঙালির কৌতুহলী চর্মচক্ষুর আড়ালে যেতে পারবে না। চর্মচক্ষু কেন, মনঃচক্ষুর আড়ালেই কি যেতে পারে কেউ?‘পালাতে চাই যত সে আসে আমার পিছু পিছু’- অনেকটা সেরকমই যেন বিষয়টা। সে যাই হোক, দু’জনেই যে আসছেন এটাই আনন্দের- ধীমান ভাবে।

তবে দুজন একই ফ্লাইটে আসছে না। দীপ্তি এমিরাটস-এ আর ফিরোজ আসবে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে। তাও আবার দুজনই আসছে দুই জায়গা থেকে। দীপ্তি ঢাকা থেকে, আর ফিরোজ দিল্লী থেকে। তাঁর নাকি কি একটা কাজ পড়েছে দিল্লীতে। কাজ না ছাই, এতদিনে ওসব বেশ বুঝে গেছে সে। সময় তাকে মেলা কিছু শিখিয়েছে। এই যেমন দীপ্তি এসে প্রথমেই কি কি বলবে-তা সে হুবহু বলে দিতে পারে। ফিরোজের কানেক্টিং-এ কোন ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্স নেই। সরাসরি টরান্টো থেকে শারলট। দীপ্তির আছে, ডেল্টা। পৌঁছানোর সময় যদিও ভিন্ন। দীপ্তির ফ্লাইট নামবে আগে, ফিরোজের ফ্লাইটের প্রায় আড়াই ঘণ্টা আগে। নাহিয়া আসতে চেয়েছিল, সে-ই আনে নি। ওটা একটা সারপ্রাইজ হয়েই থাক। গ্রেজুয়েশনের দিন সে গল্পটা বললেই হল। একটা রহস্য রাখতে চাইছে সে। আজকাল তো আমাদের চারপাশ থেকে অবাক হবার উপাদান কমেই যাচ্ছে। ওটা না হয় থাকুক। আর তাছাড়া ওদের মা- ব্যাটার প্রথম সাক্ষাৎটা নিজেদের মধ্যেই থাকুক না। অনেক কথা জমে আছে ওর, দীপ্তিরও হয়তো আছে। ওকে নিশ্চয়ই কিছুক্ষণ একা একাই চাইবে সে। ওর মনে আছে যখন স্কুলে পড়তো, মা বাসায় ফিরলেই শুরু হতো ওর বেশুমার কথা। সারাদিনে স্কুলে কি হল, কোন স্যারের সাথে কোন মিসের ভিতর ভিতর প্রেম চলছে, এসএটি টেস্টে ওদের কোন সিনিয়র চিট করেছে... ইত্যাদি-ইত্যাদি। হাতের কাজ করতে করতে দীপ্তি সে কথাগুলো শুনত, মনোযোগ দিয়েই শুনত। মাঝে মাঝে সে মাকে রান্নায় সাহায্য করতো। দুয়েকটি রান্নাও তখন সে শিখে নিয়েছে। বলা যায় সে বিদ্যা আর সিদ্দিকা কবির-এই দুই-ই বিদেশে তাকে উদ্ধার করেছে। অথচ এখন তো বছরের পর বছর চলে যায়। মায়ের সাথে ওভাবে কথাই হয় না!

