somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনষ্টিটিউশন সংশোধন পর্যালোচনা: কনষ্টিটিউট (পর্ব ২)

১৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বঃ Click This Link

দ্বিতীয় পর্ব:

কনষ্টিটিউশন প্রণয়ন সভা বা Constituent Assembly থেকে এবার কথা শুরু করছি।
কোন নতুন জন্ম নেয়া রাষ্ট্র ওর কনষ্টিটিউশন প্রণয়ন করে কীভাবে? নিশ্চয় একটা মিটিং বা সভা ডাকা হয়। কী ধরণের সভা সেটা আর, কারা কীভাবে ঐ সভার সদস্য বলে বিবেচিত হয়? আবার সভার সদস্য যেহেতু ফলে সে কাদের প্রতিনিধি ফলে, তার একটা নির্বাচনের ব্যাপার বা দিক আছে। এই নির্বাচন শব্দটা পাঠককে গন্ডগোলে ফেলতে পারে। ১৯৭৩ সালের পর বাংলাদেশে যাদের জন্ম তাঁরা নির্বাচন বলতে বাস্তবে কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দেখেছেন ও বুঝে এসেছেন। কিন্তু ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশের গণপরিষদ বা Constituent Assembly নামে এক সভা বসে, আমাদের চলতি কনষ্টিটিউশন প্রণীত, আলোচিত ও গৃহীত হয়ে যায় সে সভা থেকে। বাংলাদেশ এক কনষ্টিটিউশনাল রাষ্ট্র হয়ে যায়। এরপর সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের ঐ নতুন কনষ্টিটিউশনের অধীনে এবং ওরই আইন বলে সংসদ নির্বাচন ডাকা হয়েছিল ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে। যার ফলাফলে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রথম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়।
এখানে সারকথা হলো, কোন রাষ্ট্রের একটা গৃহীত কনষ্টিটিউশন থাকলে তবেই ঐ কনষ্টিটিউশনের অধীনে একটা জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে পারে।

তার মানে আবার, কোন কনষ্টিটিউশন প্রণীত, আলোচিত ও গৃহীত হওয়ার আগেও একটা নির্বাচনের দরকার পড়ে। ঐ নির্বাচন হলো, কনষ্টিটিউশন প্রণীত, আলোচিত ও গৃহীত হবে যে মিটিং বা সভায় সে সভার সদস্য কারা থাকবেন, হবেন সেই প্রতিনিধি নির্বাচন। কেবল কনষ্টিটিউশন প্রণয়নের জন্যই এই সভা বলে এই সভাকে ইংরাজিতে বলে Constituent Assembly, কোন অর্থেই এটা জাতীয় সংসদ নয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এটাকেই 'সাংবিধানিক পরিষদ' বলে বুঝিয়েছেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের Constituent Assembly কে বাংলায় সম্ভবত গণপরিষদ বলে ডাকা হত। আর, জাতীয় সংসদের মতই দেশজুড়ে ঐ সভার সদস্য নির্বাচন হয় ও নির্বাচিত সদস্যদের কে বলা হয়, কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলী মেম্বার বা গণপরিষদ সদস্য।

