২০০৮ সাল । হলে বিএনির সংস্কারপন্থী ও মুলধারা নেতাদের সাথে প্রায়ই ঘটে সংঘর্ষ। মাঝে মধ্যে রুম ভাংচুর হয়।আমি ছিলাম সংস্কারপন্থীদের দলে। কি করবো উপায় নাই কারণ সংস্কারপন্থীদের নিয়ন্ত্রনে ছিল হল। তাই নিরাপত্তার খাতিরে আজিমপুরের কাছে পরিচিত এক বড় ভাইর রুমে গিয়ে উঠলাম। রুমে মহল্লার বড় ভাইকে ঘটনা খুলে বললাম। তিনি কয়েকদিন খাকার সুযোগ করে দিলেন। রুমে থাকতো তিনজন । আমাকে নিয়ে চারজন ।
কয়েকদিন পর মহল্লা্র বড় ভাইর এক দুর সর্ম্পকের আত্বীয় এলো ঢাকায় কর্মের খোজে। নাম শহীদ। কয়েকদিন ঘুরে ফিরে কর্ম নায় পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলে হাত খরচ চালাতে রিকসা চালাবে। তবে, যে কয়েকদিন বেকার ছিল সে কয়দিন তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম বিকেলে। ঘুরতে গিয়ে দুজনের মধ্যে হ্রদ্যতা তৈরি হয়। এরপর জানা গেল তার ইতিহাস। শহীদ বিবাহিত । দুইটি বাচচা আছে। এলাকায় বিয়ে করেছে।কিন্তু শহীদের সাখে রাজশাহীর এক মেয়ের সাথে অতীত সর্ম্পক রয়েছে। অবিবাহিত সেই রমনী গামেন্টস কর্মী ছিল ।
১ বছর আগে ঢাকার পাট চুকিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছে নারীটি । প্রায়ই রাত সে মেয়েটির সাখে কথা বলত । নাম তার রিজিয়া। একদিন মেয়েটি সাফ জানিয়ে দিল তাকে বিয়ে না করলে সে আর ঢাকায় আসবোনা । মেয়েটি শুধু তার কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি চায় । আর কিছু চায়না। বিষয়টি আমার কাছে বড়ই রহস্যের মনে হল।
শহীদ দোটানায় পড়ে গেল ।এদিকে গ্রামের বউর সাথে তার সর্ম্পক ভাল যাচ্ছিলনা । তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজিয়াকে বিয়ে করবে। কিন্তু কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করাটাও তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা । কেননা মেয়ে চায় কোর্ট মেরিজ ছাড়া বিয়ে বসবেনা । মহা মুসকিল্ ।
অল্প শিক্ষিত শহীদ আমার হাত পায়ে ধরে বসল । বলল বড় ভাই, ভাই আমাকে সাহাজ্য করেন, বললাম কিভাবে । সে বলল, আপনার কোন পরিচিত উকিল আছে। আমি বললাম । আছে, আমার বন্ধুর বাবা উকিল । থাকেন যাত্রাবাড়িতে । নাম আনিসুজ্জামান। শহীদ বলল, আমাকে একটি উকিলের সিল বানিয়ে দেন। সে একদিন আমাকে নিয়ে নীলক্ষেত গিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে একটি সিল বানালো আমার সেই বন্ধুর বাবার নামে। সিলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট লেখা। উকিলের নাম । পুরোপুরি নকল।
অত:পর সে ১৫০ টাকার কয়েকটি স্টাম্প কিনল। সেগুলো নিয়ে রুমে আসল। রাতে শুরু হল তার পরিকল্পনা । আমাকে সব বুঝিয়ে বলল। আমি বললাম ।ধরা পরবেনাতো । সে বলল , গ্রামের মানুষ তেমন শিক্ষিত না, তাই অতকিছু বুঝবেনা।
পরদিন দিনে পাশেই এক কাজীর রুমে গিয়ে বিয়ে করার নিয়ম কানুন ও কাগজ পত্র ঘেটে দেখে আসলাম দুজন। বিকেলে সুন্দর করে লিখলাম । উভয়ের নাম ঠিকানা দেনমোহর । এরপর শহীদ আমাকে মোবাইলে মেয়েটির সাথে কথা বলতে দিল। রিজিয়াকে বলল , আমার উকিলের সারের সাথে কথা বল। সবকিছু ঠিকঠাক করে বলবে। তা না হলে উকিল সাহেব বিয়ে পড়াবেনা । মোবাইল হাতে নিয়ে আমার খুব হাসি পেল । তারপর মুখটা গম্ভীর করে তার কাছে থেকে সব খুটিনাটি জিজ্ঞেস করে নিলাম । মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিয়েতে তুমি রাজি কিনা । সে বলল, হ্যা স্যার আমি রাজি । ভাল করে লিখে দেন । দেনমোহর ২ লাখ টাকা লিখবেন ।
আমি আবার মেয়েটিকে বললাম, তুমি নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করছো তো , মেয়েটি বলল, হ্যা স্যার । আমরা দুজনকে ভালবাসি ।
বিয়ে পড়িয়ে দিলাম । শহীদ মেয়ের রাজশাহীর ঠিকানায় কাগজ পত্র পাঠিয়ে দিল । এর ১০ দিন পর মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে এসে সাভারে রুম ভাড়া করে দিল। মেয়েটি একটি ছোট রুম নিয়ে থাকত। আর শহীদ সপ্তাহান্তে গিয়ে দেখা সাক্ষাত করে আসত।
এরমধ্যে আমি হলে ফিরে এলাম। শহীদের সাথে মাঝে মাঝে কথা হত। ঘটনার প্রায় একবছর পর সেই রিজিয়া মেয়েটি আমার নাম্বারে ফোন দিল। বলল, উকিল সাহেব । শহীদ তো এখন আর আসেনা । ফোনে পাওয়া যায়না। তার কোন সন্ধান দিতে পারবেন। আমি বললাম। তার সাথে তো আমার কোন যোগাযযোগ নেই । মেয়েটির কন্ঠে তখন বিমর্ষের ছাপ । আমি কি বলবো খুজে পাচ্ছিনা , হয়তো মেয়েটি জানেনা যে, তার বিয়ে ছিল একটি ভন্ডামি। নিজেকে তখন খুব অপরাধী মনে হলো।
আজ ৫ বছর পরেও মাঝে মাঝে সে ঘটনাগুলো মনে পড়ে। বিবেকের আদালদে আজও আমি অপরাধী হয়েই রইলাম।হয়ত কোনোদিন দেখা হলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতাম।
তাইতো বলি জীবনটা কাঠের পেন্সিলে লেখা কোন গল্প বা কবিতা নয়, যে ভুল হলে মুছে আবার নতুন করে লেখা যাবে।.......