somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজন্ম চত্বরে ওদের একাত্নতা আমাদের দরকার নেই

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তানজিমা হাসান। আমার সবচে কাছের মানুষদের একজন। খুব প্রয়োজন না পড়লে একা একা বাইরে যায় না তানজিমা। মা-বাবার একমাত্র কন্যা, ২৩ বছর বয়সী এই তরুণীর সঙ্গে দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলেই রেগেমেগে আগুন হয়ে যায়। দেশকে ভালবাসে অনেক। কিন্তু এত এত দুর্নীতি, পচে ক্ষয়ে যাওয়া রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের প্রতি ঘৃণার মাত্রাটা এত বেশি যে, সুযোগ পেলেই বলে, এই দেশে থেকে কি হবে!
আন্দোলনের প্রথম সন্ধ্যায় তানজিমাকে জানালাম, অফিস শেষে আমি শাহবাগ যাব। ওর স্ট্রেইট ড্রাইভ, কি হবে ওখানে গিয়ে? ওর সোজা কথা, “অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে হবে। আন্টি অসুস্থ”। আমি তো থতমত। আমারও মনে হলো, সত্যিই তো কি হবে? দু-একদিন গলা ফাটিয়ে, পুলিশের পিপার স্প্রে খেয়ে যে যার ঘরে ফিরে যাবে। তাই তানজিমার নিষেধ শুনে বাসায় ফিরে গেলাম।

সেই তানজিমা ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, রাত ৮টার দিকে শাহবাগে এসে হাজির! একা একা! বাসায় কাউকে বলে আসেনি। কারণটা অনুমেয়, বাসায় বললে আসতে দেবে না। তাছাড়া, মাসখানেক আগে ওর বাবা মারা গেছেন। সকালে আমি যখন শাহবাগে যাই, ওকে একটা এসএমএস করি। এসএমএসটা এরকম, “আম্মু অসুস্থ। তাই শাহবাগে যেতে পারছেনা। এজন্য কি আফসোস আম্মুর! আমি আম্মুকে এভাবে বাসায় রেখে যেতে চাইনি। কিন্তু অসুস্থ শরীরে বাসায় একা থাকবেন জেনেও আমাকে যেতে তাগাদা দিলেন। কিন্তু মনটা পড়ে আছে প্রজন্ম চত্বরেই। আমি আবারও যাচ্ছি দু হাজার তের’র মুক্তিযুদ্ধে। বিকাল তিনটায় চলে এসো পারলে। তোমার সন্তান যখন জিজ্ঞেস করবে, ২০১৩ এর মুক্তিযুদ্ধে তুমি কি করেছ? তখন কি জবাব দেবে তানজিমা?” বিকেলে ও আমাকে জানায়, বুধবার রাতেই যেতে চেয়েছিল শাহবাগে। কিন্তু অফিস ছিল রাত পর্যন্ত। তাই যেতে পারেনি।

আমি অবশ্য দ্বিতীয় দিনেই চলে যাই সহকর্মী ইবতেসাম নাসিম মৌ, মাহফুজ সজীব, সুলায়মান শহীদ রেহা আর শিমুল সরকারের সঙ্গে। সন্ধ্যার পর আমাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও ক’জন সহকর্মী। আরও আসেন মৌ আপুর মা, আপুর দুই সন্তানকে নিয়ে। মৌ আপুর এক বছর বয়সী ছেলেটা শ্লোগানের তালে তালে নিজেও তালি দিচ্ছিল। আর ওনার মা, যিনি ৬৯ আর ৭১ দেখেছেন, ওনার চোখে পানি দেখেছি যখন শ্লোগান দিচ্ছিলেন, “তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা”, “আমাদের দাবি একটাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই”।
আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় ১৪ বছরের কিশোরী পৃথা, ওর মা, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ সময় আর তার বন্ধু। হাতে হাত রেখে বৃত্ত তৈরি করে, মোমবাতি জ্বেলে আমরা সবাই শ্লোগান তুলেছি। অথচ কেউ কাউকে চিনি না, জানি না। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের মাহাত্ম্যটা এখানেই। যে ছেলেটা, যে মেয়েটা ঘরের কোণে পড়ে থাকে ল্যাপটপ নিয়ে, তাদের রাস্তায় নামিয়েছে। তিন প্রজন্মকে একসঙ্গে শ্লোগান ধরিয়েছে। আর অপরিচিতকে মুহূর্তের মধ্যে বানিয়েছে বন্ধু। কারণ, এদের সবার দাবি একটাই, পাপ আর বেজন্মা রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ।

