somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহবুব মোর্শেদের--`ফেস বাই ফেস' বইটি ভাল লেগেছে...তাই কিছু আলোচনা।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহবুব মোর্শেদ ভাই, মানে ব্লগার, মানে প্রথম আলো ব্লগের একসময়ের মডু, মানে বর্তমানে সমকালের সাহিত্য বিভাগে আছেন, সাথে যিনি একজন প্রাথমিক কালের ব্লগার (সামু যুগে আবির্ভাব) এবং একজন পাড় ফেসবুকিষ্ট। সেই বহুল গুণে বিভূষিত ব্যক্তিটি একটা লালটুকটুকে মোলাটের বই লিখেছেন এবার। উপন্যাস। নাম - ফেস বাই ফেস। অটোগ্রাফ সহকারে বাড়ীতে নিয়ে আসা বইটি পড়ে এককথায় বলব মজা পেয়েছি। আর বেশী কথায় বললে:
মোট ১২০ পাতার বইটির প্রায় শেষের দিকে এই ১০১ পাতার শুরতেই পাওয়া যায়-“ কোথাও গিয়ে দুই বন্ধু প্রেমিকা হারানোর কথা শেয়ার করতে করতে গলা ধরে কান্দি”- এই ডায়ালোগ খানা। পড়ে মনে হচ্ছে দুই বন্ধু মানে দুই যুবক প্রেমিকা হারানোর বেদনায় বেদনার্ত। আসলে এই দুই বন্ধুর একজন আবার নারী ।
চরম ক্লাইমেক্স।
ক্লাইমেক্স শুধু এখানেই না, বইয়ের পরতে পরতে নানান বাঁকে নানান টুইস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। আর মূল উপজীব্য বিষয় মানে ফেসবুক এর পোষ্ট মর্টেম লেখক ভাই চরমভাবেই করেছেন। পাতায পাতায় দেখেবেন ঠিক আপনি যে কাজটি একটু আগে ফেসবুকে করেছেন, ঠিক তাই হয়তো ঘটাচ্ছে আমাদের নায়ক শুভ।
বাস্তবের ফেসবুকে মোর্শেদ ভাই যেমন ক্ষণে ক্ষণে চমৎকার চমৎকার ফেসবুক স্টাটাস দেন ঠিক তেমনি তিনি বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় এর কোন সাংখ্যিক ক্রম না করে ফেসবুক স্টাটাসের মত একটা একটা উরাধূরা জব্বর বাক্য ব্যবহার করেছেন। পড়লেই ভাবনা পড়ে যায়মন--‘ আসলে কি অর্থ সে সব বাক্যের’।
“রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে লোকে যেভাবে ডাব উঁচু করে রস খায় , সেভাবে সুপর্ণার মুখ উঁচু করে ওর মুখে চুমো খাই। ” চুমু খাওয়ার এই উপমা ন্সিন্দেহে ভিনন্নতায় পাঠককে কিঞ্চিৎ ভাবুক করে তোলে।
এমন নানান টুকরো টুকরো ঘটনার বর্ননার ফাঁকে ফাঁকে বইটিতে একটু পরে পরেই এসেছে ফেসুবকের মাঝে শুভর সাথে নতুন বা পুরাতন চেনা বা অচেনা কোন ফেসবুক ফ্রেন্ডের কথোপকথন। দু:খের ঝর্ণা ধারায় শেয়ারিং অথবা প্রেমের কথন।
ফেসবুককে লেখক একজায়গায় নাম দিয়েছেন পেন্ডোরার বাক্স । যথার্থ উপমা। কি নেই আসলে ফেসবুকে । লেখক ও তার এই ফেস বাই ফেসে সেইসব ভার্সেটাইল বৈচিত্র স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলিয়েছেন। এমন চরিত্রের সাথে একদা শুভর আলাপ হয় যে কিনা ফেসবুকে পরবাসী এক মেয়ের সাথে অবাধ নিখাদ প্রেমে পড়ায় দুজনে ফেসবুকেই বিয়ে করে ফেলে, মিথ্যে বিয়ে, ভাবনার বিয়ে, কিন্তুফেসবুকের রিলেশনস্টি স্টাটাসে ম্যারিড টু ...