somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~মহাজনের নাউ~

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহ্‌ আব্দুল করিমের সাথে পরিচয় আসলে হাবীবের দুটি এলবাম “কৃষ্ণ” আর “মায়া” র মাধ্যমে, অস্বীকার করবো না। হয়তো এই দুই এলবাম রিলিজ না হলে এখন পর্যন্ত আমার মতন অনেক মানুষই চিনতেন না বাউল সম্রাট শাহ্‌ আব্দুল করিমকে। সেই তখন থেকে চিনতে পারলেও কোন এক সময়ে এসে আবার প্রায় ভুলতে বসি। যখন প্রায় ভুলেই বসেছিলাম তখনই শাহ্‌ আব্দুল করিম অসুস্থ হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বেশ অনেক শিল্পী মিলেই নতুন এক এলবাম বাজারে আনে। আনুশেহ, বাপ্পা মজুমদার সহ আরো অনেকেই ছিলেন সেই এলবামের সঙ্গীতায়োজনে। আবারো একবার ধাক্কা খাবার মতই ফিরে আসা ভাটির গানে, মাটির গানে। এর পর থেকেই আসলে এখন পর্যন্ত চলছেই।

এই তো গেল শুধু আমার কথা। তারপর খুজতে থাকি যতটা সম্ভব গান জোগাড় করার উদ্দেশ্যে। খুজতে খুজতে পরিচয় হয় “ভাটির পুরুষ” প্রামাণ্য চিত্রের সাথে যার পরিচালনা থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল কিছুর অবদান শাকুর মজিদ স্যারের। শাকুর মজিদ স্যারের নির্মিত “ভাটির পুরুষ” তথ্য চিত্রটি যারা দেখেননি, শুধু গানই শুনেছেন আব্দুল করিমের তারা নতুন করে আবষ্কার করবেন শাহ্ আব্দুল করিমকে। পুরো তথ্যচিত্রে তিনি গানের সাথে সাথে নিজের কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানে কোন কৃত্রিমতা ছিল না। তথ্য চিত্রের নির্মাণকালে তিনি সুস্থই ছিলেন, তাই কথা ও গান গুলো বেশ পরিস্কার ভাবেই মনে দাগ কাটে। তথ্য চিত্রে নবীন শিল্পীদের গায়কী আর শাহ্ আব্দুল করিমের গায়কির মাঝে পার্থক্য দেখতে পাবেন সবাই। কিছু অংশে সঞ্জীব দা আর শাহ্ আব্দুল করিম দুই জনেই একই গান গাইছে কিন্তু ভিন্ন ঢঙে তাও বেশ উপভোগ করার মতই। গায়কির ঢঙ বলতে কেউ গানকে নষ্ট করা বুঝবেন না। কারণ একেক জন মানুষের গান গাওয়ার ধরণ এক এক রকমের। সেইটাই গায়কি। তথ্যচিত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার এইটাই।

“ভাটির পুরুষ” দেখার পর পরেই জানতে পারি এই একই মানুষের রচিত নাটকও রয়েছে “মহাজনের নাউ” নামে। তারপর থেকেই খোজ করতে থাকি সময় সুযোগের সাথে কখন তা দেখার সুযোগ হয়। অবশেষে “মহাজনের নাউ” এর ৮০ তম প্রদর্শনী দেখার সৌভাগ্য হয় শিলপকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল ফ্লোরে। অসাধারণ কিছু গান আর ছন্দময় ডায়লগের মাধ্যমে সাজানো পুরো নাটক। সুবচন নাট্য সংসদের মঞ্চায়নে সুদীপ চক্রবর্তীর পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় “মহাজনের নাউ” এর পুরো অংশ জুরেই উপভোগ করার মতন। শুরু হওয়ার পর শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কত সময় যায় খেয়াল করার সুযোগ হয় নি। যাদের জানা নেই বা দেখার সুযোগ হয়নি কখনো নাটকটি, তাদের সকলকে অনুরোধ করবো আরেকবার “ভাটির পুরুষ” এর মতই নিরাশ করবে না “মহাজনের নাউ”।


শাহ্ আব্দুল করিমের জীবনের বড় একটা অংশ জুরে রয়েছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। যাকে তিনি “সরলা” নামেই ডাকতেন। তার রচনায়ও আমরা তার প্রভাব দেখতে পাই।

“সরল তুমি শান্ত তুমি নূরের পুতুলা
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা।”