ডিসপ্লেতে দীপ্তির ফ্লাইট দেখাচ্ছে ঠিক সময়েই ল্যান্ড করবে। সে তবুও কিছুটা আগেই চলে এসেছে। শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়ো একদম পছন্দ করে না ধীমান। অথচ নাহিয়া ঠিক তার উল্টো। ওর সবসময়ই শেষ বেলার ঠুকঠুকানি। কোনদিনই পরীক্ষার সময় আগে আগে আসে তো নয়ই, বরং মিনিট কয়েক পরেই ঢোকে ক্লাসে। প্রথম প্রথম, যখন ওর জন্য ধীমানের মন একটু একটু কেমন করতে শুরু করেছে, কেমন অস্থির অস্থির লাগতো তার। ঠিক সময়ে ওকে পরীক্ষা হলে না দেখলে হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে আসতো । অথচ প্রথম রেজাল্টের দিনই নাহিয়া সবাইকে চমকে দেয়। টপ অফ দ্য লিস্ট। এ দেশে র‍্যাঙ্কিং জানার সুযোগ নেই। তবে সবাই জানে, নাহিয়াই সেরা। তাদের এবারের ভেলিডিক্টরিয়ান। গ্রেজুয়েশন ইভেন্টে সে বক্তৃতা দেবে। ব্যাপারটা ভাবতেই ওর দারুণ রোমাঞ্চ হচ্ছে। খানিক ঈর্ষাও কি হচ্ছে না? কথাটা ভেবে হাসি পায় তার। নাহ, কোন ঈর্ষা নেই। নিজেদের জীবনে উচ্চ-লক্ষ্য থাকা ভালো, ঈর্ষা নয় মোটেই। এটা নীরব যন্ত্রণার মতো। একদিন তা সব কিছু শেষ করে দেয়।
এইমাত্র দীপ্তির প্লেন ল্যান্ড করেছে। হ্যান্ড লাগেজ নিয়ে আসতে আরও কিছুক্ষণ লাগবে। এর মাঝেই ফিরোজের ফ্লাইট স্কেজুল্টা চট করে চেক করে নেয় সে । ওঁরটা পনেরো মিনিট ডিলেইড দেখাচ্ছে। তাতে ক্ষতি নেই। রাস্তায় তেমন ট্র্যাফিকও নেই যে পৌঁছুতে পৌঁছুতে দেরি হয়ে যাবে। সবদিক দিয়েই একদম ঠিক আছে। ‘নো ওয়ারিজ’- সে ভাবে।
ধীমান দেখে, দীপ্তি এগিয়ে আসছে। যা ভেবেছে তাই, সে শাড়ি পরেই বিমান থেকে নেমেছে। দীপ্তি খুব প্রয়োজন না পড়লে প্যান্ট-শার্ট পরে না। একবার কেবল পরেছিল। তাও অনেক বছর আগে। সেবার বোস্টনে গিয়েছিলো বেড়াতে ওরা। সে তো তখন অনেক ছোটো। সেবার বেজায় ঠাণ্ডা পড়েছিলো। শাড়ির নিচের থার্মাল পরলেও শীত মানছিল না কিছুতেই। নিউ হ্যাম্পশায়ারে ভয়ংকর ঠাণ্ডা পড়ে। ছোটকা’ হেসে বলেছিল, ভাবী, এবার তোমার রক্ষা নাই। একখান লেঙ্গট পরতেই হবে তোমাকে। কাছেই একটা মেসিস আছে। চল তোমাকে নিয়ে যাই। আবার ভীষণ স্নো-ও পড়েছে আজ, দেখেছো? সেটাও দেখা হবে। আসার পর থেকেই তো ঘরে বন্দী। চল দেখে আসি, শুভ্রের সৌন্দর্য। অনেকটা রথ দেখা কলা বেচার মতোই হবে ব্যাপারটা। হা হা হা।

সবাই মিলে ছোটকা’র ঢাউস গাড়িতে চড়ে বেরিয়েছিল। অনেক মজা করতে করতে গিয়েছিলো ওরা। সে বসেছিল বাবা-মার ঠিক মাঝখানে। একদম সুরক্ষিত, তবুও তাকে সিট বেল্ট ঠিকই বাঁধতে হয়েছিলো। দুই হাত দিয়ে সে দু’ পাশে বাবা-মাকে ধরে রেখেছিল। এটাও তার কাছে দারুণ লেগেছিল। সেসব দিনগুলোতে কি করে যে এমন ভালো লাগা জমে থাকতো! আসলেও কি থাকতো, নাকি তা তার সুদূর অতীত ভাবনা? কে জানে। অতীত আমাদের কাছে চিরকালই বিমুগ্ধকর।

‘এতো লম্বা জার্নি করতে আছে নাকি রে বাবা! প্লেনে বসে থাকতে থাকতে আমার হাড্ডি-মাংশ সব ভর্তা হবার জোগাড়। সারা রাস্তায় এক ফোঁটা ঘুমুতেও পারি নি। এমন জায়গায় কেউ আসে নাকি? কানে ধরেছি, আর আসছি না আমি’। হড়বড় করে কথা গুলো বলে যায় দীপ্তি। ধীমান শব্দ করে হাসে, হা হা হা।

