somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের আইরিন খান ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্র্যাকেটবন্দি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের শান্তির নিভু প্রদীপ
শামসুজ্জামান সিদ্দিকী শাহীন

এ দেশের বীর মানুষেরা অনেক পরিবর্তন এনেছেন। আলামত বলছে, খুব সহসা আবারো পরিবর্তন আসছে। প্রতিবারই ভাবি এবার কিছু একটা হবে। এরশাদের পতনের পর, খালেদা-হাসিনার আসা-যাওয়ার পর রাজপথে মানুষের কি উল্লাস দেখেছি। ফখরুদ্দীনের আগমনে তো ভেবেছিলাম হাতের মুঠোয় এসে গেল আকাশের ওই চাদটি। কিন্তু জনগণের প্রাপ্তি সর্বসাকুল্যে সেই মাকাল ফল, বারেবারে ঘুরে ফিরে স্কয়ার ওয়ানেই ফিরে আসা, বড় করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নতুন করে আবারো যাত্রা। ভালো কিছু তো পাওয়া দূরের কথা, মনে হয় আগের দিনগুলোই অন্তত এর চেয়ে শুভ ছিল। ভালো কিছু পাওয়ার জন্য, শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকি। কোনো একজন বাংলাদেশির ভালো কাজে গর্বে বুক ফুলে ওঠে, কান পেতে শুনি তার গৌরবের কথা।

বেশ পুলকিত হয়েছিলাম সিলেটের ছেলে ঢাকায় বৃটিশ হাই কমিশনার হয়ে আসায়। কিন্তু কেন যেন এসব আমাদের কপালে সয় না। আমাদের উদার ও নির্যাস ভালোবাসার পাপড়িতে না বসে তারা নিজেরাই নিজেদের ব্র্যাকেটবন্দি করে ফেলেন। ছোটবেলায় আম্মার নানির মুখে শুনতাম, ‘সব ভাতের দোষ। যাদেরকে খাওয়ায়ে পরিয়ে চোখ ফোটায়ে দেই, বছর না ঘুরতেই তারা অন্যের কীর্তন গায়।’ ইওরোপের সবচেয়ে বড় ভোকাল আমাদের অ্যামবাসাডরকে গোল টেবিলের বাইরে কয়জন ভালোবাসে তা বোধ করি এখন খুজতে হবে।

আমরা কেউ শ্বেত ভালুকের মুলুক থেকে ঘুরে এসে চেনা লোকদের নিয়ে পুরনো কথা নতুন করে আহামরি করে বলি, কেউবা শ্বেতী সেজে ঘরের মধ্যে ঢুকে ইদুরের মতো ধানের বস্তার কোনা থেকে খেয়ে খেয়ে সাবাড় করে দিই। কারণ প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সৌকর্যহীন বিড়াল তো আর জেগে নেই। সে তো এখন অযোগ্য ও বিশ্বাসহীনতার অপবাদ নিয়ে লম্বা ঘুম আর পালানোর পথ নিয়েই ব্যস্ত। গত এক বছরের পলিটিকাল সিডরে বিপর্যস্ত এক ক্লান্ত সৈনিক সে।

আমাদের মতো গরিব দেশের সমস্যা হলো বাইরের বড়লোক ও বড় মাথাওয়ালাদের ছবককে আমরা বড্ড পাত্তা দিই, আবার পল্টন ময়দানে গর্ব করে বলি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমরাই। অন্য কথায়, তাদেরকে বেশ সুযোগও করে দিই আমাদের নাড়ি নক্ষত্রের মধ্যে সুবিধামতো সময়ে ঢুকে পড়ে তা কেটে ছেটে ফেলার। আবার নিজেরাও সবার জন্য সমান আচরণ না করে অপরিপক্বতার পরিচয় দিই প্রায়ই।
আমাদের আজকের আলোচনা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অবিচার নিয়ে।
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের এক স্কুলে পড়াশোনা করতে টিনএজেই দেশ ছেড়েছিলেন বাংলাদেশের মেয়ে আইরিন খান। তারপর ইংল্যান্ড, আমেরিকায় পড়াশোনা শেষ করে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিস্টসে মানবাধিকার কর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৭৮ সালে। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি যে প্রথম হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা শফিক রেহমান ৮ জানুয়ারিতে লিখেছেন। গত বছরের নিরুত্তাপ রাজনীতি ও উত্তপ্ত পেট নিয়ে মাত্র ৩০টি বাক্যে তিনি দেশের মানুষের মনের সব কথাগুলো সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। মিসেস খানের সাবেক দেশে এবারের সফর নিয়ে এ কলামে মেজবাহউদ্দিন সাকিল খোলাখুলিভাবে চমৎকার একটি আর্টিকল লিখে কা কা না করার অনুরোধও করেছেন।

