[ আমি সক্রিয় ভাবে রাজনিতীর সাথে জড়িত নই। এই পোস্ট সম্পূর্নটাই আমার ব্যাক্তিগত চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ। আমি চেষ্টা করেছি বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য, ঘটনা পর্যবেক্ষন ও এদের যোগসূত্র দিয়ে একটি বিশ্লেষিত উপসংহারে পৌছাতে ]
হাইপোথিসিস: যুদ্ধাপরাধের বিচার জামাতকে চুড়ান্ত ভাবে একটি রাজনৈতীক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেব।
পিলে চমকান হাইপোথিসিস তাই না ? অনেকেই আমাকে ইতিমধ্যে জামাতি হিসেবে গন্য কের ফেলেছেন ও রাজাকার বলে মনে মনে গালী দিচ্ছেন। ভাবছেন অপরাধীদের বাচাবার নতুন ফিকির! তবে যে যই ভাবুন ব্যাক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবে আমিও চাই বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধী মূক্ত হোক। আর শুধু মাত্র একারনেই বর্তমান সরকার বিগত নির্বাচনে আমার দ্বারা সমর্থিত হয়েছে, যদিও আমি তাদের সমর্থক নই।
আমি যে এলাকায় গত ১৫ বছর ধরে বাস করছি, তা আমাকে জামাতের সাংগঠনিক কাঠাম, কর্ম পদ্ধতি, মটিভেশন ও নেতা নির্বাচন ইত্যাদি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করার সুযোগ দিয়েছে। আমি তাদের কর্ম প্রক্রিয়া দেখে চমতক্রিত হয়েছি, বাংলাদেশের আর কোন রাজনৈতীক দল সম্ভবত এভাবে চিন্তা করে না।
আর্থিক ভিত্তি: ৪-৬ টি ব্যাংক, ২-৩ টি হাসপাতাল, ২ টি টিভি চেনেল, ২-৩ টি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, ৮ টি দৈনিক-সাপ্তাহীক ও অসংখ্যা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের। এগুলোর গ্রাহক ও পরিচালক মূলত তাদের নেতা-কর্মিরা। অনেক সাধারন মানুষ ও আছে তাদের সাথে তবে তদের বেশীর ভাগই গ্রাহক শ্রেণীর। জামাত তার যোগ্য নেতা-কর্মিকে শিক্ষা ও জীবিকার নিশ্বয়তা দেয়। আওয়ামী-পন্থী অর্থনিতীবিদ ডঃ আবুল বারাকাত ( বর্তমানে রূপালী ব্যাংকে নিয়োগ প্রাপ্ত) তার গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছের জামাতের ব্যাবসায়িক সম্পদের পরিমান প্রায় ১৫শ কোটি টাকা।
সংগঠন: আমার ধারনা মূলত ছাত্র-শিবির কেন্দ্রিক। অত্যন্ত কঠোর ও নিয়মত্রান্ত্রীক সংগঠন। এদের সাংগঠনিক শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতা শুধু মাত্র কোন সামরিক-আধাসামরিক বাহীনির সাথেই তুলনীয়(আর মূল পার্টি জামাত মূলত ছাত্র-শিবিরেরই আলটিমেট ভার্সন)।
তরুন সমাজে এরা ২ ভাবে কাজ করে। প্রথমটা প্রথাগত মানে আওয়ামি-বিএনপি যাদের রিক্রট করে এরা ও তাই করে। তবে ২য়া টা বেশ ইন্টারেষ্টিং। এখানে তাদের টার্গেট হয় এলাকা বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলর মেধাবী ও ভদ্র টাইপের তরুন-তরুনীরা। প্রথাগত মারামারি-কাটাকাটির ছাত্র-রাজনীতি থেকে মূক্ত, আধুনিক শিক্ষা উপকরন ও পরিবেশের নিশ্বয়তা, আর্থিক সমর্থন ও সর্বপরি ভাল চাকরী ও জীবন-যাপনের নিশ্বয়তাই তাদেরকে আকর্ষন করে। এটা মূলত জগামাতের ইন্টেলেকচুয়াল সেকশন, এ কারনেই প্রসাশনে ও উচ্চ পর্যায়ে জামাত-পন্থি লোক জন সংখ্যায় বাড়ছে।
রাজাকার / জামাতি: ৭১ জামাতের ভূমিকা ও বর্তমানে প্রথম সারির নেতাদের যাদ্ধাপরাধ জামাতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির মূল অন্তরায়। জামাতের নিম্ন ও মধ্য সারির নেতারা (৭১ পরবর্তি প্রজন্ম) এটা থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে যদিও দলীয় কাঠামোর কারনে তারা পেরে উঠছে না। সুতরাং যুদ্ধাপরাধের দায়মূক্তি এদের নিকট চরম আরাধ্য, যা তাদেরকে পূর্বস্বূরিদের কৃতকর্ম থেকে মূক্তি দিবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার: জামাত যদিও এটা চায়না কারন তা প্রথম সারির নেতাদের সিদ্ধান্ত এবং একসাথে বেশ কিছু সিনিয়র নেতা হারানোর সম্ভবনা সৃষ্টি করবে, যা সামযয়িক ভাবে তদের অগ্রগতীকে রোধ করবে। তবে জামাতের সাংগঠনিক ভিত্তি এই শূন্যতা পূরনে সক্ষম।
