somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্দোলনের শুরুটা এখান থেকেই হোক

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজাকার কাদের মোল্লা ইস্যুতে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি যেভাবে সমাজের সকল স্তরের মানুষ যেভাবে একতাবদ্ধ হয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত, আনন্দিত, উদ্বেলিত পাশাপাশি শঙ্কিতও বটে। কারণগুলো বলার আগে কিছুটা ভূমিকা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি। দুঃখিত, কারণ এতে যদি আপনার এই লিখা পড়ার শেষ ইচ্ছেটাও নষ্ট হয়ে যায়।

আপনারা যারা আমার লিখা পড়েছেন অথবা ভুল করে হলেও আমার প্রোফাইলে পেইজে এসেছেন, তাদের কারো হয়তো চোখে পড়তে পারে আমার পেইজের উপরের দিকটায় লিখা আছে, "একটি সোনার বাংলাদেশের অপেক্ষায়"। মানুষ হিসেবে আমি ভীষণরকম বাস্তববাদী আর পাশাপাশি খানিকটা আবেগপ্রবণও বটে। কিন্তু দেশের ইস্যুতে আমি ভীষণ রকম কঠিন মনের মানুষ। এতসব কিছুর পরেও আমি সবসময়ই বিশ্বাস করেছি আর আজও করি বাংলাদেশে পরিবর্তন আসবেই। বাংলাদেশ একদিন সত্যিকার অর্থেই "সোনার বাংলাদেশ" হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে।

কিন্তু আমার দেশে অন্যায়, অত্যাচার নিপীড়ন আর শোষণের মাত্রা দেখে আমি বেশ ক্ষুদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়ে গেছে ভীষণ ভাবে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ড, নারী নির্যাতন আর ধর্ষণের খবর, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচর, রাজনীতিবিদদের মিথ্যে অপপ্রচার আর চাঁপাবাজি, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দুর্নীতি আর সন্ত্রাসে ছেঁয়ে যাওয়া এ এক ভিন্ন রকম বাংলাদেশ দেখছি আমরা। এ যেন ৫২ কিংবা ৭১-এ যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাদের স্বপ্ন ভঙ্গের বাংলাদেশ। এই হতাশা আমাকেও আপনাদের মতো তাঁড়া করে ফেরে, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বুকের মাঝে ১০টা নিউক্লিয়ার বোমা বেঁধে শেষ করে দেই এই সমাজ-সভ্যতা, ইট-পাথরের স্তুপে চাপা পড়ে শেষ হয়ে যাক এই কীটের দেশ, শেষ হয়ে যাক এই ঘুনে ধরা পুরো সিস্টেমটাই। সবকিছু শুরু হোক আবার নতুন করে।

ক্ষমা করবেন, বিচারের বাণী যেখানে নিভৃতে কাঁদে, সাধারণ মানুষের জীবন যখন ওষ্ঠাগত, জনগণের প্রতিনিধি যেখানে লাখো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বুলি আওড়ায় প্রতি মুহূর্তে, তখন কি লাভ এই মিথ্যে স্বপ্ন লালনে? কি লাভ মিথ্যে আস্ফালনে? পবিত্র গণতন্ত্রের নামে যখন পরিবারতন্ত্র চলছে, তখন কি লাভ এই গণতন্ত্রের প্রাণ সংসদ ভবন দিয়ে? ক্ষমতায় আসলেই, সবকিছু বাবার নামে নয়তো স্বামীর নামে। ক্ষমা করবেন, দেশটা কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। অনুরোধ থাকলো, ভুল বুঝবেননা আমাকে। বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবর রহমান আর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের প্রতি আমার শ্রদ্ধার বিন্দুমাত্র কমতি নেই। কিন্তু তাদের উত্তরসূরির কারো প্রতিই আমার এতটুকু শ্রদ্ধাবোধ নেই।

স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পরেও, আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা আজও পাইনি। সবকিছু চলে গেছে এখন "নষ্ট"দের হাতে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? বাংলার মানুষ মুখ খুলতে ভুলে গেছে, নিজেদের অধিকারের দাবী আদায়ে ভুলে গেছে, ভুলে গেছে ৩০ লক্ষ মানুষের প্রানের বিনিময়ে অর্জিত পবিত্র স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে, ভুলে গেছে লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের মর্যাদা দিতে। ভুলে গেছে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের "গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক" নামক শ্লোগানকে। কিন্তু, আজ সময় এসেছে বিচারকের বিচার করার।

এই দিনেরই অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘদিন। কাদের মোল্লার বিচারের দাবীতে বাংলার আপামর জন সাধারণ যেভাবে একত্র হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখার সময় হয়েছে। বিশেষ করে, তরুন প্রজন্মের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা না করে পারছিনা, আজ মনে পড়ছে, ৫২ আর ৭১ -এ তরুন প্রজন্মের অবদানের কথা। তাদের মতোই আজ আপনারা যারা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের জানাই সাধুবাদ এবং শ্রদ্ধা। কিন্তু কাদের মোল্লার ইস্যু ছাড়াও কিছু প্রশ্ন রয়েই গেল। তেমনি কিছু প্রশ্ন রইল তরুন প্রজন্মের কাছে।

১। বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র এবং রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতমূলক একটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কি এই আন্দোলন হতে পারেনা?