অসামান্য মেধাবী সিলেটি মেয়ের এবারের ভ্রমণটি সরকারিভাবে না হলেও তার বর্তমান সম্মানজনক পদে আসীন থাকায় মিডিয়াতে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। উল্লেখ্য, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ড. আতিউর রহমানের গড়া এনজিও ‘মানুষের জন্য’-র আমন্ত্রণে এসেছিলেন। যাহোক, আমরা সেদিকে নজর না দিয়ে এবার দেখি বাংলাদেশের প্রতি এ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি সময়ে সময়ে কেমন ব্যবহার করে।

১৯৭১-র মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবাধিকারের ঝা-াবহনকারী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বয়স ছিল ১০ বছরেরও বেশি। পাক বাহিনীর বর্বরতায় প্রকাশ্য সমর্থনদানকারী আমেরিকা ও বৃটেনের পদলেহী হয়ে একটি বিবৃতিও দিতে তাদের গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। দালাল আইনের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মুজিব সরকারকে চাপ দেয়নি? পুরনো দিনের কথা না হয় বাদ দিলাম, যদিও পত্রিকায় পড়ে মনে হয় তিনি এগুলো নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্ট ২০০৭’, যেখানে ২০০৬ সালের ঘটনাগুলো প্রতিফলিত হয়েছে, তাতেও বাংলাদেশের গোটা চিত্র তুলতে প্রকারান্তরে অবজ্ঞাই করা হয়েছে। রিপোর্টে ৩১ অক্টোবর রাজশাহীতে গণফোরামের সমাবেশে চারদলকে দায়ী করে হামলা, ১৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ছোট ছোট সিরিজ বোমা বর্ষণে ৮ জন আহত, এমপি আসাদুজ্জামান নূর ও সাবের হোসেন চৌধুরীর ওপর হামলার কথা উল্লেখ করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় না আনার কথা বলা হয়েছে। অথচ এ অল্প সময় (মাত্র ১৬ দিন)-এর মধ্যে আরেকটি মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-র রিপোর্ট অনুযায়ী ৫০ জন (যাদের মধ্যে ৩৯ জনই চারদলীয় জোটের)-র মৃত্যু ও ২৫০ জনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে এবং সর্বোপরি মানব ইতিহাসে সবচেয়ে অসভ্য, হিংস্র ঘটনা ২৮ অক্টোবর (যা বিবিসি ও সিএনএনসহ সব আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম খুনিদের ছবিসহ লাইভ সম্প্রচার করেছে) সৃষ্টি করা হয়, একই বছরের রিপোর্টে আশ্চর্যজনকভাবে এসবের উপস্থিতি দারুণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।

এ বছর ২৮ জানুয়ারি মিসেস খান তার খুব কাছের পত্রিকায় ‘বাংলাদেশে অধঃপতনের চক্র’ নামক একটি আর্টিকলে জরুরি অবস্থাকালীন বছর ২০০৭ সাল নিয়ে লিখেছেন ‘অবশ্যই শারীরিক নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি আগের তুলনায় নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে।’ অথচ, ১ জানুয়ারি দেশের একটি মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ উল্লেখ করেছে, ‘...২০০৭ সালের ১২ মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ১৮৪ জন নিহত হয়েছে। জেলহাজতে মারা গেছে ৮৭ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৫৯ জন এর মধ্যে ২৪৬ জনই শিশু। এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১৬১টি। ইনডিয়ার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ ১২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। অপহরণ করেছে ৯৮ জনকে, ৩ জন বাংলাদেশি নারী বিএসএফের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ১৯৮ জন বাংলাভাষী নাগরিককে পুশইন করা হয়েছে।

