somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প ঃ পুলিশের মেয়ে

২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাসেদ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় ক্লাসমেট সাদিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা এবং এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠতা থেকে প্রেম। সকাল বিকাল পরস্পর পরস্পরকে না দেখলে যেন তাদের দিন কাটতে চায় না। কথাটি আস্তে আস্তে রাসেদের মায়ের কানে পৌঁছল। রাসেদের মা রাসেদকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, রাসেদ, মেয়েটির বাবা কি করে রে?
রাসেদ হাসি মুখেই জবাব দিল, মেয়ের বাবা দারোগা মা।
দারোগার কথা শুনেই রাসেদের মা মুখ কালো করল। রাসেদ ভেবেছিল মা খুশি হবেন, কিন্তু খুশি না হয়ে মুখ কালো করায় রাসেদের হাসি মুখটা মুহুর্তেই মলিন হলো। মায়ের মুখ কালো করার কারণ বুঝতে না পেরে মাকে জিজ্ঞেস করল, মা, তুমি দারোগার কথা শুনে মুখ কালো করলে কেন মা?
রাসেদের মা বারান্দায় বসে নিচের দিকে মুখ করে কি যেন কাজ করতে ছিল, মুখ না তুলেই বলল, পুলিশের মেয়েদের বিয়ে করিস না বাবা?
-- কেন মা?
-- সে বলতে পারবো না, তবে নিষেধ করলাম বিয়ে করিস না।
-- পুলিশের মেয়ে কেন বিয়ে করা যাবে না সেটা না বললে তো বুঝতে পারবো না মা?
-- পুলিশদের স্বভাব চরিত্র কর্কশ হয় বাবা, যেটা আমার ভাল লাগে না।
-- সব পুলিশের স্বভাব চরিত্র কি সমান হয় মা? আমি যতটুকু শুনেছি সাদিয়ার বাবা নাকি অমায়িক লোক। খুব নরম স্বভাবের মানুষ।
-- তুই কি করে বুঝলি?
-- সাদিয়া বলেছে।
-- মেয়েরা বাপকে সব সময় ভালই বলে, তুই তো আর নিজে দেখিস নি?
-- আমি নিজে না দেখলেও মনে হয় অন্য পুলিশদের মত নয় মা।
-- তারপরেও আমার কাছে পুলিশ ভাল লাগে না বাবা।
-- কেন মা, পুলিশরা কি মানুষ নয়?
-- মানুষ, তবে অনেক সময় বিনা কারণে মানুষ পিটায়, তাদের এই নিষ্ঠুর আচারণ আমার কাছে খুব খারাপ লাগে বাবা।
-- যদি সাদিয়ার বাবা খারাপ না হয় তখনও কি তুমি নিষেধ করবে মা?
-- তুই আগে সাদিয়ার বাবাকে ভাল করে দেখে নে, তারপরে আমাকে বলিস। তখন আমি চিন্তা করে দেখব কি করা যায়।
রাসেদের দৃঢ় বিশ্বাস সাদিয়ার বাবা খারাপ হতে পারে না। যদি খারপই হতো তাহলে সাদিয়া তার বাবার এত প্রশংসা করতো না। পুলিশরা বাইরে যাই করুক না কেন বাসায় ছেলেমেয়েদের কাছে তো আর পুলিশগীরি করে না। ছেলেমেয়েদের কাছে বাবা হিসেবে যে আচরণ করা দরকার তাই করে থাকে।
পুলিশরা যদি পরিবার পরিজন, ছেলে-মেয়ে বা মেয়ের জামাইদের সাথে খারাপ আচরণ করতো তাহলে কোন পুলিশের মেয়েকে কি কেউ বিয়ে করতো? নিশ্চয়ই করতো না। পুলিশের মেয়ে জানার পড়েই বিয়ে না করে কৌশলে এড়িয়ে যেত। বাস্তবে কি তাই? বাস্তবে পুলিশের মেয়েদের ভাল ভাল ঘরে বিয়ে হয় এবং তারা সুখেই সংসার করে। পুলিশদের চাকরিই হলো মানুষ শাসন করা। পুলিশের মেজাজ যদি কর্কশ না হয় তাহলে চোর ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণ করবে কিভাবে? ভাল মানুষ হয়ে তেল মাখা আচারণ দেখালে তো চোর বাটপাররা ভয় পাবে না, উল্টো আরো পুলিশের মাথায় উঠে নাচবে। রাসেদ মায়ের কথায় পুলিশ নিয়ে নানান কথা ভাবতে লাগল।
