শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
এক হরিণের বাচ্চা বনের মধ্যে এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাথে তার কেউ নেই। একবার এদিকে যাচ্ছে আবার ওদিকে যাচ্ছে। এই অবস্থা দেখে এক বানরের বাচ্চা এগিয়ে এসে বলল--
ও ভাই হরিণ, একলা একলা
কোথায় যাচ্ছ চলে
আমার কাছে সেই কথাটি
যাওনা একবার বলে?
বানরের বাচ্চার কথা শুনে হরিণের বাচ্চা চমকে উঠল। মনে মনে ভাবল আজ সাতদিন হলো আমার সাথে কেউ তো এমনভাবে কথা বলেনি। কে কথা বলল? পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে একটি বানরের বাচ্চা তাকে লক্ষ্য করে বলছে। এবার হরিণের বাচ্চা তার জবাবে বলল--
মায়ের সাথে ছিলাম আমি
বাপ মরেছে আগে
সাত দিন হলো মাকে আমার
খেয়েছে যে বাঘে।
তাই তো আমি এদিক ওদিক
ছুটে বেড়াই ভাই
এই জগতে আমার এখন
আপন কেহই নাই।
কথা শুনে বানরের বাচ্চার খুব দুঃখ হলো। কাঁদতে কাঁদতে সে বলল--
আমিও ভাই এতিম শিশু
সবাই গেছে মরে
একা একা ঘুরছি ফিরছি
তিন সপ্তাহ ধরে।
বানরের বাচ্চার কথা শুনে হরিণের বাচ্চাও খুব কষ্ট পেল। সে বানরের বাচ্চার কাছে এগিয়ে এলো। দুইজনই এতিম। এই দুনিয়ায় বিপদে আপদে তাদেরকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। দু’জানার অবস্থা একই রকম হওয়ায় দু’জনার মধ্যে ভাব বিনিময় হলো। বানরের বাচ্চা বলল--
তুমি এতিম আমি এতিম
অনেক দুঃখ মনে
এখন থেকে বন্ধু হলাম
এইনা গহিন বনে।
বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব করায় হরিণের বাচ্চা খুব খুশি হলো। কারণ এই বনের মধ্যে তার সাথে কথা বলার কেউ নেই। একা একা থাকতে হ্েচছ। এখন থেকে গল্পেসল্পে দুইজনের সমায় কাটবে। তাই হরিণের বাচ্চা বলল--
আমার দুঃখে তুমি কাতর
তোমার দুঃখে আমি
একই সাথে কাটিয়ে দিব
সারা দিবস যামি।
এ প্রস্তাব শুনে হরিণের বাচ্চা খুব খুশি হলো। দুই জন একসাথে ঘুরে বেড়ায়। বানরের বাচ্চা গাছের ডালে উঠে কচি পাতা ছিঁড়ে দিলে হরিণের বাচ্চা মনের সুখে খায়। আবার দুইজন একসাথে ঘুরে বেড়ায়, একসাথে গছের ছায়ায় ঘুমায়। এমনি করে দুই জনের সুখেই দিন কাটছিল। একদিন দুপুর বেলা বানরের বাচ্চা গাছের মগডালে উঠে কচি পাতা ছিঁড়ে দিলে হরিণের বাচ্চা মনের সুখে পাতা গুলো খাচ্ছে। এদিক ওদিক তাকানোর কথা তার মনে নেই।
এমন সময় পাশের জঙলের ভিতর লুকিয়ে এক বাঘ হঠাৎ তাকিয়ে দেখে একটি সুন্দর হরিণের বাচ্চা গাছের নীচে পাতা খাচ্ছে। ওমনি দেরি না করে হালুম করে এক লাফে হরিণের বাচ্চার উপর ঝাঁপিয়ে পরে। নিজেকে রক্ষা করতে না পেরে অসহায় হরিণের বাচ্চা মৃত্যুর আগে কাঁদতে কাঁদতে বলল--
কোথায় রইলে বন্ধু তুমি
আমার মরণ কালে
সুখ আমাদের সইলো না গো
দুঃখ থাকায় ভালে।
এই জগতে বন্ধু ছিলাম
বলছি আমি তাই
তেমন বন্ধু ওই জগতে
তোমায় যেন পাই।
বানরের বাচ্চা বন্ধুর বিপদে তাকে সাহায্য করার জন্য অনেক চেষ্টা করল। গাছের ডাল ধরে জোরে জোরে ঝাঁকি দিয়ে বনজঙ্গল কাঁপিয়ে ফেলল। উচ্চ কন্ঠে চিৎকার করে সবাইকে ডাকল। কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না। বাঘ হরিণের বাচ্চার ঘার কামড়ে ধরে জঙ্গলের ভিতর নিয়ে গেল। বানরের বাচ্চা নিচে নেমে যেখনে বাঘ হরিণের বাচ্চাকে মেরেছে সেই জায়গায় বসে কাঁদতে লাগল। এমন সময় বিরাট এক অজগড় সাপ এসে বানরের বাচ্চাকে খপ করে ধরে গিলে ফেলল। মরার সময় কাঁদতে কাঁদতে বানরের বাচ্চা বলল--
তোমায় খেল বাঘে বন্ধু
আমায় খেল সাপে
দোহের মরণ একই দিনে
বুঝি না কোন পাপে?
অজগর সাপ বানরের বাচ্চা গিলে খেয়ে আস্তে আস্তে জঙ্গলের দিকে চলে গেল। হরিণ এবং বানরের বাচ্চার এমন করুণ পরিণতি দেখে বনের গাছগাছালি উত্তরা বাতাসে হুঁ-উ হুঁ-উ করে কেঁদে উঠল।
০০ সামাপ্ত ০০
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৮