somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় বল্গারদের জন্য গল্প ও একটি মোরাল,(প্লিজ গল্পটি পড়ুন,আমি আপনাদের ৫টি মিনিট চেয়ে নিলাম)

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসপাতালের ছোট্ট একটি ঘর।চার দেয়ালের মাঝে বন্দী দুজন মুমুর্ষু রোগী।শুধু একটি জানালা। জানালার পাশের সীটে জরাজীর্ণ বৃদ্ধ। গবাক্ষ পানে চেয়ে আছেন।
অল্পদুরেই এক যুবা।মেরুদন্ড নিশ্চল।চলাফেরার কোনো সামর্থ্য নেই।সারাদিন বালিশে মাথা রেখে শুয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে থাকতে দু রোগীর মাঝে গড়ে উঠেছে নিবিড় সম্পর্ক। যুবা এক সময় ছবি আকঁতেন। প্রকৃতির ছবি,ঘাসে-ঘাসে ঘাস ফড়িং উড়ে বেড়ানোর ছবি।মৃদুমন্দ বাতাসে কাশফুল দোলে উঠার ছবি। মায়ের কোলে হাসিমাখা শিশুর ছবি।
যুবা-বৃদ্ধকে বলেন -চাচা , আজ কি দেখলে জানালা দিয়ে বলোনা।
ঐ যে, কী সুন্দর পরীর বাচ্ছার মতো খুকী-দৌড়ে যাচ্ছে,আবার মায়ের কাছে আসছে। পিছন পিছন আসছে এক ব্যান্ড পার্টি।
যুবা যদিও কিছু দেখছেনা,তবে চোখ বন্দ করে সব যেন অন্তর দিয়ে দেখে যাচ্ছে, ব্যান্ডের শব্দ ঘরের ভিতর না আসলেও যুবা যেন শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
এভাবে প্রতিদিন,বৃদ্ধ চাচা-যুবাকে জানালার পানে চেয়ে-সমস্ত প্রকৃতি যুবার কাছে তুলে ধরেন।আকাশে গুচ্ছ,গুচ্ছ মেঘের ছবি,
খড়ের উপর বসা ঘাস ফড়িং,যে লোকটি প্রতিদিন ছোট মেয়ের হাত ধরে দিনের একটি সময় হেঁটে যায় এসব কিছুই যুবাকে বলে শুনান। আর যুবা আপন মনে সবকিছু মানসপটে এঁকে নেয়।
তুলি দিয়ে আঁকা হয়না,মন দিয়ে আকেঁন।ক্যানভাস এখন হৃদয়।আর প্রকৃতি হলো বৃদ্ধ চাচার বর্ণনা।
আজ যেন অন্য এক ভোর।যুবার মন ভারী,কেমন যেন মৌনতা আর বিষন্নতা। দৈনন্দিনের মতো আজও নার্স এলেন। যুবাকে হ্যালো বললেন-যুবাও প্রতিউত্তর দিলেন।এরপর নার্স গেলেন বৃদ্ধ চাচার পাশের সীটে। কোনো সারাশব্দ নেই।রাতের কোনো এক সময় চাচা শান্তিতে দেহ ত্যাগ করেছেন।

যুবা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।চিরাচরিত নিয়ম,মেনে নিতেই হবে।অনেক দিনের বাঁধন আলগা হয়ে গেলো।
এবার যুবা নার্সকে বলেন-আচ্ছা দিদিমনি-আমি কি জানালার পাশের সীট টা পেতে পারি।
দিদি বলেন-কেন নয় দাদা।
যুবা জানালার পাশের সীটে এবার আসন পাতেন।
জানালার দিয়ে এবার বাইরে চোখ রাখেন। চোখ দিয়েই যুবা দারুন চমকে উঠেন, কিছুই দেখা যায়না। শুধু একটি বিশাল ধুসর দেয়াল,যার পলেস্তারা অবহেলায় খসে খসে পড়ছে।
যুবা এবার নার্সকে ডাকেন-আচ্ছা দিদি,
চাচা যে আমাকে কত সুন্দর বর্ণনা দিতেন ,জানালা দিয়ে চেয়ে চেয়ে।আমিতো এখন দেখি এসবের কিছুই দেখা যায়না।শুধু একটি ইট পাথরের দেয়াল ছাড়া।
দিদি বলেন-দাদা দেয়াল ছাড়া সব প্রকৃতি ও যদি এখান থেকে দেখা যেতো ,তাহলেও চাচা আপনাকে কিছুই বলতে পারতেন না। তিনি জন্ম থেকেই অন্ধ। আমার মনে হয়, আপনার সারা সময় নির্মল আনন্দে ভরিয়ে দিতে,এসব কিছুই তিনি আপন মন থেকেই বলতেন।আর সারাদিন নিজ বিছানায় না শুয়েও জানালার পাশে চেয়ে থাকতেন। তিনি জানতেন,আপনি এসব গল্প শুনতে ভালোবাসেন।
এই হলো মানুষে মানুষে প্রেম। বৃদ্ধ চলে গেলেন ,কিন্তু তাঁর এক অনাত্মিয় যুবার প্রতি অনুরাগ,মায়া,ভালোলাগা বেচেঁ রইলো। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা সবাই এক মোহনায় এসেছি। আমরাও কি পারিনা, শুধু ভালোবাসা প্রকাশ করতে।
কি এমন পরিতৃপ্তি আসে -একজন আরেকজনের প্রতি বিরুপ হয়ে। আপনাদে কাউকে আমি চিনিনা, তারপরও মনে হয়,কত আপন। আজ যদি আমি চলে যাই, কেউ জানবেও না আমার কি হলো। শুধু আমার কথাগুলো র‌য়ে যাবে।
তারাশংকরের কবি উপন্যাসে পড়েছিলাম"জীবন এতো ছোট কেনে?"
এই ছোট জীবনকে আসুন আমরা ভালোবাসা দিয়ে আকাশের চেয়ে বড় করি।
কিছু প্রতিহিংসার লিখা পড়ে বড়বেশি আবেগ আপ্লুত হয়ে অনেক বেশী বলে ফেললে প্লিজ ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সবাইকে ঈদ মোবারক এবং শারদীয় পুজার শুভেচ্ছা।
উতস্বর্গঃ সকল ব্লগারদের।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:৫২
১৩৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×