somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাদিজা বাঁচবেন কিনা সংশয়, যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন ইমরান!

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




খাদিজা বাঁচবেন কিনা সংশয়, যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন ইমরান!
ধারালো চাপাতির একের পর এক আঘাত। রক্তাক্ত খাদিজা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন নিথর। কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না। কেউ সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে না। দূর থেকে হইচই শুনে এগিয়ে এলেন একজন। তারপর ভুলুন্ঠিত মানবতাকে তুলে নিলেন কোলে। রক্তাক্ত খাদিজাকে কোলে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালের দিকে। ওই একজন হচ্ছেন ইমরান। পুরো নাম ইমরান কবির।
খাদিজা বেগম নার্গিস এখনো বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকবেন কিনা, সেটা নিয়ে জোর সংশয়। তবে এখনো যে তিনি বেঁচে আছেন, তার পেছনে রয়েছে ওই ইমরান কবিরের এগিয়ে এসে রক্তাক্ত নিথর খাদিজাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ভূমিকা।
টগবগে তারুণ্যের মূর্ত প্রতীক ইমরান কবির (২০)। সিলেট সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে ব্যস্ত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ঢালারপাড় গ্রামের এই যুবক। সোমবার বিকেলে প্রকৃতির সুনিবিড় ছায়াঘেরা এমসি কলেজে হাঁটতে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর তো অসীম সাহসিকতায় মানবতার ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
বদরুল আলম নামক নিকৃষ্ট অমানুষের চাপাতির আঘাতে এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে লুটিয়ে পড়েন খাদিজা বেগম নার্গিস। রক্তাক্ত খাদিজা নিথর হয়ে পড়ে থাকেন। কেউ এগোয়নি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। সোমবার বিকেলে যখন ওই ঘটনা ঘটে, তখন কিছুটা দূরে ছিলেন ইমরান কবির। শোরগোল শুনে ঘটনাস্থলের দিকে এগোতে থাকেন তিনি। তারপর?
শোনা যাক ইমরান কবিরের মুখেই, ‘আমি যখন ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম সবাই দৌড়ে পালাচ্ছে। আমার একটু খটকা লাগলো, সবাই কেন পালাচ্ছে! আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখি, পুকুরপাড়ে একটা মেয়ে পড়ে আছে। রক্তাক্ত, নিথর। কেউ নেই পাশে। দৌড়ে তার কাছে ছুটে যাই আমি। চিৎকার করে সাহায্য করার জন্য ডাকাডাকি করি। দু’জন অপরিচিত ব্যক্তি এগিয়ে আসেন।’
বলে চলেন ইমরান, ‘তাদেরকে সাথে নিয়ে ওই মেয়েটাকে (তখনো খাদিজার নাম-পরিচয় কিছুই জানেন না ইমরান) কোলে করে একটু এগিয়ে একটা সিএনজি অটোরিকশায় দিয়ে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
খাদিজার শরীরের রক্তে ভেসে যায় ইমরানের কাপড়চোপড়। হাসপাতালে জরুরী বিভাগে দ্রুত ভর্তি করা হয় খাদিজাকে। রক্তের জন্য তাগদা দেন ডাক্তাররা। ইমরানের রক্তের গ্রুপের সাথে মিলে যায় খাদিজার রক্তের গ্রুপ। তাৎক্ষণিকভাবেই রক্ত দেন তিনি। এরপর বিভিন্ন ধরনের ওষুধের জন্য তাগদা দিতে থাকেন ডাক্তাররা। রক্তেভেজা শরীর নিয়ে ফার্মেসিতে দৌড়াদৌড়ি করে ওষুধ এনে দেন ইমরান।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। বাড়তে থাকে রাত। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন খাদিজার আত্মীয়স্বজন। রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে খাদিজাকে রেখে নিজ বাসায় ফিরেন ইমরান।
কেউ এগিয়ে আসেনি, আপনি এগিয়ে গেলেন, কেন? কি চলছিল আপনার মনের মধ্যে তখন? ইমরান কবিরের কাছে প্রশ্ন ছিল। জবাব দিতে দেরি করেননি মানবতার ডাকে সাড়া দেয়া এই যুবক, ‘আমার মাথায় তখন শুধু একটাই চিন্তা ছিল, মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে।’
খাদিজা বেঁচে থাকবেন কিনা, সেই অনিশ্চিত উত্তর তোলা থাক সময়ের জন্য। কিন্তু ইমরান কবির নামের এই যুবক যে যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন মানবতার দৃষ্টান্ত হয়ে, তা বলে দেয়া যায় নিশ্চিত করেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:২৯
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×