(সহ ব্লগার আবু হেনা ভাইয়ের নিজের বাস্তব টিন-এজ প্রেম কাহিনী নিয়ে লেখা উপন্যাস "স্বপ্ন বাসর" অবলম্বনে।)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আলেয়া তুমি আলেয়া হয়ে
রইলে আমার মনে
অনেক স্মৃতি হারিয়ে গেলেও
আছো হৃদয়ের কোনে।
হাঁটু অবধি কুন্তল তোমার
পটল চেরা চোখ
আজো ভুলিনি হাসি হাসি মুখ
বুক ভরা তাই শোক।
চপলা চঞ্চলা হরিণীর মত
বিচরিতে গ্রামময়
সরকার বাড়ির মেয়ে হওয়াতে
পেত যে সবাই ভয়।
আম কাঁঠালের বাগানে বাগানে
বাঁশ বাগানের তলে
পুকুর ঘাটের উঠলে কথা
চোখ ভরে যায় জলে।
হেথায়-হোথায় মাঠে-ঘাটে
ঘুরেছি ফিরেছি মোরা
অনেকে বলতো, "খুব ভাল লাগে
কপোত কপোতি জোড়া"।
চাঁদনী রাতে বসে বসে
গরুর গাড়ীর পর
কত না কথা বলেছি মোরা
পাশাপাশি রাতভর।
খড়ের গাঁদায় লুকোচুরি খেলে
হেসে হতে কুটিকুটি
কোনো কিছুতে বাধা ছিল না
ছিল না তো ভ্রুকুটি।
পানের বরজে পালিয়ে পালিয়ে
করতে কুহু কুহু
খুঁজে খুঁজে আমি পথহারা হয়ে
বলতাম উঁহু উঁহু।
কখনও হাতে জবা ফুল পেলে
তোমার খোঁপাতে দিয়ে
তাকিয়ে থেকে মন জুড়াতাম
প্রেমিকের ভাব নিয়ে।
মাঠ পেরিয়ে বিলে যেতে যেতে
রোদ্রে পোড়াতো মাথা
ওড়নার আঁচল মোর মাথায় দিয়ে
বলতে, "এই তো ছাতা"।
ফিরতি পথে আষাঢ়ের মেঘে
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে
শরীরের কাপড় একাকার হয়ে
দেখতে হয়েছিল কি যে!
চাহিতে পারিনি কেহ কাহারে
শরমের মাথা খেয়ে
ঝাপ দিলে তুমি পদ্ম পুকুরে
উঠলে আবার নেয়ে।
সাঁতার জানিনা গায়ে ছিটালে
সেই পুকুরের জল
বৃষ্টির সাথে পুকুরের পানি
দিলে মোরে অবিরল।
সেই ভিজাতে জ্বর হলো মোর
তুমি ছিলে সদা পাশে
সে সব কথা মনে হলে আজো
চোখ ফেটে জল আসে।
নিজে হাতে এনে দুধের গ্লাসে
অর্ধেক করে পান
বাকি অর্ধেক খাওয়াতে মোরে
কত যে ছিল টান?
মাছের মুড়োর মুড়িঘন্টো
কিংবা মুরকি-মুড়ি
ভুলতে পারিনি ফোকলা দাঁতের
তোমার "সই" সেই বুড়ি।
সকল কাজের সহযোগী ছিল
মনে হতো যেন সই
বৃদ্ধার কথা মনে হলে আজো
বড় বিচলিত হই।
মামাতো বোন হেনাকে তুমি
অপমান করে করে
চোখে চোখে মোরে দিতে পাহারা
সারা দিনরাত ভরে?
রুই মাছ রেঁধে এনেছিল হেনা
করলে কত কলরব
হিংসে করে পুরো বাটি ধরে
ফেলে দিলে মাছ সব।
ঝামটা দিয়ে রাগ রাগ মুখে
বললে অকথ্য কথা
গালি দেয়ার পরও চুপ করে হেনা
দাঁড়িয়ে রইলো তথা?
"কি সব রেধেছে", বললে মামীকে
"পুরো লবনে ভরা"
এসব তোমার সত্য কথা নয়
সব ছিল মনগড়া।
তোমার কথায় মুখ কালো করে
ঘর থেকে গেল হেনা
তোমার আচরণ ওই খানে সব
হয়েছিল মোর চেনা।
হেনাকে আমি যদি ভালবাসি
ছিল যে তোমার ভয়
এই কারণে গালি দিলে তারে
রান্না খারাপ নয়।
"আমি শুধু তোমার অন্য কারো নই"
বললে আড়ালে ডেকে
আর কেউ নয় শুধু তোমাকে
ভেবেছিলাম সেই থেকে।
মামার বাড়ির কত যে আদর
তোমার কারণে তাই
থাকতে চেয়েও থাকতে দিলে না
মনে হলে ব্যাথা পাই।
মামীর আদর উপেক্ষা করে
জোর করে এলে চলে
আফসোস কত করিল তারা
মোর কথা বলে বলে।
এসব কথা মনে হলে আজো
ভেসে উঠে সেই মুখ
বলিতে চেয়েও বলিতে পারিনা
জমাট বাঁধা মোর বুক।
গরুর গাড়িতে নিজে ঘেমে নেয়ে
আমাকে বাতাস করে
কত সুখে যেন তাকিয়ে থাকলে
মোর বাহুটি ধরে।
ছইয়ের উপর ঝরঝর করে
বৃস্টি পড়ার পর
গায়ের পরে হেলান দিয়ে
ঘুমালে দিনভর।
অনেক কথাই মনে পরে আজো
ভুলে যাইনি কিছু
অতীত জীবন যত পিছে যাক
স্মৃতি ছাড়েনি পিছু।
জন্মের পরে মা মরো মরো
আমার জীবনো যায়
নিয়েছিল কোলে আধামরা মোরে
তোমার দুখিনী মায়।
সুস্থ্য হয়েই তোমার মাকে
বলে ছিল মা মোর,
"মরা ছেলেকে বাঁচিয়ে রেখেছিস
আজ থেকে হলো তোর"।
সেই থেকে যে তোমার মাকেও
বলিতাম আমি মা
দুইটি মায়ের আদর পেয়ে
জুড়াইতো কলিজা।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২০