somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার অপরাধসমুহ: ভুয়া উকিল সেজে বিয়ে পড়ানো: পর্ব-২

৩১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৮ সাল । হলে বিএনির সংস্কারপন্থী ও মুলধারা নেতাদের সাথে প্রায়ই ঘটে সংঘর্ষ। মাঝে মধ্যে রুম ভাংচুর হয়।আমি ছিলাম সংস্কারপন্থীদের দলে। কি করবো উপায় নাই কারণ সংস্কারপন্থীদের নিয়ন্ত্রনে ছিল হল। তাই নিরাপত্তার খাতিরে আজিমপুরের কাছে পরিচিত এক বড় ভাইর রুমে গিয়ে উঠলাম। রুমে মহল্লার বড় ভাইকে ঘটনা খুলে বললাম। তিনি কয়েকদিন খাকার সুযোগ করে দিলেন। রুমে থাকতো তিনজন । আমাকে নিয়ে চারজন ।

কয়েকদিন পর মহল্লা্র বড় ভাইর এক দুর সর্ম্পকের আত্বীয় এলো ঢাকায় কর্মের খোজে। নাম শহীদ। কয়েকদিন ঘুরে ফিরে কর্ম নায় পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলে হাত খরচ চালাতে রিকসা চালাবে। তবে, যে কয়েকদিন বেকার ছিল সে কয়দিন তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম বিকেলে। ঘুরতে গিয়ে দুজনের মধ্যে হ্রদ্যতা তৈরি হয়। এরপর জানা গেল তার ইতিহাস। শহীদ বিবাহিত । দুইটি বাচচা আছে। এলাকায় বিয়ে করেছে।কিন্তু শহীদের সাখে রাজশাহীর এক মেয়ের সাথে অতীত সর্ম্পক রয়েছে। অবিবাহিত সেই রমনী গামেন্টস কর্মী ছিল ।

১ বছর আগে ঢাকার পাট চুকিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছে নারীটি । প্রায়ই রাত সে মেয়েটির সাখে কথা বলত । নাম তার রিজিয়া। একদিন মেয়েটি সাফ জানিয়ে দিল তাকে বিয়ে না করলে সে আর ঢাকায় আসবোনা । মেয়েটি শুধু তার কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি চায় । আর কিছু চায়না। বিষয়টি আমার কাছে বড়ই রহস্যের মনে হল।

শহীদ দোটানায় পড়ে গেল ।এদিকে গ্রামের বউর সাথে তার সর্ম্পক ভাল যাচ্ছিলনা । তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজিয়াকে বিয়ে করবে। কিন্তু কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করাটাও তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা । কেননা মেয়ে চায় কোর্ট মেরিজ ছাড়া বিয়ে বসবেনা । মহা মুসকিল্ ।

অল্প শিক্ষিত শহীদ আমার হাত পায়ে ধরে বসল । বলল বড় ভাই, ভাই আমাকে সাহাজ্য করেন, বললাম কিভাবে । সে বলল, আপনার কোন পরিচিত উকিল আছে। আমি বললাম । আছে, আমার বন্ধুর বাবা উকিল । থাকেন যাত্রাবাড়িতে । নাম আনিসুজ্জামান। শহীদ বলল, আমাকে একটি উকিলের সিল বানিয়ে দেন। সে একদিন আমাকে নিয়ে নীলক্ষেত গিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে একটি সিল বানালো আমার সেই বন্ধুর বাবার নামে। সিলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট লেখা। উকিলের নাম । পুরোপুরি নকল।

অত:পর সে ১৫০ টাকার কয়েকটি স্টাম্প কিনল। সেগুলো নিয়ে রুমে আসল। রাতে শুরু হল তার পরিকল্পনা । আমাকে সব বুঝিয়ে বলল। আমি বললাম ।ধরা পরবেনাতো । সে বলল , গ্রামের মানুষ তেমন শিক্ষিত না, তাই অতকিছু বুঝবেনা।

পরদিন দিনে পাশেই এক কাজীর রুমে গিয়ে বিয়ে করার নিয়ম কানুন ও কাগজ পত্র ঘেটে দেখে আসলাম দুজন। বিকেলে সুন্দর করে লিখলাম । উভয়ের নাম ঠিকানা দেনমোহর । এরপর শহীদ আমাকে মোবাইলে মেয়েটির সাথে কথা বলতে দিল। রিজিয়াকে বলল , আমার উকিলের সারের সাথে কথা বল। সবকিছু ঠিকঠাক করে বলবে। তা না হলে উকিল সাহেব বিয়ে পড়াবেনা । মোবাইল হাতে নিয়ে আমার খুব হাসি পেল । তারপর মুখটা গম্ভীর করে তার কাছে থেকে সব খুটিনাটি জিজ্ঞেস করে নিলাম । মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিয়েতে তুমি রাজি কিনা । সে বলল, হ্যা স্যার আমি রাজি । ভাল করে লিখে দেন । দেনমোহর ২ লাখ টাকা লিখবেন ।

আমি আবার মেয়েটিকে বললাম, তুমি নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করছো তো , মেয়েটি বলল, হ্যা স্যার । আমরা দুজনকে ভালবাসি ।
বিয়ে পড়িয়ে দিলাম । শহীদ মেয়ের রাজশাহীর ঠিকানায় কাগজ পত্র পাঠিয়ে দিল । এর ১০ দিন পর মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে এসে সাভারে রুম ভাড়া করে দিল। মেয়েটি একটি ছোট রুম নিয়ে থাকত। আর শহীদ সপ্তাহান্তে গিয়ে দেখা সাক্ষাত করে আসত।

এরমধ্যে আমি হলে ফিরে এলাম। শহীদের সাথে মাঝে মাঝে কথা হত। ঘটনার প্রায় একবছর পর সেই রিজিয়া মেয়েটি আমার নাম্বারে ফোন দিল। বলল, উকিল সাহেব । শহীদ তো এখন আর আসেনা । ফোনে পাওয়া যায়না। তার কোন সন্ধান দিতে পারবেন। আমি বললাম। তার সাথে তো আমার কোন যোগাযযোগ নেই । মেয়েটির কন্ঠে তখন বিমর্ষের ছাপ । আমি কি বলবো খুজে পাচ্ছিনা , হয়তো মেয়েটি জানেনা যে, তার বিয়ে ছিল একটি ভন্ডামি। নিজেকে তখন খুব অপরাধী মনে হলো।

আজ ৫ বছর পরেও মাঝে মাঝে সে ঘটনাগুলো মনে পড়ে। বিবেকের আদালদে আজও আমি অপরাধী হয়েই রইলাম।হয়ত কোনোদিন দেখা হলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতাম।
তাইতো বলি জীবনটা কাঠের পেন্সিলে লেখা কোন গল্প বা কবিতা নয়, যে ভুল হলে মুছে আবার নতুন করে লেখা যাবে।.......
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×