আমার মধুকরি, যে চিঠি অনেক আগেই লিখা উচিত ছিল, সে চিঠি এতদিন পর কেন যে লিখতে ইচ্ছে করলো তা আমি জানিনা, শুধু জানি প্রেমের দেবতা অন্ধ, অদর্শনে তার কিছু যায় আসেনা, বিরহে এ হৃদয় বেদনার রসে সিক্ত, তোমাকে ভোলা গেল না কিছুতেই, আমি জানিনা এই চিঠি পৌছাবে কিনা তোমার হাতে, যদি পৌছে, তাহলে সম্ভবত ভূত দেখর মতই চমকে উঠবে, তারপর লোফার, স্কাউন্ডেল, ইডিয়েট যা ইচ্ছ তা বলেই গালাগালি করবে একচোট তবু এই মুহূর্তে এই পরম ইচ্ছার গলায় ফাস এটে তার মৃত্যু হতে দেবনা, সুখের ঘরে অসুখের ছায়া অভিশাপ দেবে, তা জানি, দাও, এই অভিশাপ ছাড়া তোমার আর কিইবা আছে দেবার।
মধুকরি,, মানুষের জীবনে প্রেম আসে বার বার, একাধিক, কে কার সত্যিকার ভালোবাসা পায়? আমি তোমার রূপের রাজ্য ডিঙ্গিয়ে মনের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারিনী, তুমি তোমার আগুনে পুড়ায়ে ভালোবাসার শিকলে বেধছিলে আমাকে, সেজেছিলে বিজয়ীনি। আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম জীবনের সাথে জীবন সাজাতে, কিছু তুমি খেলেছো আমার মনকে নিয়ে, প্রতারনা করেছো, আমার জীবনে পরাজয় এনেছো,," সত্তাকে চুরি করেছো এবং তুমিই আমাকে জর করেছো। এখন আর কেউ নেই যার পরশে কষ্ট ঘুচাতে পারি। উপরে উঠতে পারি আর দশ জন সাধারণ মানুষের মতো তোমার জন্যে মেয়েদের উপর আমার ঘৃণা জন্মে, আর কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছা করে না, বরং ইচ্ছে করে তার সব কিছু লুট করে ঠকাতে, তোমার উপর খুব রাগ হয় আমার মনে হয়, তুমি কুসুমে কুসুমে জমা বিষাক্ত রেনু তোমার মুখে দেখি জমাট কলংকের দাগ, তুমি প্রহেলিকা, তোমায় ভুলে যেতে চাই, মুছে ফেলতে চাই মনে থেকে, তুমি আমার জীবনকে করেছ ক্ষতবিক্ষত, এ কথা মনে এলে এমন এক যন্ত্রনায় পড়ি, যার নাম নেই, যা সনাক্ত করা যায়না, ঝুলন্ত বায়ুমন্ডল ভেদ করে ইনজেকশনের মতো সারা দেহ মনে সুঁই ফুটায়, মুষড়ে দেয় আমার স্নায়ুতন্ত্র, মিশে যায় আমার রক্তের মধ্যে সুক্ষ্ণ কোন বিষের মতো, আমাকে অন্ধ, অবস, বিহবল করে তুলে। তখন মনে হয়, তুমি কাছে থাকলে তোমার তাজা মাংস আমি আমার দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিতাম, কেন, তুমিও তো অনেকের মতো চিরকুমারী থাকতে পারতে।
মধুকরি,, তুমি নেই বলে কখন যে বেড়েছে বেলা, পাতার ফাকে ঝরে গেছে চাপা ফুলের পাপড়ি, আমার শীতের মধ্যরাত্রি বড় কষ্টে কাটে, সেই কবে একটু খানি ভালোবেসেছিলে, সেই খুশিতে আজও লুটোপুটি খায় আমার মন। অর্থাভাবে একদিন আমার ভাঙ্গাচুড়া সাহস, অন্যমনস্কের মতো পালিয়ে ছিল।