তাহলে কথা দাঁড়ালো, কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলীর জন্য সদস্য নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন - দুটোই নির্বাচন; দুটোই দেশ জুড়ে সাবালগ ভোটারদের প্রতিনিধিত্ত্ব নিশ্চিত করতে প্রতিনিধি নির্বাচন। এর একটা কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলীর সদস্য কারা হবেন তার নির্বাচন। এই নির্বাচিত প্রতিনিধি সদস্যদের নিয়ে কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলী বসবে; আর এর উদ্দেশ্য হলো, বসে কনষ্টিটিউশন প্রণীত, আলোচিত ও সবশেষে গৃহীত অনুমোদন বা পাশ করা। এরপর এই কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলীর আয়ু, কাজ, দায়দায়িত্ত্ব সব চিরদিনের মত শেষ হয়ে যাবে। কারণ, কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলীর সদস্যরা নির্বাচিত হন কেবল একটাই কাজের জন্য, কনষ্টিটিউশন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে। এজন্য কনষ্টিটিউশন প্রণীত বা গৃহিত হয়ে গেলে কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলী আপনাতেই চিরদিনের মত ভেঙ্গে যায়। একটা কনষ্টিটিউশনাল রাষ্ট্র বানিয়ে দেয়া পর্যন্তই ওর কাজ, সীমা পরিধি। সাধারণত কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলীর আয়ুস্কাল নির্ধারিত হয়ে থাকে এক থেকে দুইবছর।
এরপর আবার নির্বাচন হবে, এবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সদস্যরা নির্বাচিত হবেন ভিন্ন উদ্দেশ্যে; সরকারের দৈনন্দিন কাজকারবার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন। শুধু সে কারণেই এটা ভিন্ন তা নয়। কারণ মনে রাখতে হবে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্রের জন্য একটা কনষ্টিটিউশন প্রণীত হয়ে গেছে, রাষ্ট্র তখন কনষ্টিটিউশনাল রাষ্ট্র। এবং ঐ কনষ্টিটিউশনে যেভাবে নির্দেশিত থাকে সেই আইন মোতাবেক এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডাকা হয়। একই সাথে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে সরকার গঠন তথা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ত্ব পায়। ওদিকে প্রণীত কনষ্টিটিউশনে যেভাবে লেখা আছে সেভাবে বিচারকরা প্রণীত কনষ্টিটিউশন রক্ষার নতুন শপথ নিয়ে বিচার বিভাগ গঠন করে। পরবর্তীকালে, নির্দিষ্ট মেয়াদকাল, পাঁচ বছর শেষে কেবল জাতীয় সংসদের নির্বাচন বারবার ডাকা ও অনুষ্ঠিত হতে থাকে। বারবার হতে দেখা যায় বলে, পপুলারলি নির্বাচন বলতে আমরা কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচন বুঝি বা বুঝিয়ে থাকি।