মনে মনে পুলিশদের পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি তর্ক করে দেখল, পুলিশের মেয়ে বিয়ে করা যাবে না এমন কোন যুক্তিই খুঁজে পেল না। বাবা কর্কশ স্বভাবের হলে যে মেয়েও কর্কশ স্বভাবের হবে এমন কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখাও নেই। কিন্তু মা কেন পুলিশের মেয়ে দিয়ে বিয়ে করাতে চাচ্ছে না এটা রাসেদ কোনভাবেই বুঝতে পারছে না। বোঝার কথাও নয়।
সে অনেক দিন আগের ঘটনা। রাসেদের বাবা সরকারী অফিসে চাকরী করতো। রাসেদের বয়স তখন সবে এক বছর। রাতে তারা স্বামী স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ দরজায় কারা যেন নক করল। প্রথমেই রাসেদের মায়ের ঘুম ভেঙে যায়। রাসেদের মা ‘কে’ বলে উচ্চারণ করতেই দরজার বাইরে থেকে জবাব এলো, আমরা পুলিশের লোক, থানা থেকে এসেছি, দরজা খোলেন।
পুলিশের কথা শুনে রাসেদের মা রাসেদের বাবাকে ডেকে উঠাল। রাসেদের বাবা ঘরের দরজা খুলে দিতেই হুড়মুড় করে কয়েকজন পুলিশ রুমে ঢুকে পড়ে। পুরো ঘর তল্লাসী করে কোন কিছু না পেয়ে রাসেদের বাবাকে তাদের সাথে থানায় যেতে বলল। রাসেদের বাবা বিনা কারণে থানায় যেতে রাজী হলো না। উল্টো দারোগাকে প্রশ্ন করল, থানায় যাবো কেন? আমার অপরাধটা কী?
দারোগা বলল, নিজের অপরাধ নিজে না বুঝতে পারলে থানায় চলেন, থানায় গেলেই বুঝতে পারবেন।
দারোগার এ কথায় তিনি কিছুটা রাগত স্বরেই বলল, আমি কোন অপরাধ করি নাই, আমি থানায় যেতে পারবো না, আপনারা আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।
থানায় যেতে রাজী না হওয়া এবং মেজাজ দেখানোর কারণে রাসেদের মায়ের সামনেই দারোগা তাকে বেতের ডান্ডা দিয়ে পিটাতে লাগল। রাসেদের মা অনেক অনুরোধ করেও পুলিশদের ডান্ডার মার ফিরাতে পারল না। ডান্ডা পিটানোর পরে রাশেদের বাবাকে হাতে হাত কড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে গেল। পরদিন রাসেদের মা নিজের আত্মীয় স্বজন সাথে নিয়ে টাকা পয়সা খরচ করে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনল।
অপরাধি ছিল বাড়িওয়ালার ছেলে। সে উচ্ছৃঙখল জীবন যাপন করতো। মাদক নেশায় আসক্ত ছিল। বাড়িওয়ালারা যে বাসায় থাকতো তার পাশের রুমেই রাসেদের বাবা ভাড়া থাকতো। বাড়িওয়ালার ছেলেকে ধরতে এসে ভুল বশতঃ নিরাপরাধ রাসেদের বাবাকেই ধরে নিয়ে যায়। বিনা কারণে মারধোর করে রাসেদের বাবাকে থানায় নিয়ে আটকে রাখাটা রাসেদের মা আজো সহ্য করতে পারছে না। ঘটনাটি আজ থেকে তেইশ বছর আগের ঘটনা। তিন বছর হলো রাসেদের বাবা মারা গেছেন। তারপরেও রাসেদের মা সেই স্মৃতি ভুলতে পারে নি।
রাসেদের মা রাসেদকে পুলিশের মেয়ে বিয়ে করতে নিষেধ করলেও তার বাবার সেই কাহিনী তাকে বলল না। শুধু মুখেই পুলিশের আচরণ ভাল লাগে না বলে জানিয়ে দিল।
রাসেদ পরদিন ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে পুলিশের কর্কশ স্বভাবের প্রতি তার মা নাখোশ হওয়ার কথা সাদিয়াকে জানালো। সাদিয়া সাথে সাথে চ্যালেঞ্চ করে বলল, আমার বাবা পুলিশ হলেও অন্য রকম মানুষ। অন্য পুলিশের সাথে আমার বাবার তুলনাই হয় না।
রাসেদ সাদিয়ার বাবাকে স্বচক্ষে দেখে নাই। সাদিয়ার কাছেই শুধু তার বর্ণনা শুনেছে। স্বচক্ষে দেখার জন্য সাদিয়াকে প্রস্তাব করতেই সাদিয়া রাজি হলো এবং তৎক্ষনাৎ মোবাইলে বাবার সাথে কথা বলল, বাবা, তোমাকে যে আমি একটা ছেলের কথা বলেছিলাম, যাকে আমি পছন্দ করি, সে তোমার সাথে দেখা করতে চায়, আমি কি তোমার কাছে পাঠাবো?