বেল্টে লাগেজ আসতে খানিক সময় লাগবে। সে শোনে দীপ্তি বলছে, সবাই বলে অমন প্রকাণ্ড সব এয়ারপোর্ট পড়বে পথে। দৌড়ে শেষে কূল পাবে না। তার উপর পরছ শাড়ি। বিপদে পড়তে হবে কিন্তু। আমি তবুও হুইল চেয়ার নিই নি। মাথা খারাপ, হুইল চেয়ার নেব মানে! আমি কী বুড়ো কিম্বা অচল হয়ে গেছি নাকি? দেশে এখনো ষোল ঘণ্টা দিব্যি কাজ করি । চোখ বুজে রুগির বুক চ্যারচ্যার করে চিরে হার্টের অপারেশন করতে পারি। কিন্তু এখন যে পা ব্যাথা করছে ভীষণ!কি করি?
- এখানে বস মা। ব্যাগ আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ওগুলো আসলে এখান থেকেই দেখতে পাবে। অস্থির হইয়ো না। আমি তোমার পা টিপে দিচ্ছি। দেখবে ভালো লাগবে।
- পা টিপে দিবি মানে? এ তোর অ্যামেরিকান কায়দা নাকি? লোকে কি ভাববে?
- হা হা হা। কেউ কিছু ভাববে না।
- না, লাগবে না।
সে অবশ্য মায়ের কথা শোনে না। ঠিকই পায়ের সামনে বসে দীপ্তির জুতো জোড়া খুলে ফেলে। তারপর আস্তে আস্তে পায়ের পাতা মালিশ করে দিতে থাকে। পঞ্চাশ বছর বয়সেও দীপ্তির পা কেমন সুন্দর আর স্নিগ্ধ! আচ্ছা সব সন্তানের কাছেই কি তার মা-ই সবচেয়ে সুন্দর? কথাটা ভাবায় ধীমানকে। দীপ্তির একটা হাত ওর মাথার ওপর। তাঁর উদ্বিগ্ন চোখ বেল্টের দিকে। সুটকেস না আবার মিস হয়ে যায়। যতই উন্নত দেশ হোক না কেন, কাউকেই বিশ্বাস নেই। ধীমান টের পায়, দীপ্তির আঙুল ওর চুলে বিলি কাটছে। কতো দিন পর! কী যে মধুর আর আরামের! আহ, মায়ের ছোঁয়া।
এ পর্যন্ত মা যা যা করেছে, ঠিক ঠিক ওর ফর্মুলা মতোই করেছে। কোন এদিক সেদিক নেই। তবে কি সে তাঁকে সবচেয়ে ভালো বুঝেছে? এ কথাটা ভেবে ওর ভালো লাগে। ভালো লাগাটা অবশ্য স্থায়ী হয় না মোটেই। একটু পরেই সে ভাবনাটা ফেঁসে যায় তার। সে শোনে দীপ্তি বলছে, তোর বাবা একসাথে এলো না কেন বলতে পারিস? কেন দিল্লী হয়েই আসছে?
- বাবার না কি যেন একটা কাজ পড়েছে। তাই তো শুনেছি।
- কাজ না ছাতার মাথা। ওখানে গেছে তার কারণ, দ্যাট স্লাট ইজ হাঙ-ইং অ্যারাউন্ড দেয়ার নাও!
- মানে কি, কি বলছ এসব মা?
- কি বলছি মানে? ঠিকই বলছি। ঐ শয়তাননির একটা বাচ্চা আছে। তার নাকি আবার হার্টে ফুটা ধরা পড়েছে। তাই নিয়েই দৌড়াদৌড়ি। তোর বাপই টাকা-পয়সা ঢালছে। বই বিক্রির অত সব টাকা কোথায় যায়? আমি বুঝি না? কেন, দেশে কি ডাক্তার ছিল না? আল্লাহই জানে, ওইটা কার বাচ্চা। তোর জন্য কিন্তু অত উতলা হতে জন্মেও দেখিনি!এবার দেশে গিয়েই তোর বাবার সাথে সবকিছু ফয়সালা করে ফেলবো।
- ফয়সালা মানে, কি ফয়সালা?
- ডিভোর্স।


