somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রেণী বিভাজনের গল্প ও বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ একজন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(এই লেখাটি ২০১২ এর ফেব্রুয়ারিতে এই ব্লগেই লিখেছিলাম। মেজর নুরুল ইসলামের পরিবারের সে সময়কার পরিস্থিতির সাথে এখনকার পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি। যার অনুরোধে এই লেখাটি লিখেছিলাম, সেই ছেলেটি আজকে খুবই আবেদনময় পোস্ট দিয়েছে ফেইসবুকে। ওর অনুরোধেই লেখাটা ইষৎ পরিবর্তন করে আবারও দিচ্ছি)

২০০৯ এর ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর হেড কোয়ার্টারে বিডিআর বিদ্রোহ স্বতস্ফূর্ত ছিল, না এর পেছনে কোন ষড়যন্ত্র ছিল সে প্রশ্ন আমরা যারা বেঁচে আছি, বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে আমরা যারা রাজনীতি করছি, তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিদ্রোহীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে যারা এই বিদ্রোহে প্রাণ হারিয়েছেন, অথবা কোন কিছু বোঝার আগেই যিনি বড় অসময়ে বিদায় নিয়েছিলেন সেদিন, তাঁর কাছে, তাঁর পরিবারের যাঁরা বেঁচে আছেন এখনও, তাদের কাছে এই প্রশ্ন অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের প্রধান ব্যক্তিটির অবর্তমানে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার উপায় অন্বেষণ করতে পারা।

বিডিআর বিদ্রোহের পর বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারি ব্যাংক পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস বিদ্রোহে শহীদদের পরিবারগুলোর সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নিয়ে। এই পরিবারগুলোর শিক্ষিত সন্তানদেরকে সক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে এমপ্লয়মেন্ট করার পাশাপাশি প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সাহায্য দেওয়ার জন্য শহিদ পরিবারগুলোকে ভাগ করে নেয় ব্যাংকগুলো। যেটা এ বছরই শেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার তাঁদেরকে শহিদ ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করে।

কিন্তু এই সামান্য সম্মাননাও আজ শ্রেণী বিভাজনের মুখে পড়েছে। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার পাশাপাশি বিডিআর-এর কয়েকজন সদস্যসহ সাধারণ মানুষও বিডিআর বিদ্রোহে জীবন হারিয়েছিলেন। এর ভেতরে বিডিআর এর তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামও ছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা তাঁকে নৃসংশভাবে হত্যা করে এবং অন্যান্য শহিদ সেনা সদস্যের সাথে তাঁর মৃতদেহকেও গণকবরে নিক্ষেপ করে। কিন্তু অন্যান্যদের মত বিদ্রোহে শহিদ হলেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। মৃত্যুর প্রায় ৬ মাস পরে সরকারি সিদ্ধান্তে তাঁর কবরে গার্ড অব অনার দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়।

তারপরও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিডিআর বিদ্রোহে শহিদ এই সুবেদার মেজরের পরিবার রয়ে গেছে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়েই। শহিদ সেনা সদস্যগণের পরিবারগুলাকে যেখানে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পরিবার প্রতি ১০ লাখ টাকা, সেনা প্রধানের তহবিল থেকে পাঁচ লাখ টাকা, পারিবারিক নিরাপত্তা প্রকল্প থেকে আট লাখ টাকা, পারিবারিক পেনশন ৫০-৬০ লাখ টাকা, মিরপুর ডিওএইএস-এ চার কাঠার প্লট এবং বিএবি’র পক্ষ থেকে মাসিক চলি­শ হাজার টাকা করে ১০ বছরের জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে সেখানে কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজরের পরিবার পেয়েছে শুধুমাত্র বিডিআর কল্যাণ তহবিল থেকে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা, ছেলের চাকুরী আর বিডিআর হেড কোয়ার্টারের অভ্যন্তরে থাকার সুবিধা, যেটা যেকোনো সময় শেষ হয়ে যেতে পারে । তারপর সামনে থাকবে শুধু অন্ধকার অনিশ্চিত।

ঘটনাক্রমে এই পরিবারের একমাত্র ছেলেটি অফিসে আমার সহকর্মী। যে বয়সে ছেলেটির বন্ধুদের সাথে হল্লা করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুটে বেড়ানোর কথা, সেই বয়সে ছেলেটি অসময়ে পিতা হারানোর দুর্বিসহ স্মৃতির সাথে তিন সদস্যের পরিবারের ভার কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছে। কৈশোরের আভা পেরুনোর আগেই জীবনের কদাকার দিকগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।

ওর মা লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। মায়ের চিকিৎসা, দিনভর অফিসের ব্যস্ততা, তারপর এই প্লট পাওয়া নিয়ে দিনের পর দিন, বিজিবি, মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দিনের পর দিন চিঠি চালাচালি ও দৌড়াদৌড়ি করতে করতে এই ছেলেটি আজ ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। সে আজকের ফেইসবুক একটি পোস্ট দিয়ে রাস্ষ্ট্রর কাছে ক্ষমা চেয়েছে। অব্যহতি চেয়েছে।

আবার ২৫ ফেব্রুয়ারি এসেছে। পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং টিভি চ্যানেলে বিডিআর বিদ্রোহের স্মৃতিচারণার সাথে সাথে এই পরিবারের বঞ্চনার কথাও প্রকাশিত হয়েছে। ভাবার কোন কারণ নেই যে এটা তাদের ভালবাসা বা দায়িত্ববোধের চরম পারাকাষ্ঠা প্রদর্শন; বরং এটা মিডিয়ার এই রমরমা যুগে হট কেক ইস্যু নিয়ে ব্যবসা করা। ফেব্রুয়ারি পার হয়ে গেলেই বিডিআর বিদ্রোহের নির্যাসও শেষ হয়ে যাবে। মিডিয়াও ভূলে যাবে এই পরিবারের কাহিনী। তারা মেতে উঠবে মার্চের কোন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে।

তবুও আমার আশা, এক সাহসী বীরের পরিবারের প্রতি বঞ্চনার কথা জানুক সবাই। জানুক এমন মানুষদের দ্বিচারিতার কথা, যাদের আমরা দেবতা জ্ঞান করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×