somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা মানুষ (The Stranger) এবং কিছু কথা

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি শার্ল বোদলেয়ার এর লেখা ‘The Stranger’ কবিতাটি ‘অচেনা মানুষ’ শিরোনামে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু।

“অচেনা মানুষ

বলো আমাকে রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি
সবচেয়ে ভালবাসো?
তোমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নীকে?
পিতা, মাতা, ভ্রাতা অথবা ভগ্নী- কিছুই নেই আমার।
তোমার বন্ধুরা?
ঐ শব্দের অর্থ আমি কখনোই জানি নি।
তোমার দেশ?
জানি না কোন্ দ্রাঘিমায় তার অবস্থান।
সৌন্দর্য?
পারতাম বটে তাকে ভালবাসতে- দেবী তিনি অমরা।
কাঞ্চন?
ঘৃণা করি কাঞ্চন, যেমন তোমরা ঘৃণা করো ঈশ্বরকে।
বলো তবে, অদ্ভুত অচেনা মানুষ, কী ভালবাসো তুমি?
আমি ভালবাসি মেঘ,…..চলিষ্ণু মেঘ…….
উঁচুতে……..ঐ উঁচুতে……..
আমি ভালবাসি আশ্চর্য মেঘদল।”

মূল কবিটি এখানে তুলে ধরা হলো --

“The Stranger
Charles Baudelaire

Tell me, enigmatic man, whom do you love beet?
Your father, your mother, your sister, or your brother?
"I have neither father, nor mother, nor sister, nor brother."
Your friends, then?
"You use a word that until now has had no meaning for me."
Your country?
"I am ignorant of the latitude in which it is situated."
Then Beauty?
"Her I would love willingly, goddess and immortal."
Gold?
"I hate it as you hate your God."
What, then, extraordinary stranger, do you love?
"I love the clouds--the clouds that pass--yonder--the marvellous clouds.”

এই কবিতাটি নাড়াচাড়া করছিলাম গত কয়েকদিন ধরে। এ সময় যে দু’টি অভিজ্ঞতা হলো তারই আলোকে আমার কিছু কথা।
প্রথম অভিজ্ঞতা: যে কোনো ভাষায় লেখার অনুবাদকে বুঝতে হলে অরিজিনাল লেখাটি পড়ে দেখা আবশ্যক কারণ অনুবাদ যত সুন্দরই হোক তাতে অনুভূতির ফাঁক থাকবেই।
দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা: আলোচ্য কবিতার মর্ম সঠিক ভাবে বুঝার খাতিরে লেখকের জীবন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন যা কবিতাকে ভালো করে বুঝবার জন্য সহায়ক হয়।
আদি কবিতা এবং কবিকে জানা, দু’টি বিষয়ই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আমার মতে এই কবিতার কথামালাকে দুই দিক থেকে ভাবা যেতে পারে।
প্রথমত ব্যক্তি কবিকে নিয়ে আর দ্বিতীয়ত কবি দর্শনকে নিয়ে।
যদি ব্যক্তি কবিকে নিয়ে কথা বলি তাহলে বলবো, কবি জীবন আয়নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের কাছে নিজেকে প্রশ্ন করছেন আর উত্তরও দিয়েছেন তিনি নিজেই।
কবির হয়তো নিজের কাছে নিজেকে আগুন্তক মনে করেছেন।
এমনো হতে পারে তিনি কাউকে জানতে চেয়ে এ ধরণের কিছু জবাব পেয়েছিলেন যাকে তিনি কাব্যে রুপায়ন করেছেন কিংবা
এমনো হতে পারে কখনো কেউ কবির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন তারই উত্তর তিনি দিয়েছেন কবিতার ভাষায়।
কবি শার্ল বোদলেয়ার এর ব্যক্তি জীবনের চিত্র দেখে আমার মনে হয়েছে এই কয়েটা লাইনের মধ্যেই তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন যেখানে জুড়ে আছে কিছু হতাশা আর না পাওয়া।
হয়তো বা ছিলো না তাঁর ভ্রাতা অথবা ভগ্নী, পিতা হারিয়েছিলেন শৈশবে আর মাতাকেও পান নি একান্ত নিজের মত করে। সমস্যা জর্জরিত জীবনে সঠিক অর্থে বন্ধু বলেও খুঁজে পান নি কাউকে হয়তো বা, জীবনের জন্য যেতে হয়েছে জন্মস্থান ছেড়ে ভিন্ন দেশে, ছাড়তে হয়েছে নিজ দেশের ভৌগলিক সীমানা।
প্রেয়সী বলতে যে স্বপ্ন ছিলো সেখানেও হয়তো ছিলো অন্য রকম চাওয়া যা তিনি পান নি। অভাব অনটনে এক সময় ধনসম্পদকেও ঘৃণা করে মানুষ, বিশ্বাসে ধরে ফাটল, কবিও তার ব্যতিক্রম ছিলেন বলে মনে হয় না।
খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে চলমান মেঘের দিকে তাকিয়ে তিনি উপভোগ করেছেন বিশাল একাকীত্ব। এই সব কথা নিয়েই কবি গেঁথেছেন তাঁর কাব্যমালা ।
কবিতাটি যদি কবি দর্শনের দিক থেকে চিন্তা করি সেক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং সরল। মানুষ তার নিজের কাছে সবচেয়ে বেশি অচেনা।
একজন শাশ্বত কবি কোনো বন্ধনেই নিজেকে বাঁধতে পারেন না বা বাঁধতে চান না। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, ভৌগলিক সীমারেখা, একক প্রেম, সম্পদ সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি হন কাব্য-সাধক । অসীম খোলা আকাশের চঞ্চল মেঘের মত ছুটে বেড়ান, ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলমান মেঘের মত বন্ধনহীন স্বাধীনতাকে ভালোবাসেন সেই খেয়ালী মানুষটি আমরা যাকে কবি নামে আখ্যায়িত করি।
খালি চোখে দেখলে এটি একটি সাধারণ কবিতা মনে হবে কিন্তু কবিতার অন্তরাত্মায় প্রবেশ করলে এ যে এক গভীর সমুদ্র।
সর্বোপরি, পাঠক হিসাবে কোনো লেখার অন্তরালের ঘটনা সঠিক ভাবে নির্ধারণ করতে আমরা সক্ষম নাও হতে পারি। আমরা যা করি সেটা নিতান্তই অনুমান।
একমাত্র একজন কবি বা লেখকই জানেন তাঁর লেখার প্রকৃত দৃশ্যপট।
একথা স্বীকার করতেই হয় এক কবি হৃদয় শার্ল বোদলেয়ার এর লেখা এই কবিতাটির মাঝে বিলীন হবেনই।
(যার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে এই কবিতা নিয়ে ভাবতে হলো তিনি লেখক খলিল মাহ্‌মুদ, কৃতজ্ঞতা তাঁর কাছে)

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৩
৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×