বাংলার বাউলদের যদি কোন ভাবে আলাদা করতে চায় কেউ তবে অনায়েসে দুইটি ভাবে আলাদা করা যায়। একদল বাউল শুধুই দেহতত্ত্ব আর মানব ধর্মের বিশ্বাসী। যাদের বিভিন্ন গানে আমরা শুধুই মানব সেবা আর নিজেকে অন্যের তরে বিলিয়ে দেয়ার কথাই শুনতে পাই। আর এক দল শুধু দেহতত্ত্বই নয় বরং প্রেমের কবিতা আর গানের প্রতিই নিজেদের সৃষ্টির বেশিরভাগ অংশকে ব্যাবহার করেছেন। শাহ্ আব্দুল করিম দ্বিতীয় ধারার বাউল। বাউলদের প্রকারভেদে শাহ্ আব্দুল করিমকে দ্বিতীয় ঘরণায় ফেলার কারণ তিনি নিজেই “ভাটির পুরুষ” প্রামাণ্য চিত্রে বলেছেন তিনি “নারী ভক্ত” মানুষ। তাই তার গান গুলো মানুষের কাছে এত সহজেই পৌছে যায়। প্রকৃতিগত ভাবেই মানুষ তার বিপরীতলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়। শাহ্ আব্দুল করিমও তার ব্যাতিক্রম ছিলেন না। তাই বার বার তার গানের মাধ্যমে তার প্রেম, ভালবাসা এবং বিচ্ছেদ ফুতে উঠেছে খুব সহজ সরল ভাবেই। এই ধারণাটুকু ছিল আমার প্রাথমিক ধারণা শাহ্‌ আব্দুল করিম সম্পর্কে। কিন্তু ধীরে ধীরে যতই শুনতে থাকি ধারণা পালটাতে থাকে। শুধু এক ঘরণায় তাকে আটকে রাখার মতন বোকামীই করেছিলাম আমি। বাউল সম্প্রদায়ের মাঝে এক দল শুধুই দেহতত্ত্ব নিয়ে কাজ করে। কিন্তু শাহ্‌ আব্দুল করিমকে কোন এক জায়গায় আটকে রাখাটা বোকামিই।

মঞ্চ নাটকের সবচাইতে আকর্ষণিয় অংশ বোধকরি ছিল সরলার সাথে আব্দুল করিমের যে টুকু অংশ তার পুরোটাই। সরলা চরিত্রে যিনি অভিনয়ে ছিলেন তিনি নিজেকে হয়তো সেই স্থানেই কল্পনা করে অভিনয় করছিলেন যেই কারণেই এত সাবলীলতা। এছাড়াও প্রতিটি বয়সে আব্দুল করিমকে যারা আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ধরেছেন তাদের কেউই কারো চেয়ে কম ছিলেন না। আর সবচেয়ে ভাললাগা ছিল অনেক গুলো গান যার কথা পড়া ছিল কিন্তু শোনার সুযোগ হয়নি আগে কখনো এমন কিছু গান শোনার সৌভাগ্য হয় এই নাটকেরই কল্যাণে।

ভাটি অঞ্চলের মানুষ বলে তার অনেক অনেক গানে নৌকাকে তিনি ব্যাবহার করেছেন দেহের রূপকার্থে। নিজেকে তিনি ভেবেছিলেন কোন এক মহাজনের কাছ থেকে ধার পাওয়া এক নৌকা, যার মালিক তিনি নন। শুধু মাত্র সঠিক ভাবে চালিয়ে কোন এক “সোনারগাঁয়ে” পৌছে দেয়ার দায়িত্ব তার। জীবনের সায়াহ্নে এসে তার নৌকা কোন গাঁয়ে ভিরেছে তা কেবল মহাজনই জানেন। মূলত শাহয়াব্দুল করিমের জীবনের জটিলতা, সংকট এবং তার থেকে উত্তরণের বিষয়গুলো নিয়েই সাজানো এই নাটক। তার সাথে উঠে এসেছে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তার বোধ এবং দর্শন। নাটকটির নামকরণ এই কারণেই “মহাজনের নাউ”। নাটকটি লেখার জন্যে লেখক শাহ আব্দুল করিমের লেখা “আত্মস্মৃতি” এবং তার ভাগনের লেখা “স্মমৃতিকথা” থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সময় ভাল কেটেছে আমাদের। আশা করি যারা দেখবেন তাদেরও খারাপ লাগবে না। আমার মাথায় এখনো শেষ গানটি বাজছে

“তুমি সুজন কান্ডারী নৌকার সাবধানে চালাও
মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুর পঙ্খী নাউ”


যারা "ভাটির পুরুষ" দেখেন নি তারা আগের পোষ্টটি দেখতে পারেন। :)

~ভাটির পুরুষ {বাউল সম্রাট শাহ্‌ আব্দুল করিম}~ A documentary By Shakur Mazid
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×