মোট ১২০ পাতার বইটির প্রায় শেষের দিকে এই ১০১ পাতার শুরতেই পাওয়া যায়-“ কোথাও গিয়ে দুই বন্ধু প্রেমিকা হারানোর কথা শেয়ার করতে করতে গলা ধরে কান্দি”- এই ডায়ালোগ খানা। পড়ে মনে হচ্ছে দুই বন্ধু মানে দুই যুবক প্রেমিকা হারানোর বেদনায় বেদনার্ত। আসলে এই দুই বন্ধুর একজন আবার নারী ।
চরম ক্লাইমেক্স।
ক্লাইমেক্স শুধু এখানেই না, বইয়ের পরতে পরতে নানান বাঁকে নানান টুইস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। আর মূল উপজীব্য বিষয় মানে ফেসবুক এর পোষ্ট মর্টেম লেখক ভাই চরমভাবেই করেছেন। পাতায পাতায় দেখেবেন ঠিক আপনি যে কাজটি একটু আগে ফেসবুকে করেছেন, ঠিক তাই হয়তো ঘটাচ্ছে আমাদের নায়ক শুভ।
বাস্তবের ফেসবুকে মোর্শেদ ভাই যেমন ক্ষণে ক্ষণে চমৎকার চমৎকার ফেসবুক স্টাটাস দেন ঠিক তেমনি তিনি বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় এর কোন সাংখ্যিক ক্রম না করে ফেসবুক স্টাটাসের মত একটা একটা উরাধূরা জব্বর বাক্য ব্যবহার করেছেন। পড়লেই ভাবনা পড়ে যায়মন--‘ আসলে কি অর্থ সে সব বাক্যের’।
“রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে লোকে যেভাবে ডাব উঁচু করে রস খায় , সেভাবে সুপর্ণার মুখ উঁচু করে ওর মুখে চুমো খাই। ” চুমু খাওয়ার এই উপমা ন্সিন্দেহে ভিনন্নতায় পাঠককে কিঞ্চিৎ ভাবুক করে তোলে।
এমন নানান টুকরো টুকরো ঘটনার বর্ননার ফাঁকে ফাঁকে বইটিতে একটু পরে পরেই এসেছে ফেসুবকের মাঝে শুভর সাথে নতুন বা পুরাতন চেনা বা অচেনা কোন ফেসবুক ফ্রেন্ডের কথোপকথন। দু:খের ঝর্ণা ধারায় শেয়ারিং অথবা প্রেমের কথন।
ফেসবুককে লেখক একজায়গায় নাম দিয়েছেন পেন্ডোরার বাক্স । যথার্থ উপমা। কি নেই আসলে ফেসবুকে । লেখক ও তার এই ফেস বাই ফেসে সেইসব ভার্সেটাইল বৈচিত্র স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলিয়েছেন। এমন চরিত্রের সাথে একদা শুভর আলাপ হয় যে কিনা ফেসবুকে পরবাসী এক মেয়ের সাথে অবাধ নিখাদ প্রেমে পড়ায় দুজনে ফেসবুকেই বিয়ে করে ফেলে, মিথ্যে বিয়ে, ভাবনার বিয়ে, কিন্তুফেসবুকের রিলেশনস্টি স্টাটাসে ম্যারিড টু ...সেই দুজন দুজনার নাম । চিন্তার সূত্র লেখকের ফেসবুকের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পেড়েছে এখানে। এক ব্যবসায়ী ভ্রদ্রলোক পৌঢ় ভদ্রলোক এর সাথে শুভর ফেসবুকে খুব জমে, সে তাকে তার বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয় তার প্রিয় এবং ব্যতিক্রম মনে হওয়া শুভর সাথে। একদা সেই গৃহবধূর সাথেও ভিন্ন এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে শুভর। আমেরিকাতে একজন মেডিক্যাল এনথ্রপলজিস্ট এবং ডিভোর্সী স্বাধীনচেতা নারীর সাথে শুভর নানান আলোচনায় উপন্যাস চরম ভাবে সামনে এগানোর উপাত্য খুঁজে নিয়েছে। পাঠকও সে সব পড়ে ফেসবুকের মূল মজাটার নির্যাস বুঝতে পারবেন । এই চরিত্রটির সাথে আমি বাস্তবের সেলিনা শিকদার নামক একজন ব্লগার কবির মিল খুঁজে পাই।
এই এক সমস্যা পাঠক কূলের , একটু মিল পেলেই কারও সাথে সেটা মিশিয়ে ফেলে। আমিও ফেলতে ফেলতে ফেলি না। মিল সামান্য , অমিলই আসলে বেশী। হয়তো দেখা যাবে ফেসবুকে ঘটে যাওয়া লেখকের নিজের জীবনের অনেক ঘটনাই একটু একটু ভিন্ন আঙ্গিকে তিনি এখানে ফুটিয়েছেন।
কোন এক ফেসবুক আইডির নারী চরিত্রের রগরগা প্রোফাইল পিকচার দেখে শুভর যখন মনে হয় সেটা ফেইক, সে সরাসরি জিজ্ঞেস করে, নারী চরিত্র তাকে প্রমান দেয়ার জণ্য বলে , আমার পিরিয়ড চলছে। তারপর আলোচনা হয় পিরিয়গ হলে মেয়েদের কেমন লাগে সেই সব বিষয়ে। ফেইক চরিত্রের কথায় নারীর ঐ গোপন বিষয়ে বিশদ জ্ঞান তার মেয়ে হবার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। শুভর মনেও এই পিরিয়ডের রিয়েল অনুভিতি জানার তীব্র আকাংখা জেগে ওঠে। ফেসবুকে শুভর সাথে দেখা যায় একজন সুফি সাধিকার ও পরিচয় হয়। সে তাকে নানা পরামর্শ দিতে থাকে।
মোট কথা ইটস এ কমপ্লিট ফেসবুক একটিভিটিস । এখানে একই সাথে চরিত্র গুলোর মাধ্যমে বেশ মজার , রোমান্টিক এবং হৃদয়ঘন অনেক ঘটনাও ফ’টিয়ে তুলেছেন তিনি।
তবে সরি টু সে একটা ছোট ইতিহাসজনিত ভুল করে ফেলেছেন মোর্শেদ ভাই। সেটা বইয়ের ৮৫ পাতায়। সেখানে উনি ভারতের জয়পুরের পিং সিটির আলোচনা করছিলেন। তথায় জয়পুরের রাজা হিসেব টিপু সুলতানের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে জয়পুরে রাজত্ব করত রাজপুতরা। আর টিপু সুলতানের রাজত্ব ছিল মহিশূরে যেটা ভারতের দক্ষিণে। আর জয়পুরের অবস্থান উত্তরে।
এই ছোট ঐতিহাসিক ভুলটা বাদে পুরো বইয়ের ভাষার সাবলিলতা পাঠককে খুব টানার কথা। আমাকে টেনেছে। ফেসবুক জাতীয় হট এবং প্রচন্ড সমসাময়িক একটা বিষয় মাহবুব মোর্শেদ ভাই যে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তারজন্য তাকে সাধুবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:২৮