somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাম্পত্য কলহ

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০-৩০ বছর বা এর বেশি বছর ধরে সংসার করার পরও তুচ্ছ ঘটনায় হুট করেই ভেঙ্গে যায় পরিবার। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে দাম্পত্য কলহ, যা বর্তমান সময়ে ক্যান্সারের আকার ধারণ করে আমাদের গোটা সমাজকে আক্রমণ করছে। আমরা একটি বারের জন্যও চিন্তা করি না, দাম্পত্য কলহে আমাদের সন্তানদের ওপর কি রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।


প্রতিটি মানুষই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বোধের অধিকারী। বিবাহিত জীবন যেহেতু নারী-পুরুষের সৃষ্ট, সেহেতু সেখানে মতের অমিল, দ্বন্দ্ব, ঝগড়াঝাটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সময়ে আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করে থাকি যে, নারী-পুরুষ একটি পারিবারিক পরিবেশে আবদ্ধ থেকেও যে যার মতো জীবনকে অতিবাহিত করছে। আর তখনই পরিবারের মধ্যে একটি অদৃশ্য দেওয়ালের সৃষ্টি হয়, যা পরিবার ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এমন কোনো বিবাহিত জীবন খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে মনোমালিন্য, কথা কাটাকাটি কিংবা ঝগড়াঝাটি হয় না। এ কথা সত্যি যে, আমরা কমবেশি সবাই শান্তিপ্রিয়। তাই সহজেই ঝগড়া নামক অশান্তিতে পতিত হতে চাই না। তারপরও হয়তো কখনো কখনো ঝগড়ায় লিপ্ত হতে হয়। সদিচ্ছা, একটু চেষ্টা আর নিজেদের ত্যাগ স্বীকার করার মনোবলের কারণে আমরা সাংসারিক জীবনে এমন অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা এড়িয়ে যেতে পারি।

কারণ কি?

দাম্পত্য কলহ কি কারণে সৃষ্ট, এই বিষয়টি অনেকেরই বোধগম্য নয়। নারী-পুরুষের মাঝে ঝগড়াঝাটি বা দ্বন্দ্ব কোনো না কোনো কারণে সংগঠিত হয়ে থাকে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণ তুচ্ছ বা বিরাট যা-ই হোক না কেন সঠিক কারণগুলো অনুসন্ধান করে আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর সমাধান করা সম্ভব। মনের মধ্যে কোনো রাগ বা ক্ষোভ পুষে না রেখে প্রকাশ করুন। মনের মাঝে যদি রাগটা পুষে রাখেন তবে এর অনেক ডালপালা গজাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ক্ষুদ্র রাগটাই বিশাল আকারে পরিণত হয়। তাই মনের মাঝে কোনো কারণে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি ক্ষোভ জন্মালে তার কারণ বা প্রকৃতি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। তাহলে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। আর সবক্ষেত্রেই যে রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করেই কথা বলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ঠান্ডা মাথায় যে কোনো কিছু আলোচনাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পন্থ্থা। দু’জনের মধ্যে একজন যদি রেগে যান, তাহলে অন্যজন নীরব থাকুন। রেগে গেলে মানুষ তার নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে সময় যদি প্রতিটি কথার উত্তর দেয়া হয় তবে তা রাগের আগুনে ‘পেট্রোল ঢালার’ মতোই কাজ করে। রাগ পড়ে গেলে সে তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। তখন নিজেই বুঝতে পারবে, যে কারণে বা ভুল বোঝাবুঝিতে সে এতো রাগারাগি করলো এতোটা না করলেও চলতো। এতোকিছু করা সম্ভব হয়েছে আপনার নীরবতার কারণে। কাজেই নীরব থেকে পরে সঙ্গীকে বোঝান।

ক্ষমা চান বা সরি বলুন

মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। সমগ্র প্রাণীকুল একমাত্র মানুষই মাত্রাতিরিক্ত ভুল করে থাকে। ভুলের মাত্রা যেমনই হোক না কেন, ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করতে পারা এমন একটি গুণ যার দ্বারা দাম্পত্য জীবনের অনেক ক্ষত উপশম হয়। ক্ষমা চাইলেই কেউ ছোট হয়ে যায় না বরং ক্ষমা চাওয়ার কারণে আপনার পরিবারে শান্তি বিরাজ করবে এবং আপনি এগিয়ে যাবেন। ক্ষমা চাওয়াটাই হচ্ছে আপনি যে অনুতপ্ত সেটা প্রকাশ করা এবং সেই সঙ্গেী নিজের ভুল স্বীকার করা, আর এমন করলে আপনার সঙ্গী-সঙ্গিনী আপনাকে অবশ্যই ক্ষমা করবে। তবে মনে রাখতে হবে, সেই ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে যথেষ্ট আন্তরিকতা আর সহমর্মিতা থাকতে হবে। প্রাণহীন ক্ষমা চাওয়ার কারণে দ্বন্দ্বের কোনো সমাধান না হয়ে বরং তা আরো জটিল আকার ধারণ করে।

কি করবেন

দাম্পত্য আলাপচারিতায় নিচের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখুন। তাতে করে অনেক বিরূপ পরিস্থিতি এড়াতে পারবেন।

* মন পরিষকার করে পার্টনারের কাছে ঠান্ডা মাথায় আপনার নিজের ভাষায় অভিযোগ প্রকাশ করুন।

*ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে আপনার অনুভূতির পরিপূর্ণ প্রকাশ সুন্দরভাবে ঘটান।

* দুই পক্ষকেই কথা বলার সুযোগ দেয়া উচিত।

* ধৈর্য ধরুন এবং অপেক্ষা করুন।

* নিজেই নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হোন।

কি কি করবেন না বা এড়িয়ে চলবেন

* সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ক্ষমা চাওয়ার প্রত্যাশায় বসে থাকবেন না।

* কোনো খোঁচা বা উত্তপ্তকর কথা ব্যবহার করবেন না।

* দাম্পত্য কলহের মাঝে অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা তুলে আনবেন না।

* নিজেদের সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষকে টেনে কথা বলবেন না।

* কোনো সপর্শকাতর বিষয় নিয়ে আক্রমণ করবেন না।

* সব ভুল সঙ্গী বা সঙ্গিনীর-এমন ভাব দেখাবেন না।

২০-৩০ বছর বা এর বেশি বছর ধরে সংসার করার পরও তুচ্ছ ঘটনায় হুট করেই ভেঙ্গে যায় পরিবার। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে দাম্পত্য কলহ, যা বর্তমান সময়ে ক্যান্সারের আকার ধারণ করে আমাদের গোটা সমাজকে আক্রমণ করছে। আমরা একটি বারের জন্যও চিন্তা করি না, দাম্পত্য কলহে আমাদের সন্তানদের ওপর কি রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই সমস্যার কারণে তারাই বেশি অশান্তিতে ভোগে।

তাই দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে চলুন। যদি নিজেদের মধ্যে কোনো সমস্যা থেকে থাকে তা সন্তানদের সামনে প্রকাশ না করে নিজেরাই নীরবে আলোচনা করুন এবং ত্যাগ স্বীকার করুন। দেখবেন আপনি যেমন শান্তি পাচ্ছেন, তেমনি আপনার সন্তানরাও সঠিক পথে নিজেকে পরিচালিত করতে পারছে।
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×