somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গঃ ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষায় ব্যক্তির নামকরণ

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একুশে ফেব্রুয়ারী আমাদের গর্ব। এ গর্ব অর্জিত হয়েছে বুকের রক্তের বিনিময়ে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন এমন জাতি পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুস্কর। প্রাণের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষার সন্মান রেখেছিলাম। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী যেমন আমাদের দাবীকে অগ্রাহ্য করতে পারেনি তেমনি দেরিতে হলেও পৃথিবীবাসীও আমাদের এ ত্যাগকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করেননি। আমাদের এ ত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ববাসী একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে। পৃথিবীর প্রত্যেক প্রান্তের মানুষ এখন জানে একুশে ফ্রেব্রুয়ারীর ইতিহাস।

বিপরীত দিক থেকে চিন্তা করলে নিজের মাতৃভাষা নিজের দেশেই অবহেলিত এমন একটি দেশের নাম খুঁজতে গেলে আমাদের এই বঙ্গদেশ ছাড়া অন্যকোন দেশ খুঁজে পাওয়াও দুস্কর হবে। আমাদের নীতিনির্ধারক ও বুদ্ধিজিবীগণ বিভিন্ন সভা, সেমিনারে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের প্রসঙ্গটির অবতারণা করেন। এ প্রসঙ্গে সর্বস্তরে মাতৃভাষা ব্যবহার সংক্রান্ত একটি আইনের কথাও আমি জানি। এ আইনে আছে কোন বিদেশী সংস্থা, রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ ব্যতিত অফিস আদালতের সব পত্রাদি বাংলায় লিখতে হবে। এর ব্যত্তয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানও আছে। এ আইনের ব্যত্তয় সব সময়ই ঘটছে, তবে এর কারণে কোন কর্মকর্তার শাস্তি হয়েছে তা আমার জানা নেই। যাহোক, এগুলো সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয় এবং এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা আমাদের মতো মূর্খদের মানায় না এবং এ বিষয়টি আমার আজকের আলোচনার বিষয়ও নয়। আমার আলোচনার বিষয়টি খুবই সাধারণ এবং আমরা সাধারণ মানুষরা ইচ্ছা করলেই এর প্রতিফলন ঘটাতে পারি। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের এখানে সাহায্য কিংবা সহযোগীতার কোন প্রয়োজন নেই।

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের মানুষের নাম তাদের মাতৃভাষায় রাখা হয়। সেটা আরবী, ফারসী, ইংরেজি, চাইনিজ, আফ্রিকানা যে ভাষাভাষী হোন না কেন। কিন্তু ধর্মীয় আবেগের কারণে আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোক আরবীতে নাম রাখাটাকে ধর্মীয় দায়িত্ব বলে মনে করেন এবং এগুলোকে ইসলামী নাম বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সাধারণ পর্যবেক্ষণে আমার কাছে মনে হয় ইসলামী নাম বলে আলাদা কোন নাম নেই বরং এগুলোকে আরবী নাম বলাই অধিক যুক্তিসংগত। কারণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে এবং পরে রাসুল্লাহ কিংবা তার ঘনিষ্ঠ সাহাবাদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। বরং পৌত্তলিক থাকা অবস্থায় তাদের যে নাম ছিল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরও তারা সে নামেই পরিচিত ছিলেন, ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো কাউকে বিভিন্ন রকমের উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। কাজেই এটা প্রতীয়মান যে, ইসলামের আলাদ কোন নাম নেই বরং তারা তাদের মাতৃভাষা অর্থাৎ আরবী নামেই আগাগোড়া পরিচিত ছিলেন। তাছাড়া আরবের যারা বিধর্মী তারাও তাঁদের নাম আরবীতেই রাখেন যা সাধারণভাবে দেখলে মনে হতে পারে এগুলো মুসলিম নাম। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ে ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন তারেক আজিজ। তিনি পরে ইরাকের উপ-প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। এদেশের অনেক মানুষের মতোই আমি ভদ্রলোককে মুসলমান বলে মনে করতাম। তবে পরবর্তীতে তিনি মার্কিন সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হলে আমরা জানতে পারি তিনি রোমান ক্যথলিক ছিলেন। কাজেই বিষয়টি স্পষ্ট আরবভুমিতে বসবাসরত মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মালম্বীরা তাদের নাম আরবীতেই রাখেন। ঠিক একইভাবে তুরস্কের মুলমানগণ তাদের নাম তুর্কী ভাষায়, ইরানের (পারস্যের) মুসলমানগণ তাদের নাম ফারসী ভাষায় এবং আফ্রিকার অনেক দেশের মুসলমানগণ তাদের নাম তাদের স্বভাষায় রেখে থাকেন। এখানে উল্লেখ্ করা যায় আমাদের প্রতিবেশী ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর স্বামীর নাম ছিল ফিরোজ। নামের দিক থেকে বিবেচনা করলে তাকে মুসলমান বলাই যুক্তিসংগত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন ইরানী বংশোদ্ভূত অগ্নিপূজারী ছিলেন এবং তার নামটি তার মাতৃভাষা ফারসীতে রাখা হয়েছিলো। কাজেই এখানেও আরবী কিংবা ফারসীতে নাম রাখা মানেই ইসলামের অনুসরণ-- এই ধারণাটিকে ভুল প্রমাণিত করে বরং মাতৃভাষাতে নাম রাখার রেওয়াজটিকেই প্রতিষ্ঠিত করে।

উপরের বিষয়গুলো প্রমাণ করে আরবীতে নাম রাখার বিষয়ে ধর্মের দিক থেকে কোন বাধ্যবাদকতা নেই বরং নিজ ভাষার প্রতি সন্মান দেখিয়েই আমাদের মাতৃভাষায়ই নাম রাখা উচিৎ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য আমরা সম্ভবত পৃথিবীর সেই অল্পকয়েক ভাষাভাষীদের একজন যারা নিজের মাতৃভাষায় নাম রাখতে কুন্ঠাবোধ করি।কিন্তু আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই আমাদের এই রেওয়াজটির পরিবর্তন ঘটাতে হবে, নিজের মাতৃভাষায় নাম রাখতে হবে। কারণ ভয় হয়, এতদ অঞ্চলে ইংরেজী, হিন্দী ও আরবী ভাষার আগ্রাসনের কারণে বাংলাভাষাটি হয়তো একদিন পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাবে। আর এ বিলীনের মাঝেও আমাদের সন্তানদের নামের সাথে বাংলা নামটি থাকলে কোনো গবেষক হয়তো গবেষণা করে বলবেন এটা বিলুপ্ত বাংলা শব্দ। একটি আত্ববিস্মৃত জাতি হিসেবে আমাদের এর চেয়ে আর বেশি কিবা চাওয়ার কিংবা পাওয়ার থাকতে পারে?




সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৮:৩৮
৫৮টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×