ঐ মিয়াঁ খাড়ান!এইডা কি দিলেন?আপ্নের লগে না পাঁচশো ট্যাকা মিটাইসিলাম!
-(অপ্রস্তুত ভাবে লুঙ্গি বাঁধতে গিয়ে বিরক্তিময় ছেদ পড়ে)তোরে না এই মাত্র গাঁট খুইল্লা ট্যাকা দিলাম!
একটা ছিড়া একশ ট্যাকার সাথে দুইডা দলা পাকাইন্না বিশ ট্যাকা!এইডা তো কতা আছিল না!ট্যাকা বাইর করেন!
-চুপ কর মাগী!দ্যামাগ কত?!?জানোস তোগো সর্দারনী আমারে কত ইজ্জত করে?তোর ঘরে আমি ছ্যাপ ফালাইলেও অইডা তোর সাত জন্মের সৌভাইগ্য!
হ!পারবেন তো আমাগো লগেই!আমাগো বাঁচাইয়া রাখসেনই তো খাওনের পর ঝুটা ফালানির লাইগা!
খদ্দের কপালে বিরক্তির ভাঁজ নিয়েই বের হয়ে যায়...
এদিকে মিনারির গালি সম্প্রসারিত হতে থাকে তার পথ অনুসরণ করে দূরে...আরও দূরে...শুধু থেকে যায় দীর্ঘশ্বাস...
এ নরকে মিনারির আবির্ভাব খুব একটা বেশী দিনের নয়...আবার কম বললেও অবিচার হয়ে যায়...
বিয়ে হয়েছিল দশ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে সামাদের সাথে।
সামাদ ভ্যান চালায়...চলেনা সংসার,আসেনা নেশার টাকা...
যৌতুক নিয়ে আরও একটু কৌতূহল দেখিয়েও ওপার থেকে সাড়া না মেলায় মিনারির উপর পুরুষালি পাশবিকতার মাঝেই তার শোধ তূলছে সামাদ...
হঠাত একদিন সামাদের নিশ্চিন্ত প্রস্তাব...
-বৌ!চল ঢাকা যাই।দুইজন মিলা গারমেন্টসে চাকরি করুম,আমাগো আর অভাব থাকবো না!
(স্বামীর পুলকিত আশ্বাসের মাঝেও অনিশ্চয়তা নিয়ে মিনারির দ্বিধা) এত্ত বড় শহরে আমাগো কাম দিব কেডা?
-আমি সব ঠিক কইরা ফালাইছি!তোর কোনো চিন্তা করা লাগবো না।
আপনে দ্যাখেন...ভালা হইলেই ভালা...
তিন দিন পর তাদের যাত্রা শুরু হয় বিশ্বের এমন এক আজিব শহরে যার নাম কিনা ঢাকা...
ইটের উপর ইটের এতো আকাশচুম্বী জটলা আর এতো মানুষের দিগ্বিদিক ছুটেচলার মাঝে বিস্ময়ে হারিয়ে যায় মিনারি।
আর সেই বিস্ময়ের গ্রাফ এক ধাক্কায় এক্সপোনেনশিয়ালি উঠে যায় যখন নিজেকে আবিষ্কার করে একটা গুমোট পরিবেশে যেখানে চারপাশে অস্বচ্ছ কালো দেয়াল...
মাথার পেছনে চিনচিনে ব্যাথা...কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই আবারো জ্ঞান হারায় মিনারি...
জ্ঞান ফিরে যাকে আবিষ্কার করলো তাকে উৎকট সাজের দজ্জাল মানবী আখ্যায়িত করলে বিশেষণ-টি খুব একটা বিব্রত হয় না।
দজ্জাল মানবীর হুঙ্কারের ঝাপটা লাগে হঠাৎ...
-তা নবাবজাদীর ঘুম কি ভাংছে?নাকি আরও মাস খানিক ঘুমাইবেন?বাপরে!মইষের মতো ঘুমায় বেডি!
আমি কই?আমি এইখানে ক্যান?আমার স্বামী কই?
-স্বামীর কথা ভুইলা যাও!হ্যায় তোরে আমার কাছে পঞ্চাশ হাজারে বেইচ্চা গ্যাছে।অহন তোর থেইক্কা তুলুম এক লাখ!
এইসব আপনে কি কন?আমারে ক্যান বেচবো হ্যায়?আমারে দয়া করেন!আমারে ছাইড়া দ্যান!
-অহন কাইন্দা কাইট্টা কোনো লাভ নাই!আমি দিরু সর্দারনী কি তোরে ছাইড়া দেওনের লাইগা পয়সা ফালাইসি?ভালো কথায় মানলে তো ভালা।আর তাতে কাম না হইলে সেই ব্যবস্থাও আমার জানা আছে!
মিনারির আর বুঝতে কোনো বাকি থাকে না যে সে এখন পতিতালয়ে আটকে পড়া প্রজাপতিদের একজন।
পালাবার চেষ্টা যে করেনি তা নয়।
তবে ধরা পড়বার পরের চিত্রটা হয় আরও নির্মম...বর্বর...
কেমন বর্বর?
