শ্রীলংকার হোটেল গুলোতে ভাত খাওয়া যায় অনেকটাই বুফে সিস্টেমে। বেশীর ভাগ হোটেলেই (মধ্যম মানের অবশ্যই) ভাতের সাথে তিন পদের সবজি আর সাথে যে কোন একটা মেইন কারি (চিকেন/বিফ/ফিশ) পাওয়া যায়। তো, এই সবজি গুলো আবার ছোট ছোট বাটিতে করে পরিবেশন করা হয়। সাধারণত , সবজি হিসেবে থাকে:

১.বেগুন আর কাচাকলার একটা ভাজি,কাচাকলা ফ্রাই করে অনেক শক্ত করা হয় (এইটা আমার অনেক মজা লাগে )
২.নারিকেলের দুধে মটরশুটি আর আলু দিয়ে একটা তরকারী (একটু ঝোল ঝোল তবে খারাপ না )
৩.নারিকেলের কুচিতে শুকনা মরিচের গুড়া, পিয়াজকুচি আর খানিকটা শুটকী দিয়ে তৈরী সাম্বার (অত ভালো লাগেনা )
৪.আম/আমড়া জাল দিয়ে চাটনী (এটাও অনেক মজার )

আরও অনেক ধরনের সবজি আছে তবে এগুলোই বেশী দেখা যায়। মজার ব্যাপার হলো, আপনাকে বিফ/চিকেন/ফিশ কারি একবার দিলেও ভাত আর এই সবজি গুলো যতবার ইচ্ছে নিতে পারবেন । একারণে বিল একটুও বেশী হবেনা। খাবারের বিল অনেকটা প্যাকেজের মত। যেমন:
বিফ-কারি এন্ড রাইস ৯০ রুপি
ফিশ-কারি এন্ড রাইস ৯০ রুপি
চিকেন-কারি এন্ড রাইস ১২০ রুপি
যাইহোক, বিফ/ফিশ/চিকেনের চেয়ে ঐ সবজি গুলোই আমার অনেক মজা লাগে, তাই সবজি বার বার চেয়ে চেয়ে তিন প্লেট ভাত খেয়ে ফেলি (যদিও বেশীর ভাগ শ্রীলংকানদেরকে একবার যেটুকু দেয় ঐটুকুই নস্ট করতে দেখি )।

একবার অর্ডার দিলাম রাইস এন্ড কারি। বিফ/চিকেন কিছু না বলাতে ওরা ভাত-সবজির সাথে বিফ, চিকেন, ফিশ কারি, ফ্রাইড ফিশ, ফ্রাইড চিকেন নিয়ে এসেছিল। মানে সব কিছু সামনে রেখে লোভ দেখানো আর কি ।



আনুরাধাপুরায় বেড়াতে যাওয়ার সময় একটা হোটেলে থেমে পরটার অর্ডার দিতেই এতগুলা আইটেম সামনে এনে রাখে (চিকেন ডেভিল, চিংড়ী, আর বিফ)। আমরা অবশ্য ওগুলো টাচও করিনাই । শুধু গরুর মাংশের ঝোল দিয়ে পরটা খেয়েছিলাম। অবশ্য পরটা ছিড়তে যদি কারও কষ্ট লাগে তাহলে তারও ব্যাবস্থা আছে।



বললেই পরটা গুলো ছিড়ে ঝোল দিয়ে মাখিয়ে দিবে (এটা অবশ্য মাদাম পিটিয়ার একটা হোটেলে)।



আশরাফিয়া হোটেলে প্রথম প্রথম ভাতের মত বুরিয়ানীও বুফে সিস্টেমে খেতাম। বুরিয়ানীর (বিরিয়ানীকে ওরা বুরিয়ানীই বলে) সাথে দেয়া ওনিয়ন উইথ হট সস ইচ্ছে মত নিতাম, এক্সট্রা রাইস নিতাম। বুরিয়ানীর সাথে আবার আনারসের স্লাইসও দিত। কিন্তু কয়েকমাস এভাবে খাওয়ার পরে, (খুব সম্ভবত আমাদের জালায় আর থাকতে না পেরে ) ওরা এক্সট্রা রাইসের দাম রাখা শুরু করল ।



একবার এক শ্রীলংকান বন্ধুর সাথে হোটেলে ঢুকে হালকা নাস্তা করব, তো ও অর্ডার দেয়ার সময় বলল শর্টিজ। পরে সিংগারা/সমুচার মত এসব খাবার প্লেট ভর্তি করে নিয়ে এল। কোনটার ভিতরে অবশ্য মাছও ছিল । এর মধ্যে যতগুলো ইচ্ছে খান কোন সমস্যা নাই। পরে ওরা বাকীগুলো গুনে বিল রাখবে ।

দুঃখের ব্যাপার হলো যেগুলো বাকী রইল, ঐগুলাই আবার আরেকজনের সামনে দেয়া হবে । যাই হোক, আরেকদিন অন্য এক হোটেলে গিয়ে দেয়ালে টানানো খাবারের তালিকা দেখে জানলাম যে, ঐগুলা আসলে শর্ট ইটস্ (short eats) ।

এদেশে অবশ্য নাস্তা হিসেবে আরও কিছু খাবারের প্রচলন আছে(ছবি দিতে পারলামনা বলে দুঃখিত)। যেমন:
কত্তু - ডিম, রুটি, মুরগীর তরকারী, আরো অনেক কিছু একসাথে নুডুসলসের মত ঝুরি ঝুরি করে মাখানো হয়
হোপারস- অনেকটা চিতই পিঠার মত তবে অনেক পাতলা
এগ হোপারস- হোপারসের উপর একটা ডিম ভেংগে ছেড়ে দেয়া হয়।

বাইরের খাবার যারা পছন্দ করেন না, তাদের জন্য এবার কিছু ঘরোয়া খাবার



আমার রান্না করা ফ্রাইড রাইস উইথ ডেভিল চিকেন । ঐদিন বাসায় একা ছিলাম। একদম একা, কারও সাহায্য ছাড়াই রান্না শেষ করতে ১ঘন্টা ১৫ মিনিট লাগলো



চিকেন উইথ ক্যাপসিকাম এন্ড ওনিয়ন, এটা অবশ্য তেরেসার (আমাদের হাউসমেইড) রান্না করা



সালাদটা একটু কষ্ট করে মাখিয়ে নিন (মাখানোর আগেই দেখতে ভালো দেখচ্ছিল তো, তাই...)



বাসায় করা বারবিকিউ চিকেন । সুপার শপে একটা মশলা পাওয়া যায়। ঐটার সাথে দই আর লেবু দিয়ে মুরগী মাখিয়ে খানিকক্ষণ রেখে দিয়ে পরে খালি পোড়ান আর খান



সবশেষে একটু ডেজার্ট না হলে কি আর জমে? তাই একটু কাস্টার্ড উইথ ফ্রুট এন্ড নাট ফ্লেভার্ড আইসক্রীম


একটি খেকুপাগল পরিবেশনা