তার গাড়ি ছুটছে সাঁই সাঁই করে। কথাটায় একটু ভুল আছে। গাড়িটি আসলে তার না, নাহিয়ার। ওরটা হোন্ডা সিভিক কম্প্যাক্ট কার। জায়গা কম। নাহিয়াই বলেছে, ‘আমারটা নিয়ে যাও। ওঁদের সাথে তো জিনিসপত্র থাকতে পারে। তোমারটায় ধরবে না হয়তো। আর এতোটা পথ জার্নি করে এসে নিশ্চয়ই উনারা চাইবেন খানিক রিলাক্সড থাকতে, তাই না?’
কথায় তো যুক্তি আছেই। আর নাহিয়ার গাড়ি কি তার গাড়ি নয়?- কথাটা ভেবেছিলো সে।
এটি একটি সর্বাধুনিক আওডি কিউ-সেভেন এস ইউ ভি। ঝকঝকে গাড়িটি যখন এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে, এর সিলভার রঙের কার্নিশে আলো ঠিকরে পড়ে। কুচকুচে কালো গাড়িটির ইন্টেরিওর ক্রিম রঙের। ধুলোহীন ঝকঝকে, মসৃণ চামড়ার। সে-ই চালাচ্ছে। গাড়িতে উঠে ফিরোজের প্রথম কথা, আওডি!ওয়াও, সাচ অ্যা গ্রেট ভেহিক্যাল। ইউ বট ইট?
- না, এটা আমার এক বন্ধুর। তোমরা দুজন আসছ জেনে আমাকে বলল এটা নিয়ে আসতে। আমারটা তো হোন্ডা সিভিক। অত স্টোরেজ নেই।এই গাড়িটি ওকে ওর বাবা গ্রেজুয়েশন উপলক্ষে উপহার দিয়েছে।
- তুমিও তো কিনতে পারো একটা। কিনে নাও।আমি কিনে দিই।
- নাহ, আমার তেমন দরকার পড়ে না, বাবা। শুধু শুধু টাকা নষ্ট।
- তবুও অন্যের গাড়ি চালানো কি ঠিক?

নাহিয়া কি অন্য কেউ নাকি? কথাটা বলতে গিয়েও সে থেমে যায়। কিছুক্ষণ আগেই ওর বাবা-মা’র মাঝে তুমুল বিতণ্ডা হয়ে গেছে। বিষয় অতি সামান্যই। কেন ফিরোজ দিল্লী হয়ে এলো? সরাসরি কেন এলো না? আর ঘুরপথেই যদি এলো তবে দিল্লী হয়ে কেন? অন্য দিক দিয়ে কেন নয়? দিল্লিতেই বা কেন দু’ তিনদিন থাকতে হল? ইত্যাদি ইত্যাদি।
ফিরোজ বলেছিল, দেখো দীপ্তি তোমার আমার মাঝে কৈফিয়তের সম্পর্কটা আর নেই। তাই আমি এ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই মোটেই।
- তা দিবে কি করে? বললেই তো মিথ্যে কথার ভেল্কি শুরু হয়ে যাবে। একটা মানুষ ভিতর-বাহির দু’খানেই এমন মিথ্যার দুনিয়ায় থাকে কেমন করে? সারাক্ষণ চারপাশে কেমন একটা আবছায়া মিথ্যার ঘেরাটোপ তৈরি করে রাখে! কিন্তু কি করে! হায়রে আমার কপাল। বিদেশ তো আমরাও যাই, কই কোন কথা তো রটে না বাজারে?

ফিরোজ হয়তো কঠিন কোন উত্তর দিতে যাচ্ছিলো। দেখে ধীমান ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। যেন ওদের ছেলেমানুষিতে ও দারুণ মজা পেয়েছে। যেমনটা ওরা পেত একসময়, ধীমানের বালখিল্য দেখে। মনে আছে একবার ওর পাঞ্জাবির বুকে দুটো ফুটো করেছিলো। গলাটা সুতো দিয়ে বন্ধ করে তাতে নিজেকে গলিয়ে ক্যাস্পার সেজেছিল সে। ফুটো করার জন্য সে বিশেষ উদ্ভাবনী শক্তির আশ্রয় নিয়েছিলো। অ্যাশট্রেতে ফেলে রাখা ফিরোজের সিগারেটের শেষ অংশে আগুন ধরিয়ে তাই দিয়েই কারবারটা করেছিলো সে। নতুন পাঞ্জাবিটা কদিন আগেই তার ছোটো শ্যালক রিজভি আড়ং থেকে কিনে দিয়েছিলো। রেগে যাবার বদলে সেদিন ফিরোজ বলেছিল, ব্রিলিয়ান্ট জব আব্বু, আই অ্যাম ইম্প্রেসড।

