somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্রের হাতে যদি নাগরিক নিরাপত্তা না পায় তবে সেই রাষ্ট্র ব্যর্থ

১৮ ই জুন, ২০০৯ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথায় আছে, বাঘে ছুলে হয় আঠরো ঘা আর পুলিস ছুলে ছত্রিশ ঘা! পুলিসের মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি করা এরকম একটি কথা নিশ্চয় একেবারে অকারণে তৈরি হয়নি। এর উত্তরে পুলিসের ভাষ্য হচ্ছে, এটি চালু হয়েছে ব্রিটিশ আমলে - যখন স্বদেশি বিপ্লবীদের ধরার নামে পুলিস যাকে-তাকে ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালাতো। বাঘের ভয়কেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল তখন পুলিসের ভয়। ঠিক আছে, ব্রিটিশ আমলের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম - তারা ভিনদেশি শত্রু ছিল, কিন্তু এই স্বাধীন বঙ্গদেশে যে হাজারে-বিজারে মানুষ মরছে পুলিস আর তাদের মাসতুতো ভাই র‌্যাবের হাতে, তা-ও আবার বিচার ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, তার কি ফয়সালা হবে? এটি কি আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অস্ত্র ও ক্ষমতার অপব্যবহার নয়?

এটি যে অস্ত্রের ও ক্ষমতার অপব্যবহার, পুলিসের আইজি নূর মোহাম্মদ সাহেব কিন্তু তা স্বীকার করতে নারাজ। ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারকে সপ্তাহ দুয়েক আগে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি আরো দাবী করেছেন যে পুলিস বা র‌্যাবকে অস্ত্র দেয়া হয়েছে ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। তারা সেটাই করছে, নিরপরাধ কাউকে তারা খুন করছে না। তিনি আরো বলেছেন যে, ক্রসফায়ারে মানুষ খুন হওয়া এদেশে নতুন কিছু নয়, কিন্তু তাতে নিরপরাধ কেউ কখনোই খুন হয়নি।

যাক, পুলিসের হাতে যে মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা অন্তত তিনি অস্বীকার করেননি। সাথে সাথে বেশ ক'টি বেয়াড়া প্রশ্নও এল মনে। নূর মোহাম্মদ সাহেবের কথায় নিশ্চিত হলাম যে পুলিস যাদের মারছে তারা 'ক্রিমিনাল'। প্রশ্ন হচ্ছে, কে তাদেরকে ক্রিমিনাল বলে এই রায় দিল? কোন আদালত? জানা মতে কোন আদালত সেই 'ক্রিমিনালদেরকে' ক্রিমিনাল বলে সাব্যস্ত করে রায় দেয়নি। হয় কোন মামলার আসামী হিসেবে পুলিস তাকে ধরতে চেষ্টা করছিল, বা সে পুলিসের হাত থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার অপরাধ তখনো প্রমাণিত হয়নি। অথচ আইজি সাহেব তো বলছেন, নিরপরাধ কাউকে তারা খুন করেন না! তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, পুলিস বা র‌্যাবের সদস্যরা নিজেরাই ঠিক করে নিচ্ছেন কে ক্রিমিনাল আর কে নয়! আইজি সাহেবের কাছে সবিনয়ে জানতে চাই, আইনগতভাবে আপনাদের কি সেই এখতিয়ার আছে? তাহলে আইন-আদালত-বিচার ব্যবস্থা একেবারে উঠিয়ে দেয়া হোক, কি বলেন?

এ প্রসঙ্গে আরো একটি কৈফিয়ত ইদানিং বেশ জোরেশোরে শুনা যাচ্ছে - পুলিস বা র‌্যাব আত্মরক্ষার্থে 'অপরাধীদেরকে' হত্যা করতে বাধ্য হয়। হক কথা, আত্মরক্ষা করার অধিকার প্রতিটি মানুষের আছে, চাই কি সে চোর হোক কিংবা পুলিস। মুশকিল হলো, পুলিস যদি আত্মরক্ষা করতে পারে তাহলে পুলিসের তাড়া খাওয়া 'ক্রিমিনালটি' কেন পারবে না? সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এখন এই কথা শুনে তেড়ে না এলেই হয়। কিন্ত আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, র‌্যাব বা পুলিসের হাতে নিহত হওয়া 'ক্রিমিনাল'দেরকে কেন পায়ে বা শরীরের অন্য কোন আপাত নিরাপদ অঙ্গে গুলি না করে মাথায় বা বুকে গুলি করা হয়? আমাদের এলিট ফোর্স র‌্যাব বা পুলিশ কি তাড়াহুড়োয় ঠিকঠাক মতো লক্ষ্য স্থির করে মানে সই করে গুলি করতে পারে না? তাহলে তো ভীষণ চিন্তার কথা! পুলিশ ভাইয়েরা করিমকে গুলি মারতে গিয়ে রহিমকে গুলি করে ফেলবে আর সুশীল সমাজ তা চেয়ে চেয়ে দেখব তা তো হতে পারে না! পুলিসের উন্নত প্রশিক্ষণের দাবীতে এখনই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হোক। নইলে অশীল সন্ত্রাসী মারতে গিয়ে র‌্যাব যে সুশীল ভদ্দরলোকেদের ক্রসফায়ারে হত্যা করবে না তার কোন গ্যারান্টী কে দিবে।

