somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ময়লা ফেলা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৪) :-* :-/

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোমী (ময়লা) ফেলা নিয়ে জাপানীজদের নিয়মকানুন প্রথম প্রথম একটু বাড়াবাড়িই মনে হত।X( নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট ধরনের ময়লা ফেলতে হবে। X((তাও আবার যেনতেন ভাবে ফেলে আসলে চলবে না, সিটি অফিসের নির্দিষ্ট পলিথিন ব্যাগে, নির্দিষ্ট উপায়ে প্যাকিং করে ফেলতে হবে (মনে হবে যেন কারো জন্য গিফটের প্যাকেট নিয়ে যাচ্ছি)।:D এখন অভ্যাস হয়ে গেছে (না হয়ে উপায় নেই; ঠেলার নাম বাবাজী)। :P তবে এটা ঠিক, শুধু সিটি অফিসের কড়াকড়ি নিয়ম কানুনই নয়, সাধারন মানুষের সচেতনতার ফলেই জাপান পৃথিবীর পরিচ্ছন্ন দেশ গুলোর অন্যতম।

ময়লা ফেলার নিয়ম কতটা ঝামেলাপূর্ণ সে সম্পর্কে ধারনা পেতে আমাদের সিটির ময়লা ফেলার রুটিনটা শুনুনঃ
সাধারন ট্রাস – সপ্তাহে নির্দিষ্ট দুই দিন (নির্দিষ্ট দিনে সকাল ৮ টার আগে নির্দিষ্ট ব্যাগে)
বড় ট্রাস – মাসে নির্দিষ্ট দুই দিন (নির্দিষ্ট সাইজের চেয়ে বড় হলে স্টিকার কিনে তা লাগিয়ে ফেলতে হবে, ধরুন মাঝারী সাইজের একটি ফ্রিজ ফেলতে ৫/৬ হাজার টাকার মত লাগবে; সেটা ভাল ফ্রিজ হোক আর নষ্ট ফ্রিজ হোক!)
কচের বোতল/ক্যান – মাসে নির্দিষ্ট দুই দিন
পেপার/ম্যাগাজিন/ কাগজ – মাসে নির্দিষ্ট এক দিন
শুধু এই রুটিন পালনই নয় বিভিন্ন ময়লা ফেলার আগে তা প্রসেস করার উপায় ও আলাদা, যেমন জুস এর বোতল পানি দিয়ে ধুয়ে, মুখা + লেবেল খুলে, চ্যাপ্টা করে ব্যাগে ভরে দিতে হবে, চুরি/কাচি/নিডিলস ইত্যাদী ডেন্সারাস জিনিস আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট কাগজে মুড়িয়ে ট্রান্সপারেন্ট ব্যাগে ফেলতে হবে ... ইত্যাদি ইত্যাদি।

কত ঝামেলা, না? আসলেই অনেক ঝামেলা, তবে কিছুদিন পর অভ্যাস হয়ে যায়। বিশ্বের অন্যতম নোংরা শহরে বসবাসের অভ্যাস নিয়ে এসেও যখন এই ব্যাবস্থার সাথে অভ্যস্ত হতে পেরেছি, তাহলে বলা যায় ব্যাপারটি আসলে অতটা কষ্টকর নয়, জাষ্ট অভ্যাস আর সচেতনতা!

এ তো গেল পারিবারিক পরিচ্ছন্নতা, এবার শুনুন কমিউনিটি পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে।
যে ঘরটিতে আমরা ময়লা ফেলি সেটা সপ্তাহে দুইদিন (ময়লা নিয়ে যাওয়ার পর পরই) পানিদিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে হয় ওই কমিউনিটির পরিবারগুলোকে রুটিন করে।
জাপানের এই ডাস্টবিন গুলো ঢাকা শহরের যে কোন পাবলিক প্লেসের চেয়ে পরিস্কার এটা নিসবন্দেহে বলা যায়!:P

