somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশ্বরের ফোনকল : "ডার্টি বীচেস"

০৩ রা জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহারানী, রাতপোশাক পরে অস্থির পায়চারী করছেন নিজ ঘরে, সরকারী নিরাপত্তা আর তোষকদের চাটুকারিতার বূহ্যে বসে। মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই ভ্রুদুটো ইষৎ কুঁচকে উঠলেও তক্ষুনি সামলে নিচ্ছেন মহারানী। জিভ কেটে নিজেকেই ধমক লাগাচ্ছেন আনমনা ভ্রু কুঁকানোর জন্য। ঈশ্বরের উপর আর যাই হোক বিরক্তি বোধ আনা যাবে না।

হ্যাঁ, মহারানী ঈশ্বরের ডাকের অপেক্ষা করছেন।

ঐতো! ঐযে বেজে উঠছে টেলিফোনের ঘন্টা! ঈশ্বরের কল নির্ঘাৎ! পড়িমরি করে ছুটলেন মহারানী ফোনের কাছে, রিসিভার তুলে কানে ঠেকিয়ে গদগদ স্বরে প্রশংসা আর স্তুতি শুরু করলেন ঈশ্বরের।

"ইনাফ!" ট্যাঁশ আংড়েঝিতে থামিয়ে দেন ঈশ্বর, কৈফিয়ত তলব করে বসেন, "যে কারনে আপনাকে সিংহাসনে বসানো হয়েছে তার কদ্দুর?"

"এইতো, কাজ প্রায় শেষ, ঠিক মতোই চলছে সব কাজ" শুকনো গলাতে জবাব দেন মহারানী, যদিও জানেন, ঈশ্বর খবর রাখছেন প্রতিটি খুঁটিনাটির।

"স্টপ শিটিং অন মি!" - গর্জে ওঠেন ঈশ্বর ফোনের ওপাশে, "নেভার ফাক এরাউন্ড ইওর ফাদার, ওল্ড লেডী!"

"ইয়ে মানে..." - গলার সাথে সাথে বুকও শুকিয়ে আসে মহারানীর।

"হ্যাং ইওর "মানে", কাজ চাই, শুনছি নাকি কিসব আন্দোলন ডিক্লেয়ার করেছে কিছু বাস্টার্ডস? " ধমকে জানতে চান ঈশ্বর।

"ওসব নিয়ে ভাববেন না" শুকনো গলাটা যুগপৎ হাসিহাসি এবং তৈলাক্ত করার চেষ্টা করেন মহারানী, "স্ট্রীট বেগারস, আমরা টোকাই বলি, ওরা কয়েকটা বেশ ইন্টেলেকচুয়াল ভাব ধরার চেষ্টা করছে, তবে সামলানো হবে, ভাববেন না মহামান্য।"

"যা করবে করো, মনে রেখো, আগামিবার সিংহাসনে বসতে হলে আমি যা চাইবো দিতে হবে এবং আমার কথার বাইরে নড়া যাবে না এক চুল" - তরল এবং কঠোর স্বরে জানিয়ে দেন ঈশ্বর।

"আপনি ভাববেন না, এতো আর সরকারি-বিরোধী দলের পাতানো ঝগড়া নয়" আস্বাস দেন মহারানী, "কঠোর হাতে দমন করা হবে, অলরেডি বলে দিয়েছি পুলিশকে, দেখা মাত্র লাঠি চালাতে।"

"হুহ" আত্মপ্রসাদ ভর করে ঈশ্বরের গলায়, "বাই দেন, বেষ্ট অব লাক।"

লাইনটা কেটে যায়। মহারানী উপলব্ধি করেন, সারা শরীর ভয়ের ঘামে ভিজে গেছে তার। মহারানী আবার চেকলিষ্ট মেলান, দেখা মাত্র লাঠিচার্জ, বুটের পেষন এবং দেশদ্রোহের মামলা - হুম, চলবে। এবারে তিনি ঘুমোতে যান। যে ভাবেই হোক, ক্ষমতা আর টাকা তার চাই ই চাই! রক্ত ঝরে ঝরুক, তার সন্তানেরতো ঝরছে না। তার সন্তান পাকাপাকি ভাবে আছে সেই ঈশ্বরেরই দেশে, নিরাপদ এবং সুখে। মরুক কিছু ব্লাডি বাস্টার্ড টোকাই। তার কি আসে যায়?

