somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপ্লব কান্তির জন্য..........

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিপ্লব কান্তিকে আমি চিনিনা। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোন সম্পর্ক নেই। বছর দেড়েক আগে সেলফোনে তাঁর সাথে মিনিট পাঁচেকের মতো কথা হয়েছিল। তবে সেটা অন্য পরিচয়ে। ফরহাদ উদ্দিন স্বপন নামের কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিল এটা বোধ করি তিনি ঠিক এ মুহুর্তটির আগে পর্যন্ত জানতেন না। সে সূত্র ধরেই জেনেছিলাম তিনি উত্তরা কিংবা বনানীতে কোন আইটি ফার্মে কাজ করতেন। লোকটার সঙ্গে কথার বলার সময়ে তাঁর কন্ঠ কিংবা বাচনভঙ্গীতে মনে হয়নি তিনি এতোটা একরোখা, প্রতিক্রিয়াশীল (ব্লগীয় আচরণে) কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে দৃঢ়চেতা। অবশ্য মানুষ সম্পর্কে আমার ধারণাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল হয়।

ব্লগে আজকাল মোটেও নিয়মিত নই। তবে মাঝে মাঝে সময় পেলে প্রিয় ব্লগারদের লেখাগুলো পড়ি। অবশ্য মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনা। এমনই ব্লগারদের মধ্যে বিপ্লব কান্তি একজন। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রিয় ব্লগার হিসেবে তাঁর লেখার প্রতি আমি আকৃষ্ট তা বলব না। আমি ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীগুলোর প্রতি চরমভাবে আকৃষ্ট। ঠিক সে কারণেই তাঁর ব্লগটা খুঁজি। তবে এ বিষয়ে বিপ্লব কান্তি আমাকে চূড়ান্তভাবেই হতাশ করেছেন। পৌরাণিক কাহিনী সমৃদ্ধ খুব কম লেখাই তাঁর কাছ থেকে পেতাম।

বিপ্লব কান্তি নিঃসন্দেহে প্রতিক্রিয়াশীল। আমি তাঁকে একজন হিন্দু মৌলবাদী হিসেবেই চিহ্নিত করি। নাস্তিকতা সমৃদ্ধ লেখাগুলোতে (অবশ্যই মুসলিম বিশ্বাস বিরোধী সম্পর্কিত) তাঁর ইতিবাচক সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করতাম। এ ধরণের লেখাগুলোতে তিনি নাস্তিকদের সাথে মিশে যেতেন। তাই বলে তাঁকে নাস্তিক ভাবার কোন সুযোগ ছিলনা। তিনি শুধু পরিবেশ বা অবস্থার সুযোগটা নিতেন। আবার হিন্দুত্ব বা হিন্দু সংস্কৃতি বিরোধী পোস্টগুলোতে তিনি সর্বাত্মক বিরোধীতা করতেন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তিনি তাঁর বিশ্বাসের প্রতি আপোষহীন এবং তাঁকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ যত্নবান।

এতদসত্ত্বেও বিপ্লব কান্তির মধ্যে আমি একটি অসাধারণ গুণ খুঁজে পাই। সেটা হচ্ছে প্রতিকুল পরিস্থিতিতেই নিজের বিশ্বাস ধরে রাখা এবং বিশ্বাসের বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে লড়ার সৎ সাহস। লড়াইটা সে একাই করত। এটা খুবই কঠিন একটা কাজ। একজন নরম ধরণের সমাজতন্ত্রী ও রাজনীতির ছাত্র হিসেবে সংখ্যালঘু শব্দটাতে আমার বিশ্বাস করা উচিত নয়। তবে সমাজতত্ত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর সব দেশেই শব্দটি বাস্তব সত্য। এটাকে আড়াল করে রাখার কোন উপায় নেই। দেশ, কাল, পাত্র সব বিবেচনায়ই সংখ্যালঘু হওয়া একটি অভিশাপ। অভিশাপটা আরো বেশি পোক্ত হয় যখন সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাবনা বা ইচ্ছাটাকে বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয় বা মেনে নেয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের (ধর্মীয় বিচারে) এই মেনে নেয়ার বৈশিষ্টটি খুবই প্রবল। নিজের বিশ্বাস বা অধিকারের পক্ষে জোরে কথা বলার সাহস বা অভ্যাস কোনটাই তাদের নেই। সর্বংসহার মতো সব কিছু মেনে নেন। যখন আর মেনে নেওয়া সম্ভব হয়না তখন পিতৃপুরুষের ভিটার মায়া ছেড়ে দেশান্তরী হন। বিপ্লব কান্তি অবশ্য এ বিবেচনায় তাঁদের চেয়ে আলাদা। নিজের বিশ্বাসের পক্ষে সে ছিল সবসময়ই সরব এবং বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে সর্বদা প্রতিবাদমুখর।

