somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ না জিতলেই বা কি?

১০ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লাত্থি দেওয়া ছাড়া ফুটবলের যে আর কোন কাজ থাকতে পারে, সেটাই যখন বুঝতাম না ঠিকমত, সেরম এক সময়ে ম্যারাডোনার নামের সাথে আমার পরিচয়। নব্বুইয়ের এক অন্ধকার ভোরে ঢাকা থেকে বাড়ির পথে রওনা হওয়ার জন্য হোস্টেল থেকে বেরিয়ে গলির মুখে এক দোকানে দেখি মানুষের জটলা। ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছিল সম্ভবত। ভাইয়ের সাথে আমিও জটলায় দাড়িয়ে গেলাম। সাদাকালো টিভিতে দেখলাম খাটো মত এক প্লেয়ার বল নিয়ে দৌড়াচ্ছে। জটলা থেকে গর্জন উঠলো, ম্যারাডোনা!!

হ্যাঁ, ইনিই ম্যারাডোনা; যিনি নিজ দেশের ঠিক উল্টো গোলার্ধে ছোট্ট এক দেশের তাবৎ মানুষকে এমনই আবেগে ভাসিয়েছিলেন যে, যেদিন ম্যারাডোনাকে কোকেন নেওয়ার অপরাধে বহিষ্কার করা হলো, সেদিন ময়মনসিংহের এক অজ-পাড়ায়ও বিশাল মিছিলে শ্লোগান উঠেছিল ‘ম্যারাডোনার কিছু হলে-জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’.. .. (সম্ভবত ‘এলেবেলে’-হুমায়ুন আহমেদ)

আর্জেন্টিনার নাম জানতাম ওদের ডাকটিকেটের সৌজন্যে। ডাকটিকেট জমানোর শখ ছিলো তখন আমার। কিন্তু ম্যারাডোনা বোঝার বয়স তখনও হয়নি। তবুও মনের মধ্যে গেঁথে গেল ওই নাম। এরপর ঝিকরগাছায় পাড়ায় একদিন বড়দের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফুটবল খেলায় গোলকিপারের অভাবে আমাকে ধরে আর্জেন্টিনা দলের গোলপোস্টে দাড়া করিয়ে দিল।

আর কোন কিছু আমার কিশোর মনে দাগ কেটেছিল কিনা আজ আর মনে নেই, কিন্তু তখন থেকেই আমিও আর্জেন্টিনার হয়ে গেলাম মনে প্রাণে। আকাশী নীল-সাদার প্রতি যে ভালোবাসা সেই কৈশোরে শুরু হয়েছিলো, আজ অব্দি তার কোন কমতি হয়নি।

যখন থেকে ফুটবল বুঝতে শিখলাম, তখন থেকে দেখছি আর্জেন্টিনা হারছে, বড় কোন টুর্নামেন্টই জিতলোই না এদ্দিনে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই, প্রতিবার আর্জেন্টিনা হারার পর ভালোবাসাটা যেনো আরো জোরালো হয়। কেন হয়, নিজেও জানিনা।

চার বছর পরপর বিশ্বকাপ আসে, আর আমার স্বপ্নের সারথী হয়ে নতুন নতুন নায়ক সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রতিবারই সেই একই গল্প। চুরানব্বুইয়ে ম্যারাডোনার কোকেন কাহিনী শেষ করে দিলো আমার স্বপ্ন। এর পর একে একে বাতিস্তুতা, ওর্তেগা, ভেরন, ক্রেসপো, রিকুয়েমে (এই লোকটাকে আমার খুব পছন্দ), স্যাভিওলা, তেভেজ তারপর রোমেরো (এই গোলকিপারকেও আমার জোস লাগে), ডি মারিয়া, হিগুয়াইন, মাচোরানো এবং দ্য লিওনেল মেসি। প্রতিবারই হতাশাই আমরা পেয়েছি। তবুও কেন যেন আর্জেন্টিনা ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না।

দুই হাজার ছয়ের বিশ্বকাপে যেদিন আর্জেন্টিনা হারলো, তারপর দিন হলে রুমের দরজায় বড় করে আর্জেন্টিনার পতাকা লাগিয়ে নিচে লিখে দিলাম, ‘তবুও আর্জেন্টিনার সাথেই আছি’.... বন্ধুরা খুব হাসলো, কিন্তু কি যেয়ে আসে তাতে! দু’হাজার দশে আর্জেন্টিনা হারার পরদিন জার্সি গায়ে দিয়ে অফিসে গেলাম প্রথমবারের মত, সবাই আড়চোখে তাকাতে লাগলো, তাকাক না, হু কেয়ার্স?

এ সবই পাগলামী, তবুও কেন যেন বয়স বাড়ে তবু আর্জেন্টিনা ছাড়ে না।

এবার যখন আরেকটি বিশ্বকাপ দোড়গোড়ায়, প্রথমবারের মত আর্জেন্টিনার পতাকা টানিয়ে দিয়েছি বাসার বারান্দায়। ক’দিন আগে সাম্পাওলি বলেছেন ‘ফুটবলের কাছে মেসির একটা বিশ্বকাপ পাওনা’। আসলেই এই ছেলেটা এতটাই ভালো খেলে যে বিশ্বকাপটা তার পাওনাই বলতে হবে।

তাই এবার হয়তো মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে। অবশ্য চ্যাম্পিয়ন না হলেই বা কি আসে যায়, আর্জেন্টিনা আমাদের কাছে আর্জেন্টিনাই। জয় পরাজয়ের হিসাব মেনে তো আর ভালোবাসা আসে না। তাই যদি হতো, তবে তো আকাশে শুধুই সবুজ-হলুদ বা লাল-হলুদ-কালোই মেরুনই উড়তো।

শুভ কামনা আর্জেন্টিনার জন্য। ভামোস আর্খেনটিনা!!!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৫১
৩২টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×