somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাদ্যে ভেজাল; ভেজাল ঔষধেওঃ চিন্তার সুস্থতা কতদূর?

০৪ ঠা মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু খবর আমাদের বিচলিত করে। করে উদ্বিগ্ন। কিছু বাস্তবতা আমাদের জন্য কষ্টের হয়ে দেখা দেয়। আঁধার হয়ে নেমে আসে কারো কারো জীবনে। দুটি খবরে চোখ আটকে গেলো। নতুন কোনো খবর নয়। তবু মনটা বিচলিত হয়ে আছে। উদ্বেগও কাজ করছে। খবর দুটি এমনঃ
(১) খাদ্যে ভেজাল বাড়ছেই ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য;
(২) ভেজাল ওষুধে সয়লাব বাজার দেশজুড়ে সীমাহীন নৈরাজ্য।
(বাংলাদেশ প্রতিদিন; ০৩ মে ২০১৫)

প্রথম খবরে প্রকাশঃ উৎপাদন বাড়লেও দেশে নিরাপদ খাদ্যের সংকট রয়েই গেছে। এ ক্ষেত্রে ভয়াবহ এক আতঙ্কের নাম ভেজাল খাদ্য, যা বড় ধরনের হুমকিতে ফেলেছে জনস্বাস্থ্য। আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্য বিষক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ বলছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি ১৯ শিশুর একজন মারা যায় খাদ্যে উচ্চমাত্রার ভেজালের কারণে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের জনস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের বাজারে থাকা ৭৬ শতাংশ খাবারেই ভেজাল। আবার এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভেজাল শিশুখাদ্যে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২১ হাজার ৮৬০টি খাদ্যপণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ শতাংশেই ভেজাল পেয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, ভেজাল খাদ্য গ্রহণে ক্যান্সার ছাড়াও কিডনি, ফুসফুস, লিভার, স্নায়ু সমস্যা, পাকস্থলীর সংক্রমণ, গর্ভজাত সন্তানের প্রতিবন্ধকতা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির মতো রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

দেশের বাজারে প্রাপ্ত খাদ্যে ভেজাল আছে – এটা আমাদের জানা। কোনো খাদ্য কিনেই কেউ নিশ্চিত হতে পারবেন না যে, এটা ভেজালমুক্ত। কিন্তু এই ভেজাল খাদ্য এবং এর গ্রহণ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার পরিসংখ্যান দেখে আঁতকে ওঠতে হয়।

প্রতিদিনের খাদ্য- যেমনঃ মসলা, শিশুখাদ্য, ফল, শাকসবজি, মাংস, দুধ, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাবার, পানীয় সবকিছুতেই ব্যবহৃত হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। ভাবতে অকাকই লাগে – শুধু আপেল, কমলা, আম নয়- তরমুজ ও ডাবের মতো ফলেও ভেজাল মেশানো হচ্ছে। এমনকি রমযান মাসেও ইফতারিতে ভেজাল দিতে কুন্ঠাবোধ করে না আজ মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভেজাল খেয়ে ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, কিডনি ও লিভারের রোগ হবার আশঙ্কা থাকে। আর বিকলাঙ্গতা, গর্ভবতীদের গর্ভস্রাবের ঝুঁকি বৃদ্ধি, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, নারীর স্তন ক্যান্সার ও পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আমাদের জীবনযাত্রার ধরন এমন যে, ইচ্ছে করলেই সবাই এসব ভেজাল পরিত্যাগ করে থাকতে পারে না। অসংখ্য মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের মানুষজনকে বাধ্য হয়েই গ্রহণ করতে হয় এসব ভেজালযুক্ত খাবার।
ভেজাল খেয়ে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। ডাক্তারের সেবা নেয়ার ক্ষমতা অনেকেরই নেই। ধুকেধুকে শেষ হয় জীবন। আর যারা ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ গ্রহণ করার সুযোগ পান, তারা কি নিশ্চিত – ঠিক ঔষধটি পাচ্ছেন? না।
“ভেজাল ঔষধে সয়লাব বাজার দেশজুড়ে সীমাহীন নৈরাজ্য” – এ খবরটি তাই সাধারণ মানুষের জন্য বড় আতঙ্কের। অনেক ডাক্তার এসব ভেজালের সাথে জড়িত। ঔষধের মান নিয়ে এবং মানহীন ও মেয়াদহীন ঔষধের প্রতিক্রিয়া মানুষের জীবনে যে প্রভাব ফেলছে – তা নিঃসন্দেহে কষ্টকর, অনভিপ্রেত আর লজ্জার।

খাদ্যে ভেজাল; এ ভেজাল খেয়ে অসুখে ভোগা
ঔষধে ভেজাল; নষ্ট চিকিৎসায় আরো রোগা
রক্তেও নাকি দিচ্ছে ভেজাল!
আমার দেশের হলো কী হাল!!
আসল ভেজাল চিন্তায় রয়; আল্লাহ সুমতি যোগা।

খাদ্যে আর ঔষধে ভেজালের এই চিত্র দেখে একটাই বিষয় প্রধান হয়ে আসছে- মানুষের মানবিকবোধের অধঃপতন হচ্ছে। যেকোনো ভাবেই জিততে হবে, ব্যবসা-সফল হতে হবে, লাভের মুখ দেখতে হবে – এই হলো সারকথা। লোভ-লালসা আর স্বার্থ-চিন্তা সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে ভেজাল খাদ্যে বা ঔষধে নয়; আসল ভেজাল হলো মানুষের মনে ও মগজে। আসল ভেজাল চিন্তা ও চেতনায়।

ভেজালের এই ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে জাতি হিসেবেও লজ্জার ভার নিতে হয় আমাদের। তাই সব ছাড়িয়ে চিন্তার সুস্থতা আগে প্রয়োজন। ব্যক্তিগত এই গুণ অর্জনের জন্য পারিবারিক পরিবেশ থেকে শুরু করে সামাজিক দায়বদ্ধতা আর সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় আইন, নীতি ও অনুশাসনের সুস্থ ও সুষ্ঠু প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে এ গূঢ় সঙ্কট থেকেও উত্তরণ সম্ভব। আশাবাদী হয়ে বাঁচতে চাই।
=
সোআপ
ফেসবুক: shohel121
ঢাকা
০৩ মে ২০১৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×