শোনার এত ইচ্ছা?
প্রথমে তো চড় থাপ্পড়ের উপর দিয়ে যেত...
এরপর গাড়ির ব্যাটারির ধনাত্মক আর ঋণাত্মক প্রান্ত গুলো জুড়ে দেয়া হত দেহের বিভিন্ন যায়গায়...আর বর্তনীতে সংযোগ পাওয়া মানে দুনিয়াতেই হাবিয়া দোযখের স্বাদ!
এতেও কাজ না হলে সারা শরীরে কাঁচা মরিচ বাটা লাগিয়ে দিলেই তো সব ক্লিয়ার!
মানুষ যখন সহ্যের সীমানা পেরিয়ে যায় সে হয়ে যায় যন্ত্র...যন্ত্রীর সংকেতে চলে তার জীবনপ্রবাহ...যখন যেমনটা যন্ত্রীর চাহিদা আমলে আনে...
আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল...কিন্তু যখন জানলো তার সত্তায় জমে আছে দুনিয়ার আলো দেখতে যাওয়া আরেক অতিথি তখন আর এই মহাপাপ্য কর্মটি আর হয়ে ওঠে না...
এখন মিনারি তাদেরই একজন।অন্যদের মতো তাকেও নিয়মিত খদ্দের ধরতে হয়।
ঘরভাড়া দিনে দুইশ টাকা।আর সর্দারনীর একলাখ টাকা ফেরতের কিস্তি তো আছেই...
দিনে তার খরচ চলে যায় এক হাজারের কাছাকাছি যার পুরোটাই আসে খদ্দেরের পকেট থেকে...
দিনে নিদেনপক্ষে দুই তিন জন খদ্দের না হলে সংস্থান হয়না দিন যাপনের অর্থের...
মাঝে মাঝে খদ্দের ধরতে যেতে হয় শহরের চেনা স্পট গুলোতে।
পুলিশ-কে যদিও খুশি রাখতে হয় তবুও সমস্যা হয়ে যায় বৃহস্পতিবারে...
কেন?
এই পর দুই দিন কোর্ট বন্ধ,তার মানে মিনারিরা এই সব দিনে গ্রেফতার হলে পরপর দুই দিন থানার সেল হবে "জনগণের বন্ধুদের" শুধাভাণ্ডার...
ইচ্ছা ছিল ছেলেটাকে মানুষ করবে মিনারি।
তবে ভেবে কষ্ট লাগত এই ভেবে যখন বাইরের লোকজন ওকে বলবে..."ঐ দ্যাখ!নোটির পোলা ইস্কুলে যায়!জজ ব্যারিস্টার হইব!"...এটা কিভাবে মেনে নেবে তার ছেলে তাই ভেবে কপালের ঘাম কপালেই শুকিয়ে যায়...
এরপর কোনো একদিন সর্দারনীর পরামর্শে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বেচে দেয় তার সর্বস্ব জুড়ে থাকা সত্তাকে...
কত তার দাম জানেন?বিশ হাজার টাকা মাত্র!
সে টাকায় সর্দারনীর টাকার চাপ-ও কিছু কমলো...কমলো ছেলে কিভাবে মানুষ হবে তার চিন্তাও...
বেশ্যার ছেলে হবার চেয়ে সভ্য মানুষের ঘরেই না হয় ও বড় হোক...একসময় এই ছেলেটিও হয়ত এদের কে তাচ্ছিল্যকর বেশ্যা বলতে দ্বিধা করবে না...
মিনারি-রা সমাজের সভ্য,অসভ্য,ভদ্র,চোর,ধার্মিক,খুনি সবার মিক্সচারের থিতানো তলানিতে পড়ে থাকে...
সমাজ তাকে এক বাক্যে আলাদা করে দিয়েছে...এদের সম্মানজনক বিশেষণ "পতিতা"...
অন্ধকারে এরা সুশীল সমাজের সুধাদানকারিনী,আর আলোয় এলে এরাই সমাজের দুর্গন্ধ,কীট...
এরা সুস্থ জীবনে ফিরে যায় না কেন?
কোথায় যাবে?
সমাজ,ধর্ম,পরিবার সবাই এদের প্রশ্নে ক্রমিকভাবে মূক,বধির,অন্ধ...
এদের ঠোটে থাকে কড়া লিপস্টিক...চোখে গাঢ় কাজল...চুলে রঙ্গিন ফিতা...
এসবের আড়ালে থাকে কষ্ট,ক্ষোভ,আর সমাকলিত হতে না পারা হাজার,অযুত কিংবা লাখ লাখ অনুভুতিহীন বর্ণমালা...যার একত্রিত রুপ এরা কখনোই দেখতে পায় না...
মিনারি কয়দিন ধরে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত...
অনেক দিন পর সে রেললাইনের এই পথটায় এসেছে...
সামনে অবারিত পথ...
রেললাইন কখনো কারও স্পর্শে আসতে পারে না...
রেললাইন বহে সমান্তরাল...
বহে সমান্তরাল...
#কিছু অশ্লীল ভাষা ব্যবহার হওয়ায় দুঃখিত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





