somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাফাতদের ধর্ষক হওয়া শুরু হয় যেখানে..

১৮ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সম্প্রতি পাশের অ্যাপার্টমেন্টের শক্তিশালী ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছি। নগদে যা লাভ হয়েছে, তা হলো অফিস থেকে ফিরে টিভির রিমোর্ট নিয়ে আর বউয়ের সাথে কাড়াকাড়ি বাঁধে না, বাসায় ফিরে এখন ইউটিউবেই বাংলা নাটক দেখি। আমরা যারা নব্বুইয়ের দশকে বেড়ে উঠেছি, তাদের কাছে বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, রুপনগর, অয়োময় বা পারলে না রুমকি’ই নাটকের শেষ কথা। ওগুলোই মোটামুটিভাবে দেখি, সাথে বর্তমান সময়ের নাটকও থাকে। এখনকার নাটক খুললেই পুরোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পাশাপাশি মেহজাবিন, টয়া, স্পর্শিয়া, সাফা, শবনম ফারিয়া, সাবিলা, শেহতাজ, তৌসিফ, সিয়াম, এ্যালেন শুভ্র, জোভান, সালমান মুক্তাদিরসহ একেবারে টিনেজ আরো কয়েকজনকে দেখা যায়।

যাদের নাম এখানে উল্লেখিত হল, এই প্রজন্মের অভিনয় প্রতিভা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হল কনটেন্ট নিয়ে। তারা নাটকে যে সমাজ ও জীবনাচারণকে রিপ্রেজেন্ট করে, তা নিয়ে। ঘুরে ফিরে প্রতিটা নাটকের মোক্ষই যেন থাকে ছেলে এবং মেয়েটার মধ্যে প্রেম ঘটিয়ে দেওয়া। প্রেম হতেই হবে! তা পুরোনো সিনেমার নায়ক নায়িকার রাস্তায় ধাক্কা খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হোক অথবা আধুনিককালের ফেসবুক চ্যাটিংয়ে গোত্তা খাওয়ার মধ্য দিয়ে হোক! আরো কত প্রক্রিয়া যে স্ক্রিপ্ট রাইটারের জানা আছে তা একমাত্র উপরওয়ালাই মালুম।

এর বাইরে হাবি, হ্যাং আউট, মাস্তি, পার্টি, আউটিং, জিএফ-বিএফ এবং এক্স জিএফ আর বিএফ এর সে সংস্কৃতি, সেটা কতটুকু আমাদের আর কতটুকু অন্যদের কাছ থেকে আমদানি করছি, কেন করছি, সেটা নিয়েও প্রশ্ন থাকে।

একটা নাটক দেখলাম, ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প, হাতটা দাওনা বাড়িয়ে নামে। নাটকের মূল চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন মেহজাবিন ও তাহসান। এই নাটকে মেহজাবিন সবসময় বিষন্ন থাকে, আত্মহত্যার প্রচেষ্টাও চালায় দু’একবার। এক সময় মেহজাবিনদের বাসার নিচতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতে আসে বিপত্নীক তাহসান এবং একমাত্র ছেলে জোহান; যাকে দেখে মেহজাবিনের মনে হতে থাকে তার সাবেক প্রেমিক যদি তাদের অবৈধ সন্তানকে এবরশনে বাধ্য না করতো তাহলে সে হয়ত এখন জোহার মতই হত, হাসতো খেলতো। এগুলো মনে করে সে জোহার মা হতে চায়। ঘটনাগুলো মেহজাবিনই তাহসানকে বলে।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। আমার মত আমরা যারা অতি আধুনিক এই সংস্কৃতি বিভিন্ন সংস্কারের কারণে এখনও আত্মস্থ করতে পারিনি, তারাও এই প্রজন্মের নাট্যকারদের কল্যাণে এই সব দেখতে বাধ্য হই। সাথে সাথে আজকের উম্মুক্ত আকাশের কল্যাণে আমাদের অল্পবয়সী সন্তানও এগুলো দেখে ফেলছে; যখন তার দেখা উচিৎ শুধুই কুংফু পান্ডা-দীপু নাম্বার টু ধরণের মুভি বা নাটক।