আমরা আরো লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশ সীমান্তে ইনডিয়ান বাহিনী নির্বিচারে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করলেও এ ব্যাপারে অ্যামনেস্টি বা সুশীল সমাজের দাবিদাররা নিশ্চুপ। অধিকার-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে ১২০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে অর্থাৎ মাসে ১০ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতি বছর এ হত্যাকা-ের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ৩৯১ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। অর্থাৎ গত পাচ বছরে গড়ে ৭৮ জনকে হত্যা করা হলেও ২০০৭ সালে তা ১২০ জনে দাড়িয়েছে। পুলিশ বলেছে সামগ্রিকভাবে অপরাধ আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ নাকি বেড়েছে।
উল্লেখ্য, চায়নার সঙ্গে সীমান্তরেখা থাকলেও বিএসএফের গুলি ওদিকে কিন্তু ফোটে না, শুধু হতভাগা বাংলাদেশিদের ধরে গুলি করতেই তারা ব্যস্ত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব নিয়ে কথা বলে না, ২৮ অক্টোবর টাইপের দিনগুলো নিয়ে দেশি মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালরা পর্যন্ত কথা বলেন না। কারণ, এর মধ্যে কেমন যেন অন্য রকম ফোবিয়া আছে, মৌলবাদীর তাড়ি মেশানো আছে। তাছাড়া দুই কুকুরের লড়াই বলে যারা আমাদের স্বাধীনতাকে অপমান করেছিল শুধু তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার মধ্যে আলাদা মজাও হয়তোবা রয়েছে। আইরিন খান কথা বললেন পুলিশ হেফাজতে আদিবাসী একজন চলেশ রিছিলের মৃত্যু ও কার্টুনিস্ট আরিফের মুক্তি নিয়ে, লিখলেন স্থানীয় পুলিশ ও র‌্যাব কর্তৃক একজন সাংবাদিকের নির্যাতনের কথা। এসব অবশ্যই নিন্দনীয়, সন্দেহ নেই। কিন্তু কেন যেন মিসেস খান নিজেকে ব্র্যাকেটবন্দি করে ফেলছেন, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পদের সম্মান রাখতে নিজের আগের একচোখা নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারছেন না, অন্য কথায় মৌলবাদীর ভূত বা বিষাক্ত কালনাগিনীর থাবা হয়তোবা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ।

অধঃপতনের চক্রে নিজেই পা দিয়েছেন। তিনি হয়তো পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলবেন এতো অল্প সময়ে একসঙ্গে এতো মানুষের লাশ ও অধিকার নিয়ে কথা বলা যায়? তাছাড়া আশপাশের মানুষজন যারা কি না দাওয়াত করে নিয়ে এলো তাদের জন্যও বা বলি কিভাবে? আমরা তাকে অনুরোধ করবো, ঠিক আছে সময় করে পরে বলবেন। সঙ্গে এও অনুরোধ করবো, শুধু দূর থেকে না বলে ঢাকায় এসে যেভাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঝেড়ে দিয়ে গেলেন, ঠিক সেভাবে না হলেও অন্তত মাঝারি সারির দু-একজন সাংবাদিক ডেকে ওয়াশিংটন বা লন্ডনে গিয়ে মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘনকারীদেরকে দুই কথা শুনিয়ে আসেন। আমরা আপনাকে নিয়ে আরো গর্ব করবো।

