somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাঁশি শেখার গল্প -১

১৫ ই মে, ২০১৫ রাত ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন ধরে মাথার মধ্যে ঘুরছে বাঁশি শিখব। টিএসসিতে লালনগীতি শিল্পী ফরিদা পারভীন এর একটি অনুষ্ঠানে ওনার সহশিল্পী গাজী আব্দুল হাকিম একটি গানের সাথে বাঁশিতে সুর বাজাচ্ছিলেন। পুরা অডিটরিয়াম তন্ময় হয়ে শুনছিল সেই সুরটি। আমিও শুনছিলাম। তখন থেকেই বাঁশি শেখার পোকাটি মাথায় ঢুকে গেছে। যেখানেই কোনো বাঁশিওয়ালা দেখি মন দিয়ে তার বাজনা শুনি, বাঁশির দিকে তাকাই, সুযোগ পেলে দুএকটা কথা বলি, কিন্তু বাঁশি শেখার আগ্রহের কথা বলা হয়ে ওঠেনা।

একদিন রাতের বেলা রিক্সা করে বাসায় ফিরছি, দেখলাম এক বাঁশিওয়ালা কাধেঁ বাঁশির ঝোলা নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে রাস্তায় আমি যেদিকে যাচ্ছি সেদিকেই যাচ্ছেন। চমৎকার মনে হচ্ছিল উনার সুর। রিক্সা থামালাম। বললাম “আমি আপনার কাছ থেকে বাঁশি শিখতে চাই। আমার সাথে আমার বাসায় চলেন। আমি আপনার কাছ থেকে বাঁশি কিনব” বাঁশিওয়ালা তেমন কোন ইতস্তত না করেই আমার রিক্সায় উঠে বসলেন। সাথে আমার ফ্ল্যাটমেট ছিলো। উনি হয়ত আমার পাগলামীতে কিছুটা বিরক্ত হলেন। আমি লক্ষ্য করিনি। বাঁশিওয়ালা বাসায় এসে কয়েকটি গানের সুর বাজালেন। আমরা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে শুনলাম, মজা পেলাম। কেউ কেউ অভিযোগ করল রাতের বেলা বাঁশি বাজানো ঠিক না। সাপ আসে। আমি মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি আগামী কয়েকমাস আমি উনার কাছে বাঁশি শিখব। কিছুটা শংকা নিয়ে বাঁশিওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম “আচ্ছা, আমি পারবতো?” উনি আমাকে সাবাস দিয়ে বললেন “আপনে পারবেন না, তো কে পারবে। আপনারা লেখাপড়া করেন, কম্প্রিউটার (compruter) চালান। বাঁশি বাজানো খুবই সহজ বিষয়, যদি ভাল উস্তাদ পাওয়া যায়”। আমি বেশ সাহস পেলাম। বললাম “আপনি আমাকে শেখাতে পারবেন?” “কি যে বলেন। এক মাসের মধ্যেই আট দশটা গানের সুর তুলবেন বাঁশিতে।” ঠিক হল, প্রতি সপ্তাহে উস্তাদ দুইদিন করে আমার বাসায় আসবেন। প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে দিব। সকাল সাতটার মধ্যে উনি চলে আসবেন। আমার অফিস নয়টায়। আমাকে দুটি বাঁশি দিয়ে গেলেন। একেকটা আঠারো থেকে বিশ ইঞ্চি হবে। মনে নেই। সম্ভবত তিনশত টাকা দিয়েছিলাম। আমি পাঁচশতই দিতে চেয়েছিলাম, আমার ফ্ল্যাটমেট তিনশত দিতে বল্ল।

তারপর দিন থেকে বাঁশির সাথে আমার যুদ্ধ শুরু হল। বাঁশিওয়ালা নিয়মিত আসেন, সকালে আমার সাথে নাশতা করেন, বাঁশি বাজান, কিন্তু আমি কিছুই বাজাতে পারিনা। বাঁশিওয়ালার নির্দেশমত ফুঁ দেয়ার ছিদ্রটিতে ফুঁ দেই (কখনো আস্তে কখনো জোরে), আঙ্গুল দিয়ে বাকী সবকয়টি ছিদ্র বন্ধ করে রাখি। বীভৎস বিরক্তিকর শব্দ বেরোয়। গ্রামের বাড়ীতে চাচী জেঠিরা কাঠের চুলায় রান্না করার সময় এক ধরনের চোং ব্যবহার করেন। সেটাতে ফুঁ দিয়ে চুলায় আগুন ধরান, তখন এরকম শব্দ হয়। এর চাইতে ভাল শব্দ আমি অনেক চেষ্টাকরেও বের করতে পারিনি। আমার দম শেষ হয়ে যেত। আমার হাত, আঙ্গুল ব্যাথা করত। ঠোঁট শিরশির করত। কিন্তু লাভ হতনা কিছুই। কয়েকদিন গেল এভাবেই। আমি ডানদিকে ধরতাম, কাজ হচ্ছেনা দেখে উস্তাদ আমাকে বামদিকে ধরতে বললেন। তাতেও কিছু হলনা। দুই সপ্তাহ যাওয়ার পর তিনি আমাকে আরেকটু ছোট দেখে দুটি বাঁশি দিলেন। দুইশত টাকা নিলেন। আগের বাঁশিগুলো নিয়ে গেলেন, বললেন দেখবেন ওগুলো ঠিক করা যায় কিনা। ছোট বাঁশিতেও আমার তেমন কোন উন্নতি হলনা। বাঁশিওয়ালা কি চমৎকার বাজায়, কিন্তু আমি কিছুই পারিনা। নিজের উপর রাগ হচ্ছে। আত্মবিশ্বাসে চির ধরতে লাগল। রাস্তার পাশে কতলোক অনায়াসে বাঁশি বাজিয়ে যায় আমি শুনি। অথচ আমি কোন শব্দই বের করতে পারছিনা। একমাসে কোন লাভ হলনা। উস্তাদ কিছুই শেখাতে পারলেন না। কিংবা আমিই কিছু শিখতে পারলাম না। মাসের শেষে উস্তাদ বললেন উনি বাড়িতে যাবেন। বাড়িতে একসপ্তাহ থাকবেন। তারপর ঢাকায় এসে আমাকে নব উদ্যোগে শেখাবেন। দুমাসের টাকা অ্যাডভান্স চাইলেন। আমি বললাম “এখন তো নাই এক সপ্তাহ পরে দিতে পারব”। হয়ত টাকাটা দিতে পারতাম, কিন্তু কিছুই শিখতে পারলাম না বলে ঔদার্য্যটা দমে রইল। আমাকে আরো দুটি বাঁশি দিয়ে পাঁচশত টাকা নিলেন। উনার সাথে আর দেখা হলনা। বেশ কয়েকদিন নিজে নিজে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন উন্নতি নাই। ফ্ল্যাট-মেটরা আমার শব্দ শুনে দিন দিন বিরক্ত হতে লাগল। আস্তে আস্তে আমার মাথা থেকেও বাঁশি বাজানোর পোকা বের হয়ে গেল।

এভাবেই হয়ত অনেকের মত আমার বাশিবাজানোর ইচ্ছার মৃত্যু ঘটতে পারত। কিন্তু হলনা। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৫ রাত ২:৫৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×