somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধ অনুকরণ আর হুজুগ যেখানে রাষ্ট্রীয় আচার

১৫ ই জুন, ২০১০ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ। সারা শহরের বাড়ির ছাদগুলো ভরে গেছে ব্রাজিলের পতাকায়। শুধু ছাদ নয়, দোকান, রাস্তা, দেয়াল, সেলফোনের টাওয়ার কোন কিছুই বাদ যায়নি। আজকে অফিসে আসার সময়ে বাস থেকে দেখলাম বিদ্যুতের এক ট্রান্সফরমারে ব্রাজিলের এক নয়, চার চারটি পতাকা। আবেগটা কোথায় গিয়ে পৌছেছে তা এ দৃশ্য থেকেই টের পাওয়া যায়। তবে সত্যি বলতে এটাকে আবেগ না বলে উম্মাদনা বলাটাই যুক্তিযুক্ত হবে। আর এই উম্মদনার কারণে মুল্যবান জীবনটিও যে চলে যেতে পারে সেদিকে কোন খেয়াল নেই সংশ্লিষ্টদের।

ঠিক একই কথা খাটে আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে। বাঙ্গালীর ভালবাসা, উচ্ছাস, আবেগ, সর্বোপরি উম্মাদনার কোন কমতি নেই এ দলটিকে ঘিরে। ম্যারাডোনার জন্য জীবন দিতে পারে এমন পাগলের সংখ্যাও এদেশে নেহায়েত কম নয়। কিন্তু আপনি যদি ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার রাজনীতি, সংস্কৃতি, আচার, আচরণ সম্পর্কে এসব উম্মাদদের জিজ্ঞেস করেন তাহলে তাদের বেশিরভাগই এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেনা। এমনকি দেশ দুটোর ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কেও হয়তো তাঁরা জানেনা।

কিন্তু যাদের নিয়ে এই উম্মাদনা তাঁরা কি আদৌ আমাদের নিয়ে ভাবেন? আমাদেরকে জানেন? ব্রাজিলের শিশুরা কি এই বদ্বীপ সম্পর্কে জানে? উত্তর একটাই, না। এ বিষয়ে একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনার কথা বলতে পারি। শুনেছিলাম, বাংলাদেশের কোন এক ভক্তগোষ্ঠী নাকি একবার ম্যারাডোনা-কে এদেশে আনার চেষ্টা করেছিল। প্রস্তাবটি ম্যারাডোনার কাছে যাওয়ার পরে তিনি অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের কোন প্রান্তে। অর্থাৎ বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের কোন দেশ আছে কিনা তা তিনি জানেন না। ঠিক একই রকমের কথা শুনেছিলাম আর্জেন্টিনার আরেক ফুটবল স্টার স্যাভিওলার মুখে। তিনিও বাংলাদেশ চিনেন না।

অনেকে হয়তো বলবেন আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের রাজনীতি, সংস্কৃতি, আচার, ভৌগলিক অবস্থান বা ম্যারাডোনার বাংলাদেশ চিনা বা না চিনা এখানে প্রাসঙ্গিক কোন বিষয় নয়, প্রাসঙ্গিক হচ্ছে ফুটবলের প্রতি ভালবাসা। হ্যাঁ, ফুটবলের প্রতি এই ভালবাসা দৃষ্টিকটু বা অপ্রাসঙ্গিক হতোনা যদি নিজ দেশের ক্ষেত্রেও একই রকমের উম্মাদনা থাকত। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ সত্ত্বেও কটা বাড়ির ছাদে, দোকানে নিজ দেশের পতাকা ওড়ে? বিভিন্ন জাতীয় দিবসে কটা মানুষ নিজের জাতীয় পতাকাটা ওড়ান?

ঠিক একই রকমের উম্মাদনা বা অন্ধ অনুকরণ আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়, সেটা ধর্মীয় ক্ষেত্রেই হোক বা রাজনীতির ক্ষেত্রেই হোক। আমাদের স্ব স্ব রাজনৈতিক নেতাদের কোন ভুলই আমাদের চোখে পড়েনা। আমরা অন্ধভাবে যে যে দলের সমর্থন করি সে দলের নেতা এবং তাঁর উত্তর পুরুষদের অনুসরণ করি। তাঁদের ভুল ও গণবিরোধী সিদ্ধান্তগুলো পক্ষে আওয়াজ তুলি। বংশানুক্রমে এ প্রথা চলে আসছে এবং চলবেও।

একই কথা ধর্মীয় আচরণের ক্ষেত্রেও বলা যায়। নিজের ধর্মে যদি কোন লজিক্যাল ভুলও থাকে তা মেনে নিতে পারিনা। অন্ধভাবে পীর, দরবেশ ও ধর্মীয় নেতাদের নির্দেশনা মেনে চলি। কিছু মুসলিম দেশ বা পবিত্র ভূমিকে নিজের অস্তিত্ব মনে করি, নিজের দেশের উপরে স্থান দেই। সেসব দেশের আচরণকে সব সময়ই যৌক্তিক মনে করি। প্রসঙ্গক্রমে গতকালকের একটি সংবাদ এ আলোচনায় আসতে পারে। বৃটিশ মিডিয়ায় সংবাদ বেড়িয়েছে যে, ইরানের পারমানবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য সৌদি আরব ইসরাইল-কে তার আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। খবরটা আতকে ওঠার মতো। যে ইসরাইল প্রতিদিন ফিলিস্তিনী মুসলিমদের গণহারে নিধন করছে, তাদের উপর অন্যায় অবরোধ করছে সেই ইসরাইল-কে এমন একটি অনুমোদন ইসলামের জন্মভূমি সৌদি আরব কি করে দিতে পারে? বৃটিশ মিডিয়ার এ খবরটির সততা কতটুকু তা এ মুহুর্তে বলতে পারছিনা। তবে সরকারিভাবে ঘোষণা না হলেও যদি ইরানে হামলা চালানো হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা তাদের দোসর ইসরাইল যে সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহার করবে তা নিশ্চিত।

এখানে সৌদি আরব কোন বিচ্ছিন্ন দেশ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব মুসলিম দেশের সাথেই ইসরাইলে অঘোষিত বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্ক এবং মিশরের সাথেতো তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ এবং কুটনৈতিক সম্পর্কই রয়েছে। অথচ এ কথাগুলো যদি আপনি এদেশে বলেন তাহলে আপনাকে ইসরায়েলের প্রতি নরম বা ইহুদীবাদের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হবে। এমনকি আপনাকে হত্যা করা ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ বলে ফতোয়াও দেয়া হতে পারে।

শারীরিকভাবে অন্ধকে পথ দেখানো সম্ভব। কিন্তু যে চিন্তা, চেতনা ও মননে অন্ধ তাঁকে পথ দেখানো শুধু অসম্ভবই নয় বরং পথপ্রদর্শনকারীর জন্য বিপদজনক।
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×