somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাগলিঙ্গম

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাম : নাগলিঙ্গম বা হাতি জোলাপ
বৈজ্ঞানিক নাম: Couroupita Guianensis
ইংরেজী নাম : Cannonball Tree
ছবি তোলার স্থান : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বটানিক্যাল গার্ডেন, কলকাতা, ভারত।
তারিখ : ২৩/০৫/২০১৫ ইং



নাগলিঙ্গম এক প্রকার বিশাল বৃক্ষ যার ফুলের নাম নাগলিঙ্গম ফুল। নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। এই গাছে ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এগুলি দেখতে কামানের গোলার মত বলে এদের ইংরেজী নাম ক্যানন বল গাছ। আবার এই ফল গুলি হাতির খুবই প্রিয় খাবার বলে এই অঞ্চলে এর অন্য নাম হাতির জোলাপ গাছ।

নাগলিঙ্গম গাছ ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮ থেকে ৩১ সেন্টি মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং কয়েকদিনের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজায়।

শোনা যায়, নাগলিঙ্গম গাছে যখন ফুল ফোটে তখন ফুল হতে অদ্ভুত মাদকতাময় গন্ধ বের হয়। সেই গন্ধে নাগিনীর গায়ের ন্যায় কাম গন্ধ খুঁজে পায় নাগ। কামের নেশায় মত্ত হয়ে তখন নাগ ফনা তোলা নাগিনীর মতো দেখতে ফুলের কাছে ছুটে আসে। সাপুড়েরা তাই এই গাছের নাম দিয়েছেন নাগলিঙ্গম। উপমহাদেশে কালক্রমে এই নামটিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। এটা কতটা সত্য তা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

তিন হাজার বছর আগে থেকেই গাছটি ভারত উপমহাদেশে একটি পবিত্র উদ্ভিদ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিব ও সর্প পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করেন। ভারতে নাগলিঙ্গমকে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়।

বৌদ্ধদের মন্দিরেও এই ফুলের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এ কারণে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গম গাছ বেশি দেখা যায়।

ভেষজ গুণসম্পন্ন নাগলিঙ্গম গাছের ফুল,পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ হয়।


দ্রুত বর্ধনশীল নাগলিঙ্গম গাছে চারা রোপণের ১২ থেকে ১৪ বছর পর গাছে ফুল ধরে। গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে ফুল ফোটে। গাছের কাণ্ড ভেদ করে বেরিয়ে আসে প্রায় ৭ ইঞ্চি দীর্ঘ অসংখ্য মঞ্জুরি। এক একটি মঞ্জরিতে ১০ থেকে ২০টি ফুল ক্রমান্বয়ে ফুটতে থাকে। মঞ্জরির একদিকে নতুন ফুল ফোটে অন্যদিকে পুরাতন ফুল ঝরে পড়ে। ফুলের রং অনেকটা লালচে কমলা বা লালচে গোলাপী হয়ে থাকে। ফুলে ৬টি মাংশল পুরু পাপড়ী থাকে। ফুলের মাঝে থাকে নাগের ফনা আকৃতির পরাগচক্র। ধারনা করা হয় এর কারণেই এই ফুলের নাম হয়েছে নাগলিঙ্গম।



ফলগুলো চকলেট রঙের। যার ব্যাস প্রায় ১৫ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ফল পরিপক্ব হতে প্রায় এক বছর সময় নেয়। পরিপক্ব ফল মাটিতে পড়লে ফেটে যায়। বাতাসে খানিকটা ঝাঁঝালো গন্ধ সৃষ্টি হয়। ফল মূলত পশু পাখির খাবার। মানুষের জন্য এ ফল অখাদ্য। একটি ফলে ২০০ থেকে ৩০০ বীজ থাকে। ফ্রান্সের একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জে এফ আবলেট ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ করেন।



বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম খুব একটা দেখা যায় না। আমি নিজে দেখেছি রমনা উদ্যানে আছে কয়েকটি গাছ, ফুল ফুটছে এখন। বলধা বাগানে দেখেছি কয়েকটিতে ফুল ফুটতে। আছে মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে কয়েকটি গাছ ফুল দেয়া অবস্থায়।

আমার নিজের একটি নাগলিঙ্গমের চারা আছে, এবছর লাগিয়েছি। দূর্লভ এই চারাটি দিয়েছেন অতি প্রিয় সিনিয়ার দুলাল ভাই। আশা করছি আগামী ২০৩০ইং সাল নাগাদ ফুল ফুটবে। সেই প্রথম ফুলটি এখনি উদসর্গ করছি দুলাল ভাইকে।

শুনেছি আরো কিছু নাগলিঙ্গমের গাছ আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন যায়গায়। যেমন-
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় একটি পুরনো গাছ রয়েছে।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা রাজবাড়িতে দুটি গাছ রয়েছে।
ময়মনসিংহের শশীলজের পিছনে আছে একটি বিশাল লম্বা নাগলিঙ্গম গাছ।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) ক্যাম্পাসে আছে নাগলিঙ্গম গাছ।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় মাঠের রয়েছে ৪টি বড় নাগলিঙ্গম গাছ।
কার্জন হল, নটরডেম কলেজ,শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং চন্দ্রিমা উদ্যানে বিভিন্ন বয়সী কয়েকটি নাগলিঙ্গম গাছ আছে। সিলেট ও হবিগঞ্জে দু’একটি গাছ এখনো দেখতে পাওয়া যায়। বান্দরবান এবং কক্সবাজারের কয়েকটি বৌদ্ধমন্দির প্রাঙ্গণেও এ গাছ দেখা যায়।
সূত্র : নেট, ফুলগুলি যেন কথা, উদ্ভিদ সংহিতা, নিজ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৪৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×