লড়াইটা বিপ্লব কান্তিকে একাই লড়তে হয়েছে। কেউ যদি ইসলামপন্থী হন বা এ ধরণের পোস্ট দেন তবে তাঁকে সমর্থন জানানোর মতো লোকের অভাব হবেনা। ঝাকে ঝাকে সাথী ভাইয়েরা পুণ্যের জন্য তাঁর সমর্থনে, প্রয়োজনে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে। নাস্তিকতা মনোভাবাপন্ন লেখা হলেও কিছু লোকের সমর্থন আপনি পাবেন। যদিও তারা সংখ্যায় খুবই নগন্য। কিন্তু বিপ্লব কান্তির বলয়টা তাকে ঘিরেই। তাঁকে সমর্থন করার কেউ ছিলনা, এখনও নেই, থাকার কথাও না। তারপরেও আমি বলব খুব সাহসের সঙ্গেই সে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে, বিপক্ষ শক্তির সাথে সমান তালে লড়ে গেছেন।

গত বৃহস্পতিবার অনেকদিন পরে সামহোয়ারে লগইন বিপ্লব কান্তির ব্লগটা খুঁজতে যেয়ে আবিস্কার করলাম তার ব্লগটা বাতিল করা হয়েছে। পরিচিত একজনের কাছে খুঁজ নিয়ে জানলাম সে নিজেই নাকি তাঁর ব্লগটি বাতিল করার জন্য বলেছিল। আমি ঠিক জানিনা তার অনুরোধেই ব্লগটি বাতিল করা হয়েছে কিনা। যদি সে কারণেই তা করা হয়ে থাকে তবে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কে আমার যা ধারণা ছিল বিপ্লব কান্তি সেটাইকেই পুনর্বার প্রতিষ্ঠিত করল।

আর যদি তথাকথিত কোন ব্লগীয় নীতিমালা ভঙ্গের কারণে তাঁর ব্লগটি বাতিল করা হয় তবে সম্পূর্ণভাবে আমি এর বিরোধীতা করি। সামহোয়ার ইন ব্লগে ইসলামপন্থী, ইসলাম বিরোধী, ইসলামের আড়ালে জামাত/শিবিরের প্রচারণামূলক, নাস্তিকতা পন্থী, নাস্তিকতা বিরোধী এমনকি দেশের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার সম্পর্কিত লেখাগুলো দেদারসে টিকে থাকে। সে বিবেচনায় বিপ্লব কান্তির ব্লগও যদি এ ধরণেরই কোন লেখার কারণে বাতিল হয়ে থাকে তবে তা কোন অবস্থায়ই অন্তত আমার বিবেচনায় সমর্থনযোগ্য নয়। আমি সর্বাত্মকভাবে বিশ্বাস করি বলার অধিকারটা সবারই আছে। সে বিবেচনায় আমার কাছে একজন প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দু বলে বিবেচিত বিপ্লব কান্তিরও তাঁর কথাগুলো তাঁর মতো করে বলার অধিকার আছে। কেউ সহ্য করতে না পারলে সেটা তাঁর সমস্যা।

বিপ্লব কান্তির ব্লগটি মুক্ত করা হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:০২
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×