রাসেদ সাদিয়ার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। ওপাশ থেকে কি বলল সে সব কথা রাসেদ কিছুই শুনতে পেল না। তবে সাদিয়ার কথা সে পুরোপুরি শুনল। সাদিয়া বলল, ঠিক আছে বাবা, যখন রাসেদ যাবে তখন আমি তোমাকে ডিটেইলস জানাবো।
রাসেদ একদিন পরেই যেতে রাজী হলো। সাদিয়ার বাবা যশোরের সদর থানায় চাকরি করেন। সেকেন্ড অফিসার হিসাবে আছেন। থানার কোয়র্টারেই ফ্যামিলী নিয়ে থাকেন। সাদিয়ার আরো দু’টি ভাই আছে। তিন ভাই বোনের মধ্যে সাদিয়াই বড়।
রাসেদের সাথে পরামর্শ করে সাদিয়া আবার টেলিফোনে বাবাকে বলল, বাবা, আগামী পরশু দিন সকাল দশটার সময় রাসেদ যাবে। তুমি যাতে চিনতে পারো সেই জন্য রাসেদ জিন্সের প্যান্ট আর গোলাপী কালারের সার্ট পরে যাবে।
সাদিয়ার বাবা হবু জামাই রাসেদকে সাদিয়ার দেয়া বর্ণনা মোতাবেক রিসিভ করার জন্য আগ্রহ নিয়ে কাল ক্ষেপণ করতে লাগল।
রাসেদ একদিন পরেই নাইট কোচে রওনা হলো। বাস জার্নিতে পোষাক ময়লা হতে পারে, ময়লা জামা কাপড় নিয়ে সাদিয়ার বাবার কাছে গেলে পছন্দ নাও করতে পারে। পরিস্কার জামাকাপড় পরে স্মার্ট হয়ে যাওয়া দরকার। এই ভাবনা থেকেই জিন্সের প্যান্ট আর গোলাপী জামা না পরে নরমাল সার্ট প্যান্ট পরে নিল। মনে মনে আরও চিন্তা করল, যশোর গিয়ে একটি হোটেলে উঠে ফ্রেস হয়ে ছোট একটা ঘুম দিবে, এতে তার রাত জাগা চেহারা থাকবে না। ঘুম থেকে উঠে সাদিয়ার কথা মত জিন্সের প্যান্ট আর গোলাপী সার্ট পরে সকাল দশটার দিকে থানায় গিয়ে সাদিয়ার বাবার সাথে দেখা করবে।
রাসেদের চিন্তা ভাবনা মন্দ নয় কিন্তু যশোরে যাওয়ার পরে নিয়তি উল্টে গেল। বাস রাত তিনটার দিকে যশোর শহরে নামিয়ে দিল। বাস থেকে নেমে ভোর হওয়া পর্যন্ত এত সময় কাউন্টারে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিল না। অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে রাসেদ বাস কাউন্টার থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে একটা রিক্সায় উঠে বসল।
রিক্সাওয়ালা বলল, স্যার কোথায় যাবেন?
রাসেদ বলল, আশেপাশের কোন ভাল হোটেলে চলেন।
রিক্সাওয়ালা আবার বলল, আশেপাশে তো অনেক হোটেল আছে, আপনি কোন হোটেলে যাবেন?