ফিরোজকে ড্রাইভ করতে বলেছিল ধীমান। ওর ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভারস লাইসেন্সও রয়েছে। নানা ধরণের গাড়ি চালাতে সে আনন্দ পায়। অথচ আজ সে রাজি হয়নি। বলেছিল, তুমিই চালাও। একটু টায়ার্ড লাগছে।
দীপ্তি বসেছে ধীমানের পাশে। ফিরোজ পেছনে। দীপ্তি আর সে কথা বলে। রিয়ার ভিউ-এ সে দেখে ফিরোজ বাইরের দিকে তাকিয়ে গাছপালা দেখছে, চুপচাপ। সে জিজ্ঞেস করে, তোমার লেখালিখি কেমন চলছে বাবা?
- ভালো।
- এই বই মেলায় তোমার বইয়ের সাংঘাতিক ভালো সব রিভিউ পড়লাম পত্রিকায়।
- তুমি বাংলাদেশের পত্রিকা পড়?
- কেন পড়বো না? আমি ডেইলি অন্তত দুটো নিউজপেপার পড়ি, ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল তোমাদের আগেই পড়ি। অনলাইন পত্রিকা তো, তাই।
- হুম।
- আমার একবার কি মনে হয়েছিলো জানো বাবা, এবারের বাংলা একাডেমীর পুরষ্কারটা বুঝি তুমিই পাচ্ছো।
ধীমান দেখে ওর বাবা বাইরের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছে। যেন শুনতে পায়নি। দেখলে মনে হয় সে যেন নিজেই বাইরের জগতের একটা মানুষ। কারো সাথেই তেমন একটা যোগাযোগ নেই, আবার সবার মাঝেই আছে। কেমন অদ্ভুত এক ইনিগ্মা!

পথের মাঝে একটা ওয়াফল হাউসে থেমে হালকা কিছু খেয়ে নেয় ওরা। সে দীপ্তিকে ওর ল্যাপটপটা এগিয়ে দিয়ে বলে, আম্মু তুমি এটা একটু গাড়ির পেছনে রেখে দিয়ো।গাড়ি আনলক করাই আছে। আমি একটু রেস্টরুম থেকে চট করে আসছি। তোমরাও দরকার হলে বাথরুম সেরে নাও। পথে আর থামছি না। ইটস নট দ্যাট ফার, দো। মাত্র দেড় ঘণ্টার ড্রাইভ।
একটু গরম লাগছে দেখে ধীমান তার গায়ের পাতলা জ্যাকেটটা খুলে ফেলে। সিটের ওপর রাখলে ভালো লাগে না, তাই একেবারে পেছনের দরোজাটা খুলে ফেলে। রিমোটে চাপ দিলে উপরের দিকে উঠে যায় দরজাটা। জ্যাকেটটা ব্যাগগুলোর উপর ফেলে রাখলেই হল- সে ভেবেছে। রাখতে গিয়ে একটা দৃশ্য চোখে পড়ে তার। অন্য সময় হলে হয়তো সে কিছুই ভাবত না। কিন্তু আজ ভাবছে। সবগুলো সুটকেসই সে পাশাপাশি রেখেছিল। বাবা-মা’রটা আলাদা করেনি। একটু আগে ল্যাপটপের ব্যাগটা দীপ্তিকে দিয়েছিলো। সেটা একপাশে যেকোনো জায়গায় রেখে দিলেই পারতো। দেখে, সবগুলো ব্যাগই পরিপাটি করে রাখা।একদিকে ফিরোজের ব্যাগ অন্যদিকে দীপ্তির গুলো। ল্যাপটপের ব্যাগটা ওর মা ওদের দুজনের সুটকেস গুলোর ঠিক মাঝে রেখেছে। এ কাজটি করার জন্য দীপ্তিকে ব্যাগগুলোকে আবার সাজাতে হয়েছে। দেখলে মনে হবে সেটি যেন একটা হাইফেনের মতো ওদের ধরে আছে। কিন্তু আজ এখন তার তা মনে হয় না। বরং মনে হয় এটা যেন একটা পারটিশন, একটা অদৃশ্য বিভেদ।

(চলবে)

পরের পর্ব গুলো পড়তেঃ
পর্ব- ২ঃ Click This Link
পর্ব-৩ঃ Click This Link
পর্ব-৪ঃ Click This Link




সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×