সেই দুজন দুজনার নাম । চিন্তার সূত্র লেখকের ফেসবুকের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পেড়েছে এখানে। এক ব্যবসায়ী ভ্রদ্রলোক পৌঢ় ভদ্রলোক এর সাথে শুভর ফেসবুকে খুব জমে, সে তাকে তার বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয় তার প্রিয় এবং ব্যতিক্রম মনে হওয়া শুভর সাথে। একদা সেই গৃহবধূর সাথেও ভিন্ন এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে শুভর। আমেরিকাতে একজন মেডিক্যাল এনথ্রপলজিস্ট এবং ডিভোর্সী স্বাধীনচেতা নারীর সাথে শুভর নানান আলোচনায় উপন্যাস চরম ভাবে সামনে এগানোর উপাত্য খুঁজে নিয়েছে। পাঠকও সে সব পড়ে ফেসবুকের মূল মজাটার নির্যাস বুঝতে পারবেন । এই চরিত্রটির সাথে আমি বাস্তবের সেলিনা শিকদার নামক একজন ব্লগার কবির মিল খুঁজে পাই।
এই এক সমস্যা পাঠক কূলের , একটু মিল পেলেই কারও সাথে সেটা মিশিয়ে ফেলে। আমিও ফেলতে ফেলতে ফেলি না। মিল সামান্য , অমিলই আসলে বেশী। হয়তো দেখা যাবে ফেসবুকে ঘটে যাওয়া লেখকের নিজের জীবনের অনেক ঘটনাই একটু একটু ভিন্ন আঙ্গিকে তিনি এখানে ফুটিয়েছেন।
কোন এক ফেসবুক আইডির নারী চরিত্রের রগরগা প্রোফাইল পিকচার দেখে শুভর যখন মনে হয় সেটা ফেইক, সে সরাসরি জিজ্ঞেস করে, নারী চরিত্র তাকে প্রমান দেয়ার জণ্য বলে , আমার পিরিয়ড চলছে। তারপর আলোচনা হয় পিরিয়গ হলে মেয়েদের কেমন লাগে সেই সব বিষয়ে। ফেইক চরিত্রের কথায় নারীর ঐ গোপন বিষয়ে বিশদ জ্ঞান তার মেয়ে হবার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। শুভর মনেও এই পিরিয়ডের রিয়েল অনুভিতি জানার তীব্র আকাংখা জেগে ওঠে। ফেসবুকে শুভর সাথে দেখা যায় একজন সুফি সাধিকার ও পরিচয় হয়। সে তাকে নানা পরামর্শ দিতে থাকে।
মোট কথা ইটস এ কমপ্লিট ফেসবুক একটিভিটিস । এখানে একই সাথে চরিত্র গুলোর মাধ্যমে বেশ মজার , রোমান্টিক এবং হৃদয়ঘন অনেক ঘটনাও ফ’টিয়ে তুলেছেন তিনি।
তবে সরি টু সে একটা ছোট ইতিহাসজনিত ভুল করে ফেলেছেন মোর্শেদ ভাই। সেটা বইয়ের ৮৫ পাতায়। সেখানে উনি ভারতের জয়পুরের পিং সিটির আলোচনা করছিলেন। তথায় জয়পুরের রাজা হিসেব টিপু সুলতানের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে জয়পুরে রাজত্ব করত রাজপুতরা। আর টিপু সুলতানের রাজত্ব ছিল মহিশূরে যেটা ভারতের দক্ষিণে। আর জয়পুরের অবস্থান উত্তরে।
এই ছোট ঐতিহাসিক ভুলটা বাদে পুরো বইয়ের ভাষার সাবলিলতা পাঠককে খুব টানার কথা। আমাকে টেনেছে। ফেসবুক জাতীয় হট এবং প্রচন্ড সমসাময়িক একটা বিষয় মাহবুব মোর্শেদ ভাই যে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তারজন্য তাকে সাধুবাদ।


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:২৮
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×