ক্রসফায়ারের কথা যখন এলই, আরো দু'চারটি কথা বলা আবশ্যক। ক্রসফায়ার জিনিসটা যে আদতে কী আজও ঠিকঠাক মত বুঝে উঠতে পারিনি। বাংলায় এর কোন প্রতিশব্দও খুঁজে পাইনি। তবে সাধারণভাবে মনে হয় যে, দুই বা ততোধিক পক্ষের গোলাগুলির মাঝে কেউ (যে কোন এক পক্ষের বা একেবারে পক্ষনিরপেক্ষ) পরে গেলে সে ঘটনাটিকে ক্রফায়ার বলা যেতে পারে। তা-ই যদি হয়, তবে র‌্যাবের হাতে যারা খুন হয়েছে তার কোন কোন পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পরেছিল? এক পক্ষ তো র‌্যাব, যারা মরছে তারা সাধারণত র‌্যাবের বন্দী, তাদের কাছে অস্ত্র থাকার প্রশ্নই উঠে না। তাহলে অন্য পক্ষ কে বা কারা? পত্রিকায় প্রায়ই একঘেয়ে রিপোর্ট দেখি - ভোর রাতের দিকে র‌্যাব বন্দীকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য 'ক্রমিনালদের' আস্তানা চিনিয়ে দিতে। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্য সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে শুরু করলে র‌্যাবও পাল্টা গুলিতে জবাব দেয় এবং অবধারিতভাবে দুই গোলাগুলির মাঝে গিয়ে হাজির হয় বেচারা মরণগামী 'ক্রিমিনাল'। এই ধরণের রিপোর্ট পড়তে পড়তে প্রায়ই ভাবি রিপোর্টগুলো আসলে কারা লিখেন? পত্রিকার রিপোর্টার নাকি র‌্যাবের কোন কর্মকর্তা? কে জানে হয়তো বাড়তি সৎ-উপার্জনের জন্য অনেক র‌্যাব সদস্য পত্রিকাতেও পার্ট-টাইম চাকরি করেন। সে যাক, র‌্যাবের সদস্যরা যদি পত্রিকায় পার্ট-টাইম চাকরি করেন সেটা নিশ্চয়ই সংবিধান লঙ্ঘন করে না! ছোট দু'টো প্রশ্ন রেখে আজকের মত শেষ করব। এক: বন্দীকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের ডেরায় হাজির হওয়ার পেছনে র‌্যাবের উদ্দেশ্যটা আসলে কি? ঠিকানা চিনিয়ে দেয়াই যদি উদ্দেশ্য হয় তবে, সেই ঠিকানাটা কি বন্দী মুখে বলতে পারত না? নাকি র‌্যাবের হেফাজতে ততক্ষণে তার বাকশক্তির বারোটা বেঝে গেছে - এই সন্দেহটাকে পাত্তা দেব? দুই: এভাবে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে নিহত হওয়া মানুষদের জন্য সংবিধানে কি কোন বিধান আছে? তারা যেহেতু নিরাপত্তারক্ষীদের ভাষ্যে 'ক্রিমিনাল' তাই তাদের মৃত্যু উচিৎকাজ হয়েছে ভেবে আমাদের কি উচিৎ বগল বাজানো? নাকি সংবিধান যেহেতু প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে, তাই এদের মৃত্যুকে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা সাব্যস্ত করে রাষ্ট্রের কাছে কৈফিয়ত দাবী করা উচিৎ?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০০৯ ভোর ৬:৫৫
৫৬টি মন্তব্য ২১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×