এবার একটু ধারণা নেয়ার চেষ্টা করে দেখি আন্তর্জাতিক পরিম-লে জন্ম থেকেই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আচরণ কেমন।
ইংলিশ আইনজীবী পিটার বেনেনসন (চবঃবৎ ইবহবহংড়হ) ১৯৬১ সালের জুলাইতে লন্ডনে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জন্ম দেন। বর্তমানের কাজের সঙ্গে আকাশ-পাতাল ফারাক থাকলেও প্রতিষ্ঠালগ্নে এটির উদ্দেশ্য ছিল মোটামুটি এরূপ, ‘আমরা হলাম পৃথিবীর চারদিককার সাধারণ মানুষ যারা মানবতা ও মানুষের অধিকার রক্ষায় বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। যে কোনো ব্যক্তির প্রতি ন্যায়বিচার, সুষম আচরণ, বাক-স্বাধীনতা ও সত্য যেখানে প্রত্যাখ্যাত আমরা সেখানে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে তৎপর।’
এর বর্তমান লোগোটি হলো, মোমবাতির আলো বা শান্তির দ্যুতি ছড়াতে একটি কাটাতার বা অন্যায় অবিচার বাধা দিচ্ছে। পিটারকে প্রতিষ্ঠানটি গড়তে ১৯৬০ সালের ১৯ নভেম্বরে তার ঐতিহাসিক লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড ভ্রমণই ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে। পর্টুগিজ দুই ছাত্রের মাতাল হওয়াকে কেন্দ্র করে সাত বছরের সাজা দিয়েছিলেন তৎকালীন আদালত। সে ঘটনাটিই তিনি পত্রিকায় পড়ছিলেন ভ্রমণরত অবস্থায় এবং ভাবছিলেন সহায়-সম্বলহীন মানুষের জন্য কিছু একটা করার। সমাজের নিগৃহীত, উপেক্ষিত মানুষকে নিয়ে বিখ্যাত আর্টিকল লিখলেন ‘দি ফরগোটেন প্রিজনার্স (ঞযব ঋড়ৎমড়ঃঃবহ চৎরংড়হবৎং)’ এবং এর এক বছরের কম সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করলেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সংক্ষেপে এ.আই।
শুরুটাই ছিল বিতর্কের। উল্লিখিত ভ্রমণটি নিজের পকেটের টাকায় করেছিলেন বলে পিটার যে দাবিটা করেছিলেন তা নিয়ে তার কাছের লোকেরাই প্রশ্ন তুলেছেন। আর বর্তমানে তাদের নানা কর্মকা-ে বিতর্ক ও দ্বৈত নীতির প্রতিবাদে এর প্রতি নিন্দা, শাখা-প্রশাখা গজিয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে এ.আইয়ের ললাটে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির ২৭ বছরের মাথায় কালিমা একে দিয়েছে অথবা দিচ্ছে প্রতিদিন।

বলে রাখা ভালো, পাশ্চাত্যের অবিচারের কদাচিৎ প্রতিবাদ করলে অ্যামনেস্টিকে বলা হয় ‘এন্টি ওয়েস্টার্ন’ আর পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই বিশ্বাস করে এটিকে ‘প্রো ওয়েস্টার্ন’ বলে। এ প্রতিষ্ঠানটির আচরণগত পার্থক্য খোলামেলাভাবে চোখে পড়বে যখন কোনো এক পক্ষের নামের সঙ্গে ‘মুসলিম’ শব্দটি সংযুক্ত থাকে। ইরাক, আফগানিস্তান দখল, কাশ্মিরি ও প্যালেস্টিনিয়ানদের ষাট বছরের স্বাধিকার আন্দোলন, চেচেন, বলকানদের মুক্তি আন্দোলন, সুদানের দারফুর সমস্যা, মরোদের আন্দোলন ইত্যাদিতে এ.আইয়ের জনপ্রিয় স্লোগান ‘হিউম্যান রাইট নাউ (ঐঁসধহ জরমযঃ ঘড়)ি কেন যেন থেমে যায়।
এ দুমুখো নীতির বিরুদ্ধে সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী আর্টিকল লেখেন এবং কথা বলেন লন্ডনের ইকনমিস্ট, আগ্রাসীবিরোধী, অ্যামনেস্টির এক সময়ের কট্টর সমর্থক, লেখক পল দ্যা রোইজ (চধঁষ উব জড়ড়রল)। অনলাইন ম্যাগাজিন কাউন্টার পানচ (আলেকজান্ডার ককবার্ন ও জেফ্রি সেন্ট ক্লেয়ার সম্পাদিত)-এ একাধিক আর্টিকল লিখে এ.আইয়ের রিপোর্টে ব্যবহৃত চতুর শব্দাবলীর চুলচেরা বিশ্লেষণের পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদী ধনিক শ্রেণী ও মজলুম মুসলিম জাতির প্রতি আচরণের তুলনামূলক চিত্র পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন।

