ফানপোস্টগুলোতে সবসময় হয় আমার বাটপারি অথবা আমার ছেকা খাওয়ার ঘটনাগুলো লিখি (যেকোন একটা থাকে)। আজকে দুটাই একসাথে দিচ্ছি
*******
২০০৫এর ঘটনা। সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল শুরু হবে, পিএল চলছে। বাসা থেকে সকালের বাসে ভার্সিটি চলে যাই, সারাদিন লাইব্রেরিতে বসে পড়ি(যেটা বুঝা যায়) আর গিলি(যেটা বুঝার কোন উপায় নেই মুখস্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাই)! এর মাঝে একদিন স্কুললাইফের এক ফ্রেন্ড রফিক ফোন করল, কোথায় আছি কি অবস্হা, ইত্যাদি ইত্যাদি! তো ফোনেই ঠিক করলাম প্রায় ৫বছর হয় দেখা নেই, একদিন দেখা করব! যেহেতু আমার সামনে পরীক্ষা, ঠিক হল ও ভার্সিটিতেই আসবে, টিএসসির সামনে দেখা করব; এবং বিকালে, কারণ সকালের দিকে দেখা করলে আমার সারাদিনই মাটি হবে, পড়ার টাইম একদম পাবনা! সেকেন্ড ইয়ারের সিলেবাস ছিল সবচেয়ে বড় এবং টাফ! অলরাইট!
তো যেদিন দেখা করার কথা, সেদিন চারটার দিকে টিএসসির সামনে বসে আছি। একটা নিলে আরেকটা ফ্রি, রফিক আসল সাথে আরেক পুরান স্কুলফ্রেন্ডকে নিয়ে, ধরলাম ওটার নাম কামাল। প্রায় ৫টা পর্যন্ত গেঁজালাম ফুটপাতে বসে বসে। ওহ, স্টার্টিং-এও এক কঠিন কাহিনী, দুইটা গোলাপ কিনে রেখেছিলাম, দুইজন আসায় আমারটাও দিয়ে দিলাম। টাসকি খেয়ে গিয়েছিল দুইজনেই
৫টার দিকে তিনজনেই আবিস্কার করলাম, ইফতার বেশিক্ষণ বাকি নেই। রফিক প্রোপোজ করল, "এদিকে তো আসা হয়না, আজকে চকবাজারের ইফতারি করলে কেমন হয়? তুই (আমি) চিনিস ভাল ইফতারির আইটেমগুলো?" আমি আসলে একটাও চিনতাম না, তবু সাহস করে বললাম, চিনি না, তাতে কি হয়েছে, পেপারে তো রোজই অনেক আইটেমের কথা দেখই, অনটেস্টে একদিন খেয়ে দেখি কি অবস্হা! বেশ, তো তিনজনে একটা রিকশা ঠিক করে রওয়ানা হলাম মহান চকবাজারের উদ্দেশ্যে
গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে আবিস্কার করলাম খাচ্চরদুটার একজনও রোজা রাখেনি, সেজন্যই আজকে ৫টা সময় আসতে পেরেছে! দুজনেই সম্ভবত ইস্টার্নে পড়ত, সেমিস্টার মাত্র শেষ হয়েছিল ওদের; রোজার পরে নতুন টার্ম শুরু হবে। তো পৌছালাম চকবাজার, জেলখানা পেড়িয়ে আরো সামনে!!! পরলাম গজবে!
দিনে বৃষ্টি হয়েছিল, প্যাচপ্যাচে কাদা সারা রাস্তায়! রাস্তা প্রায় বন্ধ করে ইফতারির সারি সারি স্টল! এবং দামও দেখলাম বেশ খানিকটা চড়া। যাই হোক, বেগুনি, জালি কাবাব, জিলাপি, পিয়াজু, ঘুঘনি, বুট এসব কমন আইটেমগুলো কিনলাম। ঠিক করলাম দোকান থেকে একবোতল পানি কিনে কোন রেস্টুরেন্টে বসব, আর হালিম ওখান থেকেই কিনব। পথে পেলাম আরেক ক্লাসিক জিনিষ- সুতি কাবাব, কেউ কেউ মনে হয় সুতলি কাবাবও বলে (কোনটা ঠিক কে জানে
আজান দিল। দুই খবিসের একটা এক লিটার পানির অর্ধেকটা সাবার করে ফেলল, আমি দেখি আমার জন্য পানি খুবই কম আছে। যাই হোক, রোজা খুললাম। কিন্তু, আইটেমগুলো একেকটা মুখে দেই আর টাসকি খাই, এই জিনিষের এত সুনাম
নামাজ পড়ে এসে দেখি কঠিন কাহিনী, দুজনেই হাসছে হা হা করে! ঘটনা কি, দুজনের কেউই আগে সুতলি কাবাব খায়নি, খেতে যেয়ে দেখে ভেতরে আসলেই সুতলি, সুতলি বেস করেই কাবাবটা বানান। আমি নিজেও জীবনে খাইনি, দেখে আমিও খানিকটা টাসকি খেলাম। কিন্তু খেতে হয় কিভাবে এই জিনিষ জানতামনা, খেতে গিয়ে দেখি মুটামুটি বিস্বাদ টাইপের জিনিষ
তো কার্জন থেকে রওয়ানা হওয়ার আগে আমরা ডিসিশনে পৌছলাম,
চকবাজারের ইফতারি বিলাইয়েও খায় না!