কিন্তু গুরুত্ত্বপুর্ণ ফারাকের কথাটা এখনো বলা হয় নাই। জাতীয় সংসদ অবশ্যই পরবর্তীকালের সরকারগুলো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব আইন তৈরি করবে, কারণ, সেই তো আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত পরিষদ – এটা সত্য। কিন্তু শর্ত আছে। জাতীয় সংসদ এমন কোন আইন প্রণয়ন করতে পারবে না যা কনষ্টিটিউশনের বিরোধী। কনষ্টিটিউশনের বিরোধী মানে, উদাহরণ হিসাবে যদি আমাদের চলতি কনষ্টিটিউশনের অর্থে ধরি তাহলে, কনষ্টিটিউশনের তৃতীয় অধ্যায় (Part III), যেটার "শিরোনাম মৌলিক অধিকার" - এর বিরোধী বা সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। যদি বিরোধী বা সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও সংসদে তা আইনে প্রণীত ও কার্যকর করা হয় তাহলে কী হবে? তবে সংক্ষুব্ধ (aggrieved) ক্ষতিগ্রস্থ নাগরিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রীম কোর্ট সংসদে প্রণীত ঐ আইন বাতিল ঘোষণা করতে পারবে। ‘মৌলিক অধিকার” এর সাথে ঐ আইন বিরোধ সাংঘর্ষিক বলে আপনাতেই তা বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে ঘোষণা করবে।
তাহলে সারকথা দাঁড়ালো, জাতীয় সংসদ কনষ্টিটিউশনের তৃতীয় অধ্যায় (Part III) বা ‘মৌলিক অধিকার” এর বিরোধী সাংঘর্ষিক হয় এরকম বাদে যে কোন আইন প্রণয়ন করতে পারে। এই অর্থে দুনিয়ার সব কনষ্টিটিউশন যে কোন আইনের উপর একটা উচ্চস্থান বা সুপ্রিমেসি দখল করে বসে থাকে। জাতীয় সংসদে যা কিছু আইন তৈরি হবে কনষ্টিটিউশন এর গাইড লাইন নির্দেশক ভুমিকা নিয়ে বিরাজ করে। সব প্রণীত আইনকেই কনষ্টিটিউশনের প্রাধান্য বা সুপ্রিমেসি মেনে তবে আইন হতে হয়। এটাই কনষ্টিটিউশনের সাথে আইনের সম্পর্ক। এজন্য যে কোন কনষ্টিটিউশনের মৌলিক বৈশিষ্ট বা মৌলিক দিক বলতে যদি কিছু থাকে যা কাউকে অমান্য করতে দিলে কনষ্টিটিউশন আর কনষ্টিটিউশন থাকে না তা হলো, নাগরিকের ‘মৌলিক অধিকার” অধ্যায়, আমাদের কনষ্টিটিউশনের যা তৃতীয় অধ্যায় (Part III)। এজন্য মৌলিক অধিকারের দিক প্রশ্ন বাদ রেখে, এমনকি ঘোলাটে অস্পষ্ট রেখে কোন গণতান্ত্রিক কনষ্টিটিউশন প্রণয়নের কথা চিন্তা করা এক ঠাট্টা তামাশা মাত্র। মৌলিক অধিকার কনষ্টিটিউশনের প্রাণবায়ু।
যদিও মুল কথাটা এখানে উলটা করে বলা হলো।
মুল ব্যাপারটা হলো, কোন জনগোষ্ঠির আওয়াম জনগণ আমরা প্রত্যেকের সংঘবদ্ধ ইচ্ছা অভিপ্রায়ে মৌলিক কিছু নীতির ভিত্তিতে সংগঠিত হই; এভাবে সংগঠিত (constituted) হওয়া মানে একটা State constitute করা, রাষ্ট্র গঠন করে ফেলা - একই কথা দুদিক থেকে দেখে বলা। আর ঐ মৌলিক নীতিগুলোই মৌলিক অধিকার শিরোনামে লিপিবদ্ধ করা থাকে কনষ্টিটিউশনে এবং গুরুত্ত্বপূর্ণ হলো ওটাই কনষ্টিটিউশনের ভিত্তি, মৌলিক ও নীতিগত দিক। এই মৌলিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আমরা জনগোষ্ঠি পরস্পরের সাথে পরস্পর একতা সংঘবদ্ধতায় রাষ্ট্রে সংগঠিত হয়েছি, সবাই রাষ্ট্রের সমান নাগরিকত্ত্ব কবুল করেছি।
রাষ্ট্র, কনষ্টিটিউশন ইত্যাদির rationale অর্থাৎ কী মনে করে আমরা রাষ্ট্র করতে যাই – অন্তর্লীনে প্রবাহিত সেই কারণ হলো এটা।