রিক্সাওয়ালার এমন প্রশ্নে রাসেদ কোনও হোটেলের নাম বলতে পারল না। যশোর শহর সম্পর্কে রাসেদের তেমন কোন ধারনা নেই। এই প্রথম যশোর শহরে এসেছে। রিক্সাওয়ালাকে বলল, আপনার পছন্দ মত যেকোন ভাল হোটেলে নিয়ে যান।
রিক্সাওয়ালা পাল্টা তকে জিজ্ঞেস করল, স্যার, আপনি কি যশোরে নতুন এসেছেন?
রাসেদ রিক্সাওয়ালার কথায় হাসি দিয়ে বলল, জী, এইজন্য আপনাকে আপনার পছন্দ মত ভাল হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলছি।
রিক্সাওয়ালা এক গাল হাসি দিয়ে বলল, আমার উপর যখন হোটেল খোঁজার ভার দিয়েছেন স্যার তখন আপনাকে ভাল হোটেলেই নিয়ে যাবো। খুব আরামেই থাকবেন। আনন্দ ফুর্তি করতে চাইলে তাও করতে পারবেন।
“খুব আরামেই থাকবেন, আনন্দ ফুর্তি করতে পারবেন” রাসেদ রিক্সাওয়ালার এই কথার কোন অর্থ বুঝতে পারল না। সে মনে মনে ভেবে নিল হয়তো কোন হাইফাই হোটেলে নিয়ে যাবে। যেখানে কোন নোংড়া পরিবেশ নেই। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য হয়তো আরামে থাকতে পারবো।
রিক্সাওয়ালা রাসেদের নতুনত্বের সুযোগ নিয়ে উল্টাপাল্টা অনেক রাস্তা ঘুরিয়ে অবশেষে মারী মন্দীরের কাছে নিয়ে গেল। মারী মন্দীরের কাছেই পতিতালয়। পতিতালয়ের কাছাকাছি গিয়ে একটি চিপা গলিতে ঢুকতেই সস্তা উগ্র প্রসাধনী পরা তিনজন মহিলা সম্মিলিতভাবে রিক্সার গতিরোধ করে ধরল। একজন রাসেদের হাত ধরে বলল, আমার ঘরে চল।
রাসেদ রিক্সা থেকে নামতে রাজি হলো না। আরেকজন সার্টের কলার ধরে টানতে লাগল। সার্টের কলার ধরে টানাটানি করায় সার্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ভয়ে রাসেদ রিক্সা থেকে নামলে দুইজন দুই হাত ধরে গলির ভিতরের দিকে টানতে লাগল। সে যেতে না চাওয়ায় আরেক জন এসে পিছন থেকে ধাক্কাতে লাগল। তিন জনে মিলে রাসেদকে জড়িয়ে ধরে ধাক্কাধাক্কি, টানাহেঁচড়া, ধ্বস্তাধ্বস্তি করতে লাগল। রাসেদ তাদের কবল থেকে নিজেকে ছাড়াতে প্রাণপন চেষ্টা করতে লাগল। একসময় তাদের কবল থেকে ছাড়া পেয়ে গলি থেকে বের হয়ে এক দৌড়ে বড় রাস্তা ধরে অনেক দূর এসে দাঁড়িয়ে হাপাতে লাগল। তখন তার হুশ নেই। হুশ যখন হলো তখন ব্যাগের কথা মনে পড়ল। যে রিক্সায় এসেছিল সে রিক্সাওয়ালাকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু রিক্সাওয়ালা কোথাও নেই। পকেটে হাত দিয়ে দেখে টাকা পয়সাও নেই। রাসেদ বুঝতে পারে নাই সে পতিতাদের হাতে পড়েছে। সে মনে করেছে উগ্র পোষাকে সজ্জিত এরা নারী ছিনতাইকারী। রিক্সাওয়ালা হয়তো এদেরই পার্টনার।
রাসেদ ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেল। সব কিছু হারিয়ে বেদিশা হয়ে পড়ল। তবে একেবারে ভেঙে না পড়ে মনে মনে রিক্সাওয়ালাসহ মহিলাবেশী ছিনতাইকারীদের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উদগ্রীব হলো। যেহেতু সাদিয়ার বাবা সদর থানার দারোগা, তাকে বললে নিশ্চয়ই ছিনতাইকারীদের ধরে জিনিসপত্র উদ্ধারসহ আচ্ছা মতো ধলাই করবে। সেই মনোবল নিয়েই থানায় গেল।
থানার গেটে যাওয়ার পরেই পাহারা রত পুলিশ তাকে আটকিয়ে দিল। পুলিশকে ছিনতাই হওয়ার কথা বললে, পুলিশ থানার একটি রুমে সাদা পোষাক পরে বসে থাকা অফিসারের কাছে নিয়ে গেল। অফিসার তার মুখ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং জায়গার বর্ননা শুনেই বড় বড় চোখ করে তাকাল। নাম পরিচয় না জিজ্ঞেস করেই বলল, আপনি মারী মন্দিরের ওই গলিতে গেলেন কেন?