পরেরটা খানিকটা ১৮+, এবং কিঞ্চিত অরুচিকরও লাগতে পারে কারো কারো কাছে!
***********
ভার্সিটিতে পয়লা রমজান মাস থেকেই আমাদের ক্লাসের ছেলেরা একসাথে একটা ইফতারির আয়োজন করত, শুধু আমাদের ক্লাশমেটদের নিয়ে! এমনিতে ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বড় একটা ইফতারির আয়োজন হয়, একেক বছর একেক হলে এবং এটা নিয়ে খানিকটা প্রতিযোগিতাও চলে কার হলেরটা ভাল বেশি! আমি নিজ দায়িত্বে হলে আয়োজিত ইফতারিগুলোর একটাতেও কখনো যাইনি
যাকগে, আমাদের ফার্স্ট ইয়ার অনেক ঘটনাবহুল, দুইটা রমজান মাস পেয়েছিলাম! ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালে ক্যালকুলাস আর লিনিয়ার এলজেব্রা পরীক্ষার ডেট মোট ৬বার পড়েছিল, ৬ষ্ঠবার পরীক্ষা হয়েছিল! তো লিনিয়ার এলজেব্রা পরীক্ষার একদিন পরে আমাদের ক্লাশমেটদের একসাথে ইফতারির আয়োজন করা হল! ভেন্যু: টিএসসি!
গেলাম ইফতারির দিন। ওটাতে আসলেই অনেক মজা হত, কমবেশি সবাই যেত, মেয়েরা অবশ্য তখন যেত না! ইফতারির খানিক আগে একজন দোয়া পরিচালনা করত, কত বিদঘুটে দোয়া যে করত সবাই একসাথে বলার মত না। সাপোজ, মেইন পাবলিক যে সে পড়ছে, "আল্লাহ, আমাদের সবার মনের ইচ্ছাগুলো পূরণ করে দাও" আরেকটা পাশ থেকে লাগাত, ইয়া আল্লাহ, এতবড় পরীক্ষার হলে এতগুলো মানুষ পরীক্ষা দিলাম, ৫টা ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়েও আমার দিকে ফিরেও তাকাল না, হে আল্লাহ সামনের রমজানে যেন কাউকে পাশে নিয়ে ইফতারিতে বসতে পারি!
যাই হোক, যে বছরের ইফতারির কথা বলছি, সে বছর এরকম দোয়াটোয়া সব শেষ, ইফতারিও প্রায় শেষের দিকে, যারা নামাজ পড়ার পড়ে ফিরেও এসেছি ইফতারির বাকি অংশ শেষ করতে। হঠাৎ, আমার খেয়াল হল লেবু/শসা কাটার জন্য যে চাকু তিনটা আছে ওগুলো নিয়ে খানিকটা শয়তানি করলে কেমন হয়! পাশের আরো তিনজনকে বললাম, ওরাও সায় দিল! নিজে একটা চাকু নিলাম, একটা চাকু দিলাম আরেকজনকে আর বাকি দুইজন খানিকটা লবণ আর আস্ত একটা শসা নিল! তারপর আমাদের যে বৌদ্ধ ক্লাশমেটটি (ঐটা আরেক ক্লাশ ওয়ান পোংটা ছিল
"দোস্ত এই জীবনে বহুৎ পাপ করেছি, ভার্সিটিতে প্রতিদিন আমাদের সবাইকে সেটার জন্য খেসারত দিতে হয়! আজকে ইফতারির পর ঠিক করেছি একটা ভাল কাজ করব, তোকে মুসলিম বানাব! আমরা জানি তুই অমত করবিনা, তাই তোকে খতনা করানোর জন্য আমরা রেডি হয়েই এসেছি।"
ব্যাটা লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দে দৌড়! পেছনে আমরা চারজন ধাওয়া করতে লাগলাম, দুজনের হাতে ছুরি, একজনের হাতে শসা, যাতে চিৎকারের আওয়াজে কেউ বিরক্ত না হয় আর আরেকজনের হাতে খানিকটা লবণ, ওর টেস্ট করে দেখার ইচ্ছা ছিল দীর্ঘদিনের কাটা ঘায়ে নুন দিলে কি হয় দেখা!
সে এক দেখার মত সিন, দুই হাত ছড়িয়ে চিৎকার করে দৌড়াচ্ছে বাঁচাও, বাঁচাও, আর আমরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছি আবার চিৎকারও করছি 'ধর, ধর!'
নাহ, টিএসসি গরম করে ফেলেছিলাম ৫/৭ মিনিটের জন্য
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১২ সকাল ৭:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