সাফাতদের ধর্ষক হওয়ার শুরুটাও এখান থেকেই শুরু হয়। দেখুন সাফাত এবং তার বাবার যে স্টেটমেন্ট, সেটা আমরা ওই নাটকগুলোতেই দেখি সাধারণত।

আজ বনানীতে সাফাত গ্যাং বার্থডে পার্টিতে আসা দুজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে বলে আমরা খুব প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠেছি। এটা কি এক ধরণের হিপোক্রেসি নয়? আমি মনে মনে চাইব আমার মেয়েটা তার দেহসৌষ্টবের সাথে কিঞ্চিত মেধা দেখিয়ে লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরী হবে, ছেলেটাকেও যেন তেন উপায়ে সেলিব্রেটি হতেই হবে। নিদেন পক্ষে ওরকম চাওয়ার সহায়ক পরিবেশ তৈরীতে দ্বিধা করব না আর যখন সেই পরিবেশে আমার মেয়েটা যাবে এবং আমার ছেলেটা ধর্ষক নিজের স্বরুপ প্রকাশ করবে, তখন প্রতিবাদে মূখর হয়ে উঠব, এটা আমার কাছে হিপোক্রেসিই মনে হয়।

পড়ন্তু, আমার কাছে মনে হয়, এই প্রতিবাদগুলোও এক ধরণের সুবিধা আদায়ের উপলক্ষ। আমরা কেন প্রতিবাদ করছি? এই মেয়ে দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া উচ্চবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি বলে? আপন জুয়েলার্সের মালিকের কাছে নিয়মিত মাসোহারা চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়া শুল্ক কর্মকর্তারাই কি এখন অতি তৎপর? নাকি অনৈতিক সুবিধাবঞ্চিত রাজনীতিবিদরাই ইন্ধন যোগাচ্ছে শাহবাগের প্রতিবাদের?

আমরা কি ভূলে গেছি যে মাত্র কয়েকদিন আগে দরিদ্র হযরত আলী নিজের কিশোরী মেয়ের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে লজ্জায় ক্ষোভে মেয়েসহ ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিয়েছে? কই সেটা নিয়ে তো কোন প্রতিবাদ চোখে পড়েনি, ফারুক ওয়াসিফ কোন কলাম লেখেনি প্রথম আলোতে? এটা কি দরিদ্র হওয়ায় তার কাছ থেকে কোন সুবিধা আদায় করা যাবে না বলে?

আসলে ধর্ষণের প্রতিকার নয়, সুযোগের সদ্ব্যব্যহার করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ আমাদের প্রতিবাদ। কারণ আমরা আসলে সবাই মনে মনে ধর্ষক। অথবা ক্যাম্পাসের প্রচলিত ‘সুযোগের অভাবে সৎ’। সাফাতের এই কেসে প্রচুর লেনদেন হবে বিভিন্ন পক্ষে, অতপর এক সময় থিতিয়ে পড়বে এই ইস্যু। আবার নতুন কোন ধর্ষকের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এই ধারা চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না আমরা সাফাতদের ধর্ষক হওয়ার শুরুটা বন্ধ করতে পারবো। আর যেটা শুরু হয় পরিবারের মধ্য থেকেই।

আমার অনুরোধ, আপনি আস্তিক হলে আপনার সন্তানকে ধর্ম শিক্ষা দিন, তা সে যে ধর্মেরই আপনি হোন না কেন। আর যদি সৃষ্টিকর্তায় আপনার বিশ্বাস না থাকে, সমস্যা নাই, নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা দিন সন্তানকে। ছোট বেলা থেকেই যদি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে শেখে আমাদের সন্তানরা, উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবাদ প্রয়োজ হবে না, এমনিতেই বন্ধ হবে সাফাতদের এই আগ্রাসন।

শেষ প্রশ্নটা হলো, সেটা কি আমরা আসলেই চাই?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:১০
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×