somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেহেরজান নিয়ে আমার আপত্তি!

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ব্লগারদের রিভিউ পরে আর পরিচিতজনদের রিভিউ শুনে দেখার ইচ্ছা উবে গেছে। উল্টো সবাইকে সিনেমাটি দেখে প্রযোজকের পকেট ভারী করতে নিরুৎসাহিত করছি।

যে বিষয়গুলো নিয়ে আমার আপত্তি সেগুলো সহজ ভাষায় তুলে ধরবো:

১. মেহেরজানের ইউএসপি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। আর দশটা ফিকশন বেজড মুভি থেকে এটাকে আলাদা করেছে মুক্তিযুদ্ধ। আমি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মুভি হিসেবেই দেখায় আগ্রহী ছিলাম। মুম্বাইয়ের 'বীর-জারার' কাহিনী একই ধাঁচের হলেও সেটার ইউএসপি ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব ছিল না। বাজারে মুভিটির পজিশনিং ছিল একটি প্রেমের ছবি হিসেবেই। আর পরিচালকের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেভাবেই হউক, বাজারে 'মেহেরজান' এর পজিশনিং হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা হিসেবে, যেটা একে আর দশটা সাধারণ ফিকশন বেজড সিনেমা থেকে আলাদা করেছে। আর দর্শক এই পারসেপশন নিজেই সিনেমাটি দেখতে যায়। আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আবেগ নিয়ে তার মনে পূর্বগঠিত ধারণার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক হওয়ায়, মুভিটি দর্শকের মনে কগনিটিভ ডিসোনেন্স তৈরী করে। মুভির উদ্দেশ্য যদি হয় দর্শককে বিনোদন দেয়া, অনুপ্রাণিত করা, তথ্য দেয়া বা তাকে তার টাকার বিনিময়ে যে কোন ধরণের পজিটিভ ভ্যালু দেয়া, তবে এই মুভিটি চুড়ান্তভাবে ব্যর্থ। পরিচিতজনেরা সবাই মুভি দেখে মেজাজ গরম করে বের হয়েছে বলে জানতে পারি।

২. দুই বা ততোধিক যোগসুত্রহীন ঘটনা যুগপত ঘটার সম্ভাবনা, আলাদা আলাদা ভাবে ঘটার সম্ভাবনার গুনফলের সমান। আজ যদি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা হয় ৫০% আর সেই সাথে আমার লাল শার্ট পড়ার সম্ভাবনা যদি হয় ৫০% তবে আজ আমি লাল শার্ট পড়বো ও বৃষ্টি হবে সেই সম্ভাবনা ২৫% মাত্র।
নানাজানের চরিত্রের লোক হয়তো মুক্তিযুদ্ধকালে অনেক পাওয়া যাবে। কোন বোকা বাঙালি নারীর হয়তো সুদর্শন বালুচ মানবিক গুন সম্পন্ন পাকি সৈন্যের প্রেমে পড়া সম্ভব। যুদ্ধকালে যেটার সম্ভাবনা আরো কমবে বই বাড়বে না। আর সেই নারীর বোন পাকিস্তানিদের দ্বারা ধর্ষিত হলে প্রেমের সম্ভাবনা কোথায় যেয়ে ঠেকে?
মুক্তিযোদ্ধাদের বিয়েপাগল হওয়াও অসম্ভব নয়। আরো সম্ভব কোন দুর্বলচিত্তের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নানাজানের কাছে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া।

কিন্তু এইসকল সীমিত সম্ভাব্যতার এতগুলো ঘটনা একসাথে যুগপৎ ঘটার সম্ভাবনা কত? আমার এস্টিমেশন অনুসারে বাংলাদেশে ১০ বার মুক্তিযুদ্ধ ঘটলে একবার হয়তো এই ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

বলতে পারেন মুভিতেতো ব্যতিক্রমধর্মী/অস্বাভাবিক ঘটনাই ফোকাস করা হবে। অবশ্যই হবে, কিন্তু সেই মুভির পরিচিতি হতে হবে ফ্যান্টাসী মুভি। ইতিহাসভিত্তিক মুভি নয়।

৩. পরিচালকের রচিত একটি প্রবন্ধ পড়ে মনে হলো, তার নারীবাদী আদর্শ এই মুভির পেছনে একটি বড় অনুপ্রেরণা। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, মুক্তিযুদ্ধের আগের ও পরের পুরুষ (আসলে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন নারী এবং পুরুষ) কর্তৃক নারী নির্যাতনের হারে তেমন কোন ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তবে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে ড়্যান্ডম নারী নির্যাতন আর এথনিক ক্লিনসিং এর পার্ট হিসেবে নারী নির্যাতনকে এক করে দেখার কোন অবকাশ নেই। নির্যাতিত নারীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে লেখিকার (পরিচালকের) দ্বিধান্বিত প্রশ্ন দৃষ্টিকটু এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠির কথা মনে করিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সংকলিত ইতিহাস অনেকটাই পুরুষতান্ত্রিক ইতিহাস। নারী অনেকংশেই নিগৃহীত। কিন্তু এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেয়ে পুরো ইতিহাসকে লেখিকার ভাষায় অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করা আসলে সেই একই জুতায় পা রাখা। যেকোন ঘটনা হাজারটা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলাদা আলাদা ভাবে দেখা যেতে পারে, কিন্তু ফ্যাক্ট কিন্তু আসলে একটাই।

৪. বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত জার্মান একটি আইন পড়েছিলাম মার্কেটিং কোর্সের অংশ হিসেবে। এই আইন অনুসারে, উদাহরণস্বরুপ: একটি এসইউভি কে বিজ্ঞাপনে আকাশে উড়তে দেখালে আইনগত কোন সমস্যা নেই, কিন্তু যে টেরেইনে এসইউভি টি চলতে অপারগ, সেখানে দেখানো নিষিদ্ধ। অ্যাবসার্ড মনে হলেও আইনটি কিন্তু ভোক্তা স্বার্থের পক্ষে। সবাই জানে গাড়ি উড়তে পারে না। তাই এসউইভিকে আকাশে উড়তে দেখালে কেউই বিশ্বাস করবে না যে ওটা উড়তে পারবে, বরং সবাই এটাকে ফান/ক্রিয়েটিভিটি হিসেবে নিবে। কিন্তু মরুভুমির বালুতে চলতে অক্ষম একটি গাড়িকে যদি মরুভুমিতে সাবলিলভাবে চলতে দেখানো হয়, তবে ভোক্তাদের গাড়িটি কিনে ঠকার সম্ভাবনা থাকে। প্রথম বিজ্ঞাপনটি গাড়িটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোন ভুল ধারণার সৃষ্টি করে না, কিন্তু দ্বিতীয়টি করে।

চলচ্চিত্রটির সেটিংস মুক্তিযুদ্ধ না হলে বা মুক্তিযুদ্ধকে ফোকাস না করে করলে, বা এটাকে একটি হাই-ফ্যান্টাসী হিসেবে দর্শকের কাছে পজিশনিং করলে কোন আপত্তি থাকতো না। আমার একমাত্র আপত্তি মেহেরজানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি হিসেবে পরিচিতিতে।


পরিশেষে,
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত এবং স্বাভাবিক ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিক ব্যাতিক্রমকে উপজীব্য করে নির্মিত এই সিনেমার সাফল্য ভবিষ্যতে ইতিহাস বিকৃতিকারীদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তাই একে বর্জন করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪৫
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×