তাহলে আমাদের ৭২ সালের কনষ্টিটিউশনের চার “মৌলিক নীতি” গেল গেল বলে যে রব আওয়াজ চারদিক তোলপাড়, বিচারকেরা রায় দিয়ে ফেলছেন এ আবার কোন মৌলিক? সে প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করব পরের পর্বে, পাঠককে এই পর্বে একটু সবুর করতে বলব।

এখন সারকথায় যা পেলাম, একটা নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ‘মৌলিক অধিকার” খর্ব না করে, সংঘর্ষ না করে সেই সীমার মধ্যে থেকে সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে অনুগত নানান আইন প্রণয়ন করতে পারে। একই সাথে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে সরকার গঠন তথা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ত্ব পায়। পরবর্তীকালে, নির্দিষ্ট মেয়াদকাল শেষে কেবল জাতীয় সংসদের নির্বাচন বারবার ডাকা ও অনুষ্ঠিত হতে থাকে।

কাছাকাছি সময়ে হাতের কাছের উদাহরণ হিসাবে আমরা নেপাল কে দেখতে পারি। ওখানে ২০০৮ সালের নির্বাচনটা ছিল কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলীর প্রতিনিধি নির্বাচন; কনষ্টিটিউশন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ঐ এসেম্বলীর প্রতিনিধি সদস্য কারা হবেন সেই নির্বাচন। এই নির্বাচনে হয়ে যাবার পর নেপাল রাষ্ট্র এখন তার কনষ্টিটিউশন প্রণয়নের একটা অন্তর্বর্তীকালীন সময় পার হচ্ছে। কনষ্টিটিউশন প্রণয়নের কাজ সমাপ্তিতে নেপাল একটা কনষ্টিটিউশনাল রাষ্ট্র হবে। এরপর অনুষঙ্গ আইন প্রণয়নের জন্য ওর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডাকা হবে।
তাহলে যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম গণপরিষদ বা Constituent Assembly আর জাতীয় সংসদ দুটোরই কমন দিক হলো নির্বাচন, প্রতিনিধি বা সদস্য নির্বাচন। কিন্তু তা সত্ত্বেও দুটো কোন বিচারেই এক জিনিষ নয়। সে ফারাকগুলো আমরা দেখলাম।


Constituent Assembly (গণপরিষদ) এর Constituent শব্দটা গুরুত্ত্বপূর্ণঃ
পাঠক হয়ত খেয়াল করেছেন আমার নিজের মুল বয়ানে লেখার সময় ‘সংবিধান’ শব্দটা পরিহার করে ওর বদলে আমি ‘কনষ্টিটিউশন’ এই শব্দ ব্যবহার করেছি; তা করছি ইচ্ছা করে, কিছু ধারণাগত ভুল বুঝাবুঝি এড়াতে। সে কারণটা এখন ব্যাখ্যা করব। লক্ষ্য করলে দেখব ইংরাজী শব্দটা হলো, Constituent Assembly এমনকি Constitution assembly-ও নয়। এখানে Constituent শব্দটা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।

এই শব্দের কাছাকাছি একটা শব্দ ভোটের রাজনীতির সময় আমাদের কাছে ঘোরাফেরা করে। শব্দটা হলো কনষ্টিটুয়েন্সি। ভাই, “কোন কনষ্টিটুয়েন্সি থেকে খারাইছেন, টিকিট পাইছেন"”। অথবা, নির্বাচন কমিশন বলল, “নির্বাচনের কয়েকটা কনষ্টিটুয়েন্সি পুনর্গঠিত করা হবে, লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে ঢাকা-৬ ও ঢাকা-৭ ভেঙ্গে তিনটা কনষ্টিটুয়েন্সি করা হবে ” ইত্যাদি।
কনষ্টিটুয়েন্সি শব্দের মুল অর্থ দাঁড়িয়ে আছে, জনগোষ্ঠির কোন অংশকে প্রতিনিধিত্ত্ব করা বা তাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ত্ব করার জন্য নির্বাচিত হওয়া – এই বিষয়কে কেন্দ্র করে। যেমন কেউ ‘আমার কনষ্টিটুয়েন্সিতে.........’ –একথা বললে এর মানে আমরা বুঝি, সে যাদেরকে প্রতিনিধিত্ত্ব করে; যাদের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, আকাঙ্খা বা অভিপ্রায় তাঁর ভিতর দিয়ে উপস্থাপিত, প্রকাশিত হয়; তাঁকে দিয়ে তা হবে বলে বিশ্বাস করে প্রতিনিধি বানানো হয়েছে; ওর জনগোষ্ঠি ওকে ‘গঠন’(constitute) করেছে, গড়েছে। ইত্যাদি।