জাপানে রাস্তা ঘাটে গারবেজ বক্স খুব ফ্রিকুয়েন্ট নয় তবে সাধারণত কেও ময়লা যেখানে সেখানে ফেলে না; পকেটে নিয়ে ঘোরে পরে ময়লার বক্স পেলে ফেলে। ধূমপান করার জন্য আলাদা জায়গা আছে, তবে সেই জায়গাও খুব কম স্থানেই আছে। ফুটপা্তের দোকান থেকে একটা বিড়ি কিনে রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে সুখটান দেওয়ার সুযোগ এখানে নেই বললেই চলে। /:)

কমিউনিটি ক্লিনিং এর আর একটি জিনিস অনুকরণীয় জিনিস হলো মাসিক ক্লিনিংঃ
প্রতি মাসে এক দিন (সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিন) সকালে ৩০-৪৫ মিনিট থাকে বড় সৌজি (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন) রুটিন থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি ফ্যামিলি থেকে একজন করে এসে সবাই মিলে বিল্ডিংয়ের আশেপাশে এবং সংলগ্ন ফুটপাত/রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করা হয়। না কেও বাসার কাজের লোক পাঠায় না (থাকলে তো পাঠাবে ;)), পরিবারের কর্তা-ই আসেন। ৬ মাসের জন্য একজন লোককে এই কাজের তদারকির দায়িক্ত দেওয়া হয়। কোন ফ্যামিলি থেকে কোন মাসে কেও না আসতে পারলে জরিমানার ব্যবস্থা আছে, সেই টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি কেনা হয় বা মাঝে মাঝে সামান্য নাস্তার ব্যবস্থাও করা হয়। কেও সাধারণত জরিমানা দিয়ে এই কাজে ফাকি দেওয়ার চেষ্টা করে না, কারণ এটা শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়, প্রতিবেশীদের মধ্যে যোগাযোগের একটা মাধ্যেমও। একদিন সেরকম একটা দিনে কিছু ছবি তুলেছিলাম, দেখুন

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সবাই কাজে নেমে পড়েছে


খুটাখুটি চলছে পুরাদমে


দেখেন! হাটু গেড়ে লেগে গেছে


ময়লা কুড়িয়ে ব্যাগে ভরা হচ্ছে


কাজ শেষে সবাই মিলে খোশ গল্প, আড্ডা


দলনেতা (কালো গেঞ্জী) সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন


আমি কিন্তু ফাঁকি দেয় নাই! বামপাশের ব্যাগটা আমি ভর্তি করেছি
;)

একটা কথা মনে হলো; যদি আমাদের শহর গুলোতে এই সিষ্টেম চালু করা যেতো! তাহলে ঢাকা শহরকে বিশ্বের বসবাসের অনুপযোগী শহরের কলংক একটু হলেও কমানো যেত। মাসে ৭২০ ঘন্টার মধ্যে যদি একটা বন্ধের দিন আধা ঘন্টা সময় আমাদের বাসস্থান কে বসবাস করার উপোযুক্ত করতে ব্যয় করতে পারতাম ! কিন্তু আমাদের দেশে সেটাকি সম্ভব? ময়লা পরিষ্কার করার সব দায়িক্ত আমরা সিটি করপোরেশন আর কাজের মেয়েদের উপর দিয়ে রেখেছি। জাতিগত ভাবে আমরা নিজেদের কাজ অন্যের দিয়ে করিয়ে নিতে পারাকে স্টাটাস বলে গন্য করি। কি আর করা!! B-) :|

সাধারণ জাপানিজদের আচার আচরণ নিয়ে লেখা আগের ব্লগ গূলোঃ

জাপানিজঃ আজব এক জাতি !!!

গাড়ীর হর্ন ঃ জাপানীজ স্টাইল !!! :) (২)

নিরবাচনী প্রচারণা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৩)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫১
৬১টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×