আলেয়া (প্রথম পর্ব
(সহ ব্লগার আবু হেনা ভাইয়ের নিজের বাস্তব টিন-এজ প্রেম কাহিনী নিয়ে লেখা উপন্যাস "স্বপ্ন বাসর" অবলম্বনে।)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মা হওয়াতে সারা দিনমান
তার কাছে বসে বসে
কত না বিচার দিতাম মোরা
পরস্পর রোষে রোষে।
আদরের সুরে ধমক দিত মায়ে
আজো যাইনি ভুলি
বুক ভরা মোর সে সব কথা
কাকে কব মন খুলি?
সেই শিশুকালে দুই মায়ে মোর
করেছিল বিয়ে ঠিক
তোমার মুখে সে কথা শুনে
দিয়েছি কত যে ধিক।
সবার মতেই হয়েছিল নাকি
এই ঘটনাটি পাকা
দীর্ঘদিন গাঁয়ে না যাওয়াতে
কথা ছিল সব ঢাকা।
একাত্তর সালে যুদ্ধের সময়
এলাম যখন গাঁয়ে
শহরে থাকায় বুঝি নাই কিছু
বুঝালো পালক মায়ে।
মোর পাশে পাশে ঘোরাঘুরি করে
তুমি বুঝালে সব
তরুণ বয়সে পেয়ে তোমাকে
করেছি কত উৎসব।
দাদা, চাচা-চাচি, দাদিজান মোর
সকলের মুখে মুখে
মোদের বিয়ের শুভ কথা শুনে
কত আশা ছিল বুকে।
পেয়েছিলাম যেন স্বর্গের সুখ
তোমাকে কাছে পেয়ে
জানা ছিল না ক্ষণিকের সুখে
দুঃখ আসে পিছু ধেয়ে?
যুদ্ধ তখনও শেষ হয়নি
শহরে এলাম ফিরে
আসার সময় কি যে কষ্ট
কাকে দেখাই বুক চিরে?
কিছুটা কষ্ট হয়তো বুঝেছিল
অতি বৃদ্ধ দাদা মোর
প্রেমের নেশায় বুঝিনি তাকে
তখনও কাটেনি ঘোর।
মনে মনে খুব রাগ করেছিলাম
দাদার কথার পরে
প্রতিবাদ করার ছিলনা সাহস
তার ধমকের ডরে।
বিদায়ের কালে দোহেকে জড়ায়ে
সেই অন্ধ দাদাজান
হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিল--
কেঁদেছিল মোর প্রাণ।
দুইজনের হাত এক করে দিয়ে
মোদের মঙ্গলের তরে
বলেছিল কেঁদে, “তোদের মিলন
এই তো পাঁচ বছর পরে”।
"বিয়ের পরে কি করে খাবি
লেখাপড়া করা ছাড়া,
বিনা লেখাপড়ায় ভাত পাবি না--
তাই বিয়েতে নাই তাড়া"?
আলেয়াকে ডেকে বলেছিল হেঁকে,
“ম্যাট্রিকটা পাশ কর,
কেমনে করবি লেখাপড়া ছাড়া
এতো শিক্ষিতের ঘর”?
বাবা চাচাকে শপথ করিয়ে
বলেছিল পাকা কথা
"মরি বা বাঁচি জুটি মিলে দিয়ো"
ঘর ছিল নিরবতা।
আরো বলেছিল ধমকের সুরে,
"কথা যদি হয় নড়চড়
কখনো দাঁড়াবে না কবরের পাশে
মোর মরণের পর"!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:০৮