এই সমস্যায় পড়েন নাই এমন একজনকেও পাওয়া যাবে বইলা মনে হয়না। ডাক্তার মহাশয়ের কাছে গেলেন আপনি রোগমুক্তির উপায়ের খোঁজে। তিনিও আপনার নাড়ি চাইপাচুইপা দেইখা শুইনা কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করলেন। আপনি আশ্বস্ত হইলেন আর প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসীর দিকে রওয়ানা হইলেন। কিন্তু যখনই আপনি ফার্মেসীতে যাইবেন আপনার মনে হইবো আপনার চোখের কোন রোগ হইছে অথবা আপনি পড়তে ভুইলা গেছেন। হিজিবিজি দুর্বোধ্য কিছু অক্ষরে কোন ঔষধ আর কি কি যে উপদেশ লেখা আছে তা বোঝার চেয়ে হায়ারোগ্লিফিথের পাঠোদ্ধার করা মনে হয় অনেক আরামের। আপনি গলদঘর্ম হয়ে ফার্মাসিস্টকে দিলেন। সে ব্যাটাও লেজেগোবরে হইয়া তার সহকর্মীকে দেখাইবো। আপনাদের মাথার সম্মিলিত গুঁতাগুঁতিতে যদি কোন কিছু উদ্ধার করা যায় তো বাঁইচাই গেলেন, নইলে ডাক্তার বেটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে আবার চেম্বারে দৌড়ানো ছাড়া গতি নেই। উফফ।
আমার এক পরিচিত বন্ধুর খালুর কাহিনী হুনেন- উনি এক বড় বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেন ব্যারামের নিরাময়ের জন্য। তো ডাক্তারমশাই দেখেটেখে প্রেসক্রিপশন দিয়া দিলেন। উনার আবার হাতের লেখা ছিল সেইরাম সুন্দর (!)। তো উনার ঔষধগুলার অন্যগুলার নাম অতিকষ্টে বের করা গেলেও একটার নাম কেউই বুঝতাছিলো না। দোকানদাররা বুঝতারে না খালি কয় যে এ ঔষধ নাই, কিন্তু বলে না যে নাম পড়তে পারতাছে না। ঐ খালু এলাকার সব ফার্মেসী চইষা ফালাইলেন শেষে এক সত্যবাদী ফার্মাসিস্ট কইলো যে, দেখেন আন্কেল, উনি যে কি লেখছে উনিই জানেন; আপনে বরং ওনার কাছ থেকে ক্লিয়ার হয়ে আসেন এটা আসলে কোন ঔষধ। উনি কি আর করবেন আবার চেম্বারে ডাক্তারের কাছে আসলেন। কোনরকমে ওনার রুমে ঢুইকা জিগাইলেন ভাই এই ঔষধটা কি লিখছেন কেউ বুঝতে পারতেছে না একটু আমাকে ক্লিয়ার করে বলেন তাহলে কিনতে পারবো। এরপর যা হইলো সেইটা ইতিহাস- বিশেষজ্ঞ ব্যাটা পাক্কা দুই মিনিট তাকাইয়া রইলো, মাথা খাউজাইলো, দাঁত দিয়া ঠোঁট কামড়াইলো মাগার সে নিজেও ঔষধটা যে কি সেইটা কইতে পারলোনা- এমনই অঘটনঘটনপটিয়সী হাতের লেখা তার। এরপর সে খালুরে কইলো, আসলে এই ঔষধটা দরকার নাই কোন, আপনি বরং এই ঔষধটা খান। বইলা আগেরটা কাইটা নতুন আরেকটা নাম খসখস কইরা লেইখা দিলো। খালু তো পুরা তাজ্জুব হইয়া কিছুক্ষণ চাইয়া রইলো।
এইসব কারনে আমার সন্দেহ হইলো, এইটা সিউর ডাক্তারদের দক্ষতার একটা মাপকাঠি হইবো। কেননা আমি অভিজ্ঞতা থেইকা দেখছি যে বড় বড় ডাক্তারদের মধ্যে এই প্রবলেমটা কেন যেন একটু প্রকট। গুগল মামুরে জিগাইয়াও দেখলাম আমার ধারনা ঠিক। ব্রিটিশ রয়েল সোসাইটি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত এক জার্নালে দেখা যায়, ২০০৫ সাকের এক ব্রিটিশ হাসপাতালের বেশ কয়েকটি মেডিকেল নোট নিয়ে খুব ভালো (Excellent), ভালো (Good), মোটামুটি (Fair) এবং খারাপ (Poor) এই ভাগে ভাগ করা হইছিলো। সেখানে ৩৭% নোট পড়ছিলো খারাপ ক্যাটেগরিতে আর মাত্র ২৪% নোট পড়ছিলো খুব ভালো ক্যাটেগরিতে। আবার ১৯৯৮ সালে ন্যাশনাল আ্যাম্বুলেটরি মেডিকেয়ার এর এক সার্ভেতে দেখা যায় যে ডাক্তারদের মধ্যে যাগোর অভিজ্ঞতা বেশি হেগো হাতের লেখাও খারাপ হওয়ার প্রবণতা বেশি।
এইখানে আমার একটা হাইপোথিসিস আছে যে ডাক্তারদের অনেক লেখালেখি করতে হয় রেকর্ড রাখার খাতিরে এবং আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে। যত সিনিয়র ডাক্তার তত তার লেখালেখির যন্ত্রনাও বেশি। এ কারনেই হয়তো ক্লান্তিজনিত একটা অবহেলা চইলা আসে। এ ব্যাপারে সহব্লগারদের মধ্যে যারা ডাক্তার বা উঠতি ডাক্তার আছেন তারা ভালো কইতে পারবেন।
পরিশেষে কই হাল্কা খোঁচামারার উদ্দেশ্য নিয়া লেখাটা লেখছি। এ কারনে কারো কারো হাল্কা গোস্বা আসতে পারে বইলা অনুমান করতাছি। তবে কাউকে অহেতুক আঘাত করতে চাই নাই; এ কারনে কেউ আমার অজান্তে আঘাত পাইলে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপনের দুর্বলতার জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইয়া নিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৯