বাস্তবে আবার কনষ্টিটুয়েন্সি বলতে আর একটা প্রচলিত অর্থও পপুলারলি তৈরি হয়ে গেছে। যেমন, অনেকেই আমরা মনে করি, কনষ্টিটুয়েন্সি মানে এলাকা, ভৌগলিক অথবা প্রশাসনিক এলাকা। আমি ওমুক এলাকা থেকে খাড়া হয়েছি, এই বাক্যে ভৌগলিক প্রশাসনিক এলাকা অর্থ করে কনষ্টিটুয়েন্সি শব্দটা ব্যবহৃত হয়েছে।
আসলে এখানে কনষ্টিটুয়েন্সির মুল বিষয়, নাগরিকের প্রতিনিধিত্ত্ব বাছাই, এই কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কনষ্টিটুয়েন্সির মুল অর্থ প্রতিনিধিত্ত্ব সেখান থেকে সরে গেছে তাই এই বিপত্তি; জনগোষ্ঠির কোন বা কতটা অংশকে প্রতিনিধিত্ত্ব - নির্বাচন কমিশনকে এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভুগোলের সাহায্য নিতে হয়েছে; এই ভুগোলের ভিতরে যারা আছে তাদের ইচ্ছা আকাঙ্খার প্রতিনিধি আমি, এরকম।
কিন্তু ওদিকে বাংলাদেশের ভুগোল আবার আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা ইত্যাদির কারণে আগেই প্রশাসনিক দিক থেকে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি বলে বিভক্ত হয়ে আছে।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো, জনগোষ্ঠিকে কারা কারা প্রতিনিধিত্ত্ব করে তা উপযুক্তভাবে বাছাই করে নিয়ে আসা। তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আগে থেকে প্রশাসনিক এলাকা বলে বাংলাদেশের ভুগোল যেভাবে ভাগ হয়ে আছে এর সাথে তাল মিলিয়ে তাকে কাজ শুরু করতে হয়েছে, খরচ কমানো, ও ম্যানেজ করা সহজ করার দিকটা ভাবতে গিয়ে।
আর এতে আমাদের নীট ক্ষতিটা হলো, কনষ্টিটুয়েন্সি শব্দের মৌলিক অর্থের দিক ছিল জনগোষ্ঠির ইচ্ছা, অনিচ্ছা, আকাঙ্খা বা অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ত্ব, সেখান থেকে স্লিপ করে এবার অর্থ দাঁড়িয়ে গেছে এলাকা, ভুগোল বা প্রশাসনিক এলাকা। মানুষের মানে হয়ে গেছে - এলাকা, মাটি ভুগোল ইত্যাদি। মানুষ যে এলাকায় থাকে আর খোদ মানুষ – এদুটো এক কথা নয়। এলাকার প্রতিনিধিত্ত্ব আর মানুষের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, আকাঙ্খা অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ত্ব -আকাশ পাতালের ফারাক।
সরে যাবার ব্যাপারটা আরও ভাল ভাবে ধরা দিবে এখানে। যেমন, সমাজের একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি বলছেন, "আমার কনষ্টিটুয়েন্সি কথাটা এভাবে বলা পছন্দ করবে না"।
এখানে কনষ্টিটুয়েন্সি শব্দের মানে হলো, আমি চিন্তার দিক থেকে গোটা সমাজের মধ্যে যাদের প্রতিনিধিত্ত্ব করি, অথবা যারা আমাকে চিন্তার দিক থেকে সমর্থন করে। পাঠক এখানে লক্ষ্য করবেন, এখানে কনষ্টিটুয়েন্সি বলতে এলাকা বলে কোন ভাবনা বক্তাশ্রোতার মনে ভর করছে না। গোটা সমাজের যে কোন এলাকার লোক ঐ চিন্তাশীল ব্যক্তির কনষ্টিটুয়েন্সির সদস্য হতে পারেন, কনষ্টিটুয়েন্ট হতে পারেন। এখানে কনষ্টিটুয়েন্ট মানে গঠনকর্তা, গঠনের উপাদান অর্থে। যারা আমাকে প্রতিনিধি বানিয়েছেন, প্রতিনিধি করে গড়েছেন।

তাহলে দাঁড়ালো, কনষ্টিটুয়েন্সী শব্দের অর্থের একদিকে থাকল প্রতিনিধিত্ত্ব করা; আর অন্যদিকে যারা কনষ্টিটুয়েন্সীর সদস্য তারা ঐ প্রতিনিধির কনষ্টিটুয়েন্ট বা গঠনকর্তা, গঠনের উপাদান অর্থে। আর প্রতিনিধি গঠনের উপাদান মানে জনগণের প্রত্যেকে।
এবার তাহলে কনষ্টিটুয়েন্ট এসেম্বলী কথার অর্থ দাঁড়াবে, গঠনকর্তা উপাদান জনগণের প্রত্যেকের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, আকাঙ্খা বা অভিপ্রায়ের প্রতিনিধি, এমন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সভা।