তিনি লিখেছেন, ২০০২ সালের ২ অক্টোবর ইসরেলি ট্যাংক প্যালেস্টাইনের খান ইউনুস থেকে প্রত্যাহারের পর পরই রাস্তায় প্রচ- ভিড়ের মধ্যে বোমা বর্ষণ করে ইসরেলি হেলিকপ্টার। এমনকি আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে সঙ্গে একটি মিসাইল ছুড়ে দেয় হসপিটালেও। মুহূর্তেই প্রাণ যায় ১৪ জনের, আহত হন ৮০ জন প্যালেস্টিনিয়ান। ‘মহা সাফল্য (গ্রেট সাকসেস)’ বলে আখ্যায়িত করলেন শ্যারন। কেউ হয়তো সঙ্গত কারণেই আশা করছিল এ.আই কিছু বলবে। কিন্তু এ.আইর সমস্যা হলো এ রকম সময়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বেমালুম চেপে যাওয়া ভূখ-ের ওপর ঘটে যাওয়া নিদারুণ বড় ঘটনাগুলো না বোঝার ভান করা।


পল দি রোইজ তার বিখ্যাত দুটি প্রবন্ধ (অসহবংঃু ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ্ ওংৎধবষ: ঝধু রঃ রংহ'ঃ ংড় এবং অসহবংঃু ওহঃবৎহধঃরড়হধষ: অ ঋধষংব ইবধপড়হ?)-এ আরো লিখেছেন, এ.আইয়ের রিপোর্টিংয়ের ভাষা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার শুরু থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি খুব কমবারই ইসরেলি সহিংসতার বেলায় ‘নিন্দা (ঈড়হফবসহ)' শব্দটি উচ্চারিত করেছে। অথচ প্যালেস্টিনিয়ানদের স্বাধিকার আন্দোলনের লড়াকুদের প্রতি এটির ব্যবহারে এ.আই কখনো কার্পণ্য করেনি বা করছেও না। ভীতপ্রদ (যড়ৎৎরভরপ), বীভৎস (ংযড়পশরহম), ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা (ফবষরনবৎধঃবষু শরষষবফ) ইত্যাদি পরিভাষাগুলো প্যালেস্টিনিয়ানদের জন্য স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করে রেখেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এমনকি তাদের দিকে তাক করে এ রিপোর্টে মাত্র এক প্যারায় তিনবার ‘যুদ্ধ অপরাধ’ শব্দ ব্যবহারের নজিরও স্থাপন করেছে এ.আই।

পল প্রশ্ন করে লিখেছেন, যারা শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নীরিহ মানুষদের হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহ এমন কোনো কুকর্ম নেই যা করে না, সেই ইসরেলিদের প্রতি আমাদের মানবাধিকার সংগঠনের আচরণ এমন কেন? দখলদারদের প্রতি এ.আইয়ের অনুযোগের সঙ্গে আহ্বানগুলো থাকে এমন, ইসরেল নিয়ম-কানুন মানছে না, তাদেরকে ভালো আচরণ করতে হবে, মানবাধিকারের প্রতি তাদের সম্মান দেখানো উচিত (ঃড় নৎবধপয ষবমধষ ঢ়ৎড়ারংরড়হং, ঃড় নৎবধপয ংঃধহফধৎফং, ঃড় নব ফরংঢ়ৎড়ঢ়ড়ৎঃরড়হধঃব ড়ৎ বষরপরঃ পধষষং ঃড় ৎবংঢ়বপঃ যঁসধহ ৎরমযঃং) ইত্যাদি। এসব দেখে মনে হয় বিশ্বব্যাপী এ.আইয়ের মোমবাতির শান্তির আলো ছড়াতে শুধু মুসলমানরাই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
এভাবে কোনো একটি জাতিকে টার্গেট করে সে জাতির ভেতর থেকেই দেশে দেশে মেকি অতি গণতন্ত্রী ও অনুগত কিছু পুতুল নিয়ে মানব বিধ্বংসী খেলায় মেতে উঠলে মোমবাতির আলোয় বিশ্বে কখনো শান্তির দ্যুতি ছড়াবে না। কিছু বিকৃত চিন্তার মানুষের কর্মকা-ের দায়ভার গোটা গোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দিলে নিজের সংগঠনের উদ্দেশ্যের সঙ্গেই প্রতারণা করা হবে। আর সর্বজনীনতার কথা বলে মূলত জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি ও নিরপেক্ষতার ভান করে বিশ্বের সচেতন সম্প্রদায়কে বোকা বানানো কোনো সময়ই সম্ভব হবে না বরং বিভেদ-বিভক্তি এতে করে বাড়তেই থাকবে।


[email protected]


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×