২। দেশে একটা সুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনে, শিক্ষাঙ্গন থেকে দলভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের জন্য কি এই আন্দোলন হতে পারেনা? আপনি কি চান না যে আপনি অথবা আপনার ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রকৃত জ্ঞান নিয়েই শিক্ষাঙ্গন ত্যাগ করুক? অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী এবং প্রগতিশীল দেশ গড়ার জন্য এর ভালো সিদ্ধান্ত আর কি হতে পারে?

৩। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক কালচার থেকে "হরতাল" নামক শব্দটা চিরতরে কি মুছে ফেলা যায় না? আজ পর্যন্ত এমন কোন হরতাল দেখেছেন যেখানে সরকারি বা বেসরকারি সম্পদ নষ্ট না হয়েছে? তাতে দেশের লাভটা কোথায় হলো?

৪। বাংলাদেশে সংঘ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অন্যায় নির্যাতন-নীপিড়ন বন্ধের জন্য কি আন্দোলন হতে পারে না? তারাও আমার-আপনার মতোই এই দেশেরই সন্তান। তাদের বর্ণ, ধর্ম র্নিবিশেষে সমান অধিকার আদায়ে আমাদের কি কিছুই করার নেই?

৫। সমাজ তথা দেশ গঠনে নারী সমাজে সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যে কি আন্দোলন হতে পারে না? নারী নির্যাতন বন্ধে পুরুষ সমাজকে সচেতন করার পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করাও জরুরী যাতে আমার আপনার মা-বোন মাথা উঁচু করেই সবার মতোই বলতে পারে "সোনার বাংলাদেশ"।

৬। পরিচিত এবং প্রমাণিত দেশদ্রোহীদের ( রাজাকার, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ) মৃত্যুদন্ডের বিধান করা।

এমনি আরো অনেক ইস্যু আমাদের আজকের আন্দোলনের অংশ হতে পারে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই এইসব ইস্যুতে রাজপথে নামেনি। এক কাদের মোল্লার ইস্যুতে আমরা পথে নেমেছি কিন্তু ভেবে দেখুন, কাদের মোল্লার ফাঁসি যদি হয়েও যায় তাতে আমাদের অর্জন নিতান্তাই বিশাল কিছু নয় কারণ তাদের ফাঁসি হওয়াই উচিত ছিলো আন্দোলন ছাড়াই। রাজাকারদের বিচার ছাড়াও আরো অনেক বড় ইস্যু আছে যেখানে তরুণদের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রয়োজন। আমি বলছিনা, এটা ভুল হয়েছে কোন কারনেই। শুধু বলতে চাচ্ছি আমরা এই গণজাগরণ প্রতিদিন দেখতে পাবোনা। কিন্তু এই আন্দোলই হতে পারে অনেক বড় কোন আন্দোলনের প্রথম ধাপ।

একটা সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের জন্য, জনগণের ভাগ্য নির্ধারনে জনগণেরই অংশ্রগ্রহণ প্রয়োজন। যুগে যুগে সরকার চিরকালই জনগণকে অন্ধকারে রেখেছে যাতে তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে পারে কিন্তু এই অবস্থার অবসান আপনাকে আমাকেই করতে হবে। নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করে সরকারকে বোঝাতে হবে, জনগণ অন্ধ নয়। ভোট দিয়ে আমরা যেমন ক্ষমতায় বসাতে পারি, তেমনি জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আমরা সরকারকে টেনে নামাতেও পারি। সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে, অন্যায়-অত্যাচার আর দুর্নীতি দিয়ে দেশ চালাতে চাইলে পরিনাম সুখকর হতে পারে না সে সরকার যে দলেরই হোক।

তাই অনুরোধ রইলো, দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখুন। নিজেদের অধিকার নিজেরাই আদায় করুন। সুখী-সুন্দর আর উন্নত দেশ গড়ার জন্য যদি আবারো যুদ্ধে যেতে হয়, তবে কথা দিলাম আমিও আপনাদের আন্দোলনের সাথী হতে প্রবাসের সবকিছু ছেঁড়ে-ছুঁড়ে দেশের মাটিতেই ফিরব। কসম বাংলা মায়ের, কসম এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের।

বাংলাদেশ দীর্ঘজীবি হোক, জয় বাংলা।

যোগ দিন: ফেইসবুক পেইজ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫
৪১টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×