পাঠককে একটা জিনিষ নজর করতে বলব। Constituent শব্দটার গুরুত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপরে যা যা লিখেছি তাতে কোথাও আইন, বিধান এসব শব্দের বা শব্দের ভাবের কোন প্রয়োজন পড়েনি। না আমার না পাঠকের; এই শব্দ বা শব্দভাবের কোন অভাব আমরা বোধ করিনি।

তাহলে constitution বা কনষ্টিটিউশন শব্দের বাংলা করতে গিয়ে “সংবিধান” এই শব্দ হাজির হলো কোথা থেকে। কনষ্টিটিউশন শব্দের ও অর্থের এই দুর্ঘটনা বিচ্যুতি ঘটিয়েছে উকিল মোক্তারেরা।

আগে বলেছি, গঠনকর্তা উপাদান জনগণের প্রত্যেকের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, আকাঙ্খা বা অভিপ্রায়ের ‘প্রতিনিধি’ বা প্রতিনিধিত্ত্ব” এটাই কনষ্টিটুয়েন্ট এসেম্বলীর অর্থ, তাৎপর্য। যেখান থেকে জনগণের সংঘবদ্ধতায় রাষ্ট্র গঠন কনষ্টিটিউট করা অর্থে কনষ্টিটিউশন। কিন্তু এভাবে মানে না বুঝে থাকলে, না জানা থাকলে রাষ্ট্রে কনষ্টিটিউশনে আমরা সংগঠিত হওয়া, একটা কনষ্টিটিউশন হাতে পাবার পরের ঘটনাবলী থেকে কেবল যদি কনষ্টিটিউশন কী তা ব্যাখ্যা করতে যাই – এর উপর আমার উদ্দেশ্য যদি ওকালতি আইন পেশা ব্যবসা হয় - তাহলে মনে হবে, কনষ্টিটিউশন আইনের একটা বিষয় মাত্র; আইনের বিধানদাতা, সংবিধান। এর বাইরে আর কোন কিছুই তাঁর চোখে পড়বে না।

গঠন ও গঠক (কনষ্টিটিউট ও কনষ্টিটিউয়েন্ট) এর সম্পর্কের দিকটা ভুলে গিয়ে কনষ্টিটিউশনকে কেবল আইন বিধান দাতা হিসাবে দেখার উকিল ব্যারিষ্টারী খাসিলত থেকে ‘সংবিধান’ শব্দটা হাজির হয়েছে। যার মধ্যে গঠন ও গঠক (কনষ্টিটিউট ও কনষ্টিটিউয়েন্ট) এর সম্পর্কের, মানুষে মানুষের রাজনৈতিক সম্পর্ক, সমাজের রাজনৈতিকতার দিকটা সম্পূর্ণভাবে বোধের বাইরে থেকে গেছে।

সেজন্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মত আইন পেশার লোকজনেরা সহজেই কনষ্টিটুয়েন্ট এসেম্বলীকে “সাংবিধানিক পারিষদ” বলে ভাবতে পারছেন। কনষ্টিটিউশন বলতে কিছু বিধান বা আইনের সমষ্টি ছাড়া আর কোনভাবে কোন ভাবনা, গঠন বা কনষ্টিটুউটের কোন ভাবনা তাঁদের মাথায় আসে নাই। এটা মানুষের বি-রাজনৈতিক সত্ত্বা বড়জোড় উকিলী লক্ষণ।

এই পর্ব এখানেই শেষ করব। পরের পর্বে,
কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলী ছাড়া কনষ্টিটিউশন ও এর মৌলিক নীতি কায়েমও করা যায় না, বদলও করা যায় না – আমার বয়ানে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্য থেকে কথা শুরু করব।
১১টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×