সোজা বাংলায় আমি যা বুঝি তাল হল, যারা ৭১ বাংলাদেশের উন্মেশ চায় নি, খুন-হত্যা, লুন্ঠন, নারী নির্যাতন ও পাকীদের সাহায্য করেছে তারাই রাজাকার।
যদি আমরা পকিস্তানের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করি তা হলে, এরা এক অর্থে খাটি দেশপ্রমীক (কারন তারা পাকিস্তানের অখন্ডতা চেয়েছে)। আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এরাই হল ঘৃন্য রাজাকার, যারা বাংলাদেশের জন্ম চায়নি বা স্বিকার করেনি। অর্থাত একই ব্যাক্তি, শুধুমাত্র ভিন্ন দুটি প্রেক্ষাপটের কারনে রাজাকার বা দেশপ্রেমিক বলে বিবেচিত হচ্ছে ......
আশা করি এখন পর্যন্ত আমার সাথে সবাই এক মত হচ্ছেন।
*** [ এই পোষ্ট মূলত আমার রাগের বহিঃপ্রকাশ। ইদানিং ব্লগে ঢুকলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ]
আজকাল এক নতুন ট্রেডিশন চালু হয়েছে, কারো সাথে আমার মতের মিল হচ্ছে না অথবা কেউ জামাতের পক্ষ নিচ্ছে বা জামাত ঘেসা মন্তব্য করছে, অতএব আমি তাকে রাজাকার আক্ষা দিয়ে দিলাম ... যদিও মানুষ হিসেবে সে কেমন তার সম্পর্কে আমার বিন্ধু মাত্র ধারনা নাই।
আর আপনি যদি জামাতের বা শিবিরের সমর্থক বা কর্মী হোন তা হলে ত আপনার news আছে..আপনি নিশ্বিত ভাবে রাজাকার উপাধি পাবেন। দলীয় ভাবে জামাতে সবচেয়ে বেশী যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার আছে এটা যেমন ঠিক তেমনী এই দলের সবাই যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার নয় এটাও তেমন ঠিক।
এখন আপনি হয়ত বলবেন, এক জন লোক যেহেতু জেনে-বুঝে এই দলে যোগ দিচ্ছে বা সমর্থন করছে তা হলে সেও রাজাকার।ঠিক আছে যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম আপনিই ঠিক। এবার আসুন দেখি আপনার যুক্তির সম্পূর্ন চিত্রটা কেমন ....।
৭১ এ ওরা দেশের সাথে বেইমানী করায় রাজাকার উপাধি পেয়েছে, কপাল খারাপ কারন তারা জেনে বুঝে ভূল পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু আমরা, যারা ৭১ এর পরে স্বাধীন বাংলার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছি, তারা যখন চাদাবাজি, সন্ত্রাসী, মজুদ্বারী, ঠগবাজী, স্বজনপ্রীতি, সরকারী সম্পদ ধ্বংস বা লুন্ঠন অথবা টেক্স ফাকি দিয়ে নিজে বেআইনী সম্পদের অধিকারী হচ্ছি - এগুলো কি দেশের সাথে বেইমানী নয়? ৭১ এ পক্ষ ছিল দুটি, কিন্তু এখনতো দ্বিতীয় কোন পক্ষ নেই, তাহেলে আমরা এখন কার বিরুদ্বে যুদ্ধে নেমেছি ? আমরা কি তাহলে আপনার যুক্তিতে রাজাকার নই? অথবা একজন ব্যাক্তি বা নেতার অপকর্ম জেনে বুঝেও আমরা যারা তাদেরকে দিনের পর দিন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি তারাও কী রাজাকার নই?
আপনি নিশ্বাই এখন আর আমার সাথে একমত নন। কিন্তু কেন ? ৭১ ওরা যা করে ঘৃন্য রাজাকার উপাধি পেল, ঠিক একই প্রকারের কাজ করে আমি-আপনি কীভাবে নিজেকে দেশপ্রেমীক ভাবছি ?
এক জন আলমাহমুদ ৭১-এ যা করেছে তার ঋণ আমাদের পক্ষে শোধ করা সম্ভব নয় অথচ আমরা কী অবলীলায় তাকে রাজাকারদের কাতারে দাড় করাচ্ছি! আবার তার বিচার করার হুমকিও দিচ্ছি !
অন্যকে রাজাকার বলে গালি দেয়ার আগে নিজেকে দেখুন... ওরা তো পাকিস্তানের দালালী করেছে, আপনি কার দালালী করছেন ? এখন ত দ্বিতীয় কোন পক্ষ নেই তবে কেন দেশের সাথে বেইমানি করছেন ? আপনার কাছে আজ দেশ নয় বরং ব্যাক্তি আপনি অনেক বড় হয়ে গেছেন। তাহলে আপনিও ত রাজাকার, রীতিমত বেশ বড় মাপের রাজাকার যে প্রতিনিয়ত দেশের সাথে বেইমানি করে চলেছে।
আমার আয়নায় আমি নিজেই অপরাধী কারন আমি দেশের বাইরে আসার সময় অনুমোদিত সিমার বাইরে টেক্স ফাকি দিয়ে পা্উন্ড কিনেছি। সুতরাং আমিও এক অর্থে রাজাকার, তা যত ছোট মাপেই হই না কেন রাজাকারই ত তাই না ? যদি না-ই হই তবে কেন শুধু মাত্র জামাত ঘেষা মন্তব্যের কারনে আমরা একে অপরকে রাজাকার বলছি ?
পূনশ্চ: পাঠকদের কমেন্ট দেখে আমার মনে হচ্ছে , সমস্যাটা আমাদের মানসিক, নিজে অপরাধ করছি অথবা অপরাধীকে সমর্থন করছি এবং ভাবছি এটা তেমন গুরুতর কিছু না .... ভাই যে নিজেই অপরাধী হয়ে বিচারের সম্মুখীন হয় না সে কোন নৈতিকাতার বলে অন্যকে অপরাধী সাব্যস্ত করে ? কথায় আছে না 'আপনি আচরি ধর্ম শেখাও পরেরে '- আমরা এটাই ভুলে যাচ্ছি ...... । বড় অপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ জনতার নেতৃত্বে ছোট অপরাধীরা। আমরা কী বড় কিছু পাবার আশায় তাদেরকে মূক্তি দিয়ে দিচ্ছি ?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