যুদ্ধাপরাধ মূক্ত জামাত ও তাদের ভবিষ্যত: যুদ্ধাপরাধের বিচারের সুফল বাংলাদেশ পেতে পারে নানা ভাবে। স্বাধিনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে চলে আসা ৩৮ বছরের বিতর্কের সাময়িক অবসান ঘটবে। সময়িক সমাধান একারনে বলছি যে, জামাত যেমন ধর্মকে ব্যাবহার করে ঠিক তেমনি আওয়ামিলীগ মুক্তিযুদ্ধকে পুজি করে রাজনীতি করে, তাই এটার পূর্ন সমাধান সম্ভব নয়। আর বিএনপি মূলত জিয়ার জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে আছে।
''তবে দলীয় বিবেচনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ও একই সাথে লাভবান হবে জামাত।'' - কনফিউজিং মন্তব্য তাই না, আসুন বিস্তারিত আলোচনা করি-
আওয়ামীলিগ: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দলটির গ্রহনযোগ্যতা আরোও বারিয়ে দেবে প্রগতিশীল জনগোষ্ঠি ও ছাত্র সমাজের কাছে। কিন্তু তাদের মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক রাজনীতি চেলেন্জের মুখে পড়বে। বঙ্গবন্দ্ধুর হত্যা মামলা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হয়ে গেলে, মানষের আবেগকে পূজি করে পথ চলা কষ্টকর হয়ে পরবে।
বিএনপি: এরা খুব একটা লাভবান হবে না। তারেক জিয়ার ভাবমূর্তি মেরামত করতেই বেশী বেস্ত থাকতে হবে। তবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগমূক্ত ও সাময়িক সময়ের জন্য দূর্বল জামাত জোটবদ্ধ রাজনীতিতে তাদের কীছুটা সুবিধা দেবে।
জামাত; গুটি কতক সিনিয়র নেতা হারানোর বিনিময়ে তাদের কলংক মূক্তি ঘটবে। ৭১ পরের বেচ আরো কর্তিত্ব পাবে এবং সাধারনের মাঝে নিজেদের আরও খোলামেলা ভাবে প্রকাশ করবে। সর্বপরি সাধারনের মাঝে তাদের গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে নিশ্বন্ধেহে আর ধর্মিয় সহানুভূতি ত রয়েছেই।
জামাত কী বাংলাদেশের নিউনাতসি হতে যাচ্ছে ?
২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্ব জুড়ে শুরু হল নাত্সিদের বিচার। ৫০ দশকে শুরু হয়ে ৮০ র শেষ ভাগে এসে শেষ হল বিচার প্রক্রিয়া। সারা বিশ্ব বিশেষ করে জার্মানরা হাফ ছেরে বাচল এই ভেবে যে, নাতসিদের চূড়ান্ত পতন হয়েছে।
বেশী নয় মাত্র এক দশক পরেই অভাবনিয় কান্ড ঘটল, জার্মানিতে পূনরায় নাতসিদের জাগরণ ঘটল (এরা নি্উনাতসি নামে পরিচিত)। অবস্থা এমন যে ২০০০ এর পর এরা জার্মানীর ৪ নম্বর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে আর তাদের মূল সমর্থক হল যুবসমাজ।
একই অবস্থা জামাতের ক্ষেত্রেও হতে পারে, মৃত মুজিব বা জিয়া কেন্দ্রিক রাজনীতির আয়ু ক্রমশ্যই ফুরিয়ে আসছে। ব্যক্তি কেন্দ্রিক আধুনিক জীবনযাত্রা মানুষকে উচ্চাকাঙ্খি করে তুলছে। ফলে ব্যক্তি উন্নয়ন কেন্দ্রিক রাজনীতিরই সাফল্য পাবার সম্ভবনা প্রবল।
আর এখানেই জামাত সুবিধা জনক অনস্থানে রয়েছে কারন তারা তাদের কাঠামটা তৈরী করে ফেলেছে এবং প্রক্রিয়াটা ট্রায়াল এন্ড এররের মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ হচ্ছে। অপর দিকে বিএনপি বা আওয়ামিলীগে এই প্রক্রিয়া চরম ভাবে অনুপস্থিত, যা আছে তা হল ক্ষমতা প্রদর্শন ও পারিবারিক স্বজনপ্রিতি।
অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে তাই না ? কিছু প্রশ্নের উত্তর পেলেই আমার কথাগুলো আপনার বোধগম্ম হবে-
সাংগঠনিক শৃংখলা কদের বেশী ?
- আমি কখনও শুনিনি জামাত দখলবাজী নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারী করেছে।
রাজনৈতীক ভাবে আপনার শেষ সীমা কোথায়?
-জামাতের পরবর্তি নেতা নিষ্চিত ভাবে গো-আজম বা মুজাহিদের পরিবারের কেউ হবে না।
আমি বলছি না আগামী ১০ বছরেই জামাত বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় দ্বায়িত্ব পাচ্ছে। তবে আওয়ামিলীগ বিএনপির পর ৩য় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার ক্ষেত্রে জামাতই সব দিক দিয়ে এগিয়ে আর যুদ্ধপরাধের দায়মূক্তি জামাতের এই পথ পরিক্রমাকে আরও বেগবান করবে।
তা হলে কী যুদ্ধপরাধীদের বিচার বন্ধ থাকবে ? অবশ্যই নয়, যুদ্ধপরাধীদের বিচার হবেই হবে। তবে আমার কাছে এটা জামাতের
জন্য শ্বাপেবর হয়ে দেখা দেবে বলেই মনে হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত পড়েছেন ! আমি ভাগ্যবান যে আমার আশঙকার কথা আপনার কাছে পৌছাতে পেরেছি। এখন আপনিই বলুন আমি যা আশঙকা করছি তা কী যুক্তিযুক্ত ?