মধুকরি, ভাবনা যখন প্রকট আকার ধারণ করে তখন পালিয়ে বেড়াও, কিছুতেই তোমাকে মনের আয়নায় খুঁজে পায়না, মনের নিরালায় মিছে মিছে স্বপ্ন আঁকি, কি যে মধুর লাগে, আপনি বন্ধ হয়ে আসে চোখ, তারপর হঠাৎ জ্বালা করে ওঠে বুকটা, তখন তোমার উপর ভীষন রাগ হয়। কারণ তুমি পারস্ত্রী, আমার মনে হয় তুমি ইচ্ছে করেই আমার জীবন থেকে পালিয়ে গেছো, কিন্তু একবার ওকি আমার কথা তোমার মনে পড়েনা? আমার কথা ভাবতে ইচ্ছা করে না? যে মানুষটা তোমার জন্য এতো ভাবে, সে কেমন আছে! আমি তোমাকে বেঁধে রাখতে পারিনি, কিন্তু আমার ভালোবাসা তোমার ভেতর বাহির জুড়ে বসে আছে। তুমি যেন একটা সুবোধ হলদে পাখির ছা, নির্বাক বসে আছো আমার ভালোবাসার হিজল ফুলের ডালে, আমি তো তাকে তাড়াতে পারি না, তবে তুমি যে আমার একথা ভাবলে গর্ভে আমার বুক ভরে যায়।
অনেক আজে বাজে কথা লিখলাম, যা হয়তো তোমার কাম্য ছিলনা। তবু কেন যেন আজ শুধু লিখতে ইচ্ছে করছে, যেখানেই থাকো ভাল থেকো, তোমার সাথে কোন দিন ঝগড়া করতে যাবোনা। হয়তো চিঠিও লিখবোনা আর কোনদিন।
মধুকরি,, এই অবান্তর চিঠির জন্য তুমি আমাকে যাই ভাবনা কেন তবুও যেন জানতে পারি এ চিঠি তোমার হাতে পৌঁছেছে। তুমি অন্তত একটি বার পড়েছো, কতোদিন দেখিনি তবু মনের চোখে দেখি সারাক্ষণ বুকের মধ্যে খেলা করো অষ্ট প্রহর, যে তুমি আমার ছিলে, তোমার কথা কেউ বললে, তোমার কথা ভাবলে, যেন এক মিষ্টি বেদনায়, অমৃতের গভিরে কেবলই ডুবে যেতে থাকি। আমাকে নিয়ে ভাবনা করো না ভাবলে যে ভালো লাগতো, যে ভালো লাগা এখন আর চাইনা, ছোট্ট পৃথিবীতে ঘুরতে ঘুরতে কখনো যদি দেখা হয়ে যায়। চিনোনা আমাকে, এতদিন ধরে আমার মধ্যে যে জগৎ আমি গড়েছি সামান্য ভুলে বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, কষ্ট আর সুখই বলো সবই জীবনের জন্য, আমার জীবন আমারই থাক।
মধুকরি,, এ আমার পরোকিয়া প্রেম নয়। শেষ ইচ্ছাটাকে শুধু নিংড়ে ফেলা, অনাধিকার চর্চার জন্য ক্ষমা করো, তোমার বুক থেকে মুছে ফেলো আমার নাম, বাসি স্মৃতি গুলো নতুন মনের উষ্ণ ভালবাসার আগুনে পুড়িয়ে দাও।
"শেষ নয়"
২০২১ সালের ৩০শে ডিসেম্বর আমাদের এক বন্ধুর বাসায় বসে আড্ডা দিচ্ছি আমরা কয়েকজন।
ঠিক তখন আমাদের আরেক বন্ধু সেখানে হাজির হয় হাতে করে একটি হলুদ খাম নিয়ে। খাম খুলে দেখি সেখানে হলুদ কাগজে কালো কালিকে গোটাগোটা অক্ষরে খুব যত্ন করে লেখা ৩ পৃষ্ঠার বিশাল একটি চিঠি।
আমরা যখন স্কুলের ছাত্র তখন পত্রমিতালি নামক একট বিষয় চালু ছিলো। চিঠি চালাচালিতে বন্ধুত্ব-প্রেম। আমার এই বন্ধু চিঠি লেখায় ছিলো উস্তাদ। সেই পত্রমিতালির যুগ কোন কালেই শেষ হয়ে গেছে। আজকের দিনে এসেও কেউ প্রেম পত্র লিখছে ভাবতেই অবাক লাগে!! ওর কাছ থেকে চিঠিটা নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে রাখলাম পরে পড়বো বলে। এতো দিন পরে হঠাত করে সেই চিঠিটি পড়া হলো। আপনাদের জন্যও পেশ করলাম। চিঠির একটি শব্দ, দাড়ি-কমা কিছুই আমি চেঞ্জ করি নাই। (তবে টাইপিং মিস্টেক হেপারে কিছু) যেহেতু চিঠিতে কারো নাম-ঠিকানা বা পরিচয়ের ইংগিত নেই, তাই এই চিঠি প্রকাশে কারো কোনো ক্ষতির সম্ভবনাও নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০