রাসেদ বলল, আমি যাইনি আমাকে রিক্সাওয়ালা নিয়ে গিয়েছে।
-- আপনি না বললে এমনি এমনি রিক্সাওয়ালা নিয়ে গেছে নাকি?
-- না আঙ্কেল বিশ্বাস করেন- - -- এতটুকু বলার পরে আর বলতে পারল না।
আঙ্কেল বলায় পুলিশ অফিসার জোরে একটা ধমক মেরে বলল, চুপ ব্যাটা বাটপার, বেশ্যা পাড়ায় ঢুকে মৌজ করে টাকা পয়সা খুইয়ে এখন এসেছে থানায়।
রাসেদ পুলিশের এমন কথায় থতমত খেয়ে বলল, না আঙ্কেল- -
কথা শেষ না করতেই আবার ধমক, চুপ ব্যাটা, আবার আঙ্কেল বলে। লুচ্চা কোথাকার?
রাসেদ বুঝতে পারল আঙ্কেল বলায় ভদ্রলোক ক্ষেপে যাচ্ছে, তাই কথার ধরন ঘুরিয়ে বলল, স্যার, বিশ্বাস করেন, আমি এসব কিছু করি নি।
পুলিশ আবার ধমক দিয়ে বলল, চুপ ব্যাটা, আবার মিথ্যো কথা বলে, লুচ্চামী না করলে তোর জামা কাপড়ে লিপিস্টিকের দাগ এলো কিভাবে?
লিপিস্টিকের কথা বলায় রাসেদ জামার দিকে তাকিয়ে দেখে জামার হাতাসহ বুকের দিকে সাদা সার্টের কয়েক জায়গায় লাল লাল দাগ লেগে আছে। এটা যে ছিনতাইকারী মহিলাদের কাজ রাসেদের বুঝতে বাকী রইল না। মহিলারা পকেটে হাত দিতে গেলে রাসেদ বাধা দিয়েছিল, সেই সময় তারা তাকে জাপটে ধরে, তাতেই হয়তো ওদের ঠোটের লিপিস্টিক লেগেছে। মহিলাদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে হুড়োহুড়ি করার সময় লিপিস্টিক লেগেছে বুঝতে পেরে রাসেদ বলল, বিশ্বাস করেন স্যার, এটা ছিনতাইকারীদের কাজ।
রাসেদের এমন কথা শুনে পুলিশ ক্ষেপে গিয়ে বলল, এই ব্যাটা এই, ডান্ডা দেখছো ডান্ডা, ব্যাটা লুচ্চা, ছিনতাই হয়েছে না বেশ্যা পাড়ায় মৌজ করতে গিয়েছিলে? আমরা পুলিশরা তো কচি খোকা? কিছুই বুঝি না? আরেকবার মিথ্যা কথা বলবি তো পাছায় পিটন দিয়ে গারদে ঢুকাবো। পুলিশ হিসাবে ছাব্বিশ বছর হলো এই লাইনে আছি। আমাদের আর শেখাতে হবে না। আমরা চেহারা দেখলেই বুঝতে পারি কে লুচ্চামী করেছে আর কার ছিনতাই হয়েছে। সারা রাত বেশ্যাদের সাথে ফস্টি নস্টি করে সব টাকা পয়সা শেষ করে এখন আসছে কেস করার জন্য। ব্যাটা লুচ্চা কোথাকার?
দারোগার এমন কথায় রাসেদ অনুনয় করে বলল, বিশ্বাস করেন আঙ্কেল, আমি এসব কিছুই করি নাই।
আঙ্কেল বলাতে দারোগা আবারো ক্ষেপে গিয়ে বলল, চুপ বাইন চোদ, স্যার বল, কখনও আঙ্কেল বলবি না। থানায় কখনও কেউ আঙ্কেল থাকে না। এক্ষণ থানা থেকে বের হয়ে যাবি, নইলে পিটন দিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবো।
পুলিশের ধমক খেয়ে রাসেদ কাঁদো কাঁদো অবস্থায় তার রুম থেকে বেরিয়ে এলো। গেটে এসে পাহারারত পুলিশকে জিজ্ঞেস করল, এই থানায় কি ছালাম দারোগা নামে কেউ আছেন?
পুলিশ বলল, যার সাথে কথা বললেন উনিই তো ছালাম দারোগা, কেন?
-- উনার ফ্যামিলী কি এখানেই থাকে?
-- জী, কেন?
-- উনার মেয়ে কি ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে?
-- জী।
রাসেদের প্রশ্নের ধরণ দেখে পুলিশটি একটু নরম হয়ে বলল, আপনি কি উনার কেউ হন?
রাসেদ সাদিয়ার বাবার পরিচয় পেয়ে লজ্জায় ঘৃণায় বলল, না কেউ হয় না।
-- তা হলে এত কিছু জানলেন কেমনে?
-- আমার বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম।
-- ধূর মিয়া, বন্ধুর কাছে শুনছেন না আপনার কোন কেস টেস আছে?
-- না আমার কোন কেস টেস নাই।
-- একটু আগে না বললেন আপনার ছিনতাই হয়েছে?
-- জি হয়েছে।
-- কোথায়?
-- মারী মন্দিরের কাছে।
-- আরে মিয়া ওইটা তো বেশ্যা পাড়ার এলাকা, ওইখানকার কেস থানায় কেউ নিবে না। ওই এলাকায় রাইত কইরা কোন ভাল লোক যায় না। সব লুচ্চারা যায়। সারা রাইত মৌজ কইরা সব হারাইছেন এহন আইছেন কেস করতে। যান মিয়া, ভাগেন।
-- না ভাই আমি এসব কিছুই করি নাই।
-- কিছু করেন নাই তো জামা-কাপড়ে, গালে-মুখে লিপিস্টিকের দাগ লাগছে কেমনে? আমাগো বোকা ভাবেন না--? যান মিয়া ভাগেন।
রাসেদ কিছুই বুঝতে পারল না। মারী মন্দীরের কাছে সে তো ইচ্ছা করে যায় নি, রিক্সওয়ালা তাকে নিয়ে গিয়েছে। ওখানে যে পতিতালয় আছে এটাও সে জানে না। অথচ ছিনতাই হওয়ার পরেও তারা এলাকার কারণে ছিনতাইকে ছিনতাই হিসাবে গ্রহণ করছে না। পতিতালয়ের আনন্দ ফুর্তির মধ্যে গন্য করছে।
এমন পরিস্থিতিতে রাসেদ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সাদিয়ার নাম্বার জানা থাকা সত্বেও তাকে আর ফোন দিল না। কারণ পুলিশের কাছে সাদিয়ার বাবার পরিচয় পাওয়ার পর তার প্রতি শ্রোদ্ধার পরিবর্তে কিছুটা ঘৃণার উদ্রেক হলো। তার এরকম আচরণের পর দ্বিতীয়বার আর তার সামনে মুখ দেখানো সম্ভব নয়। রাসেদ থানার গেটেই দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় ছালাম দারোগা থানা থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে গেটে পাহারা রত পুলিশকে বলল, এই-- ঢাকা থেকে দশটার সময় আমার খোঁজে একজন হ্যান্ডসাম চেহারার ছেলে আসবে। ছেলেটির পরনে জিন্সের প্যান্ট আর গোলাপী সার্ট পরা থাকবে। ওই ছেলে কিন্তু আমার উঁচুদরের মেহমান। আসলে ভদ্রভাবে খুব সম্মানের সাথে আমার বাসায় পৌছে দিবে। কোন যেন অসম্মান না হয়।
কথাগুলো রাসেদের কানে আসল। রাসেদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অনাকাংখিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাদিয়ার বাবার কাছাকাছি থেকেও পরিচয় দিতে পারল না।
(চলবে)

(একেকটি গল্প লিখতে মানসিক শারীরিক অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সেই কথা বিবেচনায় নিয়ে আমার লেখা গল্পটি দয়া করে কেউ কপি পেষ্ট করে নিজের নামে ছাপবেন না। )
গল্প ঃ পুলিশের মেয়ে (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:২৮
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×