প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন আর ৮ ফেব্রুয়ারির লাখো জনতার শপথ আমাকে নতুন স্বপ্ন দিয়েছে। সেই স্বপ্নে নতুন এক বাংলাদেশের ছবি দেখেছি আমি। ছবিটা এরকম:
১.এখন যারা শিশু, কিশোর-কিশোরী তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের কথা আলাদা করে বলতে হবে না। তাদের মগজ ধোলাই করে নতুন শিবিরকর্মী তৈরি করতে পারবে না পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা।
২.যদি সত্যিই মেইনস্ট্রিম রাজনীতিবিদদের মাথায় ঘিলু বলতে কোনো জিনিস থাকে, তবে প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন থেকে এই বার্তাটুকু পাচ্ছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ধানাই-পানাই করার দিন শেষ।
৩.এ দেশ হবে একাত্তরের রাজাকার আর তাদের বংশধরমুক্ত একটি দেশ। যারা ধর্ম নিয়ে কূট রাজনীতি করে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ আর বিভ্রান্তি ছড়ায়, সেই ছাগুদের কোনো জায়গা হবে না বাংলাদেশে।
৪.যারা এই ছাগুদের নিয়ে ভোটের রাজনীতি করে, তাদের অস্তিত্বও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
৫.আমাদের সামনে মুলা ঝুলিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে, আর বছরের পর বছর যা ইচ্ছে তাই করে যায় ক্ষমতাধর ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা, এসব চিরতরে বন্ধ হবে।
৬.আর এসব পরিবর্তন হলে সাগর-রুনি, বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলে তার সুষ্ঠু বিচার হবে।
আমার স্বপ্নটা একটু বাড়াবাড়ি মনে হতেই পারে। যে তারুণ্যকে মেরুদণ্ডহীন ভাবতাম, ভাবতাম এরা চরম অস্থির আর এদরে চরিত্রের কোনো ঠিক নেই, সেই আমরাই তো দেখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে অবিরাম লড়তে হয়। রাস্তায় নেমে আসতে হয়। এই তারুণ্যই তো আগামীতে দেশ চালাবে,তাই না?

তবে এসব স্বপ্ন পূরণের বাধা অনেক। কারণ, এখানে-ওখানে ঘাপটি মেরে আছে নব্য রাজাকার আর সুবিধাবাদীরা। তাদের সংখ্যা অগণিত। এই আন্দোলনকে নিজেদের পকেটে পুড়তে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে একটি দল। আরেক দল ভয়ংকর নীরব। এই দুই দলই ভয়ানক। সারাদেশে যেখানে যেখানে প্রজন্ম চত্বর গড়ে উঠেছে, কোনো মন্ত্রী, এমপি, আমলা আর রাজনীতিবিদকে ওই চত্বরের ধারেকাছেও যেতে দেয়া যাবে না। তাদের একাত্নতা আমাদের দরকার নেই।

আর বয়কট করতে হবে জামাত-শিবিরের অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো। শুধু শপথ নিয়ে বসে থাকলেই হবে না। প্রজন্ম চত্বরে নাকি ইসলাম আর হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিপক্ষে শ্লোগান তোলা হচ্ছে, ধর্ম আর নবীকে অবমাননা করা হচ্ছে! এসব অপপ্রচার যারা চালাচ্ছে, যারা এই আন্দোলনের বিপক্ষে কথা বলছে, ওরাই এই দেশ আর ইসলাম ধর্মের প্রকৃত শত্রু। এরকম যাদের পাবেন, সঙ্গে সঙ্গেই শ্লোগান তুলুন, “তুই রাজাকার, তুই রাজাকার”। আর ফেইসবুকে এদের দেখলেই ব্লক আর রিপোর্ট করুন। প্রতিরোধ চলুক সবখানে। যেমনটা শুরু করে দিয়েছি আমি আর আমার বন্ধুরা।

রুহুল মাহফুজ জয়
১০.০২.১৩
বিকাল চারটা
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×