ওদিকে তখন টেলিফোনের ঘন্টা বেজে ওঠে কয়েক মাইল দুরের একটা বাড়ীতে। প্রাক্তন মহারানী থাকেন এখানে। বহু প্রতিক্ষিত ফোনকল পেয়ে বসার ঘরে ছুটে আসেন প্রাক্তন মহারানী।

"হ্যাল্লো! হাউ ডু ইউ ডু!" চপল মেকি আহ্লাদ ঝরে পড়ে প্রাক্তন মহারানীর গলায়।

"কাট ইট শর্ট লেডী" - বিরক্ত এবং রুক্ষ শাসানির ভঙ্গিতে বলেন ঈশ্বর, "আপনি এখনো ব্লাডি বাস্টার্ড স্ট্রীট ডগদের কিছু বলেন নি, শেষ পর্যন্ত আপনি যদি ওদের দিকে ঘোরেন, নেক্সট টার্মে আপনার সিংহাসনে বসবার স্বপ্নটা ভুলে যাবেন দয়া করে।"

"আরে না না" তড়বড়িয়ে ওঠেন প্রাক্তন মহারানী, "আপনি একটুও ভরসা করতে পারছেন না আমার ওপর", এবারে গলায় একটু মেকি অভিমান ফোঁটে, "ওরা থাকুক আশায়, শেষ মুহুর্তে জানিয়ে দেব আমি নেই ঐ রাস্তার কুকুরদের সাথে, ওদের ডিফেন্স অর্ধেক কমে যাবে তখন।"

"হুমম, গুড আইডিয়া" একটু নরম হয় ঈশ্বরের গলাটা, "ওকে দেন, প্রস্তুতি নিতে থাকুন আগামি টার্মে সিংহাসনে বসবার, ওল্ড লেডী, গুড নাইট।"

প্রাক্তন মহারানী "গুড নাইট" - বলতে বলতেই ফোন কেটে দেন ঈশ্বর। প্রাক্তন মহারানী শরীরে দু'বছর পরের সিংহাসনের স্পর্শ কল্পনা করে শিহরিত হন। যাক না কিছু রাস্তার কুকুর মরে, ওনার কি? তার সন্তান বেশ সিখেই আছে সেই ঈশ্বরের বন্ধু দেশে, নিরাপদ এবং সুখে। মরুক কিছু ব্লাডি বাস্টার্ড টোকাই। তার কি আসে যায়? যে ভাবেই হোক, ক্ষমতা আর টাকা তার চাই ই চাই!

ঈশ্বর তখন দু'টো ক্লান্তিকর ফোনালাপ শেষে একটা চুরুট ধরিয়ে হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন। "ডার্টি বীচেস", মনে মনে ভাবেন ঈশ্বর, একটুকরো নকল রুটি ঝুলিয়ে মুফতে শুষে নিচ্ছেন উনি সেই দেশটাকে, আর দেশের দুই মহারানী পালাকরে তার পদচুম্বন-পদলেহনে ব্যাস্ত থাকে সারাটাক্ষন। নিজের দেশে সর্বস্ব, এমনকি মানুষকেও বলিকাঠে তুলে দিচ্ছে ঐ দুটো বীচ পালা করে, একটুকরো মেকি রুটির আশায়!

তিনি নিজে কি পারতেন এসব তার নিজের দেশের মানুষের সাথে? ভাবতেই শিউরে ওঠেন প্রথমবিশ্বের মহামান্য ঈশ্বর। তেমন কিছু ঘটলে তার দেশের মানুষ এক সেকেন্ড দেরী করবে না তার ঈশ্বরগিরি ঘুঁচিয়ে দিয়ে পিঠের ছাল তুলে লবন মাখাতে।

যাক, তার অত ভেবে কাজ কি? তার কাজই হলো তৃতীয় বিশ্বের ঈশ্বর হয়ে থেকে ওদের লোভী শাসকগোষ্ঠীকে হাত করে ওদের সর্বস্ব শুষে ছিবড়ে করে নেওয়া। দালালদের যা দিতে হয় তা সেই শুষে নেওয়া সম্পদের লক্ষ ভাগের একভাগ মাত্র!

ডার্টি বীচেস - আবার বিড়বিড় করে বলে তিনি উঠে পড়েন সোফা থেকে।

টোকাইদের দল এসব না জেনেই পথে নেমে পড়ে বিক্ষোভে, নিজের দেশের সম্পদ তারা নিজেদেরই রাখতে চায়। মহারানীর মান রাখতে পেটোয়া বাহিনি কসুর রাখে না কোনো। রক্তে ভিজে ওঠে রাজপথ, লাঠিচার্জ-গ্রেপ্তার-হুলিয়া - কেঁপে ওঠে দেশ।

ঈশ্বর, মহারানী আর প্রাক্তন মহারানী তখন তাদের নিজেদের সুখের স্বপ্